বিশ্বের নামকরা মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী জাপানী প্রতিষ্ঠান ইয়ামাহা। আর এই ব্রান্ডের প্রতি মোটরসাইকেলিস্টদের আস্থা সেই অনেক আগে থেকেই আর তাই অনেক বাইক প্রেমীদের মুখে শুনে থাকবেন “ইয়েস ইয়ামাহা”। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তার কোন কমতি নেই। বিগত ১৪ থেকে ১৬ই সেপ্টেম্বর ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব আয়োজন করেছিল একটি জমকালো বাইক ট্যুরের যার স্পন্সর ছিল ইয়ামাহা বাংলাদেশ এবং গন্তব্য ছিল সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা পাহাড়ী জনপদ, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ভ্যালী। দিনকে দিন বাইকারদের মাঝে পার্বত্য অঞ্চল ভ্রমণ যেন পিপাসায় পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত অনেকেই মোটরসাইকেল চেপে ঘুরতে যাচ্ছেন বান্দরবন, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। পাহাড়ী রাস্তায় রাইডিং যেমন আনন্দের তেমনি কিছুটা চ্যালেঞ্জিংও বলতে হবে। পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণের জন্য দরকার পাওয়ারফুল ইঞ্জিনসমৃদ্ধ মোটরসাইকেল, রাইডিংয়ে দক্ষতা এবং প্রপার সেফটি গিয়ার।
সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র-শনিবারকে হাতে রেখেই ট্যুরের ছক আঁকা হয়েছিল। আর তাই শুক্রবার ভোর-রাত ৪টা বাজতে না বাজতেই বাইকাররা সমবেত হয় তেজগাঁওতে অবস্থিত ইয়ামাহা থ্রি-এস সেন্টারে। শেষ রাতেই বাসা থেকে বেড়িয়ে পরার অভিজ্ঞতাও ছিল বাইকারদের কাছে বেশ আনন্দের। ৯০টি ইয়ামাহা বাইক, রাইডার এবং পিলিওনসহ সর্বমোট ১২০ জন এই ট্যুরে অংশগ্রহণ করে। যেহেতু এটি একটি লং ট্যুর তাই সেফটির কোন ঘাটতি ছিল না। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মোটরসাইকেলিস্টদের পড়নে ছিল ইয়ামাহা এবং ফাস্ট গিয়ার এক্সেসরিস।
নির্ধারিত গতিতে গ্রুপ রাইডিংকে সহজ করতে বাইকারদেরকে কয়েকটি ছোট গ্রুপে বিভক্ত করে দেয়া হয়। সারিবদ্ধভাবে বাইকারদের পথচলা ছিল দেখার মত। ৯০ জন সেফটি গিয়ার পরিহিত ইয়ামাহা বাইকার ওই দিন ঢাকা-চিটাগাং মহাসড়ক কাঁপিয়েছিল বলা যায়। খাগড়াছড়ি শহর পেড়িয়ে দীঘিনালা (উপজেলা আনসার ও ভিডিপি অফিস) পৌঁছতে বেজে গিয়েছিল বেলা ১১টা। দীঘিনালা থেকে সাজেকের দূরত্ব মাত্র ৪৪ কিঃমিঃ। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০ টা এবং বিকেল সাড়ে ৩ টায় আর্মিদের একটি স্কোয়াড সাজেক পর্যন্ত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়া অন্য সময়ে কেউ চাইলেও সাজেকের উদ্দ্যেশ্যে দীঘিনালা থেকে যেতে পারে না। হাতে ৪ ঘন্টারও বেশি সময় পড়ের স্কোয়াড ধরতে।
এই সময়টা বাইকাররা কাটিয়েছিল দীঘিনালায় ইয়ামাহার সার্ভিসিং এবং স্পেয়ার পার্টস ডিলার শপ মেহেদী মটরস-এ। বেশ কিছু কাল যাবৎ সাজেক যাওয়ার পথে একটি ওয়ার্কশপ বাইকারদের বেশ প্রতিক্ষিত ছিল। সাজেক যাওয়ার পথে ইয়ামাহা বাইক চালকদের সার্ভিসিংয়ে জন্য যাবতীয় সাপোর্ট দিতে মেহেদী মটরস বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাল মানের মেকানিক পাওয়া তো দূরের কথা, একটি সাধারণ ওয়ার্কশপ খুঁজে পাওয়াও দূর্ষ্কর।
