ইঞ্জিন অয়েল যা মবিল নামে আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মবিল হলো ইঞ্জিন অয়েলের একটি ব্রান্ড। আমাদের দেশে মবিল ব্রান্ডের ইঞ্জিন অয়েলটির জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বেশি হওয়ায় ইঞ্জিন অয়েল মবিল নামে পরিচিতি পেয়েছে। মবিল ছাড়াও মটর আয়েল বা ইঞ্জিন লুব্রিকেন্ট নামেও ইঞ্জিন অয়েল আমাদের দেশে বেশ পরিচিত । বাংলাদেশে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ব্রান্ডের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায় । যেমন: Shell, Mobil, Castrol, Havoline ইত্যাদি। আজ আমরা ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ।
ইঞ্জিন অয়েল কি: ইঞ্জিন অয়েলের কাজ হলো ইঞ্জিন কে পিচ্ছিল রাখা, ইঞ্জিনের পার্টস গুলো সচল রাখা এবং ইঞ্জিন চলতে চলতে যে ময়লা হয় সেগুলো পরিষ্কার করে ইঞ্জিন কে চলতে দেওয়া। ইঞ্জিন অয়েল বলতে আমরা সাধারণত আমরা বুঝি এমন একটি পদার্থ বা চটচটে এক প্রকার জৈব যৌগ যা পানিতে দ্রভীভূত হয় না। ইঞ্জিন অয়েল মটরসাইকেলের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ যেটা মটর সাইকেলের ইঞ্জিনকে ভালো রাখে এবং মটরসাইকেলের ইঞ্জিন কে দীর্ঘমেয়াদ দান করে। একটি নিদৃষ্ট পথ চালানোর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতে হয় । তাই আপনার মটরসাইকেলটির সঠিক তত্বাবধান এর জন্য ভালো ইঞ্জিন অয়েল ও নিদৃষ্ট সময় পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন অত্যাবশ্যক।
ইঞ্জিন অয়েলের কাজ: ইঞ্জিন অয়েল সাধারণত ইঞ্জিনে পিচ্ছিলকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয় । ইহা লুব্রিকেন্ট বা পিচ্ছিলকারক হিসেবে ইঞ্জিনের ভিতরের যন্ত্রপাতি গুলোকে চলাচল করতে ও ঘুরতে সাহায্য করে, ইঞ্জিনের ভেতরে ঘর্ষনের ফলে যে তাপমাত্রা তৈরি হয় তা কমিয়ে রাখে এবং ইঞ্জিনের ভেতরের ময়লাগুলোকে পরিষ্কার করে। কম্প্রেশন যাতে লিক না হয় সেদিকেও ইঞ্জিন অয়েল কাজ করে। ইহা ইঞ্জিনের পিস্টন ও সিলিন্ডারের ফলে সৃষ্ট ঘর্ষনজনিত ক্ষয়রোধ করে এবং ইঞ্জিনকে গতিশিল রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখে, ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা বাড়ায়, ইঞ্জিনের জীবনী শক্তি বাড়ায় এবং ইঞ্জিনের ভেতরের জমা হওয়া ময়লা পরিষ্কার রাখে এবং ইঞ্জিনকে গতিশীল রাখে। সুতারং বোঝা যাচ্ছে ইঞ্জিনের জন্য ইঞ্জিন অয়েলের গুরুত্ব কতখানি। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান।
ইঞ্জিন অয়েল এর পরিবর্তন: সাধারণত ৮০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটার চালানোর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতে হয়। এই পরিমান পথ চালানোর পর ইঞ্জিন অয়েলের কার্যকারিতা কমে আসে ফলে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা জরুরী হয়ে পরে।
প্রকারভেদ: বাজারে বিভিন্ন কোম্পানী ও বিভিন্ন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়। সাধারণত ইঞ্জিন অয়েলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, একটি হলো মিনেরাল এবং অপরটি হলো সিনথেটিক। মিনেরাল হলো যেটি প্রকৃতিক খনি থেকে আসে। খনির পেট্রলিয়াম জাতীয় পদার্থ থেকে থেকে যে ইঞ্জিন অয়েল আসে তাকে মিনেরাল অয়েল বলে। আর সিনথেটিক হলো কৃত্রিম উপায়ে তৈরি ইঞ্জিন অয়েল। বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করে যে ইঞ্জিন অয়েল তৈরি করা হয় তকে সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল বলে। সকল যানবাহন এর জন্য ইঞ্জিন অয়েল একই না, মটরসাইকেল এর জন্য আলাদা ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হয়, বাস বা কার এর জন্য আলাদা ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হয়।
