মোটরসাইকেল কেনার পর আমরা প্রথম যে সমস্যার মুখোমুখি হই তা হলো মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে। প্রায় সবার কাছে এটি একটি উটকো ঝামেলা মনে হয়, এর প্রধান কারন হলো মটোর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে হলে আপনাকে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আবার এটি ছাড়া রাস্তায় চলাচল করাও সম্ভব নয়। তাই অনেকেই অনেক দালাল ধরেন আর এসব অফিসে দালালেরও অনেক ছড়াছড়ি। কিন্তু আপনি যদি নিয়মগুলো বুঝে ও ভালোভাবে পড়ে রেজিস্ট্রেশন করেন তাহলে আপনাকে অতটা ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না এবং দালালের পিছনে টাকাও খরচ করতে হবে না। আপনি যখন আপনার মোটর সাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন করবেন তখন আপনি অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবেন যা পরবর্তিতে আপনার অনেক কাজে লাগবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং প্রক্রিয়া:
এবার আসি আসল কথায়, আপনি আপনার বাইকটি যাখন রেজিস্ট্রেশন করতে যাবেন তখন আপনার কি কি কাগজপত্র লাগবে আগে তা জেনে নেই। এই কাগজগুলো আপনি যেখান থেকে মোটর সাইকেল কিনেছেন সেখান থেকে অর্থাৎ সেই ডিলার বা দোকান থেকে বুঝে নিবেন। আপনার বাইকের কোম্পানী তাদেরকে এই কাগজগুলো সরবরাহ করেছে। এই কাগজগুলো হলো, রেজিস্ট্রেশন ফরম, আপনার বাইক ক্রয়ের ক্যাশ ম্যামো, যেখান থেকে বাইকটি কিনেছেন সেখান থেকে গেট পাশ এর স্লীপ নিতে হবে, মূসক (মূল্য সংযোজন কর) চালান যে ডিলার থেকে বাইক কিনেছেন তার সমীপে, মূসক ১১ এর চালান পত্র যে আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান থেকে কিনেছেন তার সমীপে, ট্রেজারী চালানপত্র ডিলারের সমীপে সোনালী ব্যাংক (ট্যাক্স অফিসার কতৃক সত্যায়িত) সংগ্রহ করতে হবে এবং আমদানি সংক্রান্ত কাগজ ও কাস্টমস এর সকল কাগজ নিতে হবে। সকল কাগজে একই ইঞ্জিন ও চেসিস নাম্বার একই আছে কিনা দেখে নিন। আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর ফটোকপি নিন। এবার বি.আর.টি.এ অফিস থেকে সংগৃহীত মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন এর ফরমটি পূরণ করে এর সাথে সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করে কর্তব্যরত ব্যক্তিকে দেখিয়ে নিন। যদি কোন কাগজপত্র বাদ পরে যায় তাহলে তারা আপনাকে জানিয়ে দেবে আর যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে তাহলে তারা আপনাকে একটি ফরম দেবে, এই ফরমটিকে এসেসমেন্ট ফরম বলা হয়। এই ফরমটি পূরণ করার পর আপনাকে একটি টাকা জমা দেওয়ার রশিদ দেওয়া হবে, এই রশিদে উল্ল্যেখকৃত টাকা আপনাকে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
টাকার পরিমাণ:
