মোটরসাইকেলের ক্লাচপ্লেট নষ্ট হওয়ার কারন ও প্রতিকার

মোটরসাইকেলের সচরাচর যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তার মধ্যে ক্লাচ-প্লেট নষ্ট হয়ে যাওয়া অন্যতম। অন্যান্য সমস্যাগুলো আমরা সহজেই বুঝতে পারলেও ক্লাচ-প্লেটের কোন সমস্যা থাকলে তা সহজেই বুঝতে পারি না। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব কিভাবে বুঝবেন আপনার ক্লাচ-প্লেট নষ্ট হয়েছে, নষ্ট হওয়ার কারন এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে।

ক্লাচপ্লেটের সমস্যা নির্নয়ের জন্য আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে একটি ক্লাচ-প্লেটের কাজ কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে। সহজভাবে বলতে গেলে, মোটরসাইকেল ইঞ্জিন যে শক্তি উৎপন্ন করে সেটি ক্লাচ-প্লেটের মাধ্যমে টায়ারে Transfer হয়। মোটরসাইকেল ক্লাচ-প্লেট বেশ কয়েকটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। সেগুলো হচ্ছে Clutch Basket, Inner Hub, Steel Plate, Friction Plate, Pressure Plate ইত্যাদি। এই অংশগুলোর যেকোন একটিতে সমস্যা দেখা দিলে আপনার গিয়ার সিফটিং এবং Clutch Engagement এর সক্ষমতা কমে আসবে।

আপনার বাইকের ক্লাচ-প্লেটে সমস্যা রয়েছে কি না সেটি কি ভাবে বুঝবেন? এর সমস্যা নির্নয়ের জন্য কিছু কৌশল রয়েছে যার মাধ্যমে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার বাইকের ক্লাচ-প্লেটে কোন সমস্যা আছে কি না। তবে চলুন জেনে নেয়া যাক এই পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে।

১ম পদ্ধতিটি হচ্ছে Clutch Free-Play. ক্লাচের proper performance এর জন্য ক্লাচ-লিভারটিকে ১-২ সেন্টিমিটার ফ্রি রাখা হয়। যদি লক্ষ্য করেন আপনার ক্লাচ লিভারটি শক্ত হয়ে রয়েছে এবং ক্লাচ প্রেস করার জন্য বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে ক্লাচ-প্লেটে সমস্যা রয়েছে।

২য় পদ্ধতিটি হচ্ছে বাইকের acceleration কমে যাওয়া। যদি আপনার বাইকের RPM এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাইকের স্পিড না উঠে তাহলে বুঝতে হবে ক্লাচ-প্লেটের সমস্যা রয়েছে। এটি হওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে আপনার ক্লাচের Steel Plate এবং Friction Plate ক্ষয় হয়ে যাওয়া। যার ফলে Clutch Basket এবং Inner Hub এর মধ্যে প্রোপার সংযোগ ঘটে না এবং ইঞ্জিনের উৎপাদিত শক্তি সম্পূর্ন রুপে রেয়ার হুইলে পৌঁছায় না।

৩য় যে বিষয়টি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেটি হচ্ছে বাইকের গিয়ার সিফটিং হার্ড হয়ে যাওয়া। এছাড়া ইঞ্জিন ওভারহিট এবং বাইক চালানোর সময় যদি হালকা ধাক্কা অনুভব করেন তাহলে বুঝতে হবে ক্লাচ-প্লেটের সমস্যার জন্য এটি হতে পারে।

এবার জেনে নেওয়া যাক কি কি কারনে বাইকের ক্লাচপ্লেট নষ্ট হতে পারে এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে।

ক্লাচ-প্লেট নষ্ট হওয়ার প্রথম এবং পরোক্ষ কারন হচ্ছে সঠিক ভাবে ক্লাচ এবং গিয়ার সিফটিং না করা। বাইকের প্রতিটি গিয়ার পরিবর্তনের জন্য নির্দিস্ট গতিসীমা রয়েছে। যেমন প্রথম গিয়ারটি 0-10 km/h এর মধ্যে, ২য় টি 10-15 km/h, ৩য় টি 15-20 km/h এর মধ্যে পরিবর্তন করা উচিৎ। তবে অনেকেই আমরা গিয়ার সিফটিংয়ের সময় এই বিষয়টি মেনে চলি না, যার ফলে ক্লাচপ্লেটের উপর চাপ পড়ে এবং খুব দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়।

২য় কারনটি হচ্ছে হাফ-ক্লাচ করে বাইক চালান। অনেকেই অভ্যাসজনিত কারনে কিংবা সিটি রাইডের সময় হাফ-ক্লাচ করে বাইক চালান। এর ফলে বাইকের ক্লাচপ্লেটের পাশাপাশি ইঞ্জিনের উপরও প্রেসার পড়ে এবং বাইকের মাইলেজও কমে আসে। গিয়ার সিফটিং এবং প্রয়োজন ছাড়া ক্লাচ লেভার প্রেস না করাই শ্রেয়। এছাড়া ব্রেকিংয়ের সময় ক্লাচের উপর নির্ভরশীল না হয়ে ইঞ্জিন ব্রেকে অভ্যস্থ হওয়া উচিৎ। এর ফলে ক্লাচপ্লেটের longevity এবং মাইলেজ বৃদ্ধি পাবে।

৩য় কারনটি হচ্ছে সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার না করা। প্রত্যেকটি মোটরসাইকেল কোম্পানি তাদের বাইকে আলাদা আলাদা গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল রেকমেন্ড করে যা তাদের ইউজার বইয়ে উল্লেখ করা থাকে। আপনি যদি আপনার বাইকে নির্ধারিত গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার না করেন তাহলে ক্লাচ-প্লেটের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাইকের ইঞ্জিন অয়েল নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের ইউটিউব চ্যানলের ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কিত ভিডিওটি দেখতে পারেন।

এই কারণগুলো ছাড়াও বেশকিছু কারন রয়েছে যেগুলো আপনার ক্লাচপ্লেটের ক্ষতি করতে পারে। সেগুলো হচ্ছে বাইকে অভারলোড নেয়া, গতি কমার সাথে সাথে গিয়ার না কমান, ক্লাচ না ধরে গিয়ার পরিবর্তন করা ইত্যাদি কারণগুলো। এছাড়া অনেকেই হ্যান্ডেলবারে গ্রিপার ব্যবহার করেন যার ফলে হ্যান্ডেলবার কিছুটা মোটা হয়ে যায় এবং Properly Clutch ধরা যায় না, যেটি অবশ্যই পরিহার করা উচিৎ।

তো ক্লাচপ্লেট নিয়ে এতকিছু আলোচনার পর একটা বিষয় খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে, ক্লাচপ্লেট দ্রুত নষ্ট হওয়ার জন্য একজন রাইডারের চালানোর ধরন অনেকাংশে দায়ী। তাই ক্লাচপ্লেটের আয়ূ বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই সঠিকভাবে গিয়ার সিফটিং, সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার এবং ব্রেকিংয়ের সময় ইঞ্জিন ব্রেকে অভ্যস্থ হতে হবে।

Related Posts

error: Content is protected !!