বাজাজ পালসার ১৫০ টুইন ডিস্ক ৩৫০০ কিঃমিঃ ইউজার রিভিউ

বাইকের প্রতি নেশাটা ছোট বেলা থেকেই, গত ১৮/০৫/১৯ তারিখে আমার নিজের প্রথম বাইক পালসার ইউজি ৫ কিনি। অনেক আগে থেকেই পালসারের প্রতি একটা আলদা ভাল লাগা ছিলো। সেই ছোট থেকে একটা বাইকই পছন্দের তালিকায় ছিলো সেটা হলো পালসার। আজকে আপনাদের সামনে আমার ৩৫০০ কিঃমিঃ রাইড এর একটি রিভিউ শেয়ার করবো, এর ভাল-মন্দ দিক গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

বাজাজ বাংলাদেশের বাজারে অন্যতম সেরা নাম, এবং দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের বাজারে বেশ ভাল যায়গা করে আসছে বাজাজ। আর বাজাজের মধ্যে অন্যতম একটা নাম হচ্ছে পালসার। সর্বশেষ তারা পালসার ১৫০ এ টুইন ডিস্ক ব্যবহার করে সাথে বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে। নতুন বাইকে যেহেতু প্রথমেই ব্রেক ইন প্রিয়ড একটা ব্যাপার থাকে সেহেতু প্রথমে তেমন কিছু পরীক্ষা করার সুযোগ থাকে না। প্রথমেই বলবো এর স্পেসিফিকেশন নিয়ে,

এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৪৯ সিসির ফোর স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলেন্ডার, BS4 ইঞ্জিন, আর যাকে ঠান্ডা করার জন্য রয়েছে এয়ার কুলড সিস্টেম। এর ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ১৩.৮ বিএইচপি ৮০০০ আরপিএমে এবং মাক্সিমাম টর্ক ১৩.৪ নিউটন মিটার ৬০০০ আরপিএমে। এতে ব্যাবহার করা হয়েছে ৫ স্পিড গিয়ার বক্স। বাইকটি নিয়ে অনেক রিভিউ, অনেক মন্তব্য দেখেছি, আজ নিজের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছি, আমি মোটামুটি ব্রেক ইন প্রিয়ড মেনে চলার চেষ্টা করেছি ১০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত, তবে ২০০০ এর মধ্যে আমি টপ চেক করার চেষ্টা করিনি। বাইক কিনে ২য় দিন আমি কুড়িগ্রাম-দিনাজপুর-কুড়িগ্রাম প্রায় ২৫০ কিঃমিঃ রাইড করি যা নতুন বাইক হিসেবে লং রাইড ই বলা যায়।

যেহেতু ইঞ্জিন একদম নতুন তাই কিছুটা বেশি হিট হচ্ছিলো, সেজন্য আমি চেষ্টা করেছি প্রায় ৫০ কিঃমিঃ পরপর ৫-১০ মিনিট রেস্ট দেয়ার জন্য। আর এই ২৫০ কিঃমিঃ রাইডে আমি আরপিএম ৫হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজারে রাখার চেস্টা করেছি যেখানে স্পিড পেয়েছি ৬০-৬৫। এভাবে ৩০০ কিঃমিঃ যাবার পরেই আমি প্রথম ইঞ্জিন ওয়েল ড্রেইন দেই। এবং শেল এডভান্স 20W50 গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েল দেই। একটা কথা বলে রাখা ভাল আমার ২০০০কিঃ মিঃ এ আমি ৪ টা ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ করি। কেননা এই নতুন অবস্থায় যতো তারাতারি ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ করা যায় ততোই ভাল। এবং শেল ইউস করে আমি সন্তুষ্ট কেননা এটি বাইকের ইঞ্জিন কে এতোটাই স্মুথ রাখে বলার বাইরে। এভাবে মাত্র ১১দিনে আমি ১০০০ কিঃমিঃ রাইড সম্পন্ন করি এবং প্রথম ফ্রি সার্ভিস করাই। বাজাজের বাইকে আমি সন্তুষ্ট হলেও তাদের সার্ভিস সেন্টারের কাজে আমি মোটেও সন্তুষ্ট না চরম হতাশ, বাংলাদেশের একটা লিডিং মটরসাইকেল ব্রান্ড উত্তরা মটরস এর সার্ভিস সেন্টার আরও এগিয়ে থাকা উচিৎ ছিলো। একটা জিনিস খুব অবাক প্রতিদিন যতোই চালাচ্ছি বাইক যেন দিন দিন ততোই হালকা হচ্ছে। এতে প্রথম অবস্থায় আমি প্রায় ৪৮ কিঃমিঃ মাইলেজ পেয়েছি, অনেকে বলেছিলো এর মাইলেজ অনেক কম ৪০ এর নিচে এটা নিয়ে একটু ভয়ে ছিলাম কিন্তু মোতেও সত্যি না আমি ৭ হাজার এরপিএমের উপরে যখন চালিয়েছি অর্থাৎ ব্রেক ইন প্রিয়ড এর পর যখন বাইক ৮০+ স্পিডে রেগুলার চালিয়েছি তখন ৪৫ এর মতো পেয়েছি। একটা জিনিস নিজের কাছে মনে হলো যে এটি ইকোনমি স্পিডে চালালে ৪৫+ মাইলেজ অনায়েশে পাওয়া যাবে। তাই মাইলেজ নিয়ে কোনো ভয় নেই।

