Lifan KPR 165 Carb এর ১০,০০০ কিঃমিঃ ইউজার রিভিউ লিখেছেন শুভ মিয়া

আমি শুভ মিয়া । বর্তমানে আমি ঢাকা থাকি। আমার বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলায়। আজ আমি আমার বর্তমানে ব্যাবহার করা Lifan Kpr 165 বাইকটি নিয়ে আমার ১০ হাজার কি.মি. পথ চলার কিছু গল্প শেয়ার করবো।
বর্তমানে আমি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট এ কম্পিউটার সাইন্স & ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশুনা করতেছি।
শুরুটা হয় আজ থেকে ১১ বছর আগে যখন ক্লাস ৫ এর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আব্বুর সাথে ক্লাস ৬ এ ভর্তি হতে গেলাম। ভর্তি শেষে বাসায় যাওয়ার সময় হঠাৎ আব্বু বললো নে আজ তুই চালা । ঠিক ওই সময়ে আব্বু বাইক চালাবো বলার সাহস ছিল না। কিছু না ভেবে সাথে সাথে বাইকের সামনের সিটে বসে পরি। নিয়ম গুলো অনেক আগে থেকেই যানাছিল। আর হ্যান্ডেলের সাথে তো ছোট বেলা থেকেই বাইকের ট্যাংকের উপরে যখন বসতাম তখনই পরিচিত। সাইকেল তার বছর ২ আগেই শিখে নিয়েছিলাম।
হ্যান্ডেলের উপরে হাত রাখলাম আমার হাতের উপরে আব্বুর হাত আব্বু ক্লাচে চাপ দিয়ে আমায় বললো আস্তে আস্তে পিকাপ দিবি এবং সামনের দিকে তাকিয়ে ক্লাচ ছাড়বি কিছু দূর সামনে যাওয়ার পর আব্বু হাত সরিয়ে নিল আর এভাবেই বাবার হাতে হাত রেখে শুরু হলো বাইকের সাথে পথ চলা।
বাইক বাইকিং এগুলোর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির কারন বলতে গেলে বলতে হবে ফ্যামিলি থেকে পাওয়া এবং পুরোটাই আব্বুর অবদান। বুঝতে শিখেছি থেকেই বাইকের সাথে পরিচয় বাইকে যাতায়াত। ভালোবাসাটা এভাবেই তৈরি হয় ।
যখন চিন্তা আসলো নিজের পার্সোনাল একটা বাইক দরকার ঠিক তখন ই মাথায় একটা চিন্তা চলে আসে আমার জন্য কোন বাইকটা ভালো হবে 🤔? মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সন্তান চাইলেও সব ইচ্ছে পূরন করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। সাধ আছে সাধ্য নাই বলতে একটা কথা আছেনা। আমার সব সময়ই স্পোর্টস বাইকের প্রতি আকর্ষণ। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ স্পোর্টস বাইক গুলোর দাম আকাশ ছোঁয়া । যা আমার সাধ্যের বাইরে ।
কেপিয়ার বাইকটির সাথে খুব বেশি পরিচিত ছিলাম না । একদিন ঝালকাঠি সরকারি কলেজের সামনে Team BikeBd থেকে ২ জন ভাইকে দেখছিলাম বাইকটি নিয়ে , কাছে গিয়ে কথা বলার পরে একটা লিফলেট দিয়েছিল । আর পরের পরিচয় টা ছিল ঢাকা ৩০০ ফিটে Club Kpr Bangladesh এর গেট টুগেদার এ । যেখানে ছিল কয়েক শত Lifan Kpr বাইক । ওইদিন বাসায় গিয়ে চিন্তা করি বাইকটি হয়তো ভালো হবে । কিছুদিন এর মধ্যে বাড়িতে যাই ছোট ভাই শোভন বসু ততদিনে কেপিয়ার কিনে ফেলে । দেখা হতেই বলে ভাই চলেন ট্যুর এ যাই কোথাও । সুযোগ পেয়ে হাত ছাড়া করলাম না । রাজি হয়ে গেলাম । যাত্রা শুরুতেই বাইকের চাবি হাতে দিয়ে বললো আজ আপনি চালান । আমাদের ট্যুর ছিল বরগুনার বেতাগী থেকে স্বরূপকাঠি আটঘর কুরিয়ানা পেয়ারা বাজার । টোটাল ১৮০ কি.