Bajaj Pulsar NS 160 SD ৩০০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন – সোহানুর রহমান)

আমিঃ- সোহানুর রহমান।
জন্মস্থানঃ- মানিকগঞ্জ জেলার ,সাটুরিয়া থানা |

 

আমি Bajaj Pulsar Ns-160 SD 2018 Model User | বাইকটি আমি  এখন পর্যন্ত রাইড করেছি ৩০,০০০+ কিলোমিটার, আজ আমি আপনাদের কাছে  আমার Pulsar Ns-160 এর ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতার  বিষয়  শেয়ার  করবোঃ-

 

আমার ছোট থেকেই অনেক নেশা  বাইকের প্রতি।  আমি বড় হয়ে একটা মোটরসাইকেল কিনব। আমি যখন ক্লাস ৮/৯ এ পড়াশোনা করতাম তখন থেকে মোটরসাইকেল চালানো শিখা।  আমি আমার এক মামার বাইক Hero Splender দিয়ে চালানো শিখছি।  তারপর থেকে  বাইকের প্রতি আরো অনেকটাই নেশা বেড়ে গেল। আমার অনেক বন্ধুর বাইক ছিলো বলতে বাড়িতে ছিলো ওইটা নিয়ে মাঝে মধ্যে ঘুরতে যেতাম তবে কখনো বলা হতো না বাইক চালানোর কথা কাজ যদি না দেয় এইটা ভেবে। এভাবে কাটতে থাকে দিন আমার s.s.c শেষ করে আমি গ্রামের বাড়ি থেকে চলে আসি ঢাকাতে। তারপর থেকে বাইকের জন্য বাসায় হাল্কা চাপা চাপি করলেও কাজ হয় না। ইস্যু ছিলো অনেক গুলো এর মধ্যে অন্যতম ছিলো বংশের ছোট ছেলে এবং বাবা মায়ের আদরের এক মাত্র ছেলে। এর পর কাজিনের বিয়ে ঠিকঠাক হয় বিয়ে সম্পুর্ন ও হয় কাজিনের শশুড় বাড়ি এক জেলায় হলেও ছিলো মোটামুটি ৩০ কিলোমিটার দূরে এর পর থেকেই বোন জামাই এর বাইক দিয়েই শুরু হয় বাইক চালানোর যাত্রা। কিন্তু বাইক কেনার জন্য যতোই বাড়িতে চাপাচাপি করি না কেন কোন কাজ আসে না। এর মাঝে শুরু হয়ে আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষও করে ফেললাম।

 

তবে বলে রাখা ভালো আমার RTR বাইক অনেক পছন্দের ছিলো এরপর আমি সব সময় ইউটিউবে RTR এর  রিভিউ  দেখতা। হটাৎ RTR 160 বাইকের ডিসকাউন্ট অফার  শুরু হয়। বাসায় চাপাচাপি করলেও ওই যে ছিলাম সবার আদরের ছোট ছেলে, ছোট ভাই কারো সাপোর্ট পেতাম না। এরপর আমার জন্মদিন আবার তার কিছুদিন দিন ই আমার রেজাল্ট দেয় আল্লাহর রহমতে রেজাল্টটা ভাল হয়। রেজাল্ট-এ বাড়ির সবাই অনেক খুশি হয় ওহ্ হ্যা আমার নানির অনেক আদরের নাতি ছিলাম আমি। অন্যদের থেকে একটু বেশি-ই আদর করতো আমায়। বাইক পাওয়ার পিছনে তার সব থেকে বড় অবদান আছে। রেজাল্ট শুনার পর বড় ভাবী,নানি আম্মাকে বলে এখন বাইক দেওয়াই যায় আমাকে। কিন্তু আমি তেমন কিছু বলি না যখন দেখলাম সবাই বলছে আবার আম্মা তেমন ভাবে মানাও করছে না এই সুযোগে বলে দিলাম আম্মা আমার বাইক লাগবে আমিও যেই কথা সেই কাজ বাসায় সবাই রাজি হয়ে যায়।

