দেশে মোটরসাইকেলের দাম বাড়ছে। বিপরীতে বিক্রি কমছে। বিদায়ী ২০২৪ সালে মোট মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে কমবেশি ৩ লাখ ৯০ হাজার, যা ২০১৭ সালের পর সর্বনিম্ন।
উৎপাদনকারীরা বলছেন, মোটরসাইকেল বিক্রি কমে যাওয়ার বড় কারণ এর মূল্যবৃদ্ধি। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতাও মোটরসাইকেলের বাজারে প্রভাব ফেলেছে।
বিক্রেতারা আরও জানান, সরকার গত ৯ জানুয়ারি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারীদের করপোরেট কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে। মার্কিন ডলারের দামও অনেক বেড়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে নতুন চালানে আসা মোটরসাইকেলের দাম আরও বেশি পড়তে পারে।
জানতে চাইলে জাপানের হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের (বিএইচএল) প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ আশেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৪ সাল খারাপ গেলেও বাজার এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে। গত ডিসেম্বরে বেচাকেনা ভালো হয়েছে। জানুয়ারিতেও বিক্রি ভালো। তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়লে মোটরসাইকেলের দামে তার প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি করপোরেট কর বাড়ানোয় কোম্পানির মুনাফা কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই কোনো কোম্পানি মুনাফা ধরে রাখতে চাইলে তাদের দাম বাড়াতে হতে পারে।
২০২৪ সালে বিক্রি কত
২০১৫ সালেও দেশে মোটরসাইকেল বিক্রির সংখ্যা দুই লাখের নিচে ছিল। তবে বাজার বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার করছাড় দেয়। ২০১৮ সালে ঘোষণা হয় মোটরসাইকেলশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা। এতে ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনের কথা বলা হয়। তখন বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে যৌথ বিনিয়োগ অথবা কারিগরি চুক্তির অধীনে কারখানা করে। ভারতের বাজাজ, টিভিএস, হিরো; জাপানের হোন্ডা, ইয়ামাহা, সুজুকিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল এখন দেশেই উৎপাদিত হয়। সম্প্রতি বাজারে এসেছে রয়েল এনফিল্ড, যা সংযোজিত হচ্ছে বাংলাদেশেই।
সরকারি নীতিসহায়তা ও দেশে উৎপাদনের কারণে মোটরসাইকেলের দাম কমেছিল। এতে বাজারও বড় হচ্ছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে, ২০২১ ও ২০২২ সালে প্রতিবার ছয় লাখের কাছাকাছি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে।
মোটরসাইকেলের সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনাও অবশ্য বাড়ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ২ হাজার ৭৬১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন ২ হাজার ৬০৯ জন। সংখ্যাটি সড়কে মোট নিহতের প্রায় ৩৬ শতাংশ। অবশ্য মোটরসাইকেল বিপণনকারীদের যুক্তি, দেশে মোট যানবাহনের ৭০ শতাংশের বেশি মোটরসাইকেল। সেই অনুপাতে দুর্ঘটনা কম। আবার দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেলের চেয়ে অন্য যানবাহন ও শৃঙ্খলার অভাবের দায় বেশি বলেও মনে করা হয়।
যা–ই হোক, ২০২২ সালের পর থেকে মোটরসাইকেল বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২৩ সালে বিক্রি হয়েছিল চার লাখের কিছু বেশি মোটরসাইকেল, যা ২০২৪ সালে আরও কমে ৩ লাখ ৯০ হাজারে নেমে যায়। এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ২০২৪ সালে ২ লাখ ৬৩ হাজারের মতো মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে।
কোম্পানিগুলোর নিজস্ব তথ্য বলছে, বিক্রি কমেছে মূলত ১৫০ সিসির (ইঞ্জিনক্ষমতা) নিচের মোটরসাইকেলের। বেড়েছে ১৫০ সিসি বা তার বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেলের বিক্রি। দেশের মোট বাজারের অর্ধেকের বেশি ১৫০ সিসি বা তার বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেলের দখলে।
মূল্যবৃদ্ধি কতটা, আর বাড়বে কি
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর দেশে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ফলে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ আমদানির খরচ বেড়ে যায়। কোম্পানিগুলো বাড়তি খরচ সামাল দিতে দাম বাড়াতে শুরু করে। যেমন বাজারের নির্দিষ্ট মডেলের একটি স্বল্পমূল্যের মোটরসাইকেলের দাম দুই বছর আগে ছিল ৮৯ হাজার ৯০০ টাকা, যা এখন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ।
সম্প্রতি জাপানি ব্র্যান্ডের একটি মোটরসাইকেলের দাম বাড়ানো হয়। তাদের জনপ্রিয় একটি মডেলের মোটরসাইকেলের দাম দুই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ ছয় হাজার টাকা এবং আরেকটি মডেলের মোটরসাইকেলের দাম ৪ লাখ ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির বড় কারণ ডলারের দাম। যেমন দেশে ২০২২ সালের মে মাসে আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। সে দাম এখন ১২৩ টাকা। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দুইভাবে পড়ে। প্রথমত, সরাসরি আমদানি খরচ বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, আমদানিতে শুল্ক–কর আরোপের ক্ষেত্রে কাস্টমস ডলারের দাম বাড়ায়। এতে শুল্ক–করের পরিমাণ বাড়ে। কাস্টমস জানুয়ারি মাসের ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১২০ টাকা ধরে শুল্ক আদায় করছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৫ জানুয়ারি থেকে ডলারের দাম আরও বাজারমুখী করেছে। তারা জানিয়েছে, ওই দিন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য অনুমোদিত ব্যাংকের শাখাগুলো (এডি ব্রাঞ্চ) তাদের গ্রাহক ও ডিলারদের কাছে নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করতে পারবে। সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি বুঝে ডলারের দাম বাজারের ওপর পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। তাতে ডলারের দাম কিছুটা বেড়ে আমদানি খরচ বাড়তে পারে। যদিও প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় বাড়বে।
ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী এসিআই মোটরসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি ডলারের দাম এক টাকা বাড়লে ১৫০ সিসির বেশি ক্ষমতার একটি মোটরসাইকেলের ব্যয় দেড় হাজার টাকার বেশি বৃদ্ধি যায়। এখন করপোরেট করও বেড়েছে। ফলে মোটরসাইকেলের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।
সূত্রঃ প্রথমআলো
- মোটরসাইকেলের দাম কি আরো বাড়বে? (বিস্তারিত জেনে নিন) - জানুয়ারি ২২, ২০২৫
- টানা ১৮ বছর লুব্রিকেন্ট মার্কেটের শীর্ষে Shell - ডিসেম্বর ১, ২০২৪
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