Yamaha Fazer V2 এর মালিকানা রিভিউ লিখেছেন “সালমান ফারসি অয়ন”

তারিখটা ঠিক ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মিরপুর ক্রিসেন্ট থেকে রাত ১০ঃ৩০ নিয়ে নিলাম আমার প্রথম YAMAHA BIKE FAZER V.2 2017 Model মায়ের পছন্দের রং লাল থাকার কারনে বারনিং রেডটা নিয়ে নিলাম। বাইকের নাম দিলাম Red Chili.

পথ চলাটা শুরু হয়ে গেলো।

বিগত ১২ মাসে আমাকে খুব যত্নের সাথে বাইকটি চালাতে হয়েছে। যেহেতু আমি একজন বাইক ট্র্যাভেলার আমাকে চাকরির তাগিদে প্রতিমাসে ২০০০ কি.মি. বাইক চালাতে হয়েছে। আমি গত জুলাই মাসে ৩৮৪৬ কিমি সর্বোচ্চ চালিয়েছি। এছাড়া বিগত ১২ মাস বয়সে গড়ে আমাকে প্রতিমাসে ২২৫০ কি.মি বাইক চালাতে হয়েছে।

ব্রেক ইন পিরিয়ড: বাইকটি নতুন অবস্থায় আমার ইচ্ছে ছিল ১৫০০ কিমি ব্রেক ইন পিরিয়ড মানবো। প্রথম ৩০০ কিমি ৪.৫ আরপিএম গিয়ার শিফট করেছি, মিটার কত স্পীড উঠলো সেটার দিকে কখন তাকাইনি। ৫০০ কিমি শেষ হয়ে যাবার পর #Motul 10W40 Mineral ইউস করেছি। পর পর দুইবার ইউজ করার পর ১৫০০ কিমি ব্রেকিং শেষ। মজার বেপার হল আমি ১৫০০ কিমি ভেতর কখনোই হেচকা টান দেইনি। ১৫০০ কিমি শেষ হয়ে যাবার পর Motul 3000 10w40 ব্যাবহার শুরু করি।এই ১৫০০ থেকে ২০০০ কিমি ইঞ্জিন ফ্রি করার সময় তাই প্রতি গিয়ার দক্ষতার সাথে রেডলাইন আরপিএম শিফট করেছি। অনেকেই Yamaha Fz/fazer biker সউন্ড নিয়ে ব্যাপক প্যারায় থাকেন। দয়া করে YamaLube ছেড়ে Motul 7100, Shell ultra, Zic m9. ব্যবহার করেন আশা করি ভালো ফল পাবেন। মনে রাখবেন Not Yamahalube its #YAMALUBE.

মাইলেজ: ২০০০ কিমি পার হয়ে যাবার পর চেক করা শুরু করলাম মাইলেজ। প্রথমে আমি ৩২ কিমি মাইলেজ পেতাম। মাইলেজ আমার কাছে অনেক বড় ইস্যু হয়ে দাড়ায়। আমি থ্রিএস সেন্টারের মনিক ভাইকে ব্যপারটা শেয়ার করি। বাইকের টেপিট এডজাস্ট সাথে আরপিএম ১৩৫০ করে নেই এরপর ১ লিটার তেল দিয়ে পরিক্ষা করি মাইলেজ পেলাম ৪৭ কিমি পার লিটার আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এখনো ১৫০০০ কিমি পথ চলা অবস্থায় আমাকে সিটিতে ৪৩.৫ কিমি এবং হাইওয়েতে ৪৮ কিমি মাইলেজ গড়ে দিয়ে যাচ্ছে। এখানে বলে রাখা ভালো আমাদের দেশে তেলের পাম্প গুলো তেল চুরি করে আমরা অনেক সময় ভাবি আমাদের বাইক মাইলেজ কম দিচ্ছে আসলে বেপারটা আমাদের অনেকেরই ভুল ধারনা। আমরা যদি সঠিক ভাবে তেল মাপতে চাই তাহলে আমাদের উচিৎ ১ লিটার বোতলে তেল ভরে এর পর বাইকের মাইলেজ টেস্ট করা। তাহলে বাইকের আসল মাইলেজ বের হয়ে আসবে। আর বাজে তেল ভরলে বাইকের সাদা ধোয়া বের হয় যা কিছু দিন আগে আমি এই পরিস্থিতি শিকার হয়েছি।

