Hero Hunk ৪২,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ)

আমার কাছে হাঙ্ক একটি আস্থার নাম, একটি পরিতৃপ্তির নাম, একটি ভালোবাসার নাম। আমি ইফাজ আহম্মেদ।আমি বর্তমানে উত্তরা উত্তরখানে বসবাস করি। আমি পেশায় অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। আজ আমি শোনাবো Hero Honda Hunk নিয়ে আমার মোটরবাইকিং অভিজ্ঞতার কথা।

 

আমার বাইকিং জীবন শুরুঃ
আমার বাবা সবসময়ই কেন জানি আমাকে বাইক কিনে দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। বাবা বলেন, এতো বাইক বাইক কর কেন? ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দাও। আমি কিছুই বলতে পারিনা, কেননা সেই ছোট বেলা থেকেই বাবাকে বেশ ভয় করি। তারপর ও বাইকের জন্য অন্য রকম একটা অনুভূতির কাজ করতো, আর মামা সময় পেলেই আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতেন। হয়তো সেই তখন থেকেই অথবা তারও আগে থেকে বাইকের প্রতি আমার ভালোবাসা । তাই ৭ম শ্রেনীতে পড়ার সময়ই বাইক চালানো শিখলাম । তখন বাইক চালানো শিখলাম TVS GLX বাইকটি দিয়ে বাইক চালানো শিখার পর থেকে বাইকের প্রতি ভালবাসা আরও বেড়ে যায় তখন মাঝে মাঝে মামার বাইক চালানো হতো ।

 

Hero Honda Hunk 150 কেনার মাহেন্দ্রক্ষণ –
আমার এই বাইকিং জীবনে অনেক বাইক ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছি। সেই ১২৫সিসি থেকে শুরু। আমার Hero Honda Hunk 150 কেনার আগে ভেবেছিলাম যে এত বড় বাইক কিভাবে চালাবো কিন্তু হাঙ্ক এর লুক দেখার পর আমি চিন্তা করলাম হাঙ্ক নিব। অবশেষে ২০১০ মডেলের লাল রঙের একটা হাঙ্ক কিনে ফেললাম। বাইকটার সিটে বসতেই একটা ফিল কাজ করলো যে, এটা বড়। হ্যাঁ সত্যিই অনেকটা বড় আর বেশ ভারী। বাইকটা চালিয়ে বাসায় ফেরার সময় একটা বিষয় খুবই ভালো লাগলো আর তা হলো এর সাসপেনশন। ছোটখাট গর্ত বা স্পিড-ব্রেকারে ভেবেছিলাম যেমনটা শক্ত ধাক্কা পাবো কিন্তু না এর সাসপেনশন এতো চমৎকার যে ওসব খুব সহজেই পার করে এসেছি। আর কেমন যেন একটা স্মুথ ফিলিংস কাজ করছিল। বাইক কেনার পর থেকেই টুকটাক এলাকায় চালিয়ে হাত ক্লিয়ার করতে থাকি তারপর আস্তে আস্তে হাইওয়েতে চালানো শুরু করি প্রথমে ভয় লেগেছিল কিন্তু চালাতে চালাতে ভয় কেটে যায়।

 

Hero Honda Hunk 150 এর সাথে চলার অভিজ্ঞতা –
সেবার যখন ভোরবেলা রওনা দিলাম মানিকগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে। রাস্তাটা বেশ ফাঁকা ছিল। আমার ফিলিংসটা ছিল অন্যরকম কারণ আমার প্রিয় বাইকটি অনেক বেশী স্মুথলী চলছি প্রায় ৮০, ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। এভাবে কিছুদূর যেতেই স্পিড-আপ করতে চাচ্ছিলো। ওইদিন টপ প্রায় ১১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতি পেয়েছিলাম। তবে কেন যেন এর বেশি আর স্পিড উঠাতে পারছিলাম না। তারপরও এই স্পিড দেখে ভালোই লাগছিল। ভেবেছিলাম আরও বেশি উঠবে। কারন আমি কিছু ভিডিও তে দেখেছিলাম স্পিড ১২০+ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা ও তুলেছেন। যাইহোক ওইদিন প্রায় ১৮০ কিলোমিটার ঘুরলাম কোন রকম অসুবিধা ছাড়াই আর হাঙ্কের হেন্ডল উপরাইট হওয়াতে কোন ধরনের কষ্ট হয়নি। তখন মনে হচ্ছিল যে হাঙ্ক কিনে কোন ভুল করিনি। এভাবে দেখতে দেখতে ৪২,০০০ কিলোমিটার শেষ করলাম। হাঙ্কের ইঞ্জিনটা এতটাই স্মুথ আর নিঃশব্দ যে মাঝে মাঝে মনে হয় যেন ইঞ্জিন অফ করে বাইক চালাচ্ছি। বাইকটার এই বয়সের মধ্যে আমি মোটামুটি অনেক রকমের পরীক্ষা করেছি। কাদামাটি, বালির রাস্তা, কাচা রাস্তা, ইট বিছানো রাস্তা, পাথর বিছানো রাস্তা, উঁচুনিচু, হাইওয়ে সব জায়গাতে চালিয়েছি। অন-রোড বা অফ-রোড কোন জায়গাতে হাঙ্ক আমাকে নিরাশ করেনি। তবে এপর্যন্ত টপ-স্পিড পেয়েছি ১১৫কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। এছাড়া একটানা কোন বিরতি ছাড়া ২৩০ কিলোমিটার এবং একদিনে ৪০০+ কিলোমিটার চালিয়েছি কিছু জেলাও এই বাইক নিয়ে ভ্রমন করেছি, কিন্তু কোন সমস্যা অনুভব করিনি।

