ইঞ্জিন ব্রেক কি? কিভাবে ইঞ্জিন ব্রেক করবেন? উপকারিতা এবং প্রভাব

শখ থেকেই হক বা প্রয়োজনের তাগিদে মোটরসাইকেল এখন একটি জনপ্রিয় যানবাহন। সময় ও অর্থ বাঁচাতে এই মোটরযানটির যেন তুলনা নেই। তাই রাস্তায় অন্যান্য যানবাহনের সাথে মোটরসাইকেলের পরিমাণ পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। দু চাকার এই মোটরযানটি যেমন অনেক দিক দিয়ে ভালো তেমনি ঝুকিপূর্ণ। সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে ব্রেক করতে না পারলে, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে নিমিষেই। ইমারজেন্সি মুহূর্তে একটি মোটরসাইকেল সঠিকভাবে ব্রেক করতে গেলে এর ফ্রন্ট এবং রেয়ার ব্রেক এর সাথে সাথে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহারের কোন বিকল্প নাই। কিন্তু অনেকেই এই ইঞ্জিন ব্রেক সম্পর্কে একবারেই অজ্ঞ। তাই ইঞ্জিন ব্রেক কে ঘিরে সাজানো হয়েছে আজকের লেখাটি।

 

লেখাটি পড়লে যা যা জানতে পারবেন: 

১) ইঞ্জিন ব্রেক কি?

২) ইঞ্জিন ব্রেক কিভাবে কাজ করে?

৩) কি ভাবে ইঞ্জিন ব্রেক করবেন?

৪) এটি ব্যবহারে উপকারিতা।

৫) এর প্রভাবে মোটরসাইকেলের কোন ক্ষতি হয় কিনা?

তাহলে চলুন এখন একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

১) ইঞ্জিন ব্রেক কি?

একটি মোটরসাইকেলে ক্লাচ না করে, শুধু এক্সেলেটর আপ করলেই যেমন বাইকটি পাওয়ার পায় বা গতি বারে, ঠিক তেমনি ক্লাস না ধরে এক্সেলেটর ছেড়ে দিলে ইঞ্জিনের পাওয়ার কমে যায় এবং গতি কমে যায়। এই ক্লাস না ধরে, এক্সেলেটর ছেড়ে দিয়ে মোটরসাইকেল এর গতি নিয়ন্ত্রণ করাই হচ্ছে ইঞ্জিন ব্রেক।

২) ইঞ্জিন ব্রেক কিভাবে কাজ করে?

ইঞ্জিন ব্রেক কিভাবে কাজ করে, সেটা বোঝার জন্য আমাদেরকে আগে ক্লাচ সম্পর্ককে একটু ধারনা নিতে হবে।

ক্লাচ হচ্ছে ক্রাংসেফ্ট এবং গিয়ার বক্সের মিলনস্থল। অর্থাৎ বাইকের ফুয়েল পুড়িয়ে আমরা মূলত পিস্টন আপডাউন করাই যা যুক্ত থাকে ক্রাংসেফ্ট এর সাথে। এ থেকে উৎপন্ন শক্তি চলে যায় ক্লাচ সেকশনে ও এটি নিয়ন্ত্রিত হয়ে গিয়ার বক্সে যায়। তারপর গিয়ার বক্স থেকে চেন স্পকেটের এর সাহায্যে আমাদের বাইকের চাকা ঘরে। গিয়ার পরিবর্তন করার সময় ক্লাচ গিয়ারবক্সকে ক্রাংসেফ্ট এর সাথে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কারণ, গিয়ার পরিবর্তন করার সময় ক্রাংসেফ্ট এর শক্তি যদি গিয়ার বক্সে থাকে তাহলে গিয়ার বক্স খারাপ হয়ে যাওয়ার একটি চান্স থাকে। সুতরাং, আমরা যতক্ষণ আমাদের বাইকটিকে ক্লাচ না করব, ততক্ষণ ক্রাংসেফ্ট এর শক্তি কমিয়ে বা বাড়িয়ে গিয়ার বাক্সকে, তথাপি পুরো বাইককেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর এই ক্রাংসেফ্ট এর শক্তি কমানো বা বাড়ানো যায় এক্সেলেটরের মাধ্যমে। এটাই মূলত ইঞ্জিন ব্রেকের কার্যপ্রণালী। এভাবে ক্লাস না ধরেই শুধুমাত্র এক্সেলেটর কমিয়ে বা ছেড়ে দিয়ে বাইক খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শুধু বাইক নয় এই প্রক্রিয়ায় বড় বড় গাড়িগুলোর গতি নিয়ন্ত্রিত হয়।

৩) কি ভাবে ইঞ্জিন ব্রেক করবেন?