এর ওজন পূর্বের পালসারের মত ১৪৫ কেজি হলেও এটাতে ওজন টা কিছুটা বেশি মনে হয়েছে। তবে এটা কোনো সমস্যা মনে হয় নি বরং আমার কাছে ভাল লেগেছে। আর এর হাইট সামান্য বেশি আগের পালসারের তুলনায়। এর সবচেয়ে ভাল লাগার জিনিস যেটা সেটা হলো এর সিটিং পজিশন এবং ফুট রেস্ট যা আগের তুলনায় অনেক স্পোর্টই লুক দিয়েছে আর হ্যান্ডেল বার টা সামান্য নিচু করে যার ফলে এর সিটিং পজিশন, হ্যান্ডেলবার এবুং ফুট রেস্টের একটা সুন্দর সমন্বয় হয়েছে আর যেটা আপনাকে দিবে একটা আরামদায়ক রাইড, আশা করি দীর্ঘ সময় রাইড করেও আপনি কোন রকম বেথা বা সমস্যা অনুভব করবেন না। এটিতে বলা আছে ১৫ লিটার ফুয়েল ধরে এর ফুয়েল ট্যাংকে আমিও বেশ ভালই হিসাবে পেয়েছি ১৫ লিটারের সামান্য বেশি ঢুকেছে, তবে এটা আসলে পেট্রোল পাম্প গুলোর উপরে নির্ভর করে। এই ভার্সনটিতে একটা বড় চেঞ্জ হচ্ছে এর কিক স্টার্ট অপশন নেই, তাই অনেকে এটা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলো শীতকালে কি হবে, এর জন্য ব্যাটারী নষ্ট হবে জলদি অনেক কিছু। কিন্তু এটা আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে, কিন্তু ব্যাটারী ইস্যুটা এখনো বলতে পারছি না এটা হয়তো ১০-১৫ হাজার যাবার পর বুঝবো। এই গাড়ির অনেকের সবচেয়ে বড় প্রব্লেম মনে হয়েছে এর এক্সিলারেশন, যেটি খুব ই ধীর গতির আগের পালসারের চেয়ে, এটাতো হবে কেননা আগের ইঞ্জিন রেখেই এর অনেক কিছু চেঞ্জ করা হয়েছে, তবে এর এক্সিলারেশন স্লো হলেও এর টপ স্পিডে আমি অবাক কেননা এর টপ স্পিড ছিল ১২৬কিঃমিঃ ঘন্টা প্রতি। তবে স্পিড উঠতে সময় লাগে।

