মোটরসাইকেলের ব্যাটারি প্রকারভেদ, নষ্ট হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

যে সকল আবিষ্কার পৃথিবীকে অনেকখানি সামনের দিকে এগিয়ে দিয়েছে তার মধ্যে একটি অন্যতম আবিষ্কার হচ্ছে ব্যাটারি। ১৮০০ সালে ইতালিয়ান ফিজিসিস্ট আলেসসান্ড্রো ভোল্টা তার আবিষ্কৃত “ভোল্টা পাইল” এর মাধ্যমে প্রথম ইলেকট্রকেমিক্যাল ব্যাটারি পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর থেকে যুগে যুগে ব্যাটারি হয়ে উঠেছে আধুনিক ও অধিক শক্তিশালী। পৃথিবীতে অনেক ধরনের ব্যাটারি প্রচলিত থাকলেও আজ আলোচনা করব মোটরসাইকেলে ব্যবহারিত হওয়া ব্যাটারিগুলো নিয়ে।

 

লেখাটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন:

১) মোটরসাইকেলের ব্যাটারির প্রকারভেদ ও এগুলোর সুবিধা অসুবিধা?

২) কেন মোটরসাইকেলের ব্যাটারি দুর্বল বা নষ্ট হয়?

৩) বাইকের ব্যাটারি ভালো রাখতে যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে।

আসুন একটু বিস্তারিত আলোচনা করি।

 

১) মোটরসাইকেলের ব্যাটারির প্রকারভেদ ও এগুলোর সুবিধা অসুবিধা?

সাধারণত দুই ধরনের ব্যাটারি মোটরসাইকেলের ব্যবহার করা হয়। যথা:

• ড্রাইসেল ব্যাটারি।

• ওয়েটসেল ব্যাটার।

আসুন এই দুই ধরনের ব্যাটারিগুলো নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করি।

• ড্রাইসেল ব্যাটারি: যে ব্যাটারীতে ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে সলিড পিস ব্যবহার করা হয় তাকে ড্রাইসেল ব্যাটারি বলে। এই ব্যাটারির ভিতরে কোন রকম তরল থাকে না।

সুবিধা:

• এই ব্যাটারি খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।

• এই ব্যাটারিটি তুলনামূলক হালকা।

• এই ব্যাটারিটি রাখার জন্য সমান জায়গা দরকার হয়না।

• এই ধরনের ব্যাটারির মেইন্টেনেন্স কোস্ট নেই বলেই চলে।

• এই ব্যাটারি ব্যবহার করলে এসিড লিক করে বাইকের রং নষ্ট হওয়ার কোনো ভয় থাকে না।

অসুবিধা:

• এই ব্যাটারী একবার নষ্ট হয়ে গেলে আর ঠিক করার উপায় থাকে না।

• এই ব্যাটারী শক্তি কমে গেলে বাহির থেকে চার্জ প্রয়োগ করে এর শক্তি বৃদ্ধি করা যায় না।

• তুলনামূলক এর দাম বেশি।

• দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে এই ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

• ওয়েট সেল ব্যাটারি: যে ব্যাটারিতে ইলেকট্রন লাইট হিসেবে তরল পদার্থ ব্যবহার করা হয় তাকে ওয়েট সেল ব্যাটারি বলা হয়।

সুবিধা:

• এই ব্যাটারির লংজিভিটি তুলনামূলক বেশি।

• এই ব্যাটারিটি রিপিয়ার যোগ্য।

• এই ব্যাটারির দাম তুলনামূলক কম।

• দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলেও এই ব্যাটারি নষ্ট হয় না।

• এই ব্যাটারির রিপেয়ার কস্ট কম।

• ওয়েট সেল ব্যাটারি রিচার্জ করা যায়।

অসুবিধা:

• রিপেয়ার কস্ট কম হলেও বারবার রিপেয়ার করা প্রয়োজন হয় বিধায় এর মেইনটেনেন্স কস্ট বেশি।

• এই ব্যাটারি সব সময় সমান সারফেসের রাখে ব্যবহার করতে হয়।

• এই ব্যাটারি থেকে এসিড পড়ে বাইকের রং চটে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

• ওজনে ভারি হয় এই ব্যাটারি বাইকের ওজন বৃদ্ধি করে দেয়।

 

১০০% অরজিনাল বাইক বা গাড়ির ব্যাটারি কিনতে ভিজিট করতে পারেন: vovopip.com

২) কেন মোটরসাইকেলের ব্যাটারি দুর্বল বা নষ্ট হয়?

