একটি স্লিপার ক্লাচ একটি বিশেষায়িত ধরণের ক্লাচ যেটা প্রধানত পারফর্মেন্স বাইকগুলোর জন্য উন্নত করা হয়েছে, যেমন রেসিং বাইকগুলো। সাধারণ ক্লাচের যেটা কাজ, স্লিপার ক্লাচও সেই একই কাজ করে অর্থাৎ পিছনের চাকায় ইঞ্জিনের শক্তি সরবরাহ করা এবং তা বন্ধ করা। যাই হোক, সাধারণ ক্লাচের সাথে স্লিপার ক্লাচের প্রধান পার্থক্য হলো, রেসি ট্রাকে রাইডাররা রেসিং এর সময় কর্নারিং করেন তখন ইঞ্জিনের শক্তি কমাতে হয়, ফলে তাদের স্পিড কমে যায় এবং স্লিপার ক্লাচ ব্যবহার করা হয় সেটার প্রভাব প্রশমিত করতে। স্লিপার ক্লাচ রেসারদেরকে খুব দ্রুত ল্যাপ শেষ করতে সাহায্য করে। এছাড়া স্লিপার ক্লাচ বাইকারদের ফাস্টার কর্নারিং এর ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। কারণ স্লিপার ক্লাচ থাকলে একদম শেষ মুহূর্তে ব্রেক করলেও কোন সমস্যা হয় না। এর ফলে স্লিপার ক্লাস বর্তমানে ট্র্যাক রেসিং এ অনেক জনপ্রিয়।
স্লিপার ক্লাচের কিছু টেকনিক্যাল ব্যাপার: কম্প্রেশন ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে যেটা হয় তা হলো কম্প্রেশন স্ট্রোক এর সময় ইঞ্জিনের পিস্টন পেছনে নিয়ে যেতে হলে কমবাস্টশন চেম্বারের ভেতরে ট্রাপেড চার্জ সেট করতে হয় এবং সেটা করতে ক্র্যাংকশ্যাফটটিকে অনেক বেগ পেতে হয়। এর ফলে ইঞ্জিনে ব্যাক টর্ক তৈরী হয় এবং ইঞ্জিন ব্রেক করে। বাইকার যখনই বাইকের গতি হ্রাস করে তখনই ইঞ্জিন ব্রেকিং এর প্রভাব গুলো সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। ইঞ্জিন আর পিছনের চাকার আরপিএম পার্থক্যের কারণে এটা হয়। যখন আপনি কর্নারিং করতে শুরু করবেন এবং গিয়ার ডাউনশিফট করবেন, তখন পিছন চাকার আরপিএম ইঞ্জিনের আরপিএমের থেকে বেশি হবে, এবং ফলে ইঞ্জিন সেটার প্রতিরোধ করবে। তখন চাকা লাফিয়ে উঠতে পারে আর খুব খারাপ হলে চাকা আটকে যেতে পারে! আরো কিছু ব্যাপার ঘটতে পারে যেমন বাইকের চেইন অথবা বেল্টে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া যখন আরপিএমের পার্থক্য দেখা দিবে তখন চাকার একটি প্রবণতা থাকে ইঞ্জিন চালু রাখার। তার ফলে যা হয় তা হলো যে ইঞ্জিন ওভার-রেভ হয়ে যেতে পারে যা ইঞ্জিনকে নষ্ট করে ফেলতে পারে।
ইঞ্জিন ব্রেকিং ২-স্ট্রোক ইঞ্জিনের থেকে ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিনে বেশি বড় সমস্যা। কারণ ২-স্ট্রোক ইঞ্জিনে প্রতি সাইকেলে মাত্র ২টি স্ট্রোক এবং এই ধরণের ইঞ্জিনে কোন ভাল্ভ থাকে না। এছাড়া এই ২ স্ট্রোক ইঞ্জিনের কম্প্রেশন রেট অনেক কম ফলে গতি কমালে এগুলো তুলনামূলক ভাবে অনেক ফ্রি ভাবে চলতে পারে। এখন ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে প্রতি সাইকেলে ৪টি করে স্ট্রোক থাকে এবং একটি বন্ধ ইনলেট ভাল্ভ থাকে। ফলে কম্প্রেশন স্ট্রোকের সময় ইন্টারনাল প্রেসার বেড়ে যায় এবং ফলে পিস্টনকে উপরে ঠেলে তোলার জন্য যে প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমান বেড়ে যায়। যায় হোক, সিলিন্ডার জোট বেশি হয় ইঞ্জিন ব্রেকিং তত ভালো হয়। তাই, বর্তমানে মোটরবাইক প্রস্তুতকারীরা ৪-সিলিন্ডার ইঞ্জিনযুক্ত মোটরসাইকেল তৈরী করাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন অন্যান্য ধরণ গুলো থেকে।
আমরা আমাদের প্রশ্নে ফিরে আসি। থ্রটল যখন খোলা থাকে তখন স্লিপার ক্লাচ সাধারণ ফ্রিকশন ক্লাচের মতো আচরণ করে। আর যখন পিছনের চাকা ইঞ্জিনের থেকে তাড়াতাড়ি ঘুরতে চায়, তখন এই স্লিপার ক্লাচ বিপরীত দিকে কিছু পরিমান স্লিপেজ ঘটায়। ফলে পিছনের চাকা ইঞ্জিনের টান থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত ভাবে ঘুরতে পারে। স্লিপার ক্লাচ ডিজাইনে এই স্লিপটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ইঞ্জিনের ঘূর্ণন চাকার ঘূর্ণনের সাথে সমতা রাখে যাতে থ্রটল খুলে দিলে আপনার বাইক আবার চলার জন্য তৈরী থাকতে পারে।
