প্রথমেই বলে রাখছি, স্পিডিং টেস্ট করতে অনেক অভিজ্ঞতাও এনাফ নয়, এক্সিডেন্ট বলে কয়ে আসেনা। ১০০০০ কিমির মধ্যে অনেক জায়গায় চালাইছি, তাও স্পিডিং টেস্ট করতে যমুনা সেতু ও মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েকে বেছে নিয়েছি, সেটাও ১০০০০ কিমির পরেই, কেননা বাইকের ইঞ্জিন ফুল ফ্রি করা দরকার ছিল। প্রথমে ১০০০০ কিমির রিভিউ, পরে টপ স্পিড টেস্ট এর বিস্তারিত দিচ্ছি। প্রতি সেক্টরে ইমপ্রেশন এবং আমার চালানোর জন্য কেমন এই বাইক। (একজন লং রাইডার হিসাবে, যেহেতু বাইক নিয়ে হরহামেশাই ২০০-৩০০ কিমি একদিনে চালাই আমি)
১। মাইলেজঃ সর্বনিম্ন ২৫, সর্বোচ্চ ৪৮ কিমি/লিটার পাওয়াও সম্ভব এই বাইকে। কম/বেশির এত ডিফারেন্স ম্যাক্সিমাম বাইকেই পাওয়া যায় না, কিন্ত এইটায় হয় এমন। কারণঃ এই বাইকে ATFT টেকনোলজি আছে যা লো স্পিডে জ্বালানীর ব্যাবহার আরও কমায়। দুঃখের বিষয় হল, ইকো স্পিড অর্থাৎ ৫ গিয়ারে ৬০ এর উপরে এর জ্বালানি খরচ চূড়ান্ত হারে বাড়তে থাকে প্রতি আরপিএম বাড়ানোর সাথে সাথে। যারা হাইওয়ে তে পুরা টাইম ৮০-৯০-১০০ চালিয়ে অভ্যস্ত, কেউ ৩৩-৩৫ এর বেশি পাচ্ছে না। আমার মাইলেজ আসেঃ ৩২-৩৩ কিমি/লিটার অক্টেন। মাইলেজ নিয়ে বেশিই চিন্তিত থাকলে ফ্যাক্টরি প্রিসেট কার্বুরেটর টিউনিং চেঞ্জ করে ফুয়েল কমিয়ে নেওয়া যেতে পারে কিছুটা, তবে তাতে অন্য অসুবিধা কিছু থাকবে। আর পেট্রোল ইউজ করলে মাইলেজ অক্টেনের চেয়ে কিছুটা বেশি পাওয়া যাবে, যেহেতু Hero কম্পানি এই বাইকে পেট্রোল অকটেন দুটাই রিকমেন্ডেশনে রাখছে। তাছাড়া আইডেল আরপিএম কম্পানি ১৩০০-১৫০০ রাখতে বলে। কিন্ত বাংলাদেশে অনেকেই ১১০০ রাখতে চায়। ১১০০ রাখলে তেল খরচ কিছুটা কমবে, কিন্ত রেডি পিকাপও কিছু কমবে।
ইম্প্রেশন: সিটি বা মাঝারি স্পিডে কমিউটিং এর জন্য অনেক ভালো বাইক এটি। যা ম্যাক্সিমাম বাইকারের চাহিদাই পূরণ করে। তবে লং টুর করা বাইকারদের জন্য ১৫০/১৬০ সিসিতে এই বাইক মাইলেজ কম দিবে, তেলখরচ অনেক বেশি হবে।
২। স্মুথনেস/ভাইব্রেশনঃ বাইকটার ব্রেক ইন পিরিয়ড মানলে এরপর ৪০-৬০ স্পিডে যথেষ্ট স্মুথ হয়ে হয়, যদিও হাংকের জন্মগত ভাইব্রেশনের হালকা দোষ আছেই। সমস্যা হল, ৭০ স্পিডের পর এক ভাইব্রেশন রাতারাতি অনেক বেড়ে যায়, ১১০ এর পর ভাইব্রেশনের অবস্থা এত বাজে হয় ইমব্যালেন্সও লাগে। কন্ট্রোল করতে না পারলে দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