মি. র একটা রাইড ছিল সম্পুর্ন রাইড ই আমি করি এবং বাইক থেকে নেমে ছোট ভাইকে বলি “লাইফে কখনো বাইক কিনলে Lifan Kpr ই কিনবো ” বাসায় এসে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে BikeBd ইউটিউব চ্যানেলে শুভ্র সেন দাদার Lifan Kpr 150 বাইকের টেস্ট রাইড রিভিউ টা ৪-৫ বার দেখি এবং ওইদিন ই সিধান্ত নেই “আমার জন্য পার্ফেক্ট বাইকটি হচ্ছে Lifan kpr” বাইকে ট্যুর করা আমার শখ । একটা স্পোর্টস বাইক এর মালিক হুওয়া আমার স্বপ্ন । আকর্ষণীয় একটি বাইক আমার পছন্দ । লাইফটা সুন্দর করে কাটানো আমার ইচ্ছে,যা একটা বাইক থাকলে অনেক সহজ হয়ে যায় । এসব কারন বিবেচনা করেই বাইক কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া ।
লিফান কেপিয়ার ১৬৫ কার্ব রিভিউ
বাইকটি আমি কিনেছিলাম সরাসরি Rasel industries limited এর কাছ থেকে যারা বাংলাদেশে Lifan বাইকের একমাত্র ইম্পোর্টার । তখন বাইকটির বাজার মুল্য ছিল ১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা (Without Registration) বাইকটি যখন বাংলাদেশের বাজারে আসেনি তার প্রায় ৩ মাস আগে বুকিং দিয়ে রাখছিলাম । তাই ৩ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে বাইকটির জন্য । একদিন সকালে হঠাৎ অর্ক ভাই কল করে বললো চলো ফ্যাক্টরিতে যাবো দিন টি ছিল হঠাৎ বৃষ্টির একটি দিন রওনা হওয়ার পর থেকে প্রচুর বৃষ্টি শুরু হয় । তার সাথে ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যানতাম না যে ওইদিন বাইক ডেলিভারি পাবো । দিনটি ছিল ২০ জুন ২০১৯ । বাইক ডেলিভারি পেলাম ততক্ষনে আব্বুকে বললাম ফ্যাক্টরিতে আসতে আব্বুর জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম কারন আমার ইচ্ছে ছিল বাইকটি আমার আগে আব্বু চালাবে আব্বু আসলো টেস্ট রাইড দিলো এরপরে আমি বাইকে বসলাম । অনুভূতির কথা যদি বলতে যাই লাইফে এমন স্মরনীয় দিন গুলো খুব কমই থাকে । যে দিন গুলোর কথা চোখ বন্ধ করলেই মনে করা যায় ।
প্রথম নিজের ড্রিম বাইকের থ্রটলের উপর হাত রাখলাম এ যেন এক অন্যরকম ভালোলাগা । সব থেকে অবাক হলাম ক্লাচে হাত রেখে গিয়ার সিফট করে যেটা ছিল আগের কেপিয়ার এর সব মডেল গুলো থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন । যখন চালানো শুরু করলাম স্মুথনেস টা আমাকে অবাক করে দিল এ যেন এক অন্যরকম ফিল পাচ্ছি । স্বপ্ন কে সত্যি করে খুশি মনে বাসায় চলে আসলাম ।