এবার আসবো এর গিয়ার সিফটিং এ যা এক কথায় অসাধারন এত স্মুথ হবে আশা করি নি, যারা R15 V3 চালিয়েছেন তারা যদি এটা চালান হয়তো বুঝতে পারবেন খুব একটা তফাৎ নেই। আর পালসারের একটা বড় সমস্যা ছিলো কিছুদিন যাবার পর এর ইঞ্জিনের সাউন্ড টা নষ্ট হয়ে যায় যেটা আশা করি এই ভার্সন এ পাবেন না। এর সাউন্ড অনেক স্মুথ আর স্পোর্টই ।

এবার আসি এর চাকায়, এবার এটিতে দেয়া হয়েছে পিছনে ১২০/৮০/১৭ সেকশন টায়ার এবং সামনে পূর্বের মতো ৯০/৯০/১৭ সেকশন টায়ার। এর পিছনের চাকা আগের থেকে মোটা হওয়াতে এতে গ্রিপ আগের চেয়ে অনেক ভাল পাওয়া যাবে এবং এর ব্রেকিং, কন্ট্রোলিং বেশ ভাল হবে।আর রেয়ার টায়ার মোটা হওয়াতে পিছন থেকে লুকটাও অনেক এগ্রেসিভ লাগে।

এরপর আসবো এর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন যায়গাটি সেটি হচ্ছে ব্রেকিং, আমরা মুলত বাইক কেনার আগে সবকিছুর আগে একটা জিনিস দেখি সেটা হচ্ছে বাইকটির ব্রেকিং কেমন হবে, এবার এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে টুইন ডিস্ক ব্রেক যার সামনে রয়েছে ২৬০মিঃমিঃ এবং পেছনে ২৩০মিঃমিঃ এর ডিস্ক ব্রেক। যার ফলে আগের পালসারের তুলনায় এর ব্রেকিং অনেক ভাল পাবেন। এবং পিছনের ১২০ সেকশনের টায়ারের সাথে এর ব্রেকিং কম্বিনেশন অনেক ভাল পাবেন। অনেকে এর রেয়ার ডিস্ক নিয়ে কথা বলেছেন আসলে একটি বাইক কিছুক্ষন চালিয়ে বুঝা যায় না বাইকটা কেমন, প্রথমের দিকে মনে হয়েছিলো ড্রাম ব্রেকের মতো কিন্তু ৩০০০ কিঃমিঃ এর পর থেকে এটি ধীরে ধীরে আরো বেশি কার্যকরী হয়ে উঠছে এখন আর সমস্যা মনে হয় না।

এটিতে যেহেতু AHO সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে সেহেতু আমার মনে হয় এক্সট্রা একটা সুইচ লাইটের জন্য লাগিয়ে নেয়া ভাল, এতে করে ব্যাটারীর উপর কিছুটা প্রেসার কমবে আমি মনে করি। অথবা কেউ চাইলে সুইচিং অপশনটি ইন্সটল করে নিতে পারেন।

পালসার ইউজি ৫ এ চেইন কভার রাখা হয় নি আর আগের চেয়ে এর চেইন স্পোকেট টা বেশ বড় করা হয়েছে, চেষ্টা করতে হবে প্রতি ৫০০ কিঃমিঃ পর পর চেইন ক্লিন করে লুব করা। কেননা খোলা চেইনে ময়লা আটকে বেশি।

পরিশেষে এটাই বলতে চাই সবমিলিয়ে আমার কাছে সেরা একটি বাইক।   ছোট কিছু ইস্যু ছাড়া সব কিছু দারুন। আসলে স্পীড, এক্সিলারেশন দিয়ে বাইক বাছাই করাটা ভূল। সবার আগে দেখা উচিৎ একটি বাইকের ব্রেকিং, কন্ট্রোলিং। তবে উত্তরা মটরসের কাছে একটা কথা বলার আপনাদের সেলস আফটার সার্ভিসটা নিয়ে একটু ভাবুন, এটা অনেক জরুরী এবং এর দাম কিছুটা কম হলে একদম পারফেক্ট একটা প্যাকেজ হতো। কেননা এই সেগমেন্ট এ অনেক বাইকের দাম অনেক কমে গিয়েছে। চেষ্টা করবো বাইকটির একটি ১০,০০০ কিঃমিঃ রিভিউ শেয়ার করার জন্য।