ইঞ্জিন চালিত যানবাহন সঠিক ভাবে চলার জন্য ক্লাচের গুরুত্ব অপরিসীম। ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন সমৃদ্ধ যানবাহন গুলোতে ক্লাচের কোন বিকল্প নেই। বাইকের ক্ষেত্রে ক্লাচ একটি অপরিহার্য জিনিস। যেসব মেইন পার্টস নিয়ে একটি ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন ইঞ্জিন তৈরি করা হয় তার মধ্যে ক্লাচ একটি অন্যতম যন্ত্রাংশ। ক্লাচে কোন রকম সমস্যা হলে তা পুরো বাইকের উপর প্রভাব ফেলে।
আসুন জেনে নেই,
- ক্লাচ কি?
- ক্লাচ কত প্রকার ও কি কি?
- ক্লাচ কিভাবে কাজ করে?
ক্লাচ কি? কত প্রকার ও কি কি?
ক্লাচ: ক্লাচ হল ইঞ্জিনের সেই উপাদান যা ইঞ্জিন থেকে প্রাপ্ত শক্তি গিয়ার পরিবর্তনের মাধ্যেমে বাইকের পাওয়ার বাড়াতে বা কমাতে সাহায্য করে এবং বাইককে সচল করে ও প্রয়জন অনুযায়ী গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
ক্লাচ সাধারনত দুই প্রকার।
১) ওয়েট ক্লাচঃ
যে ধরনের ক্লাচ এর উপাদান গুলিকে ঠান্ডা করার জন্য ইঞ্জিন ওয়েলের মধ্যে ডুবানো থাকে তাকে ওয়েট ক্লাচ প্লেট বলে এবং এর কোনো অংশ বাহিরে থাকে না তাকে ওয়েট ক্লাচ বলে। এই ধরনের ক্লাচ গুলো ঠান্ডা হতে ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করে। বেশির ভাগ বাইকে এবং আমাদের দেশে এভেলেবেল সব গুলো বাইকে এই ধরনের ক্লাচ ব্যবহার করা হয়। এর আয়ুষ্কাল দীর্ঘ।
২) ড্রাই ক্লাচঃ
ড্রাই ক্লাচ এর যন্ত্রাংশ গুলো মূলত শুঁকনো অবস্থায় থাকে। বলা যায়,যে ক্লাচের যন্ত্রাংশ কে ঠান্ডা করতে বাতাস ব্যাবহার করা হয় এবং ক্লাচ প্লেট ও ক্লাচ হাউজিং ইঞ্জিনের বাহিরের দিক এ থাকে তাকে ড্রাই ক্লাচ বলে। খুব অল্প সংখ্যক বাইকে এই দরনের ক্লাচ ব্যাবহার হয়। কিছু কিছু রেস ট্রাকের বাইকে এগুলো দেখতে পাওয়া যায়। এর আয়ুষ্কাল খুবই কম।
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে ক্লাচ দু প্রকার হলে, স্লিপার ক্লাস ও হাইড্রোলিক ক্লাচ কি! এগুলো মূলত ওয়েট ক্লাচ এর ধরন বা প্রকারভেদ।
• স্লিপার ক্লাচঃ স্লিপার ক্লাচকে অনেকে ব্যাক-টর্ক লিমিটার নামে চেনে। সাধারনত রেস ট্র্যাকের বাইক গুলোতে ব্যাবহার করা হয়। রেসিং ট্র্যাকে কর্নারিং করার কারণে ইঞ্জিন এর পাওয়ার কমে যায়। কমে যাওয়া ইঞ্জিনের পাওয়ারকে দ্রুত ইনহ্যান্স করার জন্য স্লিপার ক্লাস ব্যবহার করা হয়। ইঞ্জিন ব্রেক করার জন্য এই ধরনের ক্লাচ খুব উপযোগী।
• হাইড্রোলিক ক্লাচঃ হাইড্রোলিক ক্লাচে হাইড্রোলিক ফ্লুইড ব্যবহার করে ক্লাচ এর অংশ গুলো একসাথে করা হয় ও আলাদা করা হয়। এই ধরনের ক্লাচ গুলো সয়ংক্রিয় ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। হাইড্রোলিক ক্লাচ খুব সহজে পুস করা যায়। এ ধরনের ক্লাচ যে কোনো জায়গাতে ব্যাবহার করা যায়।
আসুন এবার জেনে নেই, ক্লাচ কি ভাবে কাজ করে?
