বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেলের অন্যতম বড় মার্কেট। যদিও কমিউটার সেগমেন্টের বাইকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি (৭৫%) তার পরও ফুল-ফেয়ার্ড এবং ন্যাকেড স্পোর্টস বাইকের চাহিদাও কম নয়। যেহেতু বাংলাদেশ এখনও মধ্যম আয়ের দেশ এবং অধিকাংশ মানুষই গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তাই কমিউটার বাইকের প্রতিই চাহিদা বেশি, বিশেষকরে, ১০০ এবং ১২৫ সিসি সেগমেন্ট। এর পেছনে মূল কারন হচ্ছে জ্বালানী তেলের উর্ধ্মূখী দাম এবং অধিক মাইলেজের নিশ্চয়তা।
আমাদের দেশে এখনও মোটরসাইকেল কেনার সময় চিন্তা করে যে বাইকটি কত কিমি/লি মাইলেজ দেবে। কমিউটার সেগমেন্টের বাইকগুলোতে এই প্রভাবটি বেশি লক্ষ্য করা না গেলেও স্পোর্টস বাইকগুলো কেনার সময় এই কথাটিই প্রথমে চলে আসে। যদিও বর্তমান সময়ে কাস্টমারদের কথা মাথায় রেখে মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো তাদের বাইকে যোগ করছে আধুনিক সব ফিচারস এবং যার সবচেয়ে যুগোপযুগি ফিচারটি হচ্ছে ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম। এখন প্রায় সকল প্রিমিয়াম ন্যাকেড এবং ফুল ফেয়ার্ড বাইকে এই ফুয়েল সিস্টেমটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে ফুয়েলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং ভাল মাইলেজ পাওয়া যায়।
বাইকের ভাল বা কাংখিত মাইলেজ বেশকিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বাইকের ব্রেক-ইন-পিরিওড থেকে শুরু করে একজন রাইডারের চালানোর ধরনের উপরও মাইলেজ নির্ভর করে। চলুন জেনে নেয়া যাক কোন বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি আপনার মোটরসাইকেল থেকে কাঙ্ক্ষিত মাইলেজ পাবেন সে বিষয়ে।
নিয়মিত সার্ভিসিংঃ একটি বাইক কেনার পর থেকেই এর যত্ন নিতে হয়। বিশেষকরে এর ব্রেক ইন পিরিওড। সাধারনত প্রথম ২০০০-২৫০০ কিমি একটি বাইকের ব্রেক ইন পিরিওড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময় বাইক চালানোর সময় ইঞ্জিনে বেশি প্রেশার না দেওয়া, নির্দিষ্ট সময় পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা এবং ৫০০০ আরপিএমের নিচে বাইক রাইড করা উচিৎ। এছাড়া প্রতি ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার কিমি পরপর বাইকের সার্ভিসিং করান উচিৎ।
টায়ার প্রেশারঃ একটি বাইকের টায়ার প্রেশার ভাল মাইলেজ পেতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের এখনও অনেক বাইকারই তাদের আইডিয়াল টায়ার প্রেশার সম্পর্কে অবগত নন। বাইকের টায়ার প্রেশার যদি কম হয়ে থাকে তাহলে টায়ার রাস্তার সাথে বেশি আটকে থাকে যার জন্য ইঞ্জিনকে বেশি শক্তি খরচ করতে হয় এবং যার প্রভাব পরে মাইলেজের উপর। এছাড়া টায়ার প্রেশার বেশি হলেও বাইক স্কিডিং এবং ব্রেকিং পার্ফরমেন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই আপনার সামনের টায়ারে ৩০-৩৩ PSI এবং পেছনের চাকায় ৩৫-৩৮ PSI প্রেশার রাখা উচিৎ।
