মোটরসাইকেল চুরি রোধে করণীয়

বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেট প্রতিনিয়তই বড় হচ্ছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে আমাদের দেশে মোট মোটরসাইকেল বিক্রয়ের পরিমান ছিল প্রায় ৪ লাখ। যা পরবর্তি বছরে গিয়ে দাঁড়ায় ৫ লাখে, অর্থাৎ বিক্রয় বেড়েছে প্রায় ২০ ভাগ। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারনে গতবছর বিক্রয়ের পরিমান কিছুটা নিম্নমুখী ছিল তবে এই বছর সেটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মোটরসাইকেল বাজার বড় হওয়ার পাশাপাশি বেড়ে চলেছে মোটরসাইকেলের নানাবিধ ব্যবহার। দৈনন্দিন অফিস কিংবা কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পাশাপাশি জীবিকা অর্জনেও ভূমিকা রাখছে মোটরসাইকেল। তবে অনেক সময় কিছু অসাবধানতার কারনে প্রয়োজনীয় এই দুই-চাকার যানটির হারিয়ে যাওয়ার খবর শোনা যায়। বাসা থেকে, পার্কিং প্লেস থেকে, মার্কেট থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা যায়। অনেক সময় লক ব্যবহারের পরেও ঠেকানো যায় না মোটরসাইকেল চুরি। প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় মেনে চললেই মোটরসাইকেল চুরি ঠেকান সম্ভব। চলুন দেখে নেওয়া যাক তেমনই কিছু বিষয়।

ভালো মানের লক ব্যবহারঃ

মোটরসাইকেল চুরি রোধে প্রায় সকলেই বিভিন্ন ধরনের তালা ব্যবহার করে থাকেন। তবে বেশির ভাগ লকই নিম্নমানের এবং কমদামী। একটি লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেলের জন্য ১০০০-২০০০ টাকা মূল্যের লক ব্যবহারে কার্পন্য না করাই উচিৎ। আমরা অনেকেই শুধুমাত্র সামনের ডিস্কপ্লেটের সাথে তালা ব্যবহার করে থাকি। তবে এটি সম্পূর্ন নিরাপদ নয়। ডিস্ক লকের সাথে সম্ভব হলে সাধারন মেকানিক্যাল মজবুত তালা ব্যবহার করুন যেগুলো চাবি দিয়েই লাগাতে ও খুলতে হয়। এছাড়া বাড়তি সিকিউরিটির জন্য লোহার শিকল ব্যবহার করতে পারেন। যদিও এটি দেখতে কিছুটা খারাপ লাগে তবে এটি বেশ কার্যকর।

গোপন সুইচঃ

বাইকের ইঞ্জিনের সাথে সংযোগ করে ইঞ্জিন কিল সুইচ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ইঞ্জিন এবং তেলের সংযোগের সাথে কিল সুইচ লাগিয়ে নিতে পারেন, যেটি অন না করলে বাইক স্টার্ট নেবে না। এই সুইচ আপনি যেকোন মোটরসাইকেল সার্ভিসিং সেন্টার কিংবা দোকানে পাবেন। এই সুইচটি এমন যায়গায় রাখুন যেন কেউ সহজেই দেখতে না পায় এবং যত ছোট সম্ভব লাগিয়ে নিন।

এলার্ম লক এবং জিপিএস ব্যবহারঃ

এখন বাজারে বেশকিছু ভাল ব্রান্ডের মোটরসাইকেল এলার্ম লক এবং জিপিএস ট্রাকার পাওয়া যায় এবং দামও খুব একটা বেশি নয়। এর ফলে কেউ আপনার বাইক চুরি করতে চাইলে সহজেই বুঝতে পারবেন এবং চুরি যাওয়া বাইক সহজেই ট্রাক করতে পারবেন। তবে জিপিএস ট্রাকার সুইচ এবং এলার্ম লক একই যায়গায় লাগাবেন না।

বাইক পার্কিংঃ

আপনি যখন বাজারে কিংবা মার্কেটে বাইক পার্ক করবেন তখন অবশ্যই এমন যায়গায় পার্ক করুন যেখানে জনসমাগম বেশি বা যেখানে অনেক বাইক পার্ক করা রয়েছে। এছাড়া বাইক পার্কিংয়ের ভাল যায়গা হতে পারে এটিএম বুথ। কেননা প্রায় সকল এটিএম বুথের সামনে সিসি টিভি ক্যামেরা থাকে এবং বাইকটি চুরি হলেও পরবর্তিতে সহজেই বের করতে পারবেন। এছাড়া রেস্টুরেন্টে বসলে এমন যায়গায় বাইক পার্ক করুন যেন আপনি ভেতর থেকে লক্ষ্য রাখতে পারেন।

টায়ার জেল ব্যবহারঃ

এখন প্রায় সকল মোটরসাইকেলেই টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখনও বেশকিছু কমিউটার এবং অফ-রোড বাইকে টিউব টায়ার ব্যবহার করা হয়। চেষ্টা করুন টিউব টায়ার টিকে টিউব্লেস করে নিন এবং ভালমানের টায়ার জেল ব্যবহার করুন। কেননা অনেক সময় রাস্তায় চুরির জন্য তারকাটা বিছিয়ে রাখে।

বাড়তি সতর্কতাঃ

যতটুকু সম্ভব চেস্টা করবেন বাইকের চাবি অন্য কাউকে না দিতে কারণ বাইকের চাবির ছাপ রেখে পরবর্তীতে সেই ছাপ থেকে চাবি বানানো দুই সেকেন্ডের কাজ। যদি একান্তই বাইকের চাবি দিতে হয় তবে এক্সট্রা যেসব লক আপনার বাইকে ব্যবহার করা হয় সেগুলোর চাবি দিবেন না এবং কোনভাবেই বাইকের গোপন ইঞ্জিন লকের সুইচ কোথায় লাগিয়েছেন তা দেখাবেন না।