Honda CB Hornet 160R মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- মাইনুল ইসলাম)

Honda CB Hornet 160R
আমার প্রথম বাইক টি ছিল ফ্রিডম রয়েল ইস, এর পর আমি আরও চার টি বাইক পরিবর্তন করেছি, সর্বশেষ আমার পছন্দ ছিল ইয়ামাহা ফেজার বাইকটি কিন্তু বাবার পছন্দ হোন্ডা বাইক, সেই থেকে আমার পথ চলা শুরু হোন্ডা বাইকের সাথে। হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০আর, বাইক টি আমার সাথে আছে ২ বছর ৪ মাস যাবত, বাইকটির সাথে আমি পাড়ি দিয়েছি ২৮০০০+ কিমি, বাইকটি আমি রুপালি মটরস, জামালপুর থেকে ৩০-০৮-১৮ তারিখে কিনেছি।

 

আমি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলাতে থাকি,জীবনের প্রথম বাইকটি ছিল ফ্রিডম রয়েল ইস ১০০ সিসি, লাল কালারের। আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িত বাইক এটি।আমি যখন ক্লাস ৭ এ পড়ি তখন থেকে বাইক টি আমার সাথে পরিপুর্ন রুপে পথ চলতে শুরু করে বাইকের মাধ্যমে আমি পেয়েছি স্বাধীনতার স্বাদ, আর বাইকাদের দিল (আত্তা) বড় এই কথা অনেক বার বুঝেছি,প্রমাণ পেয়েছি, যার জন্য বাইকিং কমিনিটি কে অনেক ভালবাসি এক মাত্র বাইকা রা ই অপরিচিত বাইকারদের প্রথম দেখাতেই আপন করে নেয় এর প্রমান আমি বহু বার পেয়েছি ।

 

বাইকটি সিলেক্ট করার সময় আমি মাথায় রেখেছিলাম, বাজেটের বিষয়টি, সেই সাথে ওই বাজেটে কত গুলা বাইক আছে, সেই বাইক গুলার মাইলেজ, পারফর্মেন্স, কোম্পানি কি সব কিছু। সব কিছু যোগ বিয়োগ করে বাবার সাথে আলোচনা করে বেছে নিয়েছিলাম হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০ আর বাইক টি।
বাইকটি যে দিন আল্লাহ এর রহমতে কিনে ছিলাম, সেই দিন টা আমার কাছে পবিত্র ঈদের দিনের মত লেগেছিল, কি যে একটা অনুভুতি হয়েছিল তা বলে বুঝাতে পারবো না।শো-রুমে গিয়েছিলাম আমার বাবা ও বড় ভাইয়ের সাথে, ভাই বাইকের বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞ হওয়ার কারনে খুঁটিনাটি সব কিছু ভালো ভাবে দেখে নিয়েছিলো, যা অনেকের ই ভুল হয়। বাইক টি চালানোর সময় আমার বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা নিচে আলোচনা করছি।

 

প্রথম অবস্থাতে আমি বাইকটি থেকে খুব একটা ভালো মাইলেজ পাইনি, পরবর্তীতে ২য় সার্ভিসিং এর পর থেকে আমি অনেক ভালো মাইলেজ পেয়েছি হাইওয়ে তে পেয়েছি ৪৬-৪৭ কিঃমিঃ/লিটার আর সিটিতে ৪০-৪১ কিঃমিঃ/লিটার। বাইকের টপ স্পিডের কথা না বলি,আমি শুধু মাত্র একজন বাইক ট্রাভেলার । বাইকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরা আমার প্রধান লক্ষ্য সেই জন্য টপ স্পিডের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়নি। আমি জালানি অকটেন এর পাশাপাশি পেট্রোল ও ব্যবহার করি।

 

প্রথমে ব্যবহার করতাম হোন্ডা ইঞ্জিন অয়েল কিন্তু এই অয়েল ব্যবহার করে আমি খুব একটা ভালো ইঞ্জিন সাউন্ড এবং স্মুথ পাইনি পরবর্তীতে বড় ভাইদের সাথে কথা বলে শেল এর 10W30 মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করছি, এখন আমি অনেক ভালো স্মুথনেস পেয়েছি আর এখন ব্যবহার করছি Shell Advance 10w30 Fuel Save ইঞ্জিন অয়েলটি আমার বাইকটি ব্যবহার করে আমি অনেক সময় এর পারফরম্যান্স দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি,আমি একটানা ৪৫০ কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়েছি পিলিয়ন সহ , কোন প্রকার সমস্যাতে পড়িনি। আমার শহর সরিষাবাড়ি থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত গিয়েছি পর্যন্ত টানা চালিয়ে, তবে ৫০-৬০ কিমি পর পর ব্রেক নিয়েছি।

