আসসালামু আলাইকুম-আমি এডভোকেট মিনহাজ, আমি দেশি বাইকার গ্রুপের একজন অ্যাক্টিভ মেম্বার। আমি দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর বিভিন্ন কোম্পানির বাইক চালিয়েছি এবং সর্বশেষ বর্তমানে আমি চালাচ্ছি হিরো কারিজমা একজিমার ২১০ সিসি এই বাইকটি, এ পর্যন্ত আমি এ বাইক চালিয়েছে ৪৫০০ কিলোমিটার। আজ আমি আপনাদের সাথে এই বাইকটির ভালো – মন্দ এবং ৪ লক্ষ টাকা দাম দিয়ে এই বাইকটি আপনাদের কিনা ঠিক হবে নাকি ঠিক হবে না সে বিষয়ে কিছু বলবো, আরো একটি কথা বলে নেই এটা কোন কোম্পানির স্পন্সর করার রিভিউ না, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। হিরো কারিজমা একজিমার এটি হিরো কোম্পানির সর্বপ্রথম একটি স্পোর্টস বাইক এবং এটি একটি হায়ার সিসি বাইক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ২১০ সিসি শক্তিশালী একটি ইঞ্জিন। হিরো কোম্পানি অফিসিয়ালি এই বাইকটির দাম দিয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা কিন্তু বিশেষ অফারে এবং কোম্পানির প্রথম হায়ার সিসি বাইক হিসেবে লক্ষ টাকা ডিসকাউন্ট দিয়ে ৪ লক্ষ টাকায় বাজারে ছাড়ে।
ভালো দিকঃ
১. প্রথমত এ বাইকটির লুকিং অসাধারণ যদিও প্রত্যেকের পছন্দের বিভিন্ন তারতম্য রয়েছে তবুও অধিকাংশ বাইকারদের এই বাইকের লুকিং পছন্দ হবে বলে আমি মনে করি।
২. এ বাইকটি পারফরমেন্সের দিক দিয়ে এবং হাইওয়ের রাজা হিসেবে আমি মনে করি কারণ এ বাইকটি চালিয়ে হাইওয়েতে খুব কনফিডেন্স রাইট করা যায় এবং এই বাইকের ডুয়েল চ্যানেল এবিএস খুব ভালো রেসপন্স করে।
৩. আমি এই বাইকটিতে সর্বোচ্চ টপ স্পিড পেয়েছে ১৪৫
৪. এ বাইকটি হ্যান্ডেল স্পোর্টস বাইক হিসেবে অনেকটাই উঁচু অনেকক্ষণ রাইড করলেও ব্যাক পেইন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, আমি একটানা ৩-৪ ঘন্টা রাইড করেও কোন ব্যাক পেইন পাইনি।
৫. কোম্পানির সাপোর্ট এই বাইকটি কিনে আমি সর্বোচ্চ পেয়েছি হিরো কোম্পানি থেকে যেকোনো সমস্যা যেকোনো জায়গায় যেভাবেই হোক না কেন আমাকে সেই সমস্যার সমাধান দিয়েছে, কোম্পানির প্রতিটি লোক খুবই আন্তরিক। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় যখন বাইক ট্যুরে যাই সকল জেলাতেই কোম্পানির সাপোর্ট পেয়েছি।
৬. হাইওয়েতে নির্দিষ্ট আরপিএম মেনটেন করে বাইক রাইড করে আমি ৪২ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়েছি।
৭. আমি সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার বাইক রাইড করা অবস্থায় যখন যেই ধরনের সমস্যায় বাইক নিয়ে পড়েছি কোম্পানি প্রতিটি সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে ও প্রয়োজনে আমার বাইকে পার্টস চেঞ্জ করে বা রিপেয়ার করে দিয়েছে এবং এই পার্টস চেঞ্জ এর জন্য আমার কাছ থেকে কোনরকম পেমেন্ট নেয়নি এই ওয়ারেন্টি সাপোর্ট টা সবচাইতে ভালো পেয়েছে হিরো কোম্পানি থেকে।