ইমপ্রেশনঃ এই বাইকটা ৪০-৬০ এর মধ্যে চালায়েই মজা। ৭০+ চালায়ে মজা নাই বরং শরীরে ইফেক্ট যায় ভাইব্রেশনের, হাত ও বিশেষ করে ফুটপেগে পায়ের মাধ্যমে। এইজন্য এবারও বলা যাচ্ছে, সিটি রাইডার ও মাঝারি স্পিডের বাইকারদের জন্য পারফেক্ট এই বাইকটি। স্পিডে চালানো বাইকাররা এটি এভয়েড করলেই ভালো হবে।
৩। ব্রেকিংঃ (এবিএস ভ্যারিয়েন্ট) ব্রেকিং দুর্দান্ত। বেস্ট বলবো না আবেগে। বেস্ট অবশ্যই বাংলাদেশে ইয়ামাহার ব্রেকিং। এবিএস সেন্সর থাকা সামনের ব্রেকে চাকা লক হয়ে স্লিপ ইশ্যু নাই ইমার্জেন্সি হার্ডব্রেকেও, কিন্ত বাইকটায় একটা ঝাঁকুনি যায় সাস্পেনশনের কারণে। একদম স্মুথ ব্রেকিং হয়না। এই জন্যই ইয়ামাহার উদাহরণ টানলাম শুধুমাত্র। পিছের ব্রেকে এবিএস না থাকলেও ১৩০ সেকশনের টায়ার ও বড় সাইজের ডিস্ক থাকায় ভালো ব্রেকিং হয়। তবে সামনের ব্রেকই বেশি ইম্পর্ট্যান্ট, যেহেতু ওইটা পিছলায় না, হার্ড ব্রেকে পিছেরটা পিছলালেও বাইক ইমব্যালেন্স হয়ে পরে যাওয়ার মত অবস্থা হয়না বললেই চলে। (ব্রেকে আমার আইডিয়া বেশি, কারণ এটা নিয়ে ভাবিও বেশি, হাই স্পিডে চালাই বলে হার্ডব্রেকের প্রয়োজনও আছে আমার)। ১০০০০ কিমির মধ্যে সামনে পিছের কোনটাই চেঞ্জ করা লাগেনি আমার। হাইওয়ে তে চালাই বেশি এইটার ইফেক্ট আছে। তবে ওভারলও এই হাংকের ব্রেক প্যাড ক্ষয় ধীর গতিতেই হয়, যা ভালো দিক।
ইমপ্রেশনঃ ব্রেকিং দুর্দান্ত এই বাজেটের এই সেগমেন্টে। ব্রেকিং নিয়ে অন্তত টেনশনের কিছুই নেই।
৪। কম্ফোর্টঃ বাইকটার সাস্পেনশনের কিছু দুর্বলতা রয়েছে যা হার্ড ব্রেকে ঝাঁকি খাওয়ায় (উপরে বলেছি)। এছাড়া কম্ফোর্ট অনেকটা ভালো আছে। সমস্যা হল, হাই স্পিডে এর অতিরিক্ত ভাইব্রেশনেই কম্ফোর্ট কমে যায়। এখন কেউ যদি লং টুর ৬০ এর মধ্যে গতি রেখে করতে পারে, তার জন্য এই বাইকটা কম্ফোর্টেবল। তাছাড়া রাইডার ও পিলিয়ন দুইজনের জন্যই ততটা কম্ফোর্টেবল নয় এই বাইকটা যদি লং টুরে স্বাভাবিকভাবেই ৭০-৮০+ স্পিড রাখা হয়। কম্ফোর্টের বিষয়টা লং টুরেই লাগে বেশি, তাই লং এর উদাহরণ টানলাম। শর্টে মাঝারি স্পিডে এই বাইক যথেষ্টই কম্ফোর্টেবল। সিটিং পজিশন রাইডারের জন্য ভালো। পিলিয়নের জন্য একটু ঘাটতি রেখে দিছে হিরো। সিটটা আরেকটু সমান হলে পিলিয়ন কম্ফোর্ট ভালো হত।