বর্তমানে সকল মটরসাইকেল গুলো ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট, তাই বাজারে 4T লেখা যেসব ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায় সেগুলো এখনকার মটরসাইকেল এর জন্য ব্যবহার উপযোগী। 4T সম্বলিত ইঞ্জিন অয়েলগুলো ফোর স্ট্রোক সকল ইঞ্জিন এর জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইঞ্জিন অয়েলের ধরন: সাধারণত ৮০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটার চালানোর পরে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতে হয়। মটরসাইকেলের ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে তিনিটি জিনিস একসাথে কাজ করে অর্থাৎ একটি মটরসাইকেলে ইঞ্জিন, গিয়ার বক্স ও ক্লাচ একসাথে কাজ করে একটি ইউনিট হিসেবে । অন্যান্য যানবাহন এর ক্ষেত্রে এই তিনটি জিনিস আলাদা আলাদা কাজ করে আলাদা ইউনিট হিসেবে। তাই মটরসাইকেলের ইঞ্জিন অয়েল অন্যান্য যানবাহন এর ইঞ্জিন অয়েল থেকে আলাদা এবং মটরসাইকেলে শুধুমাত্র মটরসাইকেলের জন্য তৈরি ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করতে হয়। অন্যান্য যানবাহন এর জন্য ভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন অয়েল তৈরি করা হয়। তাই ইঞ্জিন অয়েল কেনার সময় অবশ্যি লক্ষ্য রাখতে হবে যে ইঞ্জিন অয়েলটি শুধুমাত্র মটরসাইকেলের জন্য প্রস্তুত কিনা। এবার আসি ইঞ্জিন অয়েলের ভিন্নতায়, সাধারণত মিনেরাল অয়েল ৮০০ থেকে ১০০০ কিমি চালানোর পরে পরিবর্তন করতে হয় অন্যদিকে সিনথেটিক অয়েলে আপনি মিনেরাল চেয়ে অনেক বেশি পথ চালিয়ে পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে মটরসাইকেলের জন্য নয় এরুপ ইঞ্জিন অয়েল মটরসাইকেলে ব্যাবহার করা মটরসাইকেলের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর।
বিভিন্ন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল: এস.এ.ই বা সোসাইটি অব অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স কতৃক বিভিন্ন নম্বর অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েলের গ্রেড প্রাকশিত হয়েছে। সাধারণত ইঞ্জিন অয়েল বিভিন্ন গ্রেডের হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল বাজারে পাওয়া যায়। সাধারণত ইঞ্জিনের ঘনত্ব ও কোন তাপমাত্রায় কোন ইঞ্জিনের জন্য ব্যবহার উপযোগী তার উপর নির্ভর করে ইঞ্জিন অয়েলের গ্রেড প্রকাশিত করা হয়। ইঞ্জিন অয়েলকে প্রাথমিকভাবে দুটি গ্রেডে ভাগ করা হয়, সিংগেল গ্রড ও মাল্টি গ্রেড। বাংলাদেশে সাধারণত মাল্টি গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়। আমরা মাল্টি গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েলের গায়ে দেখতে পাই যে দুটি নম্বর যেমন 10W-30, 20W-40 এখানে প্রথমের নম্বর দ্বারা কম তাপমাত্রা বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ কত কম তাপমাত্রায় ইহা কার্যকর থাকবে এবং পরের নম্বরটি দ্বারা বেশি তাপমাত্রা বোঝানো হয় অর্থাৎ এটি কত বেশি তাপমাত্রায় কাজ করে তা নির্দেশ করে। গ্রেডের মাধ্যমে আমরা বুঝি যে, কোন তাপমাত্রায় কোন ইঞ্জিন অয়েল ব্য্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশে সাধারণত 10W-30, 20W-40, 20W-50 ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায় তবে মটরসাইকেলের কোম্পানী কতৃক নির্ধারিত ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