এরপর থেকে শুরু হয় কেপিআর এর সাথে পথ চলা । প্রথমে আমি নিয়ম মেনে ২,০০০ কিমি ব্রেকিং পিরিয়ড শেষ করার চেষ্টা করি । আর আস্তে আস্তে যত দিন যেতে থাকে ততই এর পারফর্মেন্স আমাকে মুগ্ধ করতে থাকলো । যতই দিন যায় ততই তার প্রেমে পড়ি ৷ আসলে কেপিআর ভালো লাগার কারন, এটা একটা স্পোর্টস বাইক আর আমার ছোট বেলা থেকেই স্পোর্টস বাইক পছন্দ তাই সাধ্যের মধ্যে কেপিআর ছিল আমার প্রথম পছন্দ।
বাইকটিতে আছে –
  • ১৬৫ সিসির একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন
  • লিকুইড কুলিং সিস্টেম
  • ডুয়াল ডিক্স
  • পাওয়ারফুল প্রজেকশন হেডলাইট
  • 17 nm Tork 17 Bhp
  • টিউবলেস টায়ার
  • ৬ টি গিয়ার
  • ১৭ লিটার আয়তনবিশিষ্ট ফুয়েল ট্যাংক
  • সামনের টায়ার ৯০-৯০-১৭ এবং
  • পেছনের টায়ার ১৩০-৭০-১৭ সাইজের
সার্ভিসিং-
এখন পর্যন্ত আমি ২ বার সার্ভিস করিয়েছি ৩২০০ কি.মি. তে এবং ৬৮০০ কি.মি. তে । আমি মিরপুর লিফান সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিস গুলো করিয়েছি । সার্ভিস এর মান খুব ভালো ছিল । আমার বাইকের তেমন কোন প্রব্লেম ছিলনা, ছোট খাটো কিছু সমস্যার কথা বলেছিলাম সঠিক সমাধান পেয়ে গিয়েছি । সার্ভিস ২ টা ফ্রি সার্ভিস ছিল । লিফান থেকে ৮ টা ফ্রি সার্ভিস এবং ২০ হাজার কি.মি. ইঞ্জিন ওয়ারেন্টির কথা বলেছে । এ ছাড়া আমি ছোট ছোট প্রয়োজনে যে কয়বার সার্ভিস সেন্টারে গিয়েছি আমার সমস্যা সঠিক ভাবে সমাধান করে দিয়েছে ।
মাইলেজ-
আমি ১৮০০ কি.মি. পর্যন্ত বাইকের ব্রেকিং পিরিয়ড মেনে চলি । প্রথম ২৯০০ কি.মি. পর্যন্ত আমি বাইকটি আমার গ্রামের বাড়িতে ব্যাবহার করি তখন আমি মাইলেজ পেয়েছি ৩৬কি.মি. পার লিটার। এরপরে আমি ঢাকা সিটিতে যাওয়ার পরে মাইলেজ চেক করে পেলাম ৩০ কি.মি. পার লিটার । কিছুদিন পরে সার্ভিস সেন্টার থেকে বলে কার্বোরেটরে কিছু চেঞ্জ করে দিবে আমি বাইক নিয়ে যাই এবং তারা কার্বোরেটরে কিছু চেঞ্জ করে দেয় এরপর থেকে আমি মাইলেজ পাচ্ছি সিটিতে ৩২-৩৩ হাইওয়েতে ৩৮+ । আসলে বাইকটির থ্রটল রেস্পন্স এর কথা চিন্তা করলে মাইলেজ নিয়ে না ভাবাই ভালো । তবুও স্টুডেন্ট লাইফ সিটির মাইলেজ টা ৩৫+ হলে পার্ফেক্ট হতো । হাইওয়ের মাইলেজ নিয়ে কোন প্রব্লেম নাই মাঝে মাঝে ৪০ ও পাই । কিন্তু সিটিতে মাইলেজ টা আমি মনে করি কম ই পাই ।
ব্রেকিং-
বাইকটির ব্রেকিং নিয়ে বলতে গেলে আমি মনে করি এই সেগমেন্টের অসাধারন ব্রেকিং এর একটি বাইক । ডুয়েল ডিক্স সামনে ৩০০ এম এম এর ডিক্স এর ব্রেক কখনো আমাকে ব্রেক সল্পতা ফিল করায়নি । আর এ জন্যই নিশ্চিন্তে টপ স্পিড তুলতে পারি কারন আমি জানি আমার স্পিড যে কোন টাইমে কন্ট্রোল করার জন্য আমার বাইক প্রস্তুত ।
