Honda X-Blade ৮,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- মারুফ হাসান)

প্রথমেই বলে নেই আমি অনেক ছোট্ট মানুষ। ১২ বছরের বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলেও এখনো আমি শিক্ষানবিশ। আর এটিই আমার নিজ মালিকানার প্রথম বাইক। তবে যতটুকু বুঝি এবং এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে তার উপর আমি ৭২০০ কিলোমিটার চালানোর একটা উইজার রিভিউ দিচ্ছি। ভালো খারাপ সব মিশিয়েই শেয়ার করছি। খারাপ দিকগুলো আগে জানাইতে আমার না সকলেরই ভালো লাগে।

 

যা যা কমতি মনে হয়েছে কিংবা খারাপ লেগেছে – 
১. ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই, প্রথমত ইঞ্জিন কিল সুইচের অভাব বোধ করেছি তবে অন্য দিক থেকে এটাকে পজিটিভ ভাবে নিয়েছি। ইঞ্জিন কিল সুইচ না থাকায় চাবি ছেড়ে আসার প্রবণতা কমে গিয়েছে।
২. হেডলাইটের আলোর সল্পতা। আপার এবং ডিপার এর মধ্যে ডিপার লাইটের আলো দিয়ে ভিজিবিলিটি খুব কমই পাওয়া যায়। তবে আপার দিয়ে ভিজিবিলিটি তুলনামূলক ভালোই রয়েছে।
৩. প্রেসার ফল করা। ১ম থেকে ৪র্থ গিয়ার পর্যন্ত প্রেসার ফল না করলেও ৫ম গিয়ারে থ্রোটল রেসপন্স হুট করে নেমে যায় যখন ৬০+ এ যাওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে গাড়িতে সামান্য কাজ করিয়ে নেওয়ার পর এখন সেই সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে মাইলেজ আগের তুলনায় কম পাই।
৪. ডিজিটাল মিটারে রিডিং এ বেশি দেখানো। অন্যান্য সকল গাড়ির সাথে অনেকবার চেক করে দেখা হয়েছে সব গাড়ির চেয়ে ৪-৫ কিমি/প্রতি ঘন্টা বেশি রিডিং হয়। স্পিডোমিটার দিয়েও ৪-৫ কিমি/ প্রতি ঘন্টা রিডিং বেশি দেখায়।
৫. সামনের টায়ার সাইজ। সামনের টায়ার সাইজ পিছনের টায়ার সাইজের তুলনায় কম। যার ফলোশ্রুতিতে একটু ভয় ভয় লাগে কর্ণারিং এ।
৬. প্রিলিয়ন নিয়ে গাড়ি চালালে হ্যান্ডেলে প্রেসার পাওয়া। প্রিলিয়ন সহ গাড়ি চালানোর সময় প্রিলিয়ন হালকা নড়াচড়া করলে সরাসরি হ্যান্ডেলে প্রেসার পাওয়া যায়। নারী প্রিলিয়ন নিলে বাম পাশে গাড়ি টেনে ধরে এমন ফিল আসে।
৭. ৬০-৬৫ গতিতে গাড়িতে হুট করেই ভাইব্রেশন করে। যেটা ৫৯ এ থাকলে হয় না। তবে ভাইব্রেশনটা তেমনটা বেশি নয়।
৮. গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স। তুলনামূলক কম। যখনি ডাবল স্ট্যান্ড এ স্পিডব্রেকার বারি খায় তখন কলিজায় লাগে ভাই। তবে স্পিড ব্রেকার খুব উচু হলে এটা সমস্যা পাওয়া যায়।

 

