বাইকের আইডল RPM কি এবং এটি ঠিক রাখা কেন এতো গুরুত্বপূর্ন?

আমাদের দেশে একটা খুব ভুল মিথ প্রচলিত আছে যে আইডল আরপিএম বেশি রাখলে জ্বালানি বেশি খায়। সবাই খুব কম আইডল আরপিএম রাখতে সাচ্ছন্দ বোধ করে। অথচ এর মাধ্যমে ইঞ্জিনের একটা নীরব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

🖊আজকে আলোচনা করবোঃ
🔧 ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিনে আইডল আরপিএম কেন এত ভাইটাল ইসু যেটা মাইলেজ/পার্ফরমেন্সে ইমপ্যাক্ট ফেলে?

🔧কার্বুরেটর বাইকে আইডল আরপিএম কেন গুরুত্বপূর্ন??(এখানে আলোচনা হবে কানেক্টিং রড প্রেসার কেন পড়ে, কোল্ড স্টার্টে ইঞ্জিন স্টার্ট নিতে সমস্যা ইসু, ব্যাটারি ইসু)

💤💤তার আগে বলি আইডল আরপিএম কি?

উত্তরঃ ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়ার পর থ্রটল/এক্সেলেটর পুশ বিহিন অবস্থায় ইঞ্জিনের যেই rpm থাকে, তাকে idle rpm বলে। ইঞ্জিন ফুল গরম অবস্থায়(মিনিমাম ১০ মিনিট ইঞ্জিন রান করার পরে) এবং হেডলাইট অফ থাকা অবস্থায় এটাকে সেট করতে হয়। (অনেক বাইকের ম্যানুয়ালে হেডলাইট অন অবস্থায় করতে বলা হইসে(এফজি/ফেজার)৷ তাই ম্যানুয়াল দেখবেন কি বলা আছে,না বলা থাকলে হেডলাইট অফ অবস্থায় করবেন)

💉💉 ফুয়েল ইঞ্জেকশন বাইকে আইডল আরপিএম সঠিক রাখা কেন এত জরুরি?

ফুয়েল ইঞ্জেকশন মোটরসাইকেল ইঞ্জিন কতগুলো সেন্সরের মিলিত রেজাল্টকে জাস্টিফাই করে এরপর কতটুকু ফুয়েল ইঞ্জেক্টর স্প্রে করবে সেটার টাইমিং সেট করে।
আপনারা অনেকে HSC সাইন্সে পড়েছেন তারা যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামিং নামে একটা চ্যাপ্টার করেছেন। ম্যাথগুলোর টাইপ ছিলো ৩-৪ টা আলাদা আলাদা অসমতা ফাংশনাল রাশি থেকে গ্রাফের মাধ্যমে একটা রিজিওন আকা,যেটার মাধ্যমে ম্যাক্সিমাম বা মিনিমাম ভ্যালু বের করা যেত অই রিজিওনের ভিতরের মান গুলো চেক করে।

ইলেক্ট্রনিক ফুয়েল ইঞ্জেকশন সেইম প্রসিডিউরে কাজ করে। এখানে ফাংশন গুলো কাজ করে সেন্সর থেকে প্রাপ্ত ভোল্টেজ রিডিং থেকে। এরপর সেই রিডিং গুলোকে ফাংশন হিসাবে নিয়ে ইসিউ ম্যাপ ক্রিয়েট করে সেখান থেকে ম্যাক্সিমাম পাওয়ার আর ম্যাক্সিমাম মাইলেজ পাওয়া যায় এমন মান নেয় নিজে থেকে ,সেই মান নিয়ে ফুয়েল ইঞ্জেক্ট এর টাইম সেট করে।
তবে সবগুলো সেন্সর এই রেশিও সেটিং এ ভাইটাল রোল প্লে করে না, বাংলাদেশে যেই fi বাইকগুলা পাওয়া যায় এইগুলোতে throttle position sensor(tps), Intake air flow sensor আর Oxygen sensor বলতে গেলে ৯৮% রেসপন্সিবল থাকে উক্ত ইঞ্জেক্টর ফুয়েল স্প্রে টাইমিং সেট করতে। (এখনকার toyota,honda,nissan গাড়ি গুলোতে MAP,MAF, এই সেন্সর গুলো ভাইটাল রোল প্লে করে,বাট বিডিতে যেই বাইক গুলো আছে সেইগুলাতে এটা নাই)

এখানে throttle position sensor জানায় এক্সেলেটর কতটুকু(ডিগ্রি) ওপেন করসে ইউজার(যত বেশি ওপেন হবে ইসিউ তত বেশি ফুয়েল স্প্রে করতে চাইবে),
Intake air flow sensor জানায় কি পরিমান বাতাস যাচ্ছে ইঞ্জিনে(যত বেশি বাতাস যাওয়ার রিডিং আসবে,ইসিউ তত বেশি ফুয়েল স্প্রে করতে চাইবে),
অক্সিজেন সেন্সর জানায় এক্সহোস্ট গ্যাসে কি পরিমান অক্সিজেন যাচ্ছে(অক্সিজেন রিডিং বেশি যাওয়া মানে air-fuel মিক্সার লিন আর কম যাওয়া মানে রিচ মিক্সার বুঝাচ্ছে)।

এখন, বাইক ম্যানুফেকচারার ইসিউকে যেই ম্যাপিং প্রোগ্রাম করে দেয়,সেখানে কিন্তু আইডল আরপিএম কে একটা নির্দিষ্ট পরিমান কে প্রমান ভ্যালু রেখে তারপর প্রোগ্রাম করে।

👎👎‌ধরেন, ম্যানুয়ালে বলা আইডল আরপিএম কম রাখসেন,তাইলে কি হবে? রাখতে বললো ১৪০০,রাখসেন ১০০০,তখন??