বি.আর.টি.এ এর ওয়েবসাইট এ গিয়ে আপনি আপনার বাইকের ওজন ও সিসি দিয়ে সাবমিট করলে দেখতে পারবেন আপনার বাইকের জন্য কত টাকা প্রয়োজন। এখন দুই মেয়াদে আপনি আপনার লাইসেন্স করতে পারবেন। দুই বছরের জন্য ও দশ বছরের জন্য। দুই বছরের জন্য লাইসেন্স করলে আপনাকে দুই বছর পর পর আপনার রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করতে হবে। প্রতি দুই বছর পর আপনি শুধুমাত্র ব্যাংকে টাকা জমা দিলেই আপনার লাইসেন্স নবায়ন হয়ে যাবে। আর দশ বছরের জন্য রেজিস্ট্রেশন করলে আপনাকে দশ বছর পর আপনার রেজস্ট্রেশনটি নবায়ন কতে হবে। দুই রেজিস্ট্রেশনেই সময় অনুপাতে একই পরিমান টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ দশ বছেরর লাইসেন্স এ আপনার যত খরচ হয়, দুই বছরের জন্য লাইসেন্স আপনি ৫ বার নবায়ন করলে একই পরিমাণ টাকা খরচ হবে। টাকা জমা দেওয়ার জন্য বি.আর.টি.এ কিছু ব্যাংক নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, আপনাকে রশিদে উল্লখকৃত টাকা এই ব্যাংক গুলোতে জমা দিতে হবে।
আমি আগেই বলেছি বি.আর.টি.এ এর ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি আপনার বাইকের সিসি ও ওজন দিয়ে আপনি নিজেই বের করতে পারবেন যে আপনার বাইকের জন্য কত টাকা লাগবে। তবুও আমি আপনাকে একটি ধারনা দিচ্ছি যে কোন বাইকের জন্য কেমন টাকা লাগতে পারে।
- ১০০ সিসি বা এর থেকে নিচে, ৯০ কেজি ওজনের বাইকগুলোর জন্য আপনাকে দশ বছরের জন্য দিতে হবে ১২,৩৯০ টাকা।
- ৯০ কেজি এর উপর ১০০ সিসি বাইকের জন্য আপনাকে ১৭,৩৯০ টাকা জমা দিতে হবে।
- ১০০ এর উপরে ১৫০ সিসি এর মধ্যে ৯০ কেজি বাইকের জন্য আপনাকে ১৩,৭৯০ টাকা জমা দিতে হবে।
- ১০০ এর উপরে ১৫০ পর্যন্ত সিসি বাইকের ওজন যদি ৯০ কেজি এর বেশি হয় তাহলে আপনাকে ১৮,৭৯০ টাকা জমা দিতে হবে।
( প্রত্যেক চার্জের সাথে ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য)
এরপর ব্যাংক এ টাকা জমা রশিদ ও কাগজপত্র সংযুক্ত করে আপনার কাগজগুলো বি.আর.টি.এ অফিসে জমা দিতে হবে। তারপর বি.আর.টি.এ এর একজন ইন্সপেক্টর কাগজপত্রসহ আপনার বাইকটি দেখবেন এবং যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে উনি অথরাইজ করে, নম্বর সহ একনলেজমেন্ট স্লীপ, ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন দেবে। এই সময় আপনার সম্পুর্ন পরিচয় এর সাথে আপনার ব্যবহারকৃত মোবাইল নম্বরটি দিতে ভুলবেন না। আপনার মোবাইল নম্বরটি অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতি:
এরপর আপনার বায়োমেট্রিক আইডেন্টিটি এর জন্য আপনার মোবাইলে একটি মেসেজ আসবে, মেসেজ পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ে বি.আর.টি.এ অফিসে উপস্থিত হয়ে আপনি আপনার আংগুলের ছাপ, সাক্ষর ও ছবি তুলে আসবেন। এটি আপনার রেজিস্ট্রেশন এর জন্য সর্বশেষ ধাপ।
এরপর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। প্রায় এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আপনার সরবরাহকৃত মোবাইল নম্বরে মেসেজ দিয়ে আপনার নাম্বার প্লেট ও ব্লু বুক সরবরাহের তারিখ জানানো হবে। সেই তারিখে গিয়ে আপনাকে ডিজিটাল নম্বর প্লেট ও ব্লু বুক সংগ্রহ করতে হবে।
এই হলো বর্তমানে বাইক রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া, বর্তমানে ডিজিটাল নম্বর প্লেট এর কারনে আপনার বাইকটি অনেক নিরাপদে থাকে। আপনার বাইকটি রেজিস্ট্রেশন করুন এবং স্বাধীনভাবে রাস্তায় চলাচল করুন।
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