Suzuki Gixxer 155 ২,০০০কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- আশিক চৌধুরী)

একটা বাইক সব সময় ই একটা ছেলের জন্য স্বপ্নের মতো৷ বিশেষ করে মধ্যবিত্ত দের জন্য৷ আমার ও একটা বাইকের স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই৷ ছাত্র থাকা কালীন বাইক টা এক রকম বিলাসীতা হলেও যখন প্রফেশনাল লাইফে আসি তখন বাইক একটা প্রয়োজনের নাম হয়ে দ্বাড়ায়৷

আলহামদুলিল্লাহ গত ২১ নভেম্বর ২০২০ আমি সুজুকি জিক্সার বাইক টি কিনি৷ এখন পর্যন্ত আমি ২১০০ কিলোমিটার রাইড করেছি৷ আমার রাইডিং এর এই ছোট্ট সময়ে আমার ভালো খারাপ অভিজ্ঞতা, বাইকটি কেনার কারন এইসব তুলে ধরার ট্রাই করবো৷ আশা করি যারা বাইক কিনতে চাচ্ছেন, বিশেষ করে ২ লাখ এর নীচে, তাদের জন্য আমার কথা গুলো একটু হলেও হেল্পফুল হতে পারে৷ প্রথমেই বলি, আমার জিক্সার অনেক আগে থেকেই পছন্দের তালিকায় উপরে ছিল এর অসাধারন লুক আর দাম এর কারণে ৷ তবে এই বাজেটে এর সাথে পাল্লা দিয়ে কম্পিট করার মতো নামী সব ব্র্যান্ডের ই বাইক ছিলো যারা তাদের নিজেদের যায়গায় অনন্য৷ আমি এসবের মধ্য থেকে জিক্সার নেওয়ার কারন গুলো আমার ভাষায় বলছি৷

 

প্রথমত, জিক্সারের লুক আমার কাছে ভালো লাগে৷ আর আপনারা সবাই জানেন যে লুকের ব্যাপার টা সবার ক্ষেত্রেই আলাদা৷ দ্বিতীয় ব্যাপার হলো, এর দাম৷ আমি যখন জিক্সার কিনি তখন এর সিংগেল ডিস্ক ভ্যারিয়েন্ট এর দাম ছিলো ১.৭৫ লাখ টাকা৷ এই দামে এই বাইক আমার কাছে ভ্যালু ফর মানি মনে হয়েছে৷ এখন আসি এর রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে৷ নিজের বাইক থাকার আগে আমি খুব কম বাইক চালিয়েছি৷ কিন্তু কেনার আগে আমার বাজেটের মধ্যে সব বাইক আমি চালিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি৷ আমি মুলতঃ একটা স্পোর্টস কমিউটার বাইক কিনতে চেয়েছিলাম তাই কিছু বাইক আগেই আমার লিস্ট থেকে বাদ পড়ে যায়৷ আমার লিস্টে থাকে হোন্ডা হরনেট, ইয়ামাহা এফজেডএস, সুজুকি জিক্সার৷

 

মাইলেজ আর রেয়ার টায়ারের জন্য বাদ পড়ে যায় টিভিএস আর.টি.আর৷ আমার হাইট ৫.৬” তাই বাদ পড়ে যায় পালসার এন.এস ১৬০৷ ইয়ামাহা এফজেডএস আর জিক্সার এর রাইডিং পজিশন, কন্ট্রোলিং, ব্রেকিং, রাইডার কমফোর্ট প্রায় একই লেগেছে আমার৷ কিন্তু পিলিয়ন কম্ফোর্ট এফ.জেড.এস এ অনেক ভালো৷ অপর দিকে ইনিশিয়াল পাওয়ার, মিড রেঞ্জ, টপ এন্ড সব দিকেই জিক্সার এর থেকে এফ.জেড.এস পিছিয়ে। আবার জিক্সার এর দাম যেখানে ১.লাখ ৭৫ হাজার৷ সেখানে এফ.জেড.এস এর দাম ২ লাখ ১০ হাজার৷ এডভান্টেজ হিসেবে সুধু রেয়ার ডিস্ক যেটা আমার কাছে ভ্যালু ফর মানি মনে হয় নি৷ অপর দিকে হোন্ডা হরনেট এর বিল্ড কোয়ালিটি, মাইলেজ, থ্রটল রেসপন্স একটু হলেও দুর্বল মনে হয়েছে জিক্সার এর থেকে৷ আর এসবের বাইরের একটা ব্যাপার ছিলো, ওই সময় হোন্ডা বা ইয়ামাহা নিতে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হতো৷

 

তাই সব মিলিয়ে জিক্সার নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার কাছে ঠিক মনে হয়েছে৷ আমার বাজেট ২ লাখ এর কম হওয়াতে আমি এবিএস ব্রেকিং সিস্টেমে যেতে পারিনি৷ লজিকালি আমি যাই ও নি৷ আমার রাইডিং স্টাইল অতোটাও এগ্রেসিভ না৷ সব মিলিয়ে আমার জন্য জিক্সারের সিংগেল ডিস্ক ভ্যারিয়েন্ট টা ঠিক মনে হয়েছে৷ ২১০০ কিলোমিটার চালিয়ে আমার এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা মনে হয় নি৷ নতুন বাইক এর যেসব সমস্যা বিভিন্ন পোস্ট থেকে দেখতাম তার কোনটাই ফেইস করিনি৷ ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার আরপিএম মেইন্টেইন করে চালাচ্ছি৷ টপ স্পিড নিয়ে আমি খুব একটা মাথা ঘামাই না তবে এই কয় দিনে বুঝে গেছি, সিটি রাইডে ইনিশিয়াল পাওয়ার খুবই জরুরী৷ মাইলেজ এর কথায় আসলে আমি এখন পর্যন্ত ৪৩-৪৫ এর মধ্যে মাইলেজ পাচ্ছি৷

 

ইঞ্জিন অয়েল প্রথম টা ৩০০ কিলোমিটার এ আর পরের গুলো প্রতি ৫০০ কিলোমিটার এ চেঞ্জ করেছি৷ সব শেষে, যারা এই বাজেটে বাইক নিতে চান, আমার পরামর্শ হলো, তারা সব বাইক অন্তত ৪-৫ কিলো নিজের মতো চালিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ কারন এই রেঞ্জে আসলে সব বাইক ই ভালো৷ আপনাকে খুজে বের করতে হবে আপনার জন্য কোনটা ভালো৷ সবাই সাবধানে বাইক চালাবেন৷ অবশ্যই সেফটি গিয়ার পড়ে রাইড করার অভ্যাস গড়ে তুলুন ধন্যবাদ সবাইকে৷
লিখেছেন- আশিক চৌধুরী 

Related Posts

error: Content is protected !!