নাইট রাইডিং এর খুঁটিনাটি

রাত। কারো কাছে রোমাঞ্চকর কারো কাছে ভয়াল। যে যেভাবেই রাতকে দেখুক না কেন আমাদের মধ্যে অনেক বাইকার ভাই আছেন যারা রাত এ বাইক চালানো বা নাইট রাইডিং পছন্দ করেন এবং অনেকেই হাইওয়ে তে রাতে রাইড করে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আজকের লেখাটি সেই সব ভাইদের জন্য যারা রাতের আবহাওয়া এবং ভাইব টা পছন্দ করেন এবং রাতের নীরবতার সাথে মিশে গিয়ে বাইক রাইড করতে চান। চলুন দেখে নেই নাইট রাইডিং এর কিছু বিষয়বস্তু এবং কিভাবে সেফটির সহিত আমরা নাইট রাইড করতে পারি ।

১) ভালো মানের হেডলাইট লাগানো

বাইকের হেডলাইট এর ওপর নির্ভর করে রাস্তার ভিজিবিলিটি । একটা ভালো মানের হেডলাইট আপনাকে অনেক কনফিডেন্স এর সহিত রাতে চলাচল করার মনবল দিবে । হলুদ কিনবা সাদা এলইডি লাইট এর বিকল্প নেই এই ক্ষেত্রে । হ্যালজেন বাল্ব ও অনেক পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো হাইওয়ে তে কাজ করেনা বললেই চলে । বাজারে অনেক এলইডি আছে যেগুলোর দাম ৭০০ থেকে শুরু করে ৩০০০ পর্যন্ত । আপনি আপনার সাধের মধ্যে যেকোনো একটা বেছে নিন আর বেরিয়ে পরুন । কমন কিছু চয়েজ এর মধ্যে আছে MotoLed , MotoLed 6 এবং CYT । এগুলো আপনি ৭০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মদ্ধেই পেয়ে যাবেন । চেষ্টা করবেন অবশ্যই অরিজিনাল কেনার ।

২) ফগ লাইট ব্যবহার করা

ফগ লাইট হাইওয়ে তে কিনবা রাতের রাস্তায় দারুণ কাজে দেয় । শীতকাল হলে তো কথাই নেই । একটা ভালো এলইডি হেডলাইট এর সাথে একটা ভালো ফগ লাইট এর কম্বিনেশন একদম পরটা আর গরু ভুনার মত । বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফগ লাইট রয়েছে কিন্তু বেশীরভাগই কাজে দেয় না তেমন । আমি এখন পর্যন্ত শুধু ২ টা ফগ লাইট দেখেছি যেগুলো দারুণ কাজে দেয় । একটা হচ্ছে Cree LED আর একটা হচ্ছে A7। Cree LED একেকটা ২০ ওয়াট এবং A7 একেকটা ৪০ ওয়াট এর । ২ টাই অনেক ভালো কাজে দিবে । লাগিয়ে নিতে পারেন চাইলে ।

৩) রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট বা জ্যাকেট এর ব্যবহার

রাতে রাইডিং এর একটা নেসেসিটি বলা চলে রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট বা জ্যাকেট যাই বলেন । এই ভেস্ট ব্যা জ্যাকেট ব্যাবহারের ফলে আপনার পেছনে থাকা যেকোনো যানবাহন আপনাকে অনেক দূর থেকেই দেখতে পাবে এবং এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক কমে যায় । এছাড়াও আপনার বাইক এর বিভিন্ন অংশে আপনি রিফ্লেক্টিভ ফিতা লাগিয়ে নিতে পারেন । এইটাও একই কাজ করবে রাতের বেলা । বাজারে অনেক রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট আর জ্যাকেট পাওয়া যায় । দাম পড়বে ২৫০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে ।

৪) নাইট ভিশন গ্লাস ব্যবহার করা

নাইট ভিশন গ্লাস একটি অন্যতম সেফটি ইকুইপমেন্ট নাইট রাইডিং এর জন্য । বিপরীত পাশ থেকে আসা গাড়ির লাইট এর ঝলকানি প্রতিরোধ করে থাকে নাইট ভিশন গ্লাস এবং রাতের বেলা চমৎকার দেখা যায় এবং এতে রাইডিং এ অনেক কনফিডেন্স বাড়ে । নাইট ভিশন গ্লাস বাজারে অনেক রয়েছে কিন্তু দামি গুলো কেনাই ভালো কারন কমদামি গুলো আহামরি কোন কাজে দেয় না । ভালো গুলোর দাম পড়বে ১২০০ থেকে ৫০০০ এর অধিক পর্যন্ত । বাইরে থেকে আনলে আরো ভালো ।

৫) ঘন ঘন ইন্ডিকেটর , হর্ন এবং পাস লাইট এর ব্যাবহার

লেন পরিবর্তন এর সময় অবশ্যই লুকিং গ্লাস এ তাকিয়ে সিউর হয়ে এবং যেদিকে যেতে চান সেদিকের ইনডিকেটর লাইট জ্বালিয়ে লেন পরিবর্তন করা উত্তম । এছাড়া মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় ।ওপর দিক থেকে আসা গাড়ি কে সিগন্যাল দিয়ে সাইড চাওয়ার জন্য ইনডিকেটর হর্ন এবং পাস লাইট ৩ টাই ব্যাবহার করতে হবে নাহলে আপনি সাইড না পেয়ে খাঁদে চলে যেতে পারেন এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এবং এতে প্রাণহানি হবার ও সম্ভাবনা থাকে অনেক । যেকোনো ওভারটেকিং এর ক্ষেত্রে পাস লাইট , ইনডিকেটর এবং হর্ন অবশ্যই ব্যবহার করুন । কোন যানবাহন যদি দেখেন রং রুট বা উলটো পথে আসছে তাহলে তাকেও পাস লাইট দিয়ে সাইড চেয়ে নিন ।

এই সব কিছুর সাথে সাথে ভালো মানের ফুলফেস হেলমেট এবং সেফটি গার্ড অবশ্যই ব্যবহার করুন । এতে আপনার রাইডিং এ যেমন কনফিডেন্স বাড়বে তেমনি আপনার রাইড করবে স্বাচ্ছন্দ্যময় ।

আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ সবাইকে নিরাপদ এ বাইক রাইড করার তৌফিক দান করুন ।

আমিন ।

 

লিখেছেনঃ রাকিব মাহমুদ অভি (মডারেটর – ফুয়েল ইঞ্জেকশন ক্লাব বিডি – এফসিবি)

Related Posts

error: Content is protected !!