শীতকালে মোটরসাইকেল রাইডিংয়ের কিছু টিপস

বেশ কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশে বাইক রাইডিংয়রে প্রবনতা খুব একটা লক্ষ্য করা যেত না। কিন্তু বিগত কয়েক বছর থেকে বাইকারদের মাঝে বাইক রাইডিং এবং লং ট্যুর যেন প্যাশনে পরিনত হয়েছে। একদিকে যেমন বেড়েছে বাইকের প্রতি মানুষের প্যাশন ঠিক অন্যদিকে বাড়ছে দূর্ঘটনার প্রবনতা। আর বেশিরভাগ বাইক দূর্ঘটনা লক্ষ্য করা যায় শীতকালে। কেননা শীতকালে কুয়াশা এবং শৈত্যপ্রবাহের কারনে রাস্তায় ভালভাবে বাইক চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। অন্যান্য মোটরযান যেমন বাস, কার, মাইক্রো বাস ইত্যাদিতে যেমন যেকোন সিজনের জন্য প্রোটেকটিভ এলিমেন্টস থাকে। কিন্তু মোটরসাইকেলে একজন বাইকারকে প্রোটেকশনের জন্য তেমন কিছুই থাকে না। তাই একজন রাইডারকে রোদে পুড়তে হয়, বৃষ্টিতে ভিজতে হয় এবং ঠান্ডার সময় অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়।

অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতকালে বাইক রাইড করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমাদের দেশে শীতকাল মূলত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অনেকেই রাইডিংয়ের সময় প্রোপার রাইডিং এক্সেসরিস ব্যবহার করেন না।  তাই আজকে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব শীতকালে রাইডিংয়ের সময় কি কি সাবধানতা অবলম্বন করবেন এবং কি কি এক্সেসরিস সাথে রাখবেন।

শীতে মোটরসাইকেলের প্রস্তুতিঃ অনেকেরই মোটরসাইকেল শীতকালে সকালবেলা স্টার্ট নিতে প্রবলেম করে অথবা স্টার্ট নিলেও পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষকরে যাদের বাইকে কার্বুরেটর ফুয়েল সিস্টেম রয়েছে তারা এই সমস্যাটি বেশি ফেস করেন। তাই সকালবেলা বাইক স্টার্ট দেয়ার পর বাইকটি কিছুক্ষন সচল রাখুন। এর ফলে ইঞ্জিনের সাথে ইঞ্জিন অয়েল ভালভাবে মিশে যাবে এবং বেশ ভাল পার্ফরমেন্স পাবেন।

রাইডিং জ্যাকেটঃ শীতকালে রাইডিং জ্যাকেট অনেক গুরুত্বপূর্ন। তবে শুধুমাত্র রাইডিং জ্যাকেট পড়লেই হবে না আর ভিততের ইনারটিও পরতে হবে। এটি আপনাকে আপনার শরীরের উষ্ণতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া ঠান্ডার পরিমান খুব বেশি হলে ভিতরে পশমি সোয়েটার পড়তে পারেন। রাইডিং জ্যাকেট শুধুমাত্র ঠান্ডার হাত থেকেই নয় বরং ছোট দূর্ঘটনায় আপনার শরীরকে আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করবে।

 

হ্যান্ড গ্লোভস এবং নেক ওয়ারমারঃ রাইডিংয়ের সময় অনেকেই হ্যান্ড গ্লোভস ব্যবহার করেন না। শুধুমাত্র যে শীতকালে ব্যবহার করতে হবে তা নয় বরং হাতের সুরক্ষার জন্য সব সময় হ্যান্ড গ্লোভস ব্যবহার করা উচিৎ। অনেকেই দেখা যায় হাফ গ্লাভস পরে বাইক রাইড করেন। যা মোটেও উচিৎ নয়। কেননা দূর্ঘটনা এবং ঠান্ডার হাত থেকে এটি আপনাকে রক্ষা করবে না। তাই অবশ্যই ফুল হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করুন। এছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ন বস্তু হল নেক ওয়ারমার। কারন রাইডিং জ্যাকেট এবং হেলমেট পড়লেও গলা এবং ঘাড়ের যায়গাটুকু ফাঁকা থেকে যায়। ফলে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার একটা প্রবনতা থেকেই যায়। তাই রাইডিংয়ের সময় অবশ্যই নেক ওয়ারমার ব্যবহার করুন।

এন্টিফগ ভাইসরঃ শীতকালে বাইক রাইডিংয়ের সময় রাইডাররা বিরক্তিকর যে জিনিসটি ফেস করেন তা হল হেলমেটের ভাইসর ঝাপসা হয়ে যাওয়া। যারা শীতকালে নরমাল ভাইসর ব্যবহার করেন তারা এই সমস্যার সম্মুখীন হন। যার ফলে অনেকটা অনুমান করে বাইক রাইড করতে হয়। যা অনেক ঝুঁকিপূর্ন এবং দূর্ঘটনার অন্যতম কারন। তাই হেলমেট কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিন যে হেলমেটে এন্টিফগ ভাইসর আছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে আলাদা করে তা লাগিয়ে নিন। 

ফগ লাইটঃ শীতকালে কিংবা হাইওয়ে রাইডিংয়ের সময় ফগলাইট বেশ কাজে দেয়। যদিও আমাদের দেশে ফগ লাইট ব্যবহারে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মোটরসাইকেলের স্টক হেডলাইটের আলো হাইওয়ে কিংবা শীতকালের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তবে শীতকালে হলুদ কালারের ফগ লাইট ব্যবহার করলে বাড়তি সুবিধা পাবেন। কেননা সাদা কালারের ফগ লাইটে শীতকালে খুব একটা পরিস্কার দেখা যায় না।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও আরও কিছু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। যেমন শীতকালে টায়ার প্রেশার কিছুটা কম রেখে বাইক রাইড করুন। এতে ভাল গ্রিপ পাবেন। কেননা শীতকালে রাস্তাঘাট কিছুটা পিচ্ছিল থাকে এবং চাকা স্কীড করার প্রবনতা দেখা যায়। এছাড়া শীতকালে নাইট রাইডিংয়ের সময় নাইট ভিশন চশমা পড়তে পারেন। এতে বেশ ভাল এবং পরিস্কার ভিউ পাবেন।

অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতকালে বাইক রাইডিং বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাই পর্যাপ্ত সেফটি এবং সাবধানতা অবলম্বন করে বাইক রাইড করুন। নিজে সচেতন হন এবং অন্যদের সচেতন করুন।

লিভ ফ্রি, রাইড সেফ ./.

Related Posts

error: Content is protected !!