সাধারন মানুষের নিকট হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানো যেন একটি আতংকে বিষয়। আর এর পিছনে যথার্থ কারণও রয়েছে। খবরের কাগজ, টেলিভিশন, ইন্টারনেটে প্রায়ই বাইক দুর্ঘটনার খবর শোনা যায়। এই দুর্ঘটনারগুলোর পিছনে অন্যতম কিছু কারণ বাইকারের অসচেতনা, অধিক গতি এবং অনিরাপদ সড়ক ব্যাবস্থা। সব মিলিয়ে আমাদের দেশের মতো দেশে হাইওয়েতে বাইক রাইড করা আসলেই একটু সমস্যা।
তবুও জীবন থেমে থাকে না। প্রয়োজনের তাগিদে আপনাকে আমাকে ছুটতে হয় নানান কাজে। কিছু সতর্কতা এবং নিয়ম কানুন মেনে চললে দুর্ঘটনা থেকে যেমন বাঁচা যেতে পারে তেমনি হাইওয়ে রাইডিং হয়ে উঠতে পারে আনন্দদায়ক।
আমাদের দেশের হাইওয়েতে সব সময় বাস, ট্রাক, হালকা, ভারী সব ধরনের যানবাহন যাতায়াত করে। কয়েক কিলোমিটার পর পর বাজার আর লোকজনের রাস্তা পাড়াপাড়। সাথে কুকুর, বিড়াল, গবাদি পশুর আচমকা রাস্তার মাঝে চলে আসা। আসলে এটার কোন ব্যাখ্যা দরকার পড়ে না।
হাইওয়েতে মোটরবাইক রাইড করার কিছু টিপস বর্ণনা করা হল :
১. রাইডিং গিয়ার্স: বাইক চালানোর সময় যথাযথ রাইডিং গিয়ার পরিধান করুন। আপনি ইয়ামাহা হোন্ডা সিবিআর চালাচ্ছেন নাকি ভেসপা চালাচ্ছেন এটা বিষয় নয়। বর্তমান সময়ে যে কোনো বাইকই ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে এবং এই গতিতে একসিডেন্ট হলে আপনার বড় ধরনের ইনজুরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিছু জিনিস যেমন জুতা, হেলমেট, গ্লাভস, রাইডিং জ্যাকেট এবং এলবো ও নি গার্ড এগুলো পড়তেই হবে, আপনার যাত্রা যতই ছোট হোক না কেন। কারণ কোথায় কখন কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটে যাবে কেউ বলতে পারে না। তাই প্রস্তুত না থাকার কোন কারণ নেই। এছাড়া এটা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না যে রাইডিং গিয়ার যথেষ্ট কুল লুকিং।
২. সার্ভিসিং: সবসময় বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে বাইকটি পারফেক্ট কন্ডিশনে আছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে। বাইকের ফুয়েল যথেষ্ট পরিমানে আছে কিনা এবং চেন আর ব্রেক গুলো পারফেক্ট আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। চাকা, টায়ার এবং প্রেসার ঠিক আছে কিনা দেখে নিন। লুকিং গ্লাস, ইলেক্ট্রিকাল সিস্টেমস যেমন হেড লাইট, টেইল লাইট, ইনডিকেটর এগুলো দেখে নিন। আপনি হাইওয়েতে স্বাভাবিকের থেকে বেশি গতিতে চলবেন। তাই আপনার বাইক পারফেক্ট অবস্থায় থাকা খুবই জরুরি। তাই, যাত্রা শুরু করার আগে একবার সবকিছু চেক করে নিলে আপনি যে শুধু নিরাপদ থাকবেন তাই নয়, আপনার যাত্রাও হবে অনেক মনোরম কারণ আপনি সবকিছু পারফেক্ট কন্ডিশনে পাবেন।
