বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়মকানুন এবং সতর্কতা

বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য সবার আগে যে বিষয়টি মনে রাখা জরুরি, তা হচ্ছে সতর্কতা। কথায় বলে “সতর্কতার কোন মার নেই”। আসলে একটু ভেবে-চিন্তে, বুদ্ধি খাটিয়ে আর কিছু নিয়ম মেনে সাবধানতার সাথে চললে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়। যদিও একজন বাইকার তার অভিজ্ঞতার বলে আস্তে আস্তে বিষয়গুলো শিখতে থাকে, তারপরও নবীন কিংবা প্রবীন যে কোনো চালকের উচিত কিছু বিষয় জানা এবং তা  মেনে চলা।

বৃষ্টিতে রাস্তা-ঘাট হয়ে ওঠে পিচ্ছিল, কর্দমাক্ত। কখনো বা ডুবে যায় পানিতে। মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশে বৃষ্টির পানি প্রবেশের ফলে অনেক সময় সেটা ঠিক আগের মতো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আসুন দেখে নেই কোন বিষয়গুলো মেনে চললে বর্ষার মৌসুমেও নিরাপদে বাইক চালানো সম্ভব।

তাড়াহুড়ো পরিহার করুন

ধরুন মটরসাইকেল চালাচ্ছেন। এমন সময় হটাৎ করে মুষুলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। আপনার সাথে কোন রেইন কোর্ট, ছাতা কিংবা নিরাপদে দাঁড়ানোর জন্য কোনো জায়গা আশে পাশে নেই। এমন সময় আমরা সাধারণত যে ভুলটি করি তা হচ্ছে, বাইক দ্রুত চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা। আসলে এই সময় শুধু আপনি  নন বরং আপনার আশেপাশের প্রায় সব লোকজন, যানবহন একই চিন্তা করে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে বেশ তড়িঘড়ি করে। দুর্ঘটনা ঘটার এটি অন্যতম কারণ। এমন মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করুন। একটু ভিজলে কি বা যায়-আসে। পারলে উপভোগ করুন। ধীর মস্তিস্কে নিরাপদ যায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিন।

হেলমেট এবং চোখের দৃষ্টি

বর্ষাকালে ফুল ফেইস হেলমেট ব্যাবহার করাই উত্তম। প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় পরিষ্কার দৃষ্টি সবচেয়ে বেশি জরুরি। এছাড়াও আরেকটি ব্যাপার হলো, বৃষ্টির পানি হেলমেটের গ্লাসে পড়লে এটা হেলমেটের গায়ে লেগে থাকতে চায়। ফলে দৃষ্টিশক্তি আরো বেশি বাধাপ্রাপ্ত হয়। হেলমেটের সামনের গ্লাসে যেন বাস্প লেগে না থাকে তার জন্য আপনি পিন লক টাইপের এন্টি ফগ ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। বৃষ্টির সময় হেলমেটের গ্লাস খোলা থেকে বিরত থাকুন, কারণ হেলমেটের ভিতরে একবার পানি ঢুকলে সেটা পরিষ্কার করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

Pin Lock Anti-fog device

অন্যান্য গাড়ি থেকে দূরত্ব স্বাভাবিকের থেকে বেশি রাখুন

বৃষ্টির সময় স্বাভাবিকের থেকে ব্রেকিং ডিসটেন্স প্রায় দ্বিগুন রাখতে হবে। এর দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, আপনি শুকনো রাস্তার মত অতি সহজে ভেজা রাস্তায় বাইক নিয়ে থামতে পারবেন না। আর দ্বিতীয়ত, যেহেতু আপনার দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিকের থেকে কম থাকবে হেলমেটে বৃষ্টির পানি পরে থাকার কারণে, তাই আপনি মটরসাইকেল নিয়ন্ত্রনের সময় কমে যাবেন।

রাস্তার কোন পাশের লেন বেশি নিরাপদ ?

দুই লেন বিশিষ্ট রাস্তার ভিতরের দিকের লেনে সাধারনত পানি বেশি জমতে দেখা যায়। কারণ রাস্তা দিয়ে ভাড়ি যানবাহন যেমন বাস-ট্রাক যাওয়ার ফলে খাদ তৈরী হয় যেখানে বেশ খানিকটা পানি জমে থাকে। এসব রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সাবধানে থাকবেন। আর রাস্তায় যদি কোন রোড ডিভাইডার না থাকে তাহলে রাস্তার মাঝের দিকটাই সাধারনত বেশি নিরাপদ হয়।

গভীর পানি

পানি জমে থাকা গর্তের গভীরতা কতটুকু এবং তাতে কোন বাধা আছে কিনা যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, এমন পরিস্থিতিতে সাবধানে ধীরে ধীরে, একই গিয়ারে সামনে আগান। চেষ্ঠা করুন ব্রেক না ধরতে। বিশেষত ঢাকা শহরে কোথাও আচমকা কোন ম্যানহলের ঢাকনা খোলা থাকলে, বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া এই গর্তের মুখ বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এক্ষেত্রে উচিত রাস্তা অনুসারে একটু বড় সাইজের যানবহনকে পিছন থেকে অনুসরণ করা। সামনের গাড়ির পিছনের একটি চাকা অনুসরণ করলে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা একেবারে কমে যাবে। আপনি চাইলে রিকশা কিংবা সি,এন,জি-কেও ফলো করতে পারেন।

manhole

বাইকের সঠিক টায়ার নিশ্চিত করুন

বৃষ্টিতে মটরসাইকেল চালানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল টায়ার এর গ্রিপ। তাই আপনার টায়ার এর গ্রিপ ভালো থাকতে হবে।নির্দিষ্ট সময় পর টায়ার পরিবর্তন করুন। টায়ার প্রেসার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। চাকার হাওয়ার প্রেসার যদি ঠিক না থাকে তাহলে টায়ারের খাজ গুলো ভেজা রাস্তায় ঠিক মতো কাজ করবে না।

গতি এবং কিছু নিয়মকানুন

বৃষ্টিতে আপনার বাইকের গতি কমিয়ে আনুন, এতে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা কমে যাবে। মুশুলধারে ভাড়ী বর্ষণের সময় পারকিং এবং ইন্ডিকেটর লাইট জ্বালিয়ে দিন। এতে আশেপাশের মানুষ এবং যানবাহন সহজে আপনার অবস্থান নিশ্চিত করতে পারবে। মোচড় নেয়ার সময় বাইক কম কাত করুন। বর্ষাকালে ভাল মানের রেইনকোর্ট সাথে রাখুন। দিন ব্যাপী ভ্রমণে বের হলে সব ধরণের রেইন গিয়ার সাথে নিন, নয়তো দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। কম গতিতে পিছনের ব্রেক চাপার চেষ্টা করুন। পারলে ক্লাচ কম ধরুন এবং গতি কমাতে থ্রটল ব্যবহার করুন।