 

এখন পালা কোন বাইক দিবে সেইটার পালা আমি বলে দেই RTR এর কথা কিন্তু আম্মার পছন্দের বাইক ছিলো (১) Yamaha Fezer, (২) Bajaj Pulsar তবে তখন বাজেট কম হওয়ায় Fezer এর জন্য অপেক্ষা করতে বলে কিছুদিন কিন্তু তখন অপেক্ষা করা ছিলো আমার কাছে বিশাল বেপার কোন ভাবেই আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব ছিলো না। এর পর যেই দিন যাবো বাইকের জন্য তার আগে শুনি RTR Dubble Disc Blue টা নেই। এখন কি করি কয়েক জায়গায় খোজাখুজি করেও পাই না। এর পর কয়েকজন আমাকে সাজেস্ট করে Pulsar UG5 তখন মাত্র লঞ্চ করছে  আম্মার-ও দ্বিতীয় চয়েজ ছিলো এইটা আম্মাও রাজি এইটা দিতে। দিনটা ছিলো 29-Oct-2019 সকালে আম্মা সহ কয়েকজন মিলে গেলাম Uttara Motor’s এর অনুমোদিত Shovo-Bajaj,Manikganj তখন Pulsar UG5 বাইকটাও ছিলো না স্টক শেষ আবার চলছিলো ধর্মঘট তাই বাইক বর্ডারে আটকে ছিলো এখানেও কিছু দিন অপেক্ষা করার কথা বলে। কিন্তু আমার অপেক্ষা করা ছিলো অসম্ভব এর মতো বাইক কেনার আগের রাত আমি কিভাবে কাটাছি আমি নিজেও জানি না এক এক মিনিট মনে হচ্ছিলো ১ মাসের মতো (এই অবস্থাটা অনেক বাইকার ভাই রা হয়তো ফিল করেছেন )।

 

শোরুমে যাবার পর দেখি একটাই Bajaj Pulsar Ns 160 Red Colour ডিসপ্লে করা আছে ।তারপর বাজেট নিয়ে একটু মুড়ামুড়ি হলেও বাইকটি ক্রয় করি ১,৯৮,৫০০ টাকা দিয়ে । তারপর বাইকটি বড় ভাই চালিয়ে বাসায়  নিয়ে আসে আমি থাকি পিলিয়ন সিটে। কিনে আনার পর সারা বিকেল বাইক চালিয়েছি । ওই দিনটা ছিলো আমার কাছে স্বপ্নের মতো স্মৃতি হয়ে থাকবে সারাজীবন।

 

Bajaj Pulsar Ns 160  টিতে রয়েছেঃ-
160.3cc Oil Cooled, 4 Stroke DTSi 15.5 ps@ 8500 rpm ইঞ্জিন।  ৫ টি   গিয়ার।  বাইকটির ওজন – 142 kg। পিছনের চাকা 110/80-17 এতে cornaring করতে মোটা চাকার তুলনায় তেমন সমস্যা হয় না।   সামনের চাকা 80/100-17। আরো রয়েছে DC Headlight  যা শীতের কুয়াসায় দেখতে অনেক সাহায্য করে। বাইকটি সিংগেল ডিস্ক ব্রেকিং সিস্টেম হলেও অনেক ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায়। আর Bajaj Pulsar Ns 160 ব্যাবহার করা হয়েছে আন্ডারবেলি এক্সোস্ট এর জন্য সাউন্ড কোয়ালিটি মিষ্টি না আসলেও এর ইঞ্জিনের শব্দ অনেক সুন্দর।

 