আইডল আরপিএম কম মানে আইডল আরপিএম কন্ট্রল ভালভ দিয়ে অল্প বাতাস যাচ্ছে, অর্থাৎ intake air flow sensor কম রিডিং দিবে আইডল কন্ডিসানে, সো যখন থ্রটল পুশ করা হবে,
তখন তখন throttle position sensor(tps) রিডিং ফরোয়ার্ড মানে এগিয়ে যাবে ম্যাপের ফাংশনে, intake air flow sensor এর রিডিং আগাতে থাকলেও পিছাই থাকবে, আই মিন ল্যাগে থাকবে tps থেকে, কারন আগেই পিছিয়ে ছিলো দৌড়ে।
throttle position sensor আগানোর কারনে ইসিউ বেশি ফুয়েল দিতে চাইবে,অপরদিকে intake air flow অনুযায়ী সেটা দিলে আবার রিচ মিক্সচার হবে, তাই হজবরল হয় এই দুইটাকে আবার ম্যানেজ করে নতুন রেশিওতে ফুয়েল স্প্রে হবে যেটা অপ্টিমাল থেকে স্লাইটলি রিচ মিক্সচার হবে।
রিচ হলে অপরদিকে অক্সিজেন সেন্সর ইসিউকে বলবে বেশি তেল যাচ্ছে, সো সব মিলাই ইসিউ যেই ফুয়েল মিক্সচার রেশিও ম্যানুফেকচারার সেট করসিলো সেটা রাখতে পারবে না।
ফলাফল, স্লাইটলি রিচ মিক্সচার, অল্প মাইলেজ ড্রপ, টপ স্পিড ড্রপ। (তবে পাওয়ার ড্রপ করে না কারন স্লাইট রিচ মিক্সচার থাকে দেখে)

👎👎যদি ম্যানুয়াল বইতে থাকা idle rpm থেকে বেশি রাখি তাইলে? রাখতে বললো ১৩০০, রাখলাম ১৬০০ তখন?

তখন, আইডল আরপিএম কন্ডিশানেই intake air flow sensor এগিয়ে থাকবে throttle position sensor রিডিং থেকে। থ্র্টল একটা সার্টেন এংগেল ঘুরালে ইসিউ মনে করবে আমার এখন অই এংগেলের জন্য যতটুকু ফুয়েল স্প্রে করা উচিত তা করবো,বাট আবার intake air flow sensor রিডিং দৌড়ে আগেই এগিয়ে থাকার কারনে বেশি ফুয়েল দেয়া উচিত,এটাও ভাববে। সব মিলাইয়া সে একটা লিন ফুয়েল রেশিওতে স্প্রে করবে, আবার অইদিকে অক্সিজেন সেন্সর থেকে পাওয়া লিন মিক্সচারের সিগনাল পাবে। সব মিলাইয়া ভজকট অবস্থা, ভুল ম্যাপ হবে।

ফলাফলঃ টান কমে যাবে, টপ কমে যাবে পাওয়ার কমে যাবে,লিন মিক্সারের কারনে ইঞ্জিনের সাউন্ড হেজি আসবে (মাইলেজ কমবে না লিন মিক্সচারের কারনে,বাট বাড়বে না মাইলেজ)

এছাড়া আইডল আরপিএম কম রাখলে রানিং অবস্থায় ক্লাচ ধরলে বাইক বন্ধ হয়ে যায়।

👌👌যদি আইডল আরপিএম সঠিক রাখা হয়,তাইলে intake air flow sensor, throttle position sensor রিডিং সমভাবে আগাতে থাকে এক্সেলেটর পুশ করলে। তখন কাংক্ষিত রেশিওতে ফুয়েল স্প্রে হয়। তাই অক্সিজেন সেন্সর রিডিং অপ্টিমাল আসে।
এতে ম্যাক্সিমাম মাইলেজ আর ম্যাক্সিমাম পাওয়ার বের করা যায়।💪

∆∆∆ কার্বুরেটর বাইকে সঠিক আরপিএম না রাখলে কি হবে?