ইতিমধ্যে আপনারা ইঞ্জিন ব্রেকের কার্যপ্রণালী জেনে গেছেন। তাই কিভাবে ইঞ্জিন ব্রেক করবেন এটা বোঝা খুবই সহজ। একটি চলন্ত বাইকে ইঞ্জিন ব্রেক করতে চাইলে প্রথমে ক্লাচ ছেড়ে দিতে হবে। তারপরে এক্সেলেটর ছেড়ে দিতে হবে, একই সাথে ফ্রন্ট এবং রেয়ার ব্রেক ব্যবহার করে বাইকটি কন্ট্রোল করতে হবে। এরপর চাইলে আপনি বাইকটি থামিয়ে দিতে পারেন অথবা ক্লাচ করে পুনরায় চালানো শুরু করতে পারেন।

৪) এটি ব্যবহারে উপকারিতা।

• খুব সহজে বাইকের গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

• ইঞ্জিন ব্রেক বাইকের ব্রেকিং ডিসটেন্স কমিয়ে দেয়।

• ইঞ্জিন ব্রেকের ফলে বাইক প্রপারলি ব্রেক হয়। ইমারজেন্সি সিচুয়েশনে বাইকের চাকা স্কিডের হাত থেকে রক্ষা করে ইঞ্জিং ব্রেক।

• ডাউন হিলে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করার কারণে বাইকের চাকা স্কিড করে না।

• ইমারজেন্সি সিচুয়েশনে প্রপরলি বাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য ইঞ্জিন ব্রেক আবশ্যক।

• কর্নারিং এর সময় ইঞ্জিন ব্রেক রাইডারকে অনেক আত্মবিশ্বাস প্রদান করে।

• ভেজা রাস্তায় ব্রেক করার জন্য ইঞ্জিন ব্রেকের কোন বিকল্প নেই।

৫) এর প্রভাবে মোটরসাইকেলের কোন ক্ষতি হয় কিনা?

অনেকেই মনে করে ইঞ্জিনব্রেক ব্যবহার করলে বাইকের বা ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়। এই কথাটি নিয়ে ভিন্ন মতামত চালু আছে। প্রজালোচনা করলে দেখা যায়, প্রণালী অনুযায়ী ক্লাচবাটি বা ক্লাচবক্স ক্রাংসেফ্ট এর সাথে যুক্ত থাকে এবং এর ভিতরে থাকে ইনারহাব, যা আরেকটি সেফ্ট দ্বারা গিয়ারবক্সের সাথে যুক্ত থাকে। ক্লাচবাটি ক্রাংসেফ্ট এর পাওয়ারে ঘোরে কিন্তু ক্লাচবাটির ভিতরে থাকা ইনারহাব ঘোরে না। ক্লাচবাটিকে ইনারহাবের সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী যুক্ত ও বিচ্ছিন করে ক্লাচ ও মেটাল প্লেট। বাইক চালানোর সময় মূলত ক্রাংসেফ্ট ক্লাচবাটিকে ঘুরায়, ক্লাচ বাটির সাথে ঘোরে ক্লাচ প্লেট বা মিক্সার প্লেট। আর ক্লাচ প্লেট এর সাথে সাথে মেটাল প্লেট কে প্রয়োজন অনুযায়ী চাপ দিয়ে ঘুরায় প্রেশার প্লেট। এই প্রেসার প্লেট গুলো ইনারহাব এর সাথে যুক্ত থাকে, তাই ইনারহাব ঘোরে এবং গিয়ার বক্সকে ঘোড়ায়। ফলে বাইকের চাকা ঘোরে। ইঞ্জিন ব্রেক করার জন্য, ক্লাচ না করেই থ্রোটোল ছেড়ে দিলে ক্রাংসেফ্ট এর পাওয়ার কমে যায়, তখন ক্লাচ বাটি ও ক্লাচ প্লেট গুলোতেও ঘূর্ণায়মান গতি কমে যায়। ফলে ক্লাচ প্লেট ও মেটাল প্লেটের মধ্যে একটি ফিকশন তৈরি হয় ইনারহাবকে থামানোর জন্য। প্রেসার প্লেটের চাপে ক্লাচ প্লেট ও মেটাল প্লেটের এই ফিকশন খুব দ্রুতই ইনার হাবের গতি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। ফলে গিয়ার বক্স কম ঘরে, তথাপি পুরো বাইকের নিয়ন্ত্রিত হয় যায়। টেকনিকাল পার্ট গুলো অ্যানালিসিস করে দেখা যায়, বাইকটিকে ইঞ্জিন ব্রেক দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার সময় ক্লাচ সিস্টেমের ঘূর্ণায়মান রীদম একটু ব্যাহত হয়, ফলে ক্লাচ প্লেট ও মেটাল প্লেটের মধ্যে যে ফিকশনটি হয়, তা পার্শিয়ালি ওই প্লেট গুলোর ক্ষতি করে। যার মাত্রা খুবই কম। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে পুরো বাইককে রক্ষা করার জন্য এতোটুকু হতে মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

 

পরিশেষে বলতে চাই, অতিরিক্ত গতি ম্যাক্সিমাম দুর্ঘটনার মূল কারণ। তাই আসুন আমরা সবাই নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক চালাই।

অলি আহাদ খান

Related Posts

Add Comment

রিপ্লে দিন

error: Content is protected !!