ইঞ্জিন অয়েলের স্ট্যান্ডার্ড: বিভিন্ন কোম্পানী অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েলের মান নির্ধারিত হয় যেমন,
- API – American Petroleum Institute
- JASO – Japanese Automotive standards Organization
- ILSAC – The International Lubricant Standardization and Approval Committee
- ASTM – American Society for Testing Materials
বাংলাদেশে সাধারণত বিভিন্ন দেশ থেকে ইঞ্জিন অয়েল আমদনী করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, আরব আমিরাত থেকে ইঞ্জিন অয়েল আমদানী করা হয়। বাংলাদেশের প্রাপ্ত ইঞ্জিন অয়েলের মধ্যে Shell, Mobil, Caltex, Visco, BP, Total, Cepsa, Motul, Havoline, Caltex, Castrol Active এগুলো জনপ্রিয়।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়, অনেকেই প্যাকেটজাত ইঞ্জিন অয়েল কেনার পরেও নকল পেয়েছেন বলে জানা গেছে। নকল এড়াতে কোম্পানী কতৃক অনুমোদিত ডিলারের কাছ থেকে ইঞ্জিন অয়েল কেনা ভালো তাছাড়া আশেপাশে যদি ইঞ্জিন অয়েল এর ডিলার না থাকে তাহলে পরিচিত দোকান থেকে কিনুন। কোন অবস্থাতেই খোলা ইঞ্জিন অয়েল ব্যবাওহার করবেন না।
ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন পদ্ধতি: ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে ইঞ্জিন অয়েল যেন ইঞ্জিনের মাত্রা অর্থাৎ আপার লেভেল ও লোয়ার লেভেল এর মধ্যে থাকে। কোথাও কোনদিক থেকে যেন তেল না পরে তার দিকেও লক্ষ্য রাখতে ধবে। এরপর নিচের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্ত্ন করুন।
- কোন সমতল স্থানে মেইন স্ট্যানে মটরসাইকেলটি দাঁড় করুন।
- ইঞ্জিনটি ৪-৫ মিনিট চালু করে রাখুন ।
- এবার ইঞ্জিনটি বন্ধ করে ডিপস্টিক খুলে ফেলুন ।
- ডিপস্টিকটিকে পরিষ্কার করুন এবং আবার এটিকে যথাস্থানে সেট করুন। সাবধান থাকবেন যাতে প্যাচ লেগে না যায়।
- ডিপস্টিকের আপার লেভেল ও লোয়ার লেভেল পর্যন্ত ইঞ্জিন অয়েল থাকবে।
- যাদি ইঞ্জিন অয়েল লোয়ার লেভেল ছুঁই ছুঁই করে তাহলে বুঝতে হবে যে তেল দিতে হবে এবং এ সময় আপার লেভেল পর্যন্ত তেল ভরে দিতে হবে।
- ডিপস্টিক আবারো তার স্থানে দিয়ে পরীক্ষা করুন কোন ছিদ্র রয়েছে কিনা।
মিনেরাল অয়েলের সাথে সিনথেটিক অথবা সেমি সিনথেটিক অয়েল মেশাবেন না। বছরে দুই একবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের আগে ফ্লাসিং অয়েল ব্যাবহার করতে পারেন। এটি নির্ভর করে আপনি কত কিমি মটরসাইকেল চালিয়েছেন তার উপর। তবে কার্বন পরিষ্কার করার জন্য ফ্লাসিং অয়েল ব্যাবহার করা উচিত এর পরিবর্তে কখনো কেরোসিন, পেট্রোল বা ডিজেল ব্যাবহার করা উচিত নয় কারন এগুলো ইঞ্জিনের মারাত্মক ক্ষতি করবে। ইঞ্জিনের ঘর্ষন কমানোর জন্য ইঞ্জিন অয়েলের সাথে আলাদা কোন লুব্রিকেন্ট ব্যাবহার করা উচিত নয়। এর জন্য ইঞ্জিন অয়েলই যথেষ্ঠ।
অতএব এখন বোঝা যাচ্ছে যে ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিন এর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন, এটি ইঞ্জিনকে যেমন দীর্ঘায়ু করে তেমন ইঞ্জিনের পারফর্মেন্স বাড়িয়ে আপনার চলাচলকে করে আরও সুন্দর। তাই আপনি আপনার মটরসাইকেলের জন্য সঠিক ইঞ্জিন অয়েল বেছে নিন এটিই আমাদের কাম্য।
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.