৩. যাত্রাপথে হেডফোন অথবা লাউড মিউজিক শুনবেন না : এটা অন্যতম একটি বিষয় যেটি যাত্রাপথে কখনোই করা যাবে না। ইয়ারফোন এর সাউন্ড অন্যান্য সমস্ত সাউন্ডকে অস্পস্ট করে দেয়। ইয়ারপ্লাগ নয়েজ এর পরিমান কমিয়ে দেয়। আপনি যখন ইয়ারফোনে গান শুনবেন তখন আপনি আপনার আশেপাশের কিছুই শুনতে পাবেন না যেমন কোন বাইকার আপনার পিছনে হর্ন দিচ্ছে অথবা পিছন থেকে কোন গাড়ি আসছে অথবা আপনার দলের কোন রাইডার আপনার মনোযোগ আকর্ষণনের চেষ্টা করছে। বাইক চালানো অবস্থায় ইয়ারফোনে গান শোনা আর গাড়ি চালানোর সময় লাউড মিউজিক চালানো একই কথা। এতে এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৪. সবসময় রাস্তার দিকে নজর রাখতে হবে: “মোশন ইন্ডিউসড ব্লাইন্ডনেস” নামে একটা অসুখ আছে যেটা সম্পর্কে অনেক কম মানুষই জানেন। সহজ ভাবে বলতে গেলে আপনি যখন হাইওয়েতে খুব মনোযোগ দিয়ে মোটরসাইকেল চালান তখন আপনার সমস্ত মনোযোগ থাকে শুধু রাস্তার উপরে, তখন দুই পাশে কি থাকে আপনি সহজে লক্ষ্য করতে পারেন না। যেমন এক গ্রামবাসী রাস্তা পার হচ্ছে অথবা একটি গরু দৌড়িয়ে আসছে দূর থেকে, এসব আপনার নজরে প্রথমে আসবে না কারণ আপনার নজর শুধু রাস্তার উপরেই সীমাবদ্ধ। এগুলো যখন আপনার থেকে মাত্র কয়েক ফিট দূরে থাকবে তখন আপনার নজরে পড়বে এবং আপনার কিছুই করার থাকবে না। এছাড়াও রাস্তা ঘাটে অনেক ধরণের বিপদ ওঁৎ পেতে থাকে। তাই আপনাকে বাইক চালানোর সময় রাস্তার দিকে ভালোভাবে নজর রাখতে হবে।
৫. অধিক গতি এবং প্রতিযোগিতা পরিহার করুন:
সরকার গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়, কিন্তু তার উপর কোনও বল প্রয়োগ করা হয় না। কখনও কখনও সর্বোচ্চ গতিসীমা এতটাই কম হয় যে আমরা দেখে তা হাসির বস্তুতে পরিণত করি। তাই এমন রাস্তায় আপনি কত জোরে যাবেন তা নির্ভর করে আপনার উপরে।
আমাদের দেশের ১৫০ সি,সি’র বাইকগুলোতে দ্রুত ১০০ কিলোমিটার/ঘন্টা স্পীড উঠানো যায়, কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি যে, আমাদের হাইওয়েগুলো জার্মানদের দ্বারা তৈরি করা হয়নি।
ছোট বড় গর্ত, ইট-পাথরের টুকরা, কলার খোসার মত পিচ্ছিল আবর্জনা, আচমকা বাক আমাদের রাস্তায় খুবই সাধারান একটা বিষয়। ৩০ কিলোমিটার/ঘন্টা আমরা যে সমর্থন করি তা না, তবে আপনাকে নিশ্চিত থাকতে হবে যে আপনার সামনে সড়কটি যথোপযুক্ত এবং আপনি উচ্চ গতিতে রাইডিং এর জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞ। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন ৬০ কিঃমিঃ/ঘন্টা স্পীড কিন্তু যথেষ্ট গতি। আর এই গতিতে চলতে থাকলে মাত্র ২ দিনে আপনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য যে কোন প্রান্তে চলে যেতে পারবেন।
৬. লেইন মেইনটেইন করতে হবে :
আসলে এটার কোন ব্যাখ্যা দরকার পড়ে না। যদি রাস্তার মধ্যে দুটো লেইন থাকে তাহলে আপনার উচিত আপনার লেইনের মধ্যে থাকা। দুটো যানবাহনের মধ্যে থাকবেন না এবং সিস্টেমেটিক্যালি মুভ করবেন। এক লেনের রাস্তায় বাম দিক দিয়ে অভারটেক করা থেকে বিরত থাকুন।
৭। ঘুম পেলে অবিলম্বে থেমে যান:
এটি একটি জানা ব্যাপার তবু সবাই গুরুত্ত দেয় না। বিশেষত বাইকাররা যখন গ্রুপ রাইডিংয়ে যায় তখন যাত্রা পথে যদি আপনার ঘুম পায় এবং দেখেন আপনি রাস্তায় মনোযোগ দিতে পারছেন না তখন আপনার উচিত অবিলম্বে থেমে কোন নিরাপদ স্থানে বিশ্রাম নেয়া। মুখে একটু পানি ছিটিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিন, যদি আশেপাশে কোন টং দোকান পান তাহলে থেমে একটু চা পান করে নিন, একটু হালকা ব্যায়াম করে নিতে পারেন। এতে আপনার ক্লান্তি দূর হবে। আপনার সকল সেফটি গিয়ার কোন কাজেই আসবে না যদি আপনি নিজে ঠিক না থাকেন।