ব্রেকিং প্রিয়ড –
Bajaj Pulsar 160-এ ব্রেকিং প্রিয়ড মেইন্টেইন করেছি 2000 km পর্যন্ত। প্রথমাবস্থায় ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করেছি 300 km এর পর থেকে ১০০০-১২০০ কি.মি পর পর। আমি শুরু থেকেই Mutul 20w 50 গ্রেড ব্যবহার করি। নরমালি ১২০০ মিঃলিঃ এবং অয়েল ফিল্টার চেঞ্জ করলে ১৩৫০ মিঃলিঃ ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি কোম্পানি থেকে বলা আছে। এবং মাঝে মধ্যে Liqui Moly, Motorex 20W 50 ব্যবহার করেছি। তবে Mutul 20w 50, Technosynthese এই ইঞ্জিন অয়েল এর পারফরম্যান্স টা বেশি ভালো পেয়েছি ।

 

সার্ভিসিং-
Pulsar Ns 160 এ ৩ টা Free সার্ভিস এবং ২-৩ হাজার কি.মি পর পর Paid সার্ভিস করিয়েছি।
বাইকের ২ টা ফ্রি সার্ভিস সম্পন্ন করেছি  Shovo Bajaj, Manikganj থেকে এবং ১ টি Bajaj Fair,60-feet,mirpur  Ns Club of Bd. ফ্রি সার্ভিস ক্যাম্পিং থেকে। বাইক টিকে আমি আমার নিজের চাইতে বেশি যত্ন করি। যখন যা লাগে সময় তা মতো দেবার চেষ্টা করি।

 

এবার আসি মাইলেজঃ-
Bajaj Pulsar Ns 160 মাইলেজ হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি  42km+ এবং সিটির জ্যামে 35-38km.

 

ট্যুর –
Pulsar Ns 160 নিয়ে আমি বেশ কিছু জেলা টুর করেছি। ইচ্ছা আছে ২ চাকায় পুরো দেশ ঘুরে দেখার।
এর মধ্যেঃ- ঢাকা,টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুরা, রংপুর, দিনাজপুর, হিলি বর্ডার, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজিপুর, কেরানিগঞ্জ সহ আশে পাশে অনেক জায়গায়।
Bajaj Pulasr Ns-160 নিয়ে সমস্যা বিহীন টুর করে অনেক মজা পেয়েছি। বাইকের আমি Top speed পেয়েছি 132 ঢাকা – টাঙ্গাইল হাইওয়েতে। বাইক এর হ্যান্ডেলিং পজিশন ভালো হওয়ার জন্য back pain তেমন হয় না।

 

Bajaj Pulsar Ns-160 এর ভালো দিকসমূহঃ-
১- সিটিং পজিশন।
২- ব্রেকিং সিস্টেম।
৩- গতি নিয়ন্ত্রণ।
৪- হ্যান্ডেল বার পজিশন।
৫- ইঞ্জিনের আন্ডারবেলি এক্সোস্ট।
৬- মাইলেজ।
৭.Oil Cooled Engine.

 

(সব বাইকের  যেমন ভালো দিক আছে তেমন খারাপ দিক আছে)
Bajaj Pulser Ns 160 এর খারাপ দিক সমূহঃ-
 ১- চাকা চিকন ।
২- প্লাস্টিক বডি।
৩- পার্টসগুলো সব জায়গায় পাওয়া যায় না।
৪.বসার ছিট অনেক শক্ত।
৫.স্টক হর্নের সাউন্ড অনেক কম।
৬.ইঞ্জিন ওয়েল ১২০০ মিলি লাগে।
৭.ইঞ্জিনের ভিতর থেকে আলাদা একটা সাউন্ড।
৮.সিংগেল ডিস্ক ব্রেক ব্যাবহার।

 

আমি 30,000 km+ ride করে এই কয়েকটি খারাপ দিক পেয়েছি পার্টস এর ভোগান্তি সব থেকে বেশি।
Bajaj Pulsar Ns-160  বাইকটি নিয়ে আমার চূড়ান্ত কথা হলোঃ-
এই বাইকটি সবদিকেই আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।  বিশেষকরে এই বাইক এর লুকিং, পাওয়ার, কোন্ট্রোলিং এবং এর মাস্কুলার চেহেরা, (ধন্যবাদ)
লিখেছেন- সোহানুর রহমান

Related Posts

error: Content is protected !!