হাইওয়ে রাইড নিয়ে প্রতিটি বাইকারই খুব সচেতন, ঠিক তেমনি সিটি রাইডের সময় বাইকাররা থাকে বেশ অসচেতন আর নিরাপত্তা নিয়েও থাকে না বিন্দুমাত্র চিন্তা। আর ঘটে যায় বড় বড় অনেক দূর্ঘটনা যা আড়ালে পরে থাকে। ঢাকা সিটির কথা আলাদা, কারন নিরাপত্তার কথা ভেবে হোক আর মামলার ভয়ে হোক, বাইকাররা নিজেদের সেফটি নিয়ে বেশ সচেতন।
আজ আমার আলোচনা বিষয় জেলা শহরের রাইডারদের নিয়ে। লেখার উদ্দেশ্য কাউকে ছোট করা বা আঘাত করা নয়। বরং একটু সচেতনতা সৃষ্টি করা।
চলুন শুরু করি,
প্রথমে সিটি রাইডে বাইকারদের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত তুলে ধরা যাকঃ
১। হেলমেট ব্যবহার না করা
অধিকাংশ জেলা শহরগুলোতে দেখা যায় বাইকাররা হেলমেট একদম ব্যবহার করে না, এমন অনেক জেলাও আছে হেলমেট ব্যবহার করলে তাকে বোকা বলে আখ্যায়িত করা হয়। যে মানুষটা নিজের সেফটির কথা ভাবে সে কিভাবে বোকা হয়? আমাকে একটু বলবেন?
একটা বার ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন তো, আপনার মাথায় হেলমেট না থাকা অবস্থায় আপনার একটা এক্সিডেন্ট হলে ক্ষতিটা কার হবে? আপনার নাকি সেই মানুষগুলোর যারা আপনার হেলমেট ব্যবহার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে?
২। সংকেত বাতি ব্যবহার না করা
এটা তো আমার এলাকা, এই চিন্তা থেকেই শুরু হলো দূর্ঘটনার প্রথম স্টেজ, অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাসে অধিকাংশ মানুষই কোন সিগনাল ব্যবহার করে না, যার ফলে ঘটে যায় বড় বড় একটা দূর্ঘটনা। আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন তো আপনার বাসার সামনের মোড়ে আপনি সতর্ক বাতি ব্যবহার করেন কিনা?
৩। হর্নের ব্যবহার না করা
যেখানে ঢাকা সিটিতে প্রতিটা মোড়ে আপনি হর্ণ ব্যবহার করেন সেখানে নিজের এলাকায় আসলে হর্ণ ব্যবহার করতে কেনো ভূলে যান? আপনি জানেন সামনের মোড়টি ফাঁকা থাকে, কিন্তু আপনি কি সিউর আপনি যখন যাচ্ছেন তখন কেউ আসছে না সামনে থেকে?
৪। অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাস
সব আমার চেনা জানা, ঠিক আছে বেশ ভালো কথা। আত্নবিশ্বাস থাকা ভালো কিন্তু অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাস আপনার জন্যই ঝুকির কারন। নিজের বাসার নিচ থেকে বাইকের থ্রটল মোচড় দেয়ার আগে ভালো মত দেখে নিন ইঞ্জিন চালিত রিক্সা অথবা অটো ছুটে আসছে কিনা। তাই সচেতন থাকুন।
৫। ইঞ্জিন চালিত রিক্সা থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান না করা
জেলা শহরগুলোতে সবচেয়ে বড় আতংকের নাম অটোরিক্সা। আর এদের ড্রাইভাররাও মাশ আল্লাহ, দারুন দক্ষ! কখন কিভাবে কোন দিকে সে বাক দিবে সেটা তো সে নিজেও জানে না।
৬। বাইপাস সড়কগুলোর অপব্যবহার
আমাদের দেশ এখন বেশ উন্নত, তাই প্রতিটা জেলার মাঝেই একটা সড়ক থাকে যা অসাধারণ বেশ ভালো কথা এটা। এটা দোষের কিছু না। কিন্তু দোষ তখনী যখন আমরা সড়কটাকে লাশের মিছিলে রূপান্তরিত করি।
সেটা কিভাবে?