বাইকের যত্ন ও মেইনটেন্যান্স-
বাইকের যত্ন ও মেইনটেন্যান্স এর কথা বলতে গেলে আমি যতটুকু কাজ নিজে করতে পারি ততক্ষনে মেকানিক এর কাছে যাইনা । নিয়মিত ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ, এয়ার ফিল্টার ক্লিন, ওয়েল ফিল্টার ক্লিন,চেইন ওয়াস, চেইন লুব,ক্যাবেল ওয়াস, ক্যাবেল লুব, নাট চেক এগুলো বাসায় নিজেই করি । এর বাইরে এখন পর্যন্ত খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন পরেনা । এছাড়া কোন প্রয়োজন পরলে সরাসরি সার্ভিস সেন্টারে চলে যাই ।
Lifan KPR Review
ইঞ্জিন ওয়েল-
শুরু থেকে আমি আমার বাইকে পেট্রনাস ইঞ্জিন ওয়েল ব্যাবহার করতেছি । প্রথম দিকে আমি পেট্রনাস মিনারেল 20w40 ইঞ্জিন ওয়েল টি ৫০০ কি.মি. তে ২ বার এর পর ৫০০-২০০০ কি.মি. পর্যন্ত ৫০০ কি.মি. পর পর ৩ বার চেঞ্জ করেছি । ২০০০ কি.মি. পর থেকে ৫০০০ কি.মি. পর্যন্ত প্রতি ৮০০ কি.মি. পর পর চেঞ্জ করেছি ।
৫০০০ কি.মি. পর থেক এখন পর্যন্ত পেট্রনাস সেমি সেন্থেটিক 10w40 ইঞ্জিন ওয়েল টি ব্যাবহার করতেছি । প্রতি ১২০০-১৪০০ কি.মি. র মধ্যে চেঞ্জ করি । প্রাইস ও বেশ কম আর জিনিষ ও বেশ ভালো । মিনারেল এর দাম ছিল ৪০০ আর সেমি সেন্থেটিক ৫৫০ । পার্ফমেন্স এত ভালো পাচ্ছি যে ইঞ্জিন ওয়েল এর ব্রান্ড চেঞ্জ করার ইচ্ছে হচ্ছেনা । বাইক বেশ স্মুথ এবং বেশ ভালো পার্ফমেন্স দেয় মজার ব্যাপার হলো ইঞ্জিন ওয়েলের যত কিলো বাড়তে থাকে তত ইঞ্জিন আরো স্মুথ মনে হতে থাকে । আর হিটিং ইস্যু ও তুলনামূলক কম মনে হয় ।
১২০০ এম এল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যাবহার করি এবং আমি সবসময় ফুয়েল হিসেবে অকটেন ব্যাবহার করি ।
এ পর্যন্ত যা যা চেঞ্জ করতে হয়েছে –
এই ১০ হাজার কি.মি. র মধ্যে আমি আমার বাইকের শুধুমাত্র ৯৮০০ কি.মি. তে সামনের স্পকেট টা চেঞ্জ করেছি । সাজেক না গেলে হয়তো সেটাও ১০ হাজার কি.মি. পরেই চেঞ্জ করতাম । এ ছাড়া আমি আমার বাইকের কোন কিছু চেঞ্জ করিনি । অথবা কোন প্রব্লেম ফিল করিনি । হর্নের স্প্রিং কেটে যায় সার্ভিস সেন্টার থেকে ফ্রি চেঞ্জ করে দেয়,মিটার ক্যাবেলে প্রব্লেম হয়েছিল সার্ভিস সেন্টার থেকে ফ্রি চেঞ্জ করে দিয়েছে । কার্বোরেটরের কাজ ও সার্ভিস সেন্টার থেকে ফ্রি করে দিয়েছে । এর বাইরে এ পর্যন্ত আমার বাইকে কোন প্রব্লেম হয়নি ।
মোডিফিকেশন-
অনেক কিছু মডিফাই বা চেঞ্জ করার ইচ্ছে আছে আস্তে আস্তে করবো। আপাদাত চেঞ্জ এর মধ্যে সামনের উইনশিল্ড টা চেঞ্জ করে বাবল উইনশিল্ড লাগিয়েছি।এ ছাড়া সব কিছুই স্টক আছে।
টপ স্পিড-