ক্লাচ সাধারণত ক্লাচ লিভার, প্রাইমারি ড্রাইভিং গিয়ার, ক্লাচ স্প্রিংস, ক্লাচ বক্স/ক্লাচ বাটি, ক্লাচ প্লেট, ক্লাচ হাব, লেভেল, ক্লাচ ক্যাবল এবং প্রেসার প্লেট সহ অসংখ্য উপাদান নিয়ে গঠিত এবং কাজ করে। ক্লাচ লিভার টানার ফলে ক্লাচ স্প্রিংস সংকুচিত হয়, এতে করে ক্লাচ প্লেট গুলো আলাদা হয়ে যায় ও স্বাধীনভাবে ঘুরতে থাকে। যাতে করে ট্রান্সমিশন থেকে ইঞ্জিন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও শক্তি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং এই সময় ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন এর বাইক গুলোতে গিয়ারগুলি পরিবর্তন করা যায়। গিয়ার পরিবর্তনের পর যখন ক্লাচ লিভার ছেড়ে দেয়া হয় তখন ক্লাচ স্প্রিং গুলো প্রসারিত হয় এবং স্বাধীনভাবে ঘূর্ণায়মান ক্লাচ প্লেট গুলো আবার ট্রান্সমিশনের সাথে ইঞ্জিনের সংযোগ যুক্ত করে ও নতুন ভাবে শক্তি উৎপাদন করে। এভাবেই মূলত ক্লাচ কাজ করে। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন চালু হলে ইঞ্জিন ঘুরতে শুরু করে কিন্তু চাকা ঘোরে না। ক্লাচ ঘুর্নায়মান ইঞ্জিনকে নন-স্পিনিং ট্রান্সমিশনে কনভার্ট করে দেয়, যার ফলে বাইকের ঘোরে। ক্লাচের কাজ হল মোটরসাইকেলের গতি পরিবর্তন করা বা ইঞ্জিন বন্ধ না করে এটিকে থামানো।
প্রশ্ন আসতেই পারে অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেমে কি ক্লাচ নেই?
‘শুধু ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশনের সিস্টেমে ক্লাচ থাকে’ ব্যাপার টা এমন না। অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেমেও ক্লাচ থাকে। অটোমেটিক ট্রান্সমিশন প্রক্রিয়াতে অনেকগুলো অংশ থাকে। বেল্ট হাউজিং নামের একটি স্থানে ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশন মিলিত হয়ে একটি অটোমেটিক গাড়ির জন্য টর্ক তৈরি করে। এই উৎপাদিত টর্ক একটি কনভার্টারের মধ্যে দিয়ে যায় ও চাকাকে ঘোরায়। আর এই টর্ক কনভার্টরে থাকে একটি টারবাইন, একটি ইম্পেলার, একটি স্টেটর এবং একটি লক-আপ ক্লাচ। তাই বলা যায়, পরোক্ষভাবে হলো অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেমের সাথে ক্লাচ জড়িত রয়েছে।
আশা করি উপরোক্ত লেখাটি থেকে ক্লাচ সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
- SMK TITAN CARBON হেলমেটের ইউজার রিভিউ - অক্টোবর ১৩, ২০২৪
- SMK Stellar এর রিভিউ দিয়েছেন দেওয়ান সোহান - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
- গতকাল লঞ্চ হলো”Petronas Sprinta Ride Safe” ক্যাম্পেইন - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.