Shell Advance 20W50 মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ইউজার রিভিউ

ইঞ্জিনওয়েল মোটরসাইকেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম, যা ইঞ্জিনকে স্মুথ ভাবে চলতে সাহায্য করে। এখন যেভাবে মানুষ ইঞ্জিন ওয়েল নিয়ে ভাবে আগে এতোটা ভাবতো না একটা হলেই হলো। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতে অনেক কিছু দেখে ব্যবহার করি, যেমন ভাল ব্রান্ড, সঠিক গ্রেড।

প্রতিটা বাইকের কিছু নির্দিষ্ট গ্রেড করা থাকে সেই গ্রেড অনুযায়ী ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত প্রতিটা বাইকের সাথে ম্যানুয়াল বই দেয় যেটাতে বাইকের যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া থাকে সেখানেই একটি ইঞ্জিন ওয়েল গ্রেড উল্লেখ করা থাকে, যা আপনার বাইকের জন্য নির্দিষ্ট একটি গ্রেড। বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের মোট ৩ ধরনের ইঞ্জিন ওয়েল পাওয়া যায় মিনারেল, সিন্থেটিক এবং সেমি-সিন্থেটিক। ম্যানুয়াল বই ছাড়াও আপনার বাইকের নাম মডেল লিখে গুগলে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আপনার বাইকের জন্য নির্দিষ্ট ইঞ্জিন ওয়েল গ্রেডটি।

বাংলাদেশের বাজারে এখন অনেক ইঞ্জিন ওয়েল ব্রান্ড পাওয়া যায়, কিন্তু সব গুলোর মধ্যে থেকে আপনার বাইকের জন্য কোনটি ভাল হবে সেটা অবশ্যই আপনাকেই বেঁছে নিতে হবে। আর ইঞ্জিন কেনার সময় দেখে নিবেন সেটি আসলেই বাইকের জন্য কিনা, প্রোডাক্টের গাঁয়ে যদি ‘4T’ লিখা থাকে তাহলে বুঝবেন এটি ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের জন্য। সারা বিশ্বে ইঞ্জিন ওয়েলের সার্টিফিকেশন দেয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান API, JASO, ILSAC, ASTM ইত্যাদি। যাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে API এবং JASO। ইঞ্জিন ওয়েলের কন্টেইনারে সাধারণত লেখা থাকে API এভাবে API SJ, API SL, API SN, API SM, যার মধ্যে SN হচ্ছে সর্বোচ্চ মানের। JASO এর ক্ষেত্রে JASO-MA অথবা JASO-MA2 থাকে যার মধ্যে MA2 ১৫০ এর অধিক সিসির বাইকগুলোর জন্য অগ্রাধিকার পাবে সাধারণত এই সাধারণ বিষয়গুলোর উপর খেয়াল রাখলেই আপনি আপনার বাইকের জন্য সঠিক ইঞ্জিন ওয়েলটি বেঁছে নিতে পারবেন।

বাংলাদেশের বাজারে এখন সাধারণত সিন্থেটিক ইঞ্জিন ওয়েল ১০০০-১৫০০, সেমি-সিন্থেটিক ৭০০-১০০০ এবং মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েলটি ৪০০-৬০০ এর মধ্যে পেয়ে যাবেন। আজকে আপনাদের সাথে যে ইঞ্জিন ওয়েলটি নিয়ে কথা বলবো সেটি হলো বাংলাদেশের বাজারে অন্যতম নাম শেল এডভান্স। যারা দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের বাজারে তাদের পণ্য সেবা দিয়ে আসছে। আমি আজকে শেলের 20W50 গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েলটি নিয়ে কথা বলবো। যেটি মূলত বাজাজের সকল বাইকের জন্য নির্দিষ্ট গ্রেড। আর এটি একটি মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল শেলের এই গ্রেডের সিন্থেটিক ইঞ্জিন ওয়েলটি এখনো বাজারে আসে নি, তবে আশা করছি শেল খুব দ্রুত এটি বাজারে নিয়ে আসবে। তবে শেল ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানীর এই গ্রেডের সিন্থেটিক পাবেন।

শেলের বাংলাদেশে কোনো উৎপাদন কেন্দ্র নেই, সাধারণত শেল ভারত, সিংগাপুর, হংকং থেকে আমদানী করে বাংলাদেশের বাজারে বাজারজাতকরন করে। আর বাংলাদেশে শেলের ডিস্ট্রিবিউটোর র‍্যাংকস পেট্রোলিয়াম লিঃ।  শেলের নকল ইঞ্জিন ওয়েল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে তবুও সন্দেহ দূর করতে আসল শেল এডভান্স ইঞ্জিন ওয়েলটি পেতে দেশব্যাপী শেলের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে আপনার নিকটস্থ ডিলার পয়েন্ট থেকে কিনতে পারেন। এছাড়াও আপনাদের সুবিধার্থে শেলের ইঞ্জিন ওয়েল পাবেন বাংলাদেশের নামকরা বিশ্বস্থ অনলাইন শপ Pickaboo.com থেকে।