 

Hero Honda Hunk 150 এর কিছু সাধারন সমস্যা-
যাহোক আমার এইটুকু সময়ের মধ্যে হাঙ্ক চালানোর অভিজ্ঞতায় আমি বলবো না যে হিরো হাঙ্ক ১০০% পারফেক্ট বাইক। সব বাইকেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকেই। আর হাঙ্কেও আমি কিছু সমস্যা পেয়েছি, যেমন-
১) হিরো হোন্ডা হাঙ্ক এর ওজনটা তুলনামুলকভাবে কিছুটা বেশি যা শহর এলাকায় বা জ্যামে ভালোভাবে বোঝা যায়। তবে হাইওয়েতে আপনি কিছুই       বুঝবেননা । যেন পুরোটাই মাখন।
২) এর পেছনের ব্রেকটা ভালই কিন্তু চাকার সাইজটা মোটা হলে ভাল হত তাহলে ব্রেক করে ভাল কনফিডেন্ট পাওয়া যেত
৩) পেছনের চাকা হার্ড-ব্রেক করলে চাকা স্কিড করে আর চাকা যেকোন দিকে সরে যায় । যেটা বেশ বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
৪) হাই-স্পিডে কর্নারিং করাও কষ্টকর, কেননা পেছনের চাকা পিছলে যাবার ভয় থাকে
৫) হেডলাইটের আলো আশানুরুপ নয়
যেকোন সমস্যায় ভালো মেকানিকের কাছে না দেখালে ভুগতে হবে। বেশ যত্ন নিয়ে সুক্ষভাবে কাজ করাতে হয়। নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি মেকানিকের উপর ছেড়ে না দিয়ে নিজে বসে থেকে ভালোভাবে কাজ করিয়ে নিতে হয়। এছাড়া আর তেমন কোন সমস্যা আমি পাইনি।

 

Hero Honda Hunk 150 এর কিছু সমস্যার সমাধান-
হিরো হোন্ডা হাঙ্ক এর কিছু সমস্যার কথা আগেই উল্লেখ করেছি। তবে সময়ের সাথে তা সমাধানের কিছু্ উপায়ও খুজে পেয়েছি। এবার আসি একটি হাঙ্ক থেকে কিভাবে আপনি আশানুরুপ ফিডব্যাক পাবেন।
১) Hero হাঙ্কের পেছনের চাকাটা ১১০ সাইজের ভালো ব্র্যান্ডের লাগালে এর ব্রেকিংটা চমৎকার পার্ফরমেন্স দেয়।
২) অবশ্যই দুই চাকার বাতাসের চাপ ম্যানুয়েল অনুযায়ী রাখবেন
৩) ম্যানুয়েল অনুযায়ী ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করবেন । Grade 10w30 ।
৪) ব্রেক-ইন মেনে বাইক চালালে ৪/৫ হাজার কিলোমিটার পর বাইকের স্মুথনেস আরো বেড়ে যায়। আর ইঞ্জিন এর আয়ুস্কাল যে আরো বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
৫) অবশ্যই সময়মত সার্ভিসিং করাবেন। আর ইঞ্জিন ঠান্ডা অবস্থায় সঠিক মানের ফিলার গজ দিয়ে ট্যাপিড এ্যাডজাষ্ট করাবেন।
৬) কোন পার্টস বদলাতে হলে অরিজিনাল পার্টস ব্যাবহার করূন
৭) অবশ্যই ভালো মেকানিক দিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে কাজ করিয়ে নেবেন। সম্ভব হলে হিরোর সার্ভিস সেন্টারে কাজ করাবেন।
৮) হেডলাইটে ভালো আলো পাবার জন্যে ভালো ব্র্যান্ডের ৩৫ ওয়াট বাল্ব ব্যবহার করতে পারেন।
তো বন্ধুরা আমার এ পর্যন্ত হাঙ্ক চালানোর অভিজ্ঞতা ও আমার সাথের অন্যান্য ব্যবহারকারীদের মতামতের আলোকে মনে হয়েছে যে, হিরো হোন্ডা হাঙ্ক একটি শক্তিশালী বাইক। এটি বেশ দ্রুতই অল্প আরপিএম এ তার শক্তি উৎপাদন করতে পারে। আর তুলনামুলকভাবে অনেক দ্রুত ৯০-১০০-১১০ পর্যন্ত স্পিড তুলতে পারে। এর বিল্ড কোয়ালিটি বেশ ভালো। বাইকটি কিনলে আশা করা যায় আপনি নিরাশ হবেন না । অনেকদিন ধরে কোন ঝামেলা ছাড়াই এটি আপনাকে সার্ভিস দেবে। স্পেয়ার-পার্টসের দাম তুলনামুলকভাবে বেশী মনে হলেও আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি এর দীর্ঘস্থায়িত্ব অনেক বেশী মনে হয়েছে।

 

শেষ করার আগে সামান্য কিছু পরামর্শ রইলোঃ
সবাই ভাল মানের হেলমেট ব্যবহার করবেন। লং ট্যুরে সকলেই সেইফটি গার্ড ও ফুলফেইস হেলমেট ব্যাবহার করবেন। ভুল গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ।
লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