পার্টস: বিগত ১৫০০০ কিমি আমাকে প্রথমে যে কাজটি করতে হয়েছে আমাকে AHO off করে সুইচ চাপা চেঞ্জ করে নিতে হয়েছে যাতে ব্যাটারির উপর প্রেসার না পরে। Fazer বাইকের হেড লাইটের আলো তুলনামূলক ভাবে কম। হাইওয়েতে চালাতে গেলে কিছুটা কম আলো অনুভুতি হয়। তাই একটি MOTO LED সাথে 7s install করে নেই। প্রতি ৫০০০ কিমি পরপর ব্রেকসু সাথে ব্রেক পেড চেঞ্জ করতে হয়েছে চাইলে এর পরেও করে নিতে পারতাম। ১০০০০ কিমি পার করার পর সামনের চেনস্পকেট চেঞ্জ করতে হয়েছে সাথে এয়ার ফিল্টার। বলে রাখা ভালো আমি একটু বেশি জোরে বাইক চালাই আমার সাথে যারা বাইক চালায় তারা বেশ ভালো বলতে পারবেন। ১৩০০০ কিমি মনের খুতখুতি থাকার কারনে ক্লাস ক্যাবল চেঞ্জ করে নিয়েছি। সেফটির ব্যাপারে নো কম্প্রমাইজ আমি পুরো বাইকটা খুব যত্নের সাথে চালিয়েছি, কোন প্রকার একটা ইরিডিয়াম প্লাগ বা রেসিং ক্যাবল কয়েল ইন্সটল করা আমার কাছে অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছে।

টপ স্পীড: Fazer সবচেয়ে মজার জিনিস হল এর এরডায়নামিক সেপ যা অন্য বাইকের তুলনায় অনেক দ্রুত স্পীড তোলায় পারদর্শী। টপস্পীড ১৩১কিমি পেয়েছি। ৫.৫ সেকেন্ড ৬০কিমি ১৯.৫ সেকেন্ড ১০০ কি.মি. গতি তুলেছি। বলে রাখা ভালো বাজারে এর চেয়ে শক্তিসালি ইঞ্জিন আছে , কিন্ত ফেযারে মতো কম্ফোর্ট আর ব্রেকিং বাইকের দেখা খুব কম মেলে। গতি নিয়ে আমার কোনও দ্বিধা নেই। কারন আমার কাছে গতিটাকে অনেকটা কিছু সময়ের ভালো লাগার মতো কাজ করে।

বড় বড় হাইওয়ে, অফ রোড, পাহাড়, সমুদ্র, চা বাগান কোথাও বাদ যায়নি আমি চেষ্টা করেছি সব যায়গায় Fazer বাইকের স্বাদ নেয়া। আমার অনুভূতিতে Fazer বাইক বাংলাদেশের বাইক ট্র্যাভেল লং ট্যুরের জন্যে Fazer বাইকের কোন বিকল্প নেই। আমার দেখা বাংলাদেশে বড় বড় বাইক ট্র্যাভেলার ভাইদের কাছে আজও Fazer বাইকের সুনাম শুনতে পাওয়া যায়। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আমি একটানা ১৭৬ কিমি চালিয়েছি উইথআউট রেস্ট, আমার সারা শরীরের একটা হাড় ব্যাথা করেনি, সেদিন থেকে বাইকের সাথে একটি শব্দ এড করে নিয়েছিলাম “The lord of High Way”।

আমি আমার ফেজার Red_chili নিয়ে স্যাটিসফাই, গত এক বছরে ২৭০০০ কি.মি. চালিয়েছি সাবাই দোয়া করবেন ইচ্ছে আছে ৫০,০০০কিমি পথ চলানোর

ধন্যবাদ সবাইকে।
বাইকারস আর ব্রাদার্স
ইউজ ফুল সেফটি গিয়ার, হোয়েন ইউ রাইডিং।

লিখেছেন: Salman Farshy Ayon

Related Posts

error: Content is protected !!