সার্ভিসিং, দুপুরের খাবার, আড্ডা, খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে বেলা সাড়ে ৩টায় আবার শুরু হয় পথ চলা। ভয়ংকর সুন্দর পাহাড়ি পরিবেশ আর পিচ ঢালা আঁকা-বাকা রাস্তায় সাড়ি সাড়ি ইয়ামাহার বাইকের গম-গম আওয়াজ যেন ইয়ামাহার স্লোগানকে (“Revs Your Heart”) বাস্তবে রূপ দান করেছিল। বিকেল ৫টার মধ্যে ইয়ামাহা রাইডাররা সাজেক ভ্যালিতে পৌঁছে যায়। বাইকারদের রাতযাপনের জন্য হোটেল এবং কটেজের তালিকায় ছিল অবকাশ, প্যারাডাইস, মেঘ কাব্য এবং মেঘ মালা। স্নাক্স আর ডিনার করে কেউ কেউ ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়লেও ডিজে পার্টিতে মন মাতিয়েছেন অনেকেই।
সাজেকের আসল সৌন্দর্য্য উপভোগের সময় সকাল। আর তাই প্রকৃতির রূপ দেখতে সকাল সকাল উঠে পড়েছিল প্রায় সবাই। সকাল সাড়ে ৮ টায় অবকাশে ব্রেক ফাস্টের পর চলে ফটোসেশন, আড্ডা, এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি। এই ট্যুরের অন্যতম সেরা ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছিল “এক সাড়ি Yamaha R15 V3”. ইয়ামাহার প্রায় সকল মডেলের বাইক এই ট্যুরে ছিল। এই ট্যুরের সব থেকে বড় অংশ ছিল ফেজার এবং এফজেডএস রাইডার। বেশিরভাই বাইকারদের মতে বাংলাদেশের সেরা ট্যুরিং বাইক হচ্ছে এই Yamaha Fazer এবং Yamaha FZs. কম্ফোর্টেবল রাইডিং পজিশন, অসাধারণ ব্রেকিং, সাসপেনশন, পাওয়ারফুল ইঞ্জিন এবং প্রশস্ত ট্যায়ারের কারণে হিল রাইডিংয়ে বাইকারদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখতে হবে ইয়ামাহার এই বাইক দু’টিকে।
মূলত ট্যুরের এই ২য় দিনটিই ছিল সাজেক উপভোগের সময়। আর তাই অবকাশে দুপুরের খাবার সেড়ে যে যার মত আনন্দে মেতে ছিল। এই আনন্দে আরো খানিকটা বাড়তি মাত্রা হয়ে বাইকারদের সারপ্রাইজ দিতে নিজেই চলে আসেন এসিআই মোটরসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জনাব সুব্রত রঞ্জন দাশ। ইয়ামাহা রাইডাররা অবশ্যই তাদের এই বাইকিং জগতের একজন অভিভাবককে পেয়ে বেশ খুশি হয়েছিল। তার পদচারনা, অনুপ্রেরণা আর দিক নির্দেশনা বাইকারদের মাঝে উৎসাহ জাগিয়েছিল।
আগামীকাল ফেরার পালা তাই আজই সময় মেতে ওঠার। সন্ধ্যার পর থেকে গল্প, গান, আড্ডায় মজেছিল সবাই। রাতের খাবারের পরও সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে ডিজে পার্টি। পরের দিন সকালেও সবার ঘুম ভাঙ্গতে দেরী হল না। কুয়াশাচ্ছন্ন সাজেকের দৃশ্য, কে বা মিস করতে চায়। কিন্তু সময় ঘনিয়ে এল ফেরার। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে সবাই রওনা শুরু করল। দীঘিনালা পৌঁছাতে বেজে গেল বেলা ১২টা। দুপুরের লাঞ্চ শেষে আবার শুরু হল ছুটে চলা আর গন্তব্য ঢাকা। আসার সময়ও ৯০টি বাইককে কয়েকটি ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত করে দেয়া হয়েছিল। গ্রুপ রাইডিংয়ের কৌশল মেনে ২-৩ টা ব্রেক দিয়ে প্রায় ৩২০ কিঃমিঃ পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে সকলে ঢাকা পৌঁছায়।
সব মিলিয়ে বড় পরিসরের একটি ট্যুর বলতে হবে। আর এটি সম্ভব হয়েছে ইয়ামাহা বাংলাদেশের সার্বিক সহায়তার কারণে। অদূর ভবিষ্যতে এর থেকে আরো অনেক বড় ট্যুরে এসিআই মটরসের কন্ট্রিবিউশন থাকবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।