আমার কাছে বাইকটির সব থেকে পছন্দের দিক হচ্ছে এর রেডি পিকাপ এবং থ্রটল রেস্পন্স, যা আমাকে অবাক করে তুলে। এই বাজেটের যে কোন বাইক কে হার মানতে বাধ্য করবে এর থ্রটল রেস্পন্স। ০-১০০ পেয়েছি ১২ সেকেন্ড এ। এখন পর্যন্ত টপ স্পিড পেয়েছি ১৩২ । আমি এই স্পিডে সন্তুষ্ট না কারন আমি আশাকরেছিলাম বাইকটির টপ স্পিড ১৪০+ হবে । টপ স্পিডে বাইকটির স্মুথনেস এবং ব্যালেন্সিং প্রশংসাযোগ্য । স্পিড উঠলেই তো হবেনা থামতেও হবে টেস্ট করেছিলাম ১২৫ থেকে ব্রেক করে ১৭ স্পিডে আসতে সময় লেগেছিল ৫ সেকেন্ড । ১৫২ কেজি ওজন হওয়া সত্তেও বাইকটি রানিং এ আমি কখনো কোন সমস্যা অনুভব করিনি । বরং এই ওয়েট আমাকে স্পিডিং এ এবং ব্যালেন্সিং এ কনফিডেন্স দেয় ।
বাইকটির ভালো কিছু দিক –
  • আমি মনে করি ১৬৫ সি সি সেগ্মেন্ট এর সব থেকে পাওয়ারফুল ইঞ্জিন এই বাইকে ।
  • লিকুইড কুলিং সিস্টেম, যার কারনে আমি এখন পর্যন্ত ৮ ঘন্টায় টানা ৪৫০ কি.মি. কক্সবাজার-ঢাকা এসেও কোন প্রকার পার্ফমেন্স ড্রপ পাইনি ।
  • থ্রটল রেস্পন্স যা আমার রাইডের কনফিডেন্স বাড়িয়ে দেয় । এবং একটি স্পোর্টস বাইকের প্রকৃত ফিল এনে দেয় ।
  • বাইকটির ব্রেকিং সিস্টেম আমাকে মুগ্ধ করেছে । অসাধারণ ব্রেকিং সিস্টেম । ১২৫-১৭ স্পিডে আসতে আমার টাইম লেগেছিল ৫ সেকেন্ড । টপ স্পিডে যথেষ্ট কনফিডেন্স নিয়ে ব্রেক করা যায় ।
  • কম্ফোর্ট, আমি বাইকটি রাইড করে কখনো ব্যাক পেইন পাইনি সিটিং পজিশন যথেষ্ট ভালো লেগেছে । এবং আমি যথেষ্ট কম্ফোর্ট নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা রাইড করতে পারি ।
  • প্রজেকশন হেড লাইট টি যথেষ্ট পাওয়ারফুল ।
  • ৬ টি গিয়ার, যার ৬ নং গিয়ারের রেস্পন্স ও প্রশংসনীয় ।
  • ডুয়াল ডিক্স ব্রেক কখনো আমাকে ব্রেক সল্পতা অনুভব করায়নি ।
বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
  • বাইকটির স্টক টায়ার টি ভেজা রাস্তা কাদার রাস্তার জন্য ভালো লাগেনি ।
  • ব্যাক সাইট টি নিচু যেটা একটা স্পোর্টস বাইকে পছন্দ হয়নি ।
  • সাসপেন্সন টা ভালো লাগেনি ।
  • টার্নিং রেডিয়াস বিরক্তিকর ।
  • সিটি রাইডে অতিরিক্ত জ্যামে হিটিং ইস্যু ফিল করি,বাইকের ট্যাংক গরম হয়ে যায় যেটা পায়ে লাগে ।
  • মাইলেজ টা আর একটু বেশি হওয়ার দরকার ছিল ।
  • ১৩২ টপ স্পিড নিয়ে আমি সন্তুষ্ট না ।
  • চেইন খুব তাড়াতাড়ি লুজ হয়ে যায়, ৫০০-৭০০ কি.মি. পর পর চেইন টাইট দিতে হয় ।
বাইকের যত্নের ক্ষেত্রে কয়েকটি টিপস
  • ইঞ্জিন ওয়েল সময়মত ড্রেইন দেওয়া উচিৎ।
  • ব্রেক প্যাড সময়মত পরিবর্তন করা উচিৎ।
  • স্পার্ক প্লাগ, ক্লাচ ক্যাবল, এক্সিলারেশন ক্যাবল, এয়ার ফিল্টার, ব্রেক-ফ্লুইড, টায়ার প্রেসার ইত্যাদি সর্বদা তদারকি ও সময়মত পরিবর্তন করা উচিৎ।