স্লিপার ক্লাচের উপাদানসমূহ: স্লিপার ক্লাচ বিভিন্ন ধরণের এবং বিভিন্ন ডিজাইনের হয়ে থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হলো “Ramp slipper clutch”. এটার কাজ করার ধরণ অনেক তা ফ্রিহুইল এর মতো। ramp slipper clutch দুইটি সেকশনে বিভক্ত। একটি সেকশন শুধু ডিস্ক দিয়ে তৈরী ( ফ্রিকশন এবং স্টিল) আর অন্য সেকশনে আছে একটি হাব এবং ডগ অ্যাসেম্বলি। ডগ অ্যাসেম্বলি ক্লাচ হাউজিংয়ের সাথে একটি পার্মানেন্ট মেশে থাকে যেটি ইঞ্জিন ফ্লাই হুইলের সাথে যুক্ত। অন্যদিকে হাব ট্রান্সমিশন/ গিয়ারবক্সের ইনপুট শ্যাফট এর সাথে স্প্লিন করা থাকে। হাব এবং ডগ অ্যাসেম্বলি: এর মানে হলো ডগ ইঞ্জিনের সাথে কাজ করে এবং হব্ কাজ করে বাইকের চাকার সাথে। এই দুটো ইউনিটি একইসাথে স্প্রিং এর মাধ্যমে যুক্ত থাকে যাতে তারা একই সাথে কাজ করতে পারে। যখনই একজন রাইডার কর্নারিং এ যান এবং স্পিড কমান, ইঞ্জিন চাকা থেকে চাপ প্রতিহত করে এবং এটি র্যাম্প গুলো কে পুশ করে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে টুইস্ট তৈরী করে। এটা ক্লাচ প্লেট গুলোকে আলাদা করে, ফলে ক্লাচ স্লিপ করে। যখনই ক্লাচ স্লিপ করতে শুরু করে তখন প্রেসার রিলিজ হতে শুরু করে এবং ইঞ্জিন সাইড র্যাম্প থেকে পড়ে যেতে থাকে। ফলে ক্লাচ সিস্টেম সাম্যাবস্থায় থাকে। এই সিস্টেমটারই রূপান্তরকে বলা হয় স্প্র্যাগ ক্লাচ।
যাই হোক, উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে কেন স্লিপার ক্লাচ এতো জনপ্রিয়। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত স্লিপার ক্লাচ তেমন জনপ্রিয় ছিলোনা। ৪- স্ট্রোক ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল আবিষ্কার হওয়ার আগে পর্যন্ত ২- স্ট্রোক ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল ভালোই চলছিল। বাইক প্রস্তুতকারী কোম্পানির মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি সংখক মোটোজিপি টাইটেল পেয়েছে তারা হলো এমভি অগাস্টা এবং তারা তাদের বেশির ভাগ টাইটেলই জিতেছেন ২- স্ট্রোক বাইক দিয়ে। কিন্তু যখনই তারা ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন ব্যবহার করা শুরু করলেন তারা ঝামেলায় পড়লেন। এবং সমস্যাটা ছিল ৪- স্ট্রোক বাইকের ইঞ্জিন ব্রেকিং। সে সময়ই স্লিপার ক্লাচের ব্যবহার বাড়ে এবং সেটা লাইমলাইটে আসে। যেসব বাইকে স্লিপার ক্লাচ ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো: কাওয়াসাকি জেডএক্স- ১০আর, ইয়ামাহা আরসিক্স, আপ্রিলিয়া আরএসভি, ডুকাটি ডেসমসেদিসিস, ১১৯৯, ৮৪৮ এবং সম্প্রতি লঞ্চ করা ৯৫৯। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বাইক প্রস্তুতকারীরা এখন কোয়ার্টার লিটার সেগমেন্ট মোটরসাইকেলএও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করেছেন। যেমন- কাওয়াসাকি নিনজা ৩০০, কেটিএম ডিউক ৩৯০।
বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব বাইকে স্লিপার ক্লাচ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে – Yamaha R15 V3, Yamaha MT 15, Yamaha XSR-155, Honda CBR 150R (2021).
- Hero Hunk DD ১৭০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ ( লিখেছেন- শান্ত) - এপ্রিল ২, ২০২৪
- Hero Hunk ১০,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ফাহিম হোসেন তপু) - মার্চ ১১, ২০২৪
- Hero Hunk ৪২,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ) - মার্চ ১০, ২০২৪