মূলত বাইকের বৈদ্যুতিক চাহিদা পূরণের জন্য মোটরসাইকেলে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন কারণে এই ব্যাটারিগুলো নষ্ট হতে পারে। এই কারণগুলো নিচে দেয়া হল:

• দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে ব্যাটারিগুলো নষ্ট হতে পারে।

• স্টার্ট না দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে রাখলে ব্যাটারি নষ্ট হতে পারে।

• নিম্নমানের ওয়ারিং ব্যবহারের কারণে ব্যাটারি নষ্ট হতে পারে।

• আফটার মার্কেট হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের কারণে ব্যাটরি নষ্ট হতে পারে।

• উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লাইট ব্যবহারের ফলে ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

• ফগ লাইট জালানো অবস্থায় বাইক স্টার্ট দিলে ব্যাটারির উপরে অধিক চাপ পড়ে, যার কারণে একটা সময় ব্যাটারি নষ্ট হতে পারে।

• সিকিউরিটি লক ব্যবহারের ফলে বাইকের ব্যাটারি বসে যেতে পারে।

• স্পার্ক প্লাগ এর দুর্বলতার কারণে বাইক স্টার্ট দেয়ার সময় ব্যাটারির উপরে খুব বেশি চাপ পড়ে যার কারণে ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

• বাইকে অতিরিক্ত ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট গুলো ব্যবহারের কারণে ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

• অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরম ব্যাটারী নষ্ট করে দিতে পারে।

• বাইক ওয়াশ করার সময় ব্যাটারি টার্মিনালে যদি পানি জমে থাকে তাহলে ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩) বাইকের ব্যাটারি ভালো রাখতে যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে: 

• বাইকের ব্যাটারি ভালো রাখার জন্য, বাইকের ওয়ারিং কাঁটা ছেড়া থেকে বিরত থাকুন। এতে করে শর্ট সার্কিট হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে।

• বাইকে আফটার মার্কেট ইলেকট্রিক্যাল ইকুপমেন্ট গুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় আফটার মার্কেট ইলেকট্রিক্যাল ইকুপমেন্ট গুলো, যেমন: হাইভোল্টেজ লাইট, হাইড্রোলিক হর্ন ইত্যাদি ব্যবহার না করাই ভালো।

• ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট সংযোজন এর ক্ষেত্রে কখনোই নিম্নমানের ওয়ারিং ব্যবহার করা যাবে না। একান্ত প্রয়োজনে রিলেসহ হাই কোয়ালিটি ওয়ারিং গুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ব্যাটারির উপর কিছুটা হলেও চাপ কমে যাবে।

• বাইকের স্টার্ট বন্ধ থাকা অবস্থায় লাইট, ইন্ডিকেটর লাইট, ফগ লাইট জ্বালিয়ে রাখা যাবে না।

• প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ১০ মিনিট বাইক স্টার্ট দিয়ে রাখুন। এতে করে ব্যাটারি বসে যাওয়ার চান্স কমে যাবে।

• অবশ্যই বাইকে ভাল মনের স্পার্ক প্লাগ ব্যবহার করুন এবং স্পার্ক প্লাগ এর যত্ন নিন। এতে করে ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ কম পড়বে।

• ফগ লাইট জালানো অবস্থায় বাইক স্টার্ট দিলে ব্যাটারির উপরে খুব চাপ পরে। তাই এটি করা থেকে বিরত থাকুন।

বর্তমানে অধিকাংশ মোটরসাইকেলে কিক স্টার্ট এর পরিবর্তে সেলফ স্টার্ট ব্যবহার করা হয়। তাই ব্যাটারির সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।

অলি আহাদ খান

Related Posts

Add Comment

রিপ্লে দিন

error: Content is protected !!