ইমপ্রেশনঃ একই কথা আবারও, মাঝারি স্পিডের বাইকার ও সিটি রাইডারদের জন্য রাইডার ও পিলিয়ন উভয়ের কম্ফোর্ট ভালো। বাট লং টুরে স্পিডে চালালে কম্ফোর্টেবল নয় ততটা। (ততটা নয়, কিন্ত এই সেগমেন্টের অন্য কিছু বাইকের চেয়ে অন্তত ভালো)
৫। কন্ট্রোলঃ এভারেজের চেয়ে অনেক ভালো এই সেগমেন্টে। কিন্ত দুর্দান্ত বলা যায়না। হাই স্পিডে কন্ট্রোলে কিছুটা সমস্যা করতে পারে রাইডারভেদে। মাঝারি স্পিডে মোর দ্যান এনাফ ভালো কন্ট্রোলিং।
ইমপ্রেশনঃ ওই আগের কথাটাই।
৬। টায়ারঃ সফট কম্পাউন্ডের MRF টায়ার দুটাই, সামনে ১০০ সেকশন, পিছে ১৩০ সেকশনের রেডিয়াল টায়ার। হিরো অন্তত এই জায়গাটায় সম্পূর্ণ প্রশংসা পাওয়ার মতই টায়ার দিছে, কাজেই টায়ার থেকে বেস্ট পসিবল পারফরম্যান্সটাই পাওয়া যায় স্পিডিং ও ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে।
ইমপ্রেশনঃ এক কথায় টায়ার সেকশনে এই বাইক জোস।
৭। পাওয়ার লস ও হিটিং ইশ্যুঃ পাওয়ার লস কিংবা হিটিং, এগুলো ব্রেক ইন পিরিয়ডে হবেই। কেউ নতুন কিনেই বিচার করতে যাবেন না। তবে বাইকের ইঞ্জিন স্টেবল হলেই কেবল এইটা বোঝা যায়। আর এই সমস্যাগুলো এয়ার কুলিং সিস্টেমের ইঞ্জিনের বাইক হওয়ায় বেশি হয়। এই বাইকটার পাওয়ার লস ইশ্যু আছে যথেষ্টই, লং রাইডে। শর্ট বা মিডিয়াম রাইডে আসলে পাওয়ার লস ১০০ সিসির বাইকেও হয়না, কাজেই সেগুলো বিচারের প্রয়োজন নেই। লং রাইডেই হিসাব করতে হয়। তবে যারা লং রাইডে ১ ঘন্টা বা প্রতি ৫০ মিনিটে একবারও ব্রেক দেয়না, বা টুরের টাইমিং এর কারণে দেওয়া সম্ভব হয়না, তারাই ফিল করবে এইটা বেশি। সাথে যদি হাই স্পিডে লং রাইড করা হয়, তবে আরও বেশি। দেখা যায়, টানা ৩০ মিনিট ৯০ স্পিডে চালালে ৪৫ কিমি কাভার করা সম্ভব, কিন্ত ততক্ষণে বাইকটার ইঞ্জিন ওভারহিটেড হয়ে পাওয়ার লস করে আর আগের মত টান উঠতেছে না, তেল খাচ্ছেও বেশি, হুট করে দুই একবার “বারি” দিচ্ছে পিকাপে। এই “বারি” টা আসেই পাওয়ার লস থেকে। তখন আইডেল আরপিএম অনেক বেড়ে যায় কার্বুরেটর হওয়ায়। FI হলে এডজাস্ট হত অটো।
ইমপ্রেশনঃ ওই আগের কথাটা এইখানেও প্রযোজ্য। বাইকটা লং টুরের জন্য না, কিন্ত শর্ট বা মিডিয়াম রাইড মাঝারি স্পিডের জন্য খুবই ভালো।
