মোটরসাইকেলের মালিকানা কিভাবে পরিবর্তন করবেন

শহুরে জীবনে বাইক যেন এখন এক বন্ধুর নাম। যানজটের এই শহরে কোন কাজই যেন ঠিক ঠাক ভাবে হয় না, তবে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারি একটা জিনিসই সেটা হলো বাইক। বাইকের চাহিদা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিলো কিন্তু ২০১৪ এর পরে থেকে এর চাহিদা বেড়ে ৫-৬ গুন হয়েছে। আর বাইক কেনা-বেচার পরিমানও বেড়েছে , কেউ নতুন বাইক বা কেউ পুরানা বাইক। তবে নতুন বাইক কিনতে রেজিস্ট্রেশন করতে খুব একটা ঝামেলা না থাকলেও পুরানা বাইক কিনতে বা বেচতে গেলে কিছু ঝামেলা আছেই। কেননা নতুন বাইকের বেশির ভাগ কাজই শো-রুম থেকে করে দেয় কিন্তু যখন একটি পুরানা বাইক বিক্রি বা কিনতে চাইবেন তখন মালিকানা পরিবর্তনের জন্য বাইকের মালিক এবং যিনি ক্রেতা তাকেও থাকতে হবে।

আমাদের দেশে সরকারী অফিসের কাজ মানেই সাধারণ জনগনের আর এক ভোগান্তির নাম, আর বি আর টি এ হলে তো কথাই নাই। দালালদের কারখানা যেন আমাদের দেশের প্রতিটা বি আর টি এ অফিস। সাধারণত আমরা বেশির ভাগ সময় নিজের না করে দালাল দিয়েই কাজ করাই সময় বাঁচানোর জন্য। আজকের লেখাটি তাদের জন্য যারা নিজেই বাইকের মালিকানা পরিবর্তন করতে চান। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা দুজনেরই কিছু করনীয় আছে।

আসুন সবার আগে জেনে নেই বাইকের মালিকানা পরিবর্তনের ফি কি কি ?

  • মালিকানা পরিবর্তন ফি- ৩৫০০ টাকা
  • ষ্ট্যাম্প ফি- ৮০০ টাকা
  • দলিল লেখা- ৩০০ টাকা
  • হলফনামা বাবদ ফি- ১৫০০ টাকা

সাধারণত নিজে করতে গেলে এসব খরচই হবে। এবার জেনে নেই যিনি বাইক কিনবেন অর্থাৎ ক্রেতার করণীয় গুলো কি কিঃ

  • বি আর টি এর নির্ধারিত ফরম “টি,ও” তে ক্রেতার সাক্ষর এবং “টি,টি,ও” ফরম এর নির্ধারিত স্থানে ক্রেতার নমুনা সাক্ষর প্রদান করতে হবে।
  • নির্ধারিত ফি জমাদানের মূল রশিদের কপি।
  • ক্রেতাকে তার টিন (TIN) সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বর্তমান ঠিকানার গ্যাস/বিদ্যুৎ/পানির/টেলিফোন বিলের যেকোন একটির সত্যায়িত করা ফটোকপি জমা দিতে হবে।
  • ক্রেতাকে তার মূল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ব্লু-বুক)এর উভয় কপি প্রদান/ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এবং হালনাগাদ ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুট পারমিট এসবের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দান করতে হবে।
  • ছবিসহ ক্রয় সংক্রান্ত ২০০ টাকা অথবা সরকার নির্ধারিত নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল, তবে ক্রেতা যদি কোন প্রতিষ্ঠানের হয় তবে সে ক্ষেত্রে হলফনামার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল প্যাডে চিঠি প্রদান করতে হবে।
  • নির্ধারিত নমুনা সাক্ষর ফরমে ক্রেতার নমুনা সাক্ষর এবং তিন কপি ষ্ট্যাম্প সাইজের রঙ্গিন ছবিসহ ফরমের অন্যান্য সকল তথ্য ইংরেজি (BLOCK LETTER) দ্বারা পূরণ করে জমা দান করতে হবে।
  • মোটরযানটি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য সংশ্লিষ্ট বি আর টি এ অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে।
  • বিক্রেতার সাক্ষর ভূল হওয়ার ক্ষেত্রে তাকে সরেজমিনে বি আর টি এ অফিসে হাজির হতে হবে।

ক্রেতার সাধারণত এসব করণীয় মেনে কাজ করতে হবে। এবার জেনে নেই বিক্রেতার কি কি করণীয়ঃ

  • রাজস্ব ষ্ট্যাম্প ও সাক্ষীর সাক্ষরসহ বিক্রেতাকে “টি.টি.ও” ফরমে ও বিক্রয় রশিদে সাক্ষর প্রদান করতে হবে।
  • এরপর ছবিসহ বিক্রয় সংক্রান্ত ২০০ টাকা অথবা সরকার নির্ধারিত নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা প্রদান করতে হবে।
  • বিক্রেতা যদি কোম্পানী হয় সেক্ষত্রে কোম্পানীর লেটার হেড প্যাডে ইন্টিমেশন, বোর্ড রেজুলেশন, অথোরাইজেশন প্রদান করতে হবে।
  • যদি মোটরযানটি কোনো কোম্পানী বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়বদ্ধ থাকে তাহলে দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠানের ঋন পরিশোধ সংক্রান্ত  ছাড়পত্র, লোন এডজাস্টমেন্ট ষ্টেটমেন্ট, ব্যাংক কতৃক সহকারী পরিচালক ( ইঞ্জিঃ) বি আর টি এ বরাবর সরকার নির্ধারিত নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা প্রদান করতে হবে।
  • ক্রেতাকে স্ব-শরীরে হাজির হতে হবে যাতে করে বিক্রেতা তার সাক্ষর গড়মিল করতে না পারে।
  • বিক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতে হবে।

উপরোক্ত কাজ গুলো সম্পন্ন হলে আপনার নাম পরিচয় পত্র যাচাই করে, নাম পরিবর্তন ডাটাবেজ ইনপুট করার জন্য আপনার বায়োমেট্রিক্স ( আঙ্গুলের ছাপ, সাক্ষর, ছবি ) গ্রহন করা হবে। তারপর আপনার সাময়িক রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেটে একটা সম্ভাব্য তারিখের সিল দিয়ে দিবে। ঐ তারিখের মধ্যে আপনি আপনার মোবাইলে এস এম এস এর মাধ্যমে নতুন সার্টিফিকেট তোলার সময় পেয়ে যাবেন।

[ বিঃদ্রঃ- উপরে উল্লিখিত সকল ফরমগুলো বি আর টি এর ওয়েবসাইট-http://www.brta.gov.bd/ থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে পারবেন অথবা সরাসরি বি আর টি এ অফিসে গিয়ে এসব ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।