থ্রোটলে বেশি প্রেশার না দেয়াঃ মোটরসাইকেল মানেই যেন থ্রোটল টেনে দ্রুতই স্পিড উঠান। না, এটিযে একই বারে করা যাবে না তেমনটি নয়। তবে দ্রুত গতি উঠানোর জন্য থ্রোটলে বেশি প্রেশার দিলে ইঞ্জিনের উপর প্রেশার পরে এবং বেশি শক্তি উতপন্ন করে যার কারনে বাইকের ফুয়েল তাড়াতাড়ি পুড়ে যায় এবং মাইলেজ কমে আসে।
বাইকে অভারলোড না করাঃ প্রায় সকল বাইকেরই একটি নির্দিষ্ট ওজন বহনের ক্ষমতা রয়েছে ( সর্বোচ্চ ১৫০ কেজি)। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনেকেই ৩ জন এমনকি ৪ জন নিয়ে বাইক রাইড করেন। পিলিওন ছাড়াও অনেকে মালামাল পরিবহনের জন্যও বাইক ব্যবহার করেন। বাইকের নির্দিষ্ট বহন ক্ষমতার চেয়ে অধিক ওজন নিয়ে রাইড করলে ইঞ্জিনকে বেশি পরিমান শক্তি উতপাদন করতে হয় এবং ফলাফল সেই একই, মাইলেজ কমে আসবে।
রোদে বাইক পার্ক না করাঃ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা বাজারে কিংবা জনবহুল কোন যায়গায় গেলে রোদে বাইক পার্ক করে থাকি। অনেকেই ভাবতে পারেন রোদে বাইক পার্কের সাথে মাইলেজ কমে যাওয়ার সম্পর্ক কি? আসলে অকটেন কিংবা পেট্রোল দুটোই দাহ্য পদার্থ। যখন রোদে বেশিক্ষন বাইক রাখা হয় তখন এই ফুয়েল বাষ্প হয়ে উড়ে যায় এবং আমাদের অজান্তেই ফুয়েল কমে আসে।
ড্রাইভ চেইনঃ একটি মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা ড্রাইভ চেনের মাধ্যমে পেছনের টায়ারে যায় এবং বাইক চলতে থাকে। তবে এই ড্রাইভ চেন যদি অধিক টাইট কিংবা ঢিলা থাকে তাহলে এটি ইঞ্জিনের উৎপাদিত সম্পূর্ন শক্তি টায়ারে পৌঁছাতে পারে না। তাই সঠিক মাইলেজ পেতে ড্রাইভ চেইন সঠিকভাবে এডজাস্ট করুন, পরিষ্কার করুন এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর লুব্রিকেট করুন।
ভাল মানের ফুয়েল ব্যবহারঃ আমাদের দেশে যে ফুয়েলগুলো পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই মানহীন এবং ভেজাল। বিশেষকরে ফুয়েল স্টেশনগুলো অধিক লাভের আশার ফুয়েলে কেরোসিন এবং পানিসহ নানান দ্রব্য ফুয়েলে মেশায়। তাই ফুয়েল কেনার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকুন এবং যে ফুয়েল স্টেশনগুলোর রিভিউ ভাল সেসব যায়গা থেকে ফুয়েল সংগ্রহ করুন।
কিল-সুইচের ব্যবহারঃ সাধারনত আমাদের দেশের ট্রাফিক সিগনালগুলোতে অধিক সময় অপেক্ষা করতে হয়। যদি কখনও ২ মিনিটের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় তাহলে ইঞ্জিন কিল সুইচ দিয়ে বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে দিন। এটি আপনাকে যেমন ভাল মাইলেজ পেতে সাহায্য করবে ঠিক তেমনি ইঞ্জিনকে ঠান্ডা করবে।
ভাল মাইলেজ পেতে সবসময় চেষ্টা করুন ইকনোমি মুডে বাইক রাইড করতে। এছাড়া ভাংগা-চোরা রাস্তায় রাইড না করে হাইওয়েতে রাইড করুন। ট্রাফিক রুলস মেনে চলুন এবং সার্টিফাইড হেলমেট পরে বাইক চালান।
- Hero Hunk DD ১৭০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ ( লিখেছেন- শান্ত) - এপ্রিল ২, ২০২৪
- Hero Hunk ১০,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ফাহিম হোসেন তপু) - মার্চ ১১, ২০২৪
- Hero Hunk ৪২,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ) - মার্চ ১০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.