৮। রেডি পিকাপঃ মূলত ওভারটেকিং এর আগ দিয়ে বাইকটা স্লো যদি করতে হয় সিরিয়ালে ওয়েট করতে, তারপর হুট করে স্পিড উঠিয়ে ওভারটেক করতেই রেডি পিকাপ এর প্রয়োজন হয়। যাকে খালি ভাষায় বলা যায় Acceleration. এই বাইকে রেডি পিকাপ যথেষ্টই কম ১৫০ সিসি হিসাবে। মাঝে মাঝে মনে হবে যেন ১৫০ সিসির বাইক না এটি। অতিরিক্ত ইন্সট্যান্ট পাওয়ার পেতে প্রতি বাইকেই গিয়ার ডাউন করে নিতে হয়, তবে এই বাইকের ক্ষেত্রে প্রতি রেডি পিকাপের প্রয়োজনেই গিয়ার ডাউন করা লাগে, যা মাইলেজের বাঁশ মেরে দেয় আরও।
ইমপ্রেশনঃ এত কম রেডি পিকাপ দিয়ে লং টুরে স্পিডে চালানোর জন্য পেরাদায়ক ওভারটেকিং এ। কিন্ত শহরের জন্য আবারও এটি ভালো।
৯। ইগনিশন: বাইকটা শীতে কোল্ড স্টার্ট নিতে ভালোই পেরা দেয়। কিক মারা লাগেই যেন। তাছাড়াও মাঝে মাঝেই স্টার্ট নিতে কয়েকবার সেল্ফ দিতে হয়, গরমের দিনেও।
১০। টপ স্পিডঃ যমুনা সেতুতে ১১৯ তুলতে পেরেছি সমান রাস্তায়, ১২০ হয়তো উঠতো বাট ব্রেক করা লাগলো সামনের গাড়িকে ধরে ফেলায়। মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে রোডে ১০০০০ কিমির পরেই ট্রিপে যেয়ে একবার ডাউন স্লোপে ১২০, সমান রাস্তায় ১১৯ এবং কয়েকবার ১১৬ তুলতে পেরেছি। কিন্ত টপ স্পিডে বাইকটা ভালো ইমব্যালেন্স হয়। তাই রিস্কি এই বাইকে এত স্পিড তোলাটা।
ইমপ্রেশনঃ ১০৫ পার করলেই বাইকটা যেন বলে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। এই বাইকে হরহামেশা টপ স্পিডে চালালে বাইকের ইঞ্জিনের অনেক ক্ষতি হবে। না চালানোই উত্তম।
১১। লুকসঃ লুক ব্যাক্তিগত বিষয়। সবার চয়েস এক নয়। তবে আমার জোস লাগছে।
ওভারল ইমপ্রেশনঃ বাইকটার নাম “Hunk” হলেও এটি আসলে ভদ্র একটি বাইক। প্রেশার দিয়ে চালানোর জন্য না। আমি কিছুটা স্পিডেই লং টুর করি, বাইকটা যে আমার জন্য পারফেক্ট নয় তা বুঝতে পারছি। তবে পারফেক্ট না হলেও খারাপও না, কাজেই কন্টিনিউ চালাতেই আছি। ২৫০০০-৩০০০০ কিমির মত চালানোর যে নিয়ত আছে ওইটাই ধরে রাখবো ইনশাআল্লাহ। ৩ মাসে অলরেডি ১০০০০ কিমি যেহেতু হয়েছে, বাকি যতদিন চালাই, ইরিডিয়াম স্পার্ক প্লাগ ও সিনথেটিক ইঞ্জিন ওয়েল দিয়ে চালাবো ইনশাআল্লাহ। এই রিভিউটি করা মিনারেল ওয়েলের পারফরম্যান্স সাপেক্ষে।
- SMK TITAN CARBON হেলমেটের ইউজার রিভিউ - অক্টোবর ১৩, ২০২৪
- SMK Stellar এর রিভিউ দিয়েছেন দেওয়ান সোহান - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
- গতকাল লঞ্চ হলো”Petronas Sprinta Ride Safe” ক্যাম্পেইন - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.