  • বাইক সবসময় ওয়াস করে পরিষ্কার রাখা উচিৎ ।
  • সময়মত চেইন লুব করা উচিৎ ।
  • ভালো পাম্প থেকে তেল নেওয়া উচিৎ ।

লং ট্যুর –
এই ১০ হাজার কি.মি. র মধ্যে এখন পর্যন্ত আমার লং ট্যুর হচ্ছে – ঢাকা-সাজেক-খাগড়াছড়ি-রাংগামাটি-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ-ঢাকা । ৫ দিনে ১৫০০ কি.মি. ট্যুর । পাহাড়, হাইওয়ে,সমুদ্র কোন যায়গায় একবারের জন্যও কেপিয়ার কে দুর্বল ফিল হয়নি । আমি ক্লান্ত হয়ে গেলেও আমার বাইক ক্লান্ত হয়নি একবারের জন্যও । একবারের জন্যও হতাস করেনি । এ ছাড়া আমি অনেক ট্যুর করেছি বাইকটি নিয়ে । হাইওয়েতে এর পার্ফমেন্স, থ্রটল রেস্পন্স, ব্রেকিং, কম্ফোর্ট আমাকে শত শত কিলোমিটার রাইড করার আগ্রহ এনে দেয় । এখন প্রযন্ত এই বাইকটি নিয়ে আমি বাংলাদেশ এর ২৫ টি জেলা ভ্রমন করেছি । ইচ্ছে আছে ৬৪ জেলা ভ্রমন করবো এই বাইকে করে ।
চায়না বেশিদিন যায়না কথাটি ভুল প্রমাণিত করার জন্য এই একটা কেপিয়ার ই যথেষ্ট । ২ লক্ষ টাকায় এই রকম একটা স্পোর্টস বাইক আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য রাসেল ইন্ডাট্রিজ লিমিটেড কে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং সেই সাথে ক্লাব কেপিয়ার বাংলাদেশ এর সকল এডমিন মডারেটর ভাইদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ । এত হেল্পফুল ক্লাব পাওয়ার কারনেই কখনো পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি । ছোট খাটো সব সমস্যার সমাধান পেয়েছি হেল্পফুল কেপিয়ার ইউসারদের কাছ থেকে । আমি আমার বাইকটি ব্যাবহার করে যথেষ্ট সেটিস্ফাই ।
অনেকে অনেক কথা বলছে বাইকটি কিনার আগে বা পরে কিন্তু আমি সবসময় নিজের মন যেটা বলে সেটাই করি । ইচ্ছে আছে মিটারে ৯৯৯৯৯ ডিজিট টি দেখার বাইকটি আমি ১ লক্ষ কি.মি.+ চালাবো দেখি চায়না কত দিন চলে ।
Lifan KPR 165 Carb at Sajek Valley
আপনার বাজেট যদি থাকে ২ লক্ষ টাকা তবে আমি বলবো কেপিয়ার ই আপনার জন্য হবে প্রথম পছন্দ । যাদের বাজেট ২ লক্ষ টাকা তারা ইনশাআল্লাহ্‌ এই বাইকটি কিনলে বাইকটি কোন দিক থেকে আপনাকে নিরাশ করবেনা । এই বাজেটে এর থেকে ভালো বাইক আছে বলে আমি বিশ্বাস করিনা । অন্তত আমার এই ১০হাজার কিলোমিটার পার করার অভিজ্ঞতা আমাকে এটাই বলে ।
যেতে হবে বহুদূর সাথে থাকবে ভালোবাসার LIFAN KPR । জীবন উপভোগ করতে বেশি টাকা লাগে না, জাস্ট একটা বাইক হলেই হয় ।এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত অনেকের মত ভিন্ন ও থাকতে পারে । তবে ভালো যেমন আছে তেমন খারাপ ও থাকবে এটাই স্বাভাবিক ।
সবাইকে এতক্ষন ধরে আমার পোস্ট টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।।
লিখেছেনঃ শুভ মিয়া