আমার বাজাজ পালসারে টেস্টের জন্য বেঁছে নেই শেল এডভান্স 20W50 কে, শেলের এই ইঞ্জিন ওয়েলটির সার্টিফিকেশন বেশ ভালই লাগলো দেখে API-SL, JASO-MA । এর আগে আমি মবিল সুপার ফোর টি ব্যবহার বেশ কিছুদিন ব্যবহার করেছি, তারপর একটু ভিন্নতা আনার ইচ্ছা হলো। দিলাম শেল এডভান্স প্রথম ১৫-২০ কিঃমিঃ রাইডে তেমন কিছু বুঝতে পারি নি। তবে ২০ কিঃমিঃ এর পর থেকে বুঝতে পারছিলাম ইঞ্জিন আগের চেয়ে স্মুথ হচ্ছে। কিছুক্ষন পর মনে হচ্ছিলো ইঞ্জিন সাউন্ড একদম স্মুথ হয়ে গেছে। আর আগের মবিল ব্যবহারের সময় একটা সমস্যা খুব বেশি ভুগিয়েছে সেটা হলো ইঞ্জিন হিটিং, প্রায় ঘন্টা খানেক চালানোর পর ইঞ্জিন প্রচন্ড হিট হতো। কিন্তু শেল দিয়ে আমি লং রাইড করেছি প্রায় ২৫০কিঃমিঃ যার মাঝে একবার বিরতি দিয়েছিলাম, এই সময়ে ইঞ্জিন হিটিং কোনো সমস্যা আমি পাই নি একদম স্বাভাবিক ছিলো। আর এটাতে ইঞ্জিনের সাউন্ড এতোটা স্মুথ পেয়েছি যা অন্য কোনো ইঞ্জিন ওয়েলে পাই নি এর আগে।

বাইক চালানোর সময় বাইকের গিয়ার শিফটিং ঠিক রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, আর গিয়ার যদি খুব হার্ড হয় তাহলে ইঞ্জিন ওয়েলে সমস্যা আছে। শেল ব্যবহারের পর আমার বাইকের গিয়ার শিফটিং অনেক বেশি স্মুথ হয়েছে এক্ষেত্রে আমি শেলকে ১০০/১০০ দিবো। কেননা এরকম স্মুথ গিয়ার শিফটিং এর আগে আমি পাই নি। এছাড়া বাইকের মাইলেজ অনেকটা ইঞ্জিন ওয়েলের উপর নির্ভর করে, শেল ব্যবহারের আগে আমি মাইলেজ পেতাম ৪১ এবং এখন পাই প্রায় ৪৩-৪৪কিঃমিঃ। সব মিলিয়ে আমার কাছে বেশ ভাল একটি ইঞ্জিন ওয়েল মনে হয়েছে শেল, এর তেমন কোনো খারাপ দিক নেই বললেই চলে। তবে এই মিনারেলে লং রাইড করলে একটানা এর আঠালো ভাব টা একটু দ্রুত কমে যায়। আমি সাধারণত ১০০০ কিঃমিঃ এই চেঞ্জ করে ফেলি কিন্তু মিনারেলে সাধারণত ১২০০ কিঃমিঃ রাইড করা যায়। তবে লং রাইড করলে ১০০০ কিঃমিঃ এই চেঞ্জ করা ভাল। আশা করি শেলের 20W50 গ্রেডের সিন্থেটিক ওয়েলটি বাজারে নিয়ে আসলে আর কোনো সমস্যা হবে না। তবে ৬হাজার থেকে ৭ হাজার কিঃমিঃ পরে সিন্থেটিক ব্যবহার করা ভাল, নতুন অবস্থায় মিনারেল ইঞ্জিনের জন্য অনেক ভাল।

বিগত ১১ বছর থেকে সবথেকে বেশি ইঞ্জিন ওয়েল বিক্রিত কোম্পানী এই ব্রিটিশ-ডাচ যৌথ শেল। বাংলাদেশে এর ডিস্ট্রিবিউটর র‍্যাংকস পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যেটি কিনা র‍্যাংকস এর একটি অঙ্গসংস্থান ।

প্রতিবার বাইক চালানোর আগে স্টার্ট করে ৫-৬ মিনিট রেখে দিবেন আরপিএম না টেনে এতে বাইকের ইঞ্জিন ভাল থাকে। আর হ্যাঁ প্রতিবার ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহারের পর ইঞ্জিন ওয়েলের কন্টেইনারটি কেটে ফেলুন কেননা কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব কন্টেইনার নিয়ে ভেজাল ইঞ্জিন ওয়েল বাজারজাতকরণ করে থাকে।

Related Posts

error: Content is protected !!