বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৩ সালের তথ্য থেকে দেখা যায় যে ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী ২,৮৬,০০০ জনের বেশী মটোরসাইকেল চালক বা আরোহী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন । ২০১৩ সালে বিশ্বের যত মানুষ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে তার প্রায় এক চতুর্থাংশ হল মটোরসাইকেল চালক বা আরোহী। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ মৃত্যু ঘটেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহে। তথাপিও, মোটরসাইকেল চালকদের নিরাপত্তা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগজনক।পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে যদিও বিশ্বব্যাপী মোটরসাইকেলের সংখ্যা মোট ট্র্যাফিকের মাত্র ১%, তথাপিও দেখা যায় যে দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যু প্রবনতা অন্যন্য যান বাহনের তুলনায় প্রায় ১৮% বেশী ।
বিশ্বব্যাপী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারন অনুসন্ধানে যেমন চালকের দোষ পরিলক্ষিত হয় একই ভাবে প্যাডাল সাইক্লিস্ট, পথচারী ও রাস্তা ব্যবহারকারী অন্যান্য যানবাহনের ভুলেও মোটরসাইকেল চালকরা দুর্ঘটনায় পতিত হন। অন্য দিকে বিশ্বব্যাপী মোটরসাইক্লিস্টদের ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারের প্রবল প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ। মূলত অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটসাইকেলের সিট বেল্ট, এয়ারব্যাগ এর মত কোন প্রতিরক্ষা বৈশিষ্ট্য নেই।তাই অন্যান্য যাহবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল বেশী ঝুঁকিপূর্ণ।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, দুর্ঘটনায় পতিত মোটরসাইকেল চালকদের ৯১% পুরুষ এবং তাদের মধ্যে ৩২% এর বয়স ১৭-২৪ বছর।যা নির্দেশ করে যে কম বয়সী যুবকদের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী। অপরদিকে নিহত বা গুরুতর আহত ২২% মোটরসাইকেল চালক একক যানবাহন দুর্ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন মানে দুর্ঘটনার সময় তাদের আশে পাশে অন্য কোন যানবাহন ছিল না। সুতরাং নিজের দোষেও অনেক মোটরসাইকেল চালক করুন মৃত্যু বরন করেন।
এই সকল একক দুর্ঘটনার ৯% সংঘটিত হয়েছিল রাস্তার বাঁকে।
মুলত তিনটি কারনে রাস্তার বাঁকে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়-
১/ বামদিকে বাঁকের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল চালকেরা রাস্তার বাঁকে বামপাশে না চেপে রাস্তার মাঝ বরাবর দিয়ে বাঁক নেবার সময় বিপরীত দিক থেকে আগত গাড়িটিকে দেখতে না পেরে মুখোমুখি সংঘর্ষ করে বসে।
২/ডানদিকে বাঁকের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল চালকেরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার সোজা বা ডান পাশে গাছ বা রোড হেজের সাথে সংঘর্ষ করে বসে।
৩/ বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনটি বাঁকের অপর পাশ ঠিকমত দেখতে না পেরে বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অপর দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলটির মুখোমুখি সংঘর্ষ করে বসে।
কর্ণারিং একটা স্কিল । স্ট্রান্ট ও কিন্তু একটা স্কিল কোনদিন কি কাওকে পাবলিক রোডে স্টান্ট প্রদর্শন করতে বা প্র্যাকটিশ করতে দেখসেন !
রাস্তার বাঁকের পর দ্বিতীয় অবস্থানে আসে জংশনে সংঘর্ষ। প্রাপ্ত তথ্য মতে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন ৩০ জনের অধিক মটোরসাইকেল চালক বা আরোহী জংশনে সংঘর্ষে নিহত হয়। কারণ ৪ দিক থেকে যানবাহন আসার ফলে অনেক সময়েই গাড়ী চালকেরা মটোরসাইকেলের অবস্থান সঠিকভাবে অনুধাবন করে উঠতে পারেন না।
মুলত দু’টি কারনে জংশনে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়
১/ জংশন থেকে বের হবার সময় ড্রাইভাররা মটোরসাইকেলের অবস্থান সঠিকভাবে অনুধাবন করে উঠতে পারেন না বা মটোরসাইকেল চালকেরা অন্যান্য যানবাহনের অবস্থান সঠিকভাবে অনুধাবন করে উঠতে পারেন না।
২/ অনেক সময় ড্রাইভাররা মটোরসাইকেলের বা মটোরসাইকেল চালকেরা অন্যান্য যানবাহনের অবস্থান সঠিকভাবে অনুধাবন করে উঠতে পারলেও ‘সংঘর্ষের সময়’ সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারেন না ।
দিনের বেলা উজ্জল রঙের কাপড় পরিধান করলে এবং হেডলাইট জ্বালিয়ে মটোরসাইকেল চালালে অন্যান্য চালকেরা মটোরসাইকেলের অবস্থান সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেন। তেমনি রাতের বেলা রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট ব্যবহার করেও মটোরসাইকেল চালকেরা অন্যান্য যানবাহনওক তাদের অবস্থান সম্পর্কে নির্দেশ করতে পারেন।
