১২৫ সিসির উপরে মোটরসাইকেলে ABS বাধ্যতামূলক করা হোক (সময়ের দাবী)

বাংলাদেশে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রানহানির সংখ্যা অনেক। বর্তমানে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রানহানির দিক থেকে এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম এবং বিশ্বে ১৩ তম। ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা দেশে সর্বমোট ৪ হাজার ৯৭৯ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। যার মধ্যে সব থেকে বেশি দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মোটরসাইকেল এবং ওই বছরে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪৭৫ টি। পুলিশ সদর দপ্তর এর পরিসংখ্যান এর মতে, দেশের ৩৮ শতাংশ দূর্ঘটনার শিকার হয় প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি, জিপ ও মোটরসাইকেল।

দেশে এত এত সড়ক দূর্ঘটনার কারন কি? বিশেষজ্ঞদের মতে অনিরাপদ ওভারটেকিং, ওভারস্পিডিং, যান্ত্রিক ও রাস্তার ত্রূটি, ভাল ব্রেকিং সিস্টেমের অভাব, অদক্ষ গাড়ি চালক এবং সড়ক চলাচলের নিয়ম মেনে না চলা এর জন্য দায়ী।

মোটরসাইকের ক্ষেত্রে দূর্ঘটনার অন্যতম কারন হল বাইকে ভাল ব্রেকিং সিস্টেম না থাকা। যদিও বাংলাদেশে সিসি লিমিটেশন রয়েছে, তবুও একটি ১৫০ সিসি এবং ১২৫ সিসির বাইকে অনায়াসে ১০০+ কিঃমিঃ/ঘন্টা গতি উঠে যায়। তাই মানসম্মত এবং যুগোপযোগী ব্রেকিং সিস্টেম আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি জরুরী। দূর্ঘটনার হাত থেকে পরিত্রাণের অন্যতম সমাধান হবে ABS (এন্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম) এবং CBS (কম্বাইন্ড ব্রেকিং)। আসুন জেনে নেয়া যাক মোটরসাইকেলে ABS এবং CBS কতটা উপকারি।

এবিএসঃ

এন্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস) হল আধুনিক মোটরসাইকেলের একটি নিরাপদ ব্রেকিং সিস্টেম। যেটি ব্রেকিং এর সময় বাইকের চাকা লক করা থেকে বাধা দেয় এবং চাকা স্কিড করার হাত থেকে রক্ষা করে। এটি ব্রেকিং এর সময় হঠাৎ লকিং ছাড়াই চাকার ঘূর্ননকে হ্রাস করে। এটি বাইকের ব্রেকিং ডিসটেন্সকে কমিয়ে দেয়। স্লিপারি সারফেস ও হঠাৎ ব্রেকিং এ চাকার স্কিড করা থেকে বিরত রাখে। তাই ব্রেকিংয়ে রাইডারের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে।

সিবিএসঃ

এই পদ্ধতিতে বাইকার যে কোন একটি ব্রেক লিভার প্রেস করলে তা উভয় ব্রেকের জন্য প্রযোজ্য হয়। দুটি চাকা একই সাথে ব্রেকিং এর স্কিড করার সুযোগ কমে যায় এবং বাইককে স্থিতিশীলতা প্রদান করে। এটি তুলনামূলক সহজলভ্য এবং রেগুলার ও কমিউটার বাইকে সহজেই ব্যবহার করা যায়।

আমাদের দেশে রাস্তা-ঘাটে যা ঘটে তার একটি নমুনা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ABS এবং CBS ব্রেকিং বাধ্যতামূলক করা হলেও আমাদের দেশে এর প্রচলন বেশ কম। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১ জানুয়ারী ২০১৬ থেকে ১২৫ সিসির বেশি সকল মোটরসাইকেলে ABS সংযোজন বাধ্যতামূলক এবং ২০১৭ সালের পর থেকে সকল ৫০ সিসির বেশি বাইকে ABS অথবা CBS বাধ্যতামুলক করেছে। এদিক থেকে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতও পিছিয়ে নেই। আমাদের জানা মত ভারতেও দূর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যাও বেশি। তাই ভারতের রোড ট্রান্সপোর্ট ও হাইওয়ে মিনিস্ট্রি, ১লা এপ্রিল ২০১৮ থেকে ১২৫ সিসির বেশি সকল মোটরসাইকেলে ABS সংযোজন বাধ্যতামূলক এবং ১২৫ সিসির কম ক্যাপাসিটির বাইকে কমপক্ষে CBS ব্রেকিং সিস্টেম বাধ্যতামূলক করেছে।

With and without ABS

আমাদের দেশের রাস্তা ঘাটের অবস্থা অনুযায়ী ABS এবং CBS ব্রেকিং সিস্টেম এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অনেক সময়ই এমারজেন্সি ব্রেকিং এর প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু রেগুলার ব্রেকিং সিস্টেমগুলো ততটা নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ এখনও ট্রাফিক আইন নিয়ে সচেতন নয়। ফলে সড়কে রাইডিং এর নিরাপত্তা বাইকারদেরকেই নিতে হয়। তাই এজন্য প্রয়োজন উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম। বাংলাদেশে এখনও ABS এবং CBS এর প্রচলন চোখে পরার মত নয়।

বাইক এবং বাইকারদের নিরাপত্তার জন্য মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলোর উচিৎ ১২৫ সিসির বেশি সকল বাইকে ABS এবং এর থেকে কম সিসির বাইকগুলোতে অন্ততঃ CBS সংযোজন করা। বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ একটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের সকল মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলোকে ABS এবং CBS সংযোজনে বাধ্য করা।

সব সময় ভাল মানের ফুলফেস হেলমেট পড়ে নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক চালাবেন।