বাজাজ ডিস্কভার ১২৫ ইউজার রিভিউ (লিখেছেন বাদল আলী)

আসসালমুয়ালাইকুম।আমার নাম বাদল আলি। আমার বয়স ১৮ বছর। আমি পাবানা জেলায় বাস করি। আমি একজন ছাত্র। আজ মূলত আমি আমার আব্বুর ডিসকভার 125 2017 ড্রাম বাইকটির রাইডিং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলব।

বাইকটি কেনার কারণ:

আমার আব্বু একজন ব্যবসায়ী। এই কারণে তার নিত্য প্রয়োজনে  একটি বাইক খুব প্রয়োজন ছিল। যেহেতু তার প্রতিদিন গড়ে ৫০ -৬০ কি.মি. বাইক রাইড করতে হয় এবং মাস এ প্রায় এক বার ঢাকা থেকে পাবনা যাতায়াত  করতে হয় তাই তিনি একটি অল-রাউন্ডার বাইক খুজছিলেন। পছন্দের তালিকায় ছিল হোন্ডা লিভো ১১০, হোন্ডা ড্রিম নিও ,টিভিএস  স্ট্রাইকার, ডিস্কভার ১২৫ । পরে আব্বু সব কিছু বিবেচনা করে ডিস্কভার বাইকটি ক্রয় করেন ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে। দাম ছিল ১,৩১,০০০ টাকা ড্রাম ব্রেক এডিশনটির।

লুকস:

আমরা জানি ডিস্কভার ১২৫ বাইকটির লুকস একদম কমিউটার বাইক এর মত এবং সব বয়স এর রাইডার এর সাথে বাইকটি মানানসই।

বিল্ড কোয়ালিটি:

বাজাজ ডিস্কভার ১২৫ বাজাজ কোম্পানির একটি অন্যতম জনপ্রিয় বাইক এবং এর বিল্ড কোয়ালিটি খুব ভাল। আমি নিজে একবার একটি দুর্ঘটনা করেছিলাম। হেডলাইটে সামান্য দাগ ছাড়া কোন ক্ষতি হইনি।

পারফরমেন্স ও মাইলেজ:

ডিস্কভার ১২৫  বাইকটিতে একটি ১২৫ সিসি এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন প্রায় ১০ বি এইচ পি ও ৮ এন এম র্টক উৎপন্ন করতে পারে যা আমার কাছে যথেষ্ট মনে হয়েছে। বাইকটিতে আমার কোনো সময়ই পাওয়ার কম মনে হয়নি। আব্বুও পাবনা থেকে ঢাকা হাইওয়ে রাইড এর সময় এর পাওয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট। ঢাকা সিটিতেও লো আরপিম এ বাইকটির পাওয়ার আউটপুট ভালোর কাতারে বলা যায়। বাইকটি ৬০+ স্পিড থেকে প্রচুর ভাইব্রেশন করে। এখন পর্যন্ত বাইকটি থেকে আমি ১১০ কিমি এর মতো টপ স্পিড পেয়েছি। বাইকটির মাইলেজ খুব ভাল। ঢাকা সিটিতে ৫০-৫৫ ও হাইওয়েতে ৬০+ পেয়েছি। কিন্তু ভাল মাইলেজ পেতে অবশ্যই ভাল মানের তেল ব্যবহার করতে হবে এবং সঠিক মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হবে।

রাইডিং কম্ফোর্ট : 

বাইকটির সিটিং পজিশন সম্পুর্ন আপরাইট। ফুটপেগ বাইকের মাঝে এবং হেন্ডেলবারটি উচু। ফলে লং রাইডের সময় কোনো ব্যাকপেইন হয়না। আবার ঢাকা সিটির যানজটপূর্ন সড়কেও কোন অসুবিধা হয়না।

সাসপেন্সন:

বাজাজ ডিস্কভার এর সামনে ব্যবহার করা হয়েছে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পিছনে ডুয়েল নাইট্রস স্প্রিং সাসপেন্সন। এই বাইকের সাসপেন্সন খুব ভাল এবং ভাঙা রাস্তা, ভাল রাস্তা সব রকম রাস্তাই ভাল ফিডব্যাক দেয়।

টায়ার এবং ব্রেক:

বাজাজ ডিস্কভার ১২৫ ড্রাম বাইকে সামনে ব্যবহার করা হয়েছে ২.৭৫x সাইজের টায়ার আর পিছনে ব্যবহার করা হয়েছে ৩.০০x সাইজের টিউব টায়ার। এর সাথে বাইক থামাতে ব্যবহার হয়েছে ১৩০ এম.এম এর ড্রাম ব্রেক। কিন্তু  টায়ার দুটির গ্রিপ নিয়ে আমি খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলাম না এবং টায়ার গুলো টিউবলেসও ছিল না। ফলে অনেকবার হয়রানি মুলক পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে পরবর্তীতে টায়ার পাল্টে সামনে ৮০ সাইজের টিউবলেস  টায়ার এবং পিছনে ১০০ সাইজের টিউবলেস টায়ার লাগিয়েছি। এখন ব্রেকিং আগের চেয়ে অনেক বেটার।

হেডলাইট :

বাইকটির হেডলাইট দেখতে স্টাইলিশ। এটি একটি হ্যালোজেন ইউনিট এবং পার্কিং লাইট গুলো বাল্ব। হেডলাইটের আলোর পরিমাণ ভালো কিন্তু হেডলাইটি এসি ফলে আর পি এম এর সাথে লাইটের আলো কম বেশি হয়। আমার মতে লাইটি ডিসি হওয়া উচিত ছিল।
এই বাইকটি নিয়ে প্রায় ৩৫০০০+কিলোমিটার পথ চলা হয়েছে। এই সময়ের অনেক স্মৃতি জরিয়ে আছে বাইকটির সাথে।

বাইকটির ভালো দিকগুলো:

১. বিল্ড কোয়ালিটি ভালো
২. মেইনটেনেন্স খরচ কম এবং পার্টস এর দাম খুব সুলভ।
৩. রাইডিং কম্ফোর্ট ভাল।
৪. সাসপেন্সন গুলোর ফিডব্যাক ভালো। ভাঙা রোডে পিলিওন সহ কোনো প্রব্লেম ছাড়া রাইড করা যায়।
৫. বাইকটির মাইলেজ খুব ভাল।
৬. ইঞ্জিনের লো এবং হাই রেঞ্জের  পারফর্মেন্স খুবই ভাল।
৭. ১২৫ সিসি হিসাবে বাইকের টপ স্পিড সন্তোষজনক।

বাইকের কিছু খারাপ দিক:

১. প্রথমত ৬০+ স্পিড এর পর থেকে অনেক ভাইব্রেশন হয়।
২. বাইকের সাথের স্টক CEAT টায়ার এর গ্রিপ খুব একটা ভাল না।
৩. বাইকটির মাইলেজ ভাল কিন্তু ফুয়েল ট্যাংকটি ৮ লিটার তেল ধারণ করে। আমার মতে ট্যাংকটি একটু বড় করা উচিত।
৪. হেডলাইটি ডিসি করা উচিত।
সকল বাইকের ভাল খারাপ দিক আছে। তেমন এই বাইকটির ও কিছু খারাপ ও ভাল দিক আছে। সব মিলিয়ে বলা যায় বাজাজ ডিস্কভার ১২৫ সিসি আমাদের দেশের মধ্যে খুব ভাল একটি বাইক। আমাদের সবার উচিত ফুল ফেস হেলমেট পরে বাইক চালান।
লিখেছেনঃ Badal Ali

Related Posts

error: Content is protected !!