যে সকল ভালো দিক গুলো রয়েছে – 
১. মাইলেজ। অসম্ভব সুন্দর মাইলেজ। সিটিটে সর্বোচ্চ ৫৬-৫৭ পেয়েছি। হাইওয়ে তে ৬০-৬১ পেয়েছি। তবে প্রেসার ফল করার সমস্যা সমাধানের পর সিটিতে ৫০-৫২ পেয়েছি এবং হাইওয়ে তে ৫৪-৫৬ এর কাছাকাছি পেয়েছি। মজার ব্যাপার হলো গাড়ি রাফ চালিয়েও ৪৭-৫২ মাইলেজ পাওয়া যায়।
২. সিটিং পজিশন। যেহেতু আমার হাইট ৫’৬.৫” সেই হিসেবে আমার কাছে সিটিং পজিশন অনেক কমফোর্ট মনে হয়েছে।
৩. কন্ট্রোলিং ও ব্রেকিং, এক কথায় বাইক আমার কথা শোনে।
৪. টার্নিং রেডিয়াস। গাড়ি ঘুরাতে খুব বেশি যায়গা লাগেনা। এপাচি এবং পালসার বাইকে যতোটুকু যায়গা লাগে তার চেয়েও ঢের কম যায়গা লাগে ঘোরাতে।
৫. ইঞ্জিন যথেষ্ট স্মুথ। যদিও ৬০-৬৫ এ ভাইব্রেশন ফিল করি তবে গাড়ি ১০০ তেও ইঞ্জিন ভাইব্রেশন ছাড়া অন্য কিছু বুঝা যায় না। হ্যান্ডেল বাড়ে কোনো প্রকার ভাইব্রেশন পাইনি।
৬. কর্নারিং। সামনের টায়ার সাইজ নিয়ে অনেকেই বলেছে কর্ণারিং এ এটাতে সমস্যা হবে। তবে সত্যি আমি অবাক এটাতে কর্ণারিং করে। যদিও অনেকের কথা শুনে প্রথম প্রথম ভয় পেয়েছি তবে এই ভয় আর নেই।
৭. প্রিলিয়ন কমফোর্ট। প্রিলিয়ন সিটেও বসে ছিলাম বহুবার। প্রিলিয়ন হিসেবে এতো কমফোর্ট আসলেই অবাক করা।
৮. এই বাইকে বেশি একটা লং রাইড দেইনি। তবে ৩২০ কিলোমিটারের মতো একটা ট্যূর দিয়েছি যাতে শরীরে কোনো প্রকার ব্যথা অনুভুত হয় নি। তবে বাম হাতের তালুতে ব্যথা অনুভুত হয়েছে। আমার মনে হয় অধিক ক্লাচ ধরার ফল। সিটিতেই শুধু ব্যথা পাই।
৯. অনরোড অফরোড দুইটাতেই অনেক কমফোর্ট রয়েছে। সাসপেনশন নিয়ে কমপ্লেন নেই।
১০. বাইকের লুক। যদিও এটা সকলের অভিরুচির উপরে। তবুও আমার কাছে এর মাসকুলার ট্যাংক সেই সাথে সামনে ও পিছনের লুক আসলেই ভালো লাগে।
১১. ফুল এল ই ডি ফিচার। এটা আসলেই বড় একটা পাওয়া।
১২. বাইকের মূল্, ১,৭্‌৯০০ টাকায় আসলেই এতো কিছুর কম্বো প্যাকেজ পাওয়া অবিশ্বাস্য। তবুও যদি এই বাজেটে এবিএস টা থাকতো কিংবা অয়েলকুল ইঞ্জিন থাকতো তবে ভালো লাগতো।
এছাড়া ইঞ্জিন পারফরম্যান্স অনেক ভালো, বলতে গেলে সন্তুষ্ট। আর ফুড ডিজিটাল মিটার আসলেই মনটা ভরে দিয়েছে। CBR কেনার সামর্থ্য নাই তাই CBR এর মিটার সম্বলিত X-Blade কিনে ফেলেছি ।ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ছোটো মানুষ যতটুকু অভিজ্ঞতা ততটুকুই শেয়ার করলাম। দোয়া রাখবেন। সবসময় হেলমেট পরিধান করে বাইক চালাবেন, নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক চালাবেন।
লিখেছেন- মারুফ হাসান 

Related Posts

error: Content is protected !!