জেলা শহরে আমরা অধিকাংশ বাইকাররাই হেলমেট পড়ি না, তার মধ্যে কয়েকজন বন্ধু বা ভাই ব্রাদার এক হলেই শুরু হয় ভালো একটা রাস্তার সন্ধান, আর রাস্তা পেলেই শুরু হয়ে যায় বাইকের টপ চেক করার প্রবনতা, ঘটে যায় দূর্ঘটনা।
৭। পরিবারের ভূল সিদ্ধান্ত
জেলা শহরগুলোতে প্রায় দেখা যায় বাইক ঠিক মতন নাগাল পাচ্ছে না অথচ একটা স্পোর্টস বাইক নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। আপনার আশেপাশেও এমন অনেক বাচ্চা আছে। আমি এদেরকে বাচ্চাই বলবো। একজন বাচ্চার হাতে যখন স্পোর্টস বাইক থাকবে তখন সেটা নিয়ে দূর্ঘটনা ঘটানোটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
৮। সিথিল আইন ব্যবস্থা
এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না, তবে আইন ব্যবস্থাও অনেক সময় দূর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারন।
৯। সঠিক লেন ব্যবহার না করা
কমন একটা সমস্যা যেটা সব জায়গায় থাকে। ফাঁকা পাওয়াও রং সাইড দিয়ে বাইক চালানো, এর ফলে প্রায়ই সামনাসামনি ঘটে দূর্ঘটনা।
এতক্ষন তো অনেক আলোচনা করলাম বাইকারদের ভূল নিয়ে, এবার সমস্যাগুলোর কিছুটা সমাধান করা যাক,
১। হেলমেট ব্যবহার করা
বাইকে চাবি দেয়ার আগে হেলমেটটা মাথায় পড়ে নিন, আর হেলমেটটা লক করে নিন তারপর বাইক চালু করুন। মানুষ কি বললো তাতে কান না দিয়ে আপনার এলাকার অসচেতন বাইকারদের আপনি ভালো কিছু শিখান একটা সময় দেখতে পাবেন আপনার দেখাদেখি আরেকজন, তার দেখাদেখি আরেকজন এভাবে আপনার পুরো জেলার বাইকাররাই একটা সময় হেলমেট ব্যবহার করবে। আর এক্সিডেন্ট হলে মৃত্যুর ঝুকি কমে যাবে অনেক।
২। সংকেত বাতি ব্যবহার করা
রাস্তা আমার বাসার সামনে হোক অথবা পুরা ফাঁকা হোক, সংকেত বাতি ব্যবহার করুন। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি আসতে সময় লাগে না। তাই সংকেত বাতির সঠিক ব্যবহার খুব জরুরী।
৩। হর্ণ ব্যবহার করা
যে কোন মোড় অতিক্রম করার সময় এবং যে কোন প্রয়োজনে হর্ণের ব্যবহার করুন, রাতের বেলা হলে প্যাচ লাইট ব্যবহার করুন।
৪। অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাস পরিহার করুন
নিজের উপর আস্থাশীল থাকুন কিন্তু তা অতিরিক্ত মাত্রায় না। আপনার ওভার কনফিডেন্স আপনাকে বড় বিপদে ফেলতে পারে।
৫। ইঞ্জিন চালিত রিক্সা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা
যেহেতু এটা জেলা শহরের প্রধান সমস্যা। তাই এদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করুন। অটোরিক্সার পাশ দিয়ে ওভারটেক করার সময় বাইকের গতি কমিয়ে জোড়ে হর্ণ দিয়ে ওভারটেক করুন। আর সরকারের উচিত এই তিন চাকার যানগুলোকেও ড্রাইভিং লাইসেন্সের আয়তায় নিয়ে আসশা
৬। বাইকপাস সড়কের সঠিক ব্যবহার
ভালো রাস্তাগুলোর অপব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গেলেও রাস্তাকে রেসিং ট্রাকে পরিনত করবেন না।
৭। পারিবারিক সচেতনতা
পারিবারিক সচেতনতা খুব গুরুরপূর্ণ একটা বিষয়। আপনার সন্তানের হাতে বাইকের চাবি তুলে দেয়ার আগে তাকে ভালো মতো বাইক চালানোর শিক্ষা দিয়ে নিন। তাকে বাইকের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে জানান।
৮। আইন ব্যবস্থার সঠিক মোতায়ন
আইন অনেক কিছুই করতে পারে। আইন যাতে সঠিক ভাবে প্রয়োগ হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া জরুরী।
৯। সঠিক লেন ব্যবহার করা
সুযোগ পেলে রং সাইড দিয়ে যানবাহন চালানোর প্রবনতা মাথা থেকে মুছে ফেলি। তাহলেই দূর্ঘটনা অনেক কমে যাবে।
পরিশেষে বলতে চাই নিজেও সচেতন হই এবং অন্যকেও সচেতন করে তুলি। সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললে হয়তো সড়ক দূর্ঘটনা একেবারে থেমে যাবে না, কিন্তু অনেক কমে যাবে এই আশা নিশ্চিত ভাবেই করা যায়।
লিখেছেনঃ আশিক মাহমুদ
- টানা ১৮ বছর লুব্রিকেন্ট মার্কেটের শীর্ষে Shell - ডিসেম্বর ১, ২০২৪
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