৮. যতবার এ বাইক নিয়ে পাহাড়ে গিয়েছে, যত উঁচু পাহাড়ি হোক না কেন আমি একটুও টের পাই নাই যে আমি অনেক উঁচু পাহাড়ে উঠতেছি , বাইকের ইঞ্জিনের শক্তি আসলে অসাধারণ।
৯. বাইকের একজোস্টের সাউন্ডটা অসাধারণ অনেকটা লাউড যেটা আমার কাছে ভালো লাগে।
১০. বাইকের মধ্যে ইউএসবি পোর্ট রয়েছে যেটা দিয়ে আমি মোবাইল ও ক্যামেরা চার্জ দিতে পারি সেটা আমার কাছে ভালো লেগেছে ।
খারাপ দিকঃ
১. এ বাইকের বিল কোয়ালিটি এভারেজ, হায়ার সিসি বাইক হিসেবে বিল কোয়ালিটি আরেকটু ভালো হওয়া দরকার ছিল
২. সিটিতে মাইলেজ খুব কম পাওয়া যায় ২৬/২৭
৩. দুই সাইডে বডি কিট থাকার কারণে যখন জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকে তখন পায়ে প্রচুর হিট লাগে।
৪. বাইকের পেইন্ট কোয়ালিটি অনেকটাই খারাপ দৈনন্দিন ব্যবহারে প্রচুর দাগ পড়ে যায়।
৫. বাইকের ভাইব্রেশন হয় ট্যাংকি তে।
৬ . বাইকের ব্যাটারি খুবই দুর্বল দিয়েছেন আমাকে এ পর্যন্ত দু,বার ব্যাটারি চেঞ্জ করে দিয়েছে ব্যাটারি কোয়ালিটি আরো ভালো হতে পারতো।
৭. বাইকের হরণের সাউন্ড একদম বাজে।
৮. বাইকের ইঞ্জিন গার্ড না থাকায় সাইলেন্সার পাইবে ময়লা লেগে জং ধরে যায়।
৯. ২০২৪ সালে এই বাইক রিলিজ করে অ্যাপস অ্যান্ড ডাউন সাসপেনশন দেয়নি।
১০. বাইকের চাপা ও সুইচ গুলো কোয়ালিটি একদম বাজে বৃষ্টির পানি ঢুকলেই নষ্ট হয়ে যায়, এগুলো আমাকে দু,বার চেঞ্জ করে দিয়েছে।
এবার আসি দামের দিক দিয়ে এ বাইকটি কিনা কি ঠিক হবে নাকি হবে নাঃ
আমার মতে ৪ লক্ষ টাকা বাজেটের মধ্যে এই বাইকটি বেস্ট অপশন বিধায় আমি এই বাইকটি নিয়েছি কারণ বাজারে যে সকল স্পোর্টস বাইক আছে ১৫৫ সিসির সবগুলো বাইকের দাম ৬ লাখের উপরে।
প্রতিটি বাইকেই ভালো খারাপ দুটি দিকে থাকে যদিও এ বাইকটিতে অনেক খারাপ দিক রয়েছে তারপরও এ বাইকটি চালাচ্ছি এই কারণেই কারণ কোম্পানি কাছ থেকে অনেক আন্তরিকতা ও সাপোর্ট পাচ্ছি । আর এ ভাইটি বাংলাদেশের বাজারে একটি আনকমন হায়ার সিসি বাইক সে কারণে সবার দৃষ্টি এ বাইকের দিকে থাকে। এবং কোম্পানি প্রতিনিয়তই এই বাইকটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে যার ফলে বর্তমানে এই বাইকের সমস্যাগুলো অনেকটাই কমে আসতেছে।
ধন্যবাদ এত কষ্ট করে আমার লিখাগুলো পড়ার জন্য যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখবেন।
যে কথাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এগুলো আমার শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অভিমত।
- SMK TITAN CARBON হেলমেটের ইউজার রিভিউ - অক্টোবর ১৩, ২০২৪
- SMK Stellar এর রিভিউ দিয়েছেন দেওয়ান সোহান - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
- গতকাল লঞ্চ হলো”Petronas Sprinta Ride Safe” ক্যাম্পেইন - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.