 

আমি ২টি এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করেছি, একবার চেইন সেট পরিবর্তন করেছি(বাইকের সাথে দেওয়া চেইন সেট টি ছিল বিরক্তিকর,অতি দ্রুত চেইনটি লুজ হয়ে যেত আর অনেক শব্দ করতো)। পরবতর্তী তে আমি আরেক বার শুধু চেইন ও সামনের স্পোকেট পরিবর্তন করেছি।১ বার সামনের চাকার ব্রেক প্যাড আর দুই বার পিছন চাকার ব্রেক প্যাড। সামনের সাসপেশনের ডান পাশেরটির ওয়েল সিল ২ বার পরিবর্তন করেছি । প্রথম দিকে বাইক টির ফিউজ কেটে যেত, পরবর্তীতে এই সমস্যা টি আপনা আপনি ঠিক হয়ে গেছে।বল রেসার একবার। পিছনের সাস্পেনশনের বোস বদলিছে এক বার। তাছাড়া আর কোন কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি।দুই বার ট্যাপেড আর একবার টাইমিং চেইন এডজাস্ট করিয়েছি। রাস্তার অবস্থা ও বাইকে লোডের কথা মাথায় রেখে আমি আমার বাইকের পিছনের সাস্পেনশন টা এডজাস্ট করিয়ে নিয়েছি আর ইঞ্জিন কিল সুইজ লাগিয়েছি,সেই সাথে সংযোগ করেছি একটি হর্ন।
বাইকের হেড লাইটের আলো সল্পতার জন্য অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, বাইকটি নিয়ে আমি অনেক উচ্চ গতিতে কর্ণারিং করেছি,সে সময় অনেক ভাল অনুভূতি পেয়েছি আর বাইকটি দিয়ে কর্ণারিং করার মজা টাই অন্য রকম যা আমি অন্য কোন বাইক থেকে পাইনি।

 

আমার বাইকটি সিংগেল ডিস্কের হওয়ার পরেও এর ব্রেকিং পাওয়ার টা চমৎকার, সেই সাথে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করলে খুব সহজে বাইক টা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাইকটির সামনে ও পিছনের চাকায় রয়েছে যাথাক্রমে -১০০/৭০-১৭ এবং ১৪০/৭০-১৭ মিলি মিটার এর টায়ার, যার জন্য ব্যালেন্সিংটা অসাধারণ। আর ইঞ্জিনের ব্যাপারে বলতে গেলে বাইকটি যথার্থ শক্তি প্রদান করে। আমি প্রথমে মনে করতাম বাইকটিতে ভাল এক্সিলারেশন দেওয়া আছে, তবে পরবর্তীতে এই ধারনা ভুল প্রমানিত হয়েছে।তবে এর থ্রোটলের রেস্পন্স অনেক কম। আমি প্রতিনিয়ত আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরে বেড়াই, আমার বাড়িতে আমার বাইক ছাড়াও আরও ৩ টি বাইক রয়েছে। তবে, সবার কাছে আমার হর্নেট বাইক টা পছন্দের। বাবা মা বলে আমার বাইকটা অনেক আরামদায়ক। বাইকটা আমি নিত্যদিনের সকল কাজে ব্যবহার করি।আর কোন প্রকার অভিযোগ ছাড়া বাইকটি চলছে তো চলছে। বৃষ্টির দিনে মাটির রাস্তায় বাইকটি চালানো অনেক কষ্ট কর ব্যাপার। অনরোড টায়ার ব্যবহার করার জন্য মাটির ভেজা রাস্তায় একটু কষ্ট কর। এক বার পিছলে পড়ে হাল্কা পা পুড়ে ছিল  যা আমার এই বাইকের সাথে এক মাত্র বাজে অভিজ্ঞতা।

 

যখন আমি ছোট বাইক চালাতাম,তখন স্বপ্ন ছিল আমার এমন একটা বাইক থাকবে, যে বাইক টা দিয়ে আমি সব ধরনের রাস্তায় চালাতে পারবো,ইচ্ছা হলে হাইওয়ে তে চালাবো,ইচ্ছা হলে অফরোড এ চালাবো ,বাইক টা থাকবে সাধ্যের মধ্যে। সেই দিক থেকে, সব কিছু যোগবিয়োগ করে আমার বাইকটা আমার কাছে সেরা। আমি নিজে লং রোডে সব সময় সেইফটি গার্ড ব্যবহার করি। সব সময় সেইফটি গার্ড ও হেলমেট ব্যবহার করবেন, ধন্যবাদ।

Related Posts

error: Content is protected !!