জংশনে সংঘর্ষের পর তৃতীয় অবস্থানে আসে ওভারটেকিং এর দুর্ঘটনা। সকল দুর্ঘটনার ১৫% সংঘটিত হয়েছিল ওভারটেক করতে গিয়ে।
ওভারটেকিং সবসময়ই রিস্কি। পেছন থেকে ওভারটেকের সময় সর্বদা বিপার ব্যবহার করে সামনের যানবাহনকে সিগন্যাল দেয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে সামনের যানবাহন সিগন্যাল দিলে তবেই ওভারটেক করা উচিত। একই ভাবে সামনে থেকে আগত যানবাহনকে বিপার/পাশ লাইট ব্যবহার করে আপনার অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করাও আপনার সুরক্ষাকে নিশ্চিত করে।
ওভারটেকিং এর পর চতুর্থ অবস্থানে আসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা। সকল দুর্ঘটনার ২০% সংঘটিত হয়েছিল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে।
এর জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর আপনার মোটরসাইকেলটি পরিক্ষা করা উচিত এবং ত্রুটিপূর্ণ সকল যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা উচিত। হেডলাইট, টেললাইট, ইন্ডিকেটর লাইট চেক করার পাশাপাশি চেইন লুব করা , ব্রেক ওয়েল ও কুলেন্ট এর পরিমাপ লক্ষ্য করা, ক্লাচ ও থ্রটল পরীক্ষা করা, মিরর পরিস্কার করা, হর্ণ পরীক্ষা করা, টায়ার প্রেশার লক্ষ্য করা এবং সর্বপরি ব্রেক ঠিক মত কাজ করছে কিনা নিশ্চিত করা আপনার নিজের দায়িত্ব।
স্পিডিং এর ব্যাপরে আলাদা করে কিছু বলার নেই ৫৮% মটোরসাইকেল দুর্ঘটনার পেছনে মূল কারণ থাকে স্পিডিং এবং ৮% ক্ষেত্রে ওভার স্পিডিং এর পেছনে মাদকদ্রব্যের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় ।
এত গেল দুর্ঘটনার কারন এখন এ থেকে সুরক্ষার জন্য আমরা কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি।
১/ সর্বদা ভালো মানের ফুলফেস সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহার করতে পারি। এক্সিডেন্টের ফলে ৬০% ক্ষেত্রে আরেহীর মৃত্যু হয় মস্তিস্কে আঘাতজনিত কারণে। তাই ভালো মানের ফুলফেস সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই । এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে ডটের থেকে ইসিই শক্তিশালী আর ইসিই থেকে শার্প শক্তিশালী। হেলমেটের দাম বা গ্রাফিক্সের থেকে সুরক্ষা মানের প্রতি বেশী গুরুত্ব প্রদান করুন।
২/ উপযুক্ত গিয়ার পরুন। প্রতিরক্ষামূলক গিয়ার এবং পোশাক পরতে ভুলবেন না এটি কোনও দুর্ঘটনা বা স্কিডের ক্ষেত্রে আঘাতের পরিমাণ হ্রাস করবে। সেফটি জ্যাকেট, ননস্কিড শোলসযুক্ত জুতো এবং গ্লোভস ব্যবহার করলে তা আপনার শরীরকে মারাত্মক আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে। অন্যান্য ড্রাইভারদের আপনার দেখা সহজ করার জন্য আপনার পোশাকগুলিতে প্রতিফলিত টেপ সংযুক্ত করার বিষয়টিও বিবেচনা করুন।
৩/ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে চলুন।গতির সীমা মেনে চলুন; আপনি যত দ্রুত গতিতে যাবেন আপনার থামতে তত বেশী সময় লাগবে। স্থানীয় ট্র্যাফিক আইন এবং রাস্তার নিয়ম সম্পর্কে সচেতন হন।
৪/ আত্মরক্ষামূলকভাবে চলুন । অন্যর উস্কিানিতে গতি বাড়াতে যাবেন না। মোটরসাইকেলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে অন্যর উস্কিানিতে। আপনার উচিত সব সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে চালানো; অন্যান্য ড্রাইভারের ব্লাইন্ড স্পট থেকে দূরে থাকা; দিকনির্দেশের জন্য যে কোন দিক পরিবর্তনের আগেই সংকেত প্রদান করা; লুকিং গ্লাস দেখে বাইক চালানো এবং প্রয়োজনে ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যান্য যানবাহন গুলির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে মোটবাইক চালানো।
৫/জেগে থাকুন এবং শান্ত থাকুন। অতিরিক্ত ক্লান্ত অবস্থায় বা মদ্যপ অবস্থায় মোটরসাইকেল চালাবেন না। তাতে আপনি নিজের এবং অন্যের ক্ষতি করতে পারেন। ক্লান্তি এবং তন্দ্রা আপনার প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে, সুতরাং রাস্তায় নামার নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি সঠিকভাবে বিশ্রাম করতে পেয়েছেন।
লিখেছেন- মাহবুব এলাহী আক্তার (শাওন)
ফাউন্ডার- Moonshine Motorist
- Hero Hunk DD ১৭০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ ( লিখেছেন- শান্ত) - এপ্রিল ২, ২০২৪
- Hero Hunk ১০,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ফাহিম হোসেন তপু) - মার্চ ১১, ২০২৪
- Hero Hunk ৪২,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ) - মার্চ ১০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.