যদি কম রাখা হয়ঃ

🌬কানেক্টিং রডে প্রেসার ইসুঃ-
আন্ডার স্কয়ার বা স্কয়ার টাইপের ইঞ্জিনে যদি ম্যানুয়াল প্রদত্ত গ্যাপের চেয়ে কম আইডল আরপিএম রাখা হয়,তাইলে কুইক থ্রটল পুশ করার সময় কানেক্টিং রড থেকে খট খট আওয়াজ আসে। এর কারন প্রতিটা ইঞ্জিনের একটা মিনিমাম লোয়েস্ট আরপিএম আছে,যার নিচে রাখলে সে স্ট্যাবল ভাবে ঘুরতে পারে না(আবারো বলছি,ঘুরতে পারে ঠিকই কিন্তু স্ট্যাবল ভাবে না)। তাই আন-স্ট্যাবল কন্ডিসানে কুইক এক্সিলারেশন দিলে সে থ্রটলের কারনে বেশি ফুয়েল-বাতাস এর তৈরি পাওয়ার এবসর্ভ করতে পারে না, তাই কানেক্টিং রড জয়েন্ট থেকে কেপে উঠে, খট খট করে উঠে।
আন্ডার স্কয়ার ইঞ্জিনে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয়। (সুজুকি জিক্সার, হোন্ডা সিবি হর্নেট, বাজাজ প্লাটিনা ১০০, পালসার এন এস ১৬০ টাইপ আন্ডার স্কয়ার বাইকে আইডল আরপিএম ৯০০/১০০০ রেখে খাড়া পিক আপ দিকে দেখবেন ক্লিন খট খট আওয়াজ আসবে।) ওভার স্কয়ার ইঞ্জিনে ইজিলি রেভ করতে পারে বিধায় অনেক স্ট্যাবল থাকে,তাই এইসব ইঞ্জিনে এমন আওয়াজ আসে না, বাট কানেক্টিং এ চাপ কিন্তু পড়ে। এই নিয়ে আমার বিস্তারিত পোস্ট আছে, লিংক দিয়ে দিলাম।

তাই, কানেকটিং রড চাপ এড়াতে অবশ্যই ম্যানুয়াল প্রদত্ত আইডল আরপিএম রাখতে হবে। (এফ আই বাইকের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য)

🌨কোল্ড স্টার্ট প্রবলেম ইসু ঃ

এছাড়া কার্ব বাইকে সকালে কোল্ড স্টার্টের সময় আইডল আরপিএম কমে যায়, তাই যদি ১৩০০ এর যায়গায় ১০০০ রাখেন,সেটা ঠান্ডা ইঞ্জিনে ৮০০ হয়ে যাবে। তাই প্রচন্ড সমস্যা করবে ঠান্ডা ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে।বার বার বন্ধ হয়ে যাবে।

যদি বেশি রাখা হয়?

ইঞ্জিন ওভার হিট করবে। বাইক চলার সময় আমরা ইঞ্জিনকে আইডল আরপিএমে রাখি, এই টাইমে ইঞ্জিন কুল হওয়ার সুযোগ পায়,কারন আরপিএম কম থাকার কারনে হিট কম হয়,অপরদিকে পরিবেশে তাপ ছড়াতে থাকে।
কিন্তু বেশি রাখলে হিট উৎপন্ন তো হতেই থাকবে,তাই ইঞ্জিনের এভারেজ তাপমাত্রা বেড়ে যাবে,যেটা ইঞ্জিনের জন্য ভাল নয়।🔥🔥

💔ফুয়েল ইঞ্জেকশন বা কার্বুরেটর বাইকে ব্যাটারি ইসুঃ-

এছাড়া আইডল আরপিএম কম রাখলে যেকোন বাইকে ব্যাটারি চার্জিং জনিত সমস্যাতো আছেই। বিশেষ করে ডিসি হেডলাইট বাইকে আইডল আরপিএম কম থাকলে ব্যাটারির উপর প্রেসার পড়বেই, মিস নাই।
কারন ম্যানুয়াল বইতে যেই আইডল আরপিএম রাখা আছে, সেই কন্ডিসানে জেনারেটর থেকে যেই পাওয়ার আসে সেটা বাইকের ইলেক্ট্রিকাল লোড গুলার ওয়াটের যোগফলের কাছা কাছি ভ্যালুতে ব্যাটারিকে উক্ত ওয়াট বিদ্যুৎ প্রদান করে।
তাই আইডল আরপিএম কম থাকলে উক্ত পাওয়ার কম পাবে ব্যাটারি,
যেটা ব্যাটারির আয়ূ কমাই দিবে।

বিঃদ্রঃ
আইডল আরপিএম বেশি হলে তেল বেশি খায় না,কারন খেয়াল করে দেখেন আপনার বাইক রাইডের খুব সামান্য সময়তেই আইডল আরপিএমে থাকে, তাই এটা অপ্টিমালে থাকলে আপনার কাছে বেশি মনে হলেও মাইলেজে ইমপ্যাক্ট পড়ে না লিটেরেলি।

💦💦💦💦
তাই পরিশেষে বলতে চাই,অবশ্যই ইঞ্জিন ফুল গরম করে এরপর আপনার বাইকের ম্যানুয়াল বইতে যেই আরপিএম রাখতে বলা হইসে,উক্ত আরপিএম রাখবেন। এটা কোন ভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

 

লিখেছেন- শাহেদ আহসান আবীর

Related Posts

error: Content is protected !!