৮। অভিজ্ঞতাঃ
নতুন চালকদের কখনোই হাইওয়েতে বাইক চালানো উচিত নয়। বাইক চালানো শেখার পর অন্ততঃ ছয় মাস নির্দিষ্ট গন্ডীর বাইরে না যাওয়াই উত্তম। আস্তে আস্তে বাইকের উপর আপনার কন্ট্রোল বাড়বে এবং আপনি রাস্তার যানবাহনগুলোর গতিবিধি বুঝতে সক্ষম হবেন। অভিজ্ঞতার কোন শেষ নেই, তাই অনেক দিন ধরে মোটরসাইকেল চালান বলে অধিক আত্মবিশ্বাসও যাতে কাজ না করে। সতর্কতার কোন বিকল্প নেই।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরিক্ষার জন্য কিছু প্রশ্নোত্তর পড়তে হয়, যেগুলো শুধু পরিক্ষার জন্য নয় বরং প্রত্যেক হাইওয়ে রাইডারের বিষয়গুলো জানা থাকা জরুরি।
৯। লুকিং গ্লাসে নিয়মিত চোখ রাখুনঃ
হাইওয়েতে বাইক চালানোর সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কিছুক্ষন পর পর লুকিং গ্লাসে চোখ রাখা যাতে আপনার পিছনে কি ঘটছে তা দেখতে পান। নিয়ম অনুযায়ী মিনিটে ৬ – ৮ বার লুকিং গ্লাসে তাকানো উচিত। লুকিং গ্লাস ছাড়া যারা মোটরসাইকেল চালায় তাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করুন।
১০। কিছু কৌশলঃ
ক। সীমিত গতিতে বাইক চালান এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে চেষ্টা করুন। কাছে এবং দূরে লক্ষ্য রাখুন। দূরে কোন বিপদ দেখলে আগেই গতি একেবারে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসুন।
খ। অন্য দুটো যানবাহনের মধ্যে ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে ওভারটেকিং হবে তা বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে নিরাপদ জায়গায় থাকতে হবে। মনে করুন, আপনার সামনে এবং পিছনে থেকে দুটো ভারী যান দ্রুত গতিতে আপনার কাছে আসছে এবং এমন গতিতে চললে, ওই দুটি ঠিক আপনার পাশে এসে ওভারটেক করবে। আমাদের দেশের রাস্তা এমন প্রসারিত নয় যে, একটি বাইকের পাশাপাশি ২টি বাস কিংবা ট্রাক অনায়াসে অভারটেক করবে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার উচিত হবে গতি একেবারে কমিয়ে পিছনেরটিকে আপনার সামনে যেতে দেয়া অথবা গতি বাড়িয়ে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এজন্যই বলা হয় হাইওয়েতে প্রয়োজনে বেশি গতিতে বাইক চালানো দরকার হয়ে থাকে। বাইক কেনার সময় সেই বাইকটিকে প্রাধান্য দেয়া উচিত যেটির কুইক এক্সিলারেশন ভালো। হাইওয়েতে মাঝে মাঝেই এই কুইক এক্সিলারেশন কাজে আসে।
গ। আপনার গতি অনুযায়ী সামনের যানবাহন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।
ঘ। রাতে হাইওয়েতে বাইক চালানোর একটি সহজ ফর্মুলা হচ্ছে মাঝারি গতির একটি হালকা যানকে (মাইক্রো, কার, পিক-আপ ইত্যাদি) পিছন থেকে অনুসরন করা।
ঙ। ইনডিকেটর লাইটের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করুন। ডানে-বামে মোড় নিতে, সামনে থেকে কোন যানবাহন আসতে দেখলে ইনডিকেটর লাইট জ্বালিয়ে রাখুন।
চ। গ্রুপ রাইডের ক্ষেত্রে সামনের রাইডারকে অবশ্যই হেড লাইট জ্বালিয়ে রাখতে বলুন।
ছ। সব সময় সতর্ক থাকাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
- টানা ১৮ বছর লুব্রিকেন্ট মার্কেটের শীর্ষে Shell - ডিসেম্বর ১, ২০২৪
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.