Lifan KPT 4V এর ফাস্ট ইম্প্রেশন রিভিউ লিখেছেন মাসুদ হক

রিভিউটি লিখেছেন: মাসুদ হক

বাংলাদেশের বহুল জনপ্রিয় বাইক “R15 V3 BS6” ছেড়ে চাইনিজ লিফানে শিফট করা,  সাহসটা বোধহয় খুব বেশি ছিল আমার। সাধারণত এই সাহস কেউ দেখাবে না। আমিও দেখাতাম না কিন্তু বাধ সাধলো মেরুদন্ডের সমস্যা। সত্যি কথা বলতে আগামী ৩-৪ বছর চালানোর ইচ্ছা ছিল “R15” কিন্তু স্পোর্টি লিন সিটিং পজিশনের কারনে মেরুদন্ডের সমস্যা হয়ে গেছে অলরেডি। তাই একটা ট্যুরইং এডভেঞ্চার টাইপ বাইক এক্কেবারে ফরজ হয়ে গেছিলো আমার জন্য। প্রথম চয়েস ছিল “HONDA CB 150X” কিন্তু এবিএস না থাকাতে বাদ দিয়েছি। কারণ, আমার কাছে তাড়াতাড়ি গতি তোলার থেকে তাড়াতাড়ি গতি কমানোটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে KPT এর এই মডেলটার লুকের প্রেমে পড়েছিলাম বাংলাদেশে লঞ্চ করার পর থেকেই। বাইকের টেকনিক্যাল বিষয়ে আমার ওস্তাদ Sahed Ahsan Abir ভায়ের এক কথাতেই এই বাইকটা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যদিও কেনার আগে বাইকটাকে একটা বারের জন্যও সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি!

ঠিক করেছি না ভুল করেছি এটা বুঝতে পারবো আরো কয়েকমাস গেলে।

বাইক কেনার ইতিহাস তো গেলো। এবার আসি বাইক এর কথায়। এখন পর্যন্ত এই বাইকটির যে সব ভালো ও খারাপ দিক পেয়েছি সেগুলো একটু তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আমার কাছে বাইকটির যে দিক গুলো ভালো লেগেছে: 

১) লুক একেকজনের কাছে একেকরকম। এই বাইকের লুক আমার কাছে ভালো লাগে।

২) এর বিল্ড কোয়ালিটি এভারেজ।

৩) আমার কাছে এই বাইকটি ইন্ডিয়ান বা “কথিত জাপানি” বাইকগুলোর মতোই মনে হয়েছে।

৪) এর ইঞ্জিন ডিউরিবিলিটি নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই। এই ব্যাপারটাতে লিফানকে ট্রাস্ট করাই যায়। তবে কিছু কিছু জিনিসের কোয়ালিটি আরেকটু বেটার করতে পারতো কোম্পানি।

৫) কালার ফিনিশিং আর মেটাল কোয়ালিটি ভালো।

৬) থ্রটল রেসপন্স ১০০/১০০।

৭) ট্যুরিং এডভেঞ্চার বাইকে এরকমই হওয়া উচিত।

৮) সিটিং পজিশন জোশ।

৯) সিট যথেস্ট সফট এবং আরামদায়ক। অনেকেই বলতেন সিট শক্ত,তাদের সাথে আমি একমত না।

১০) হ্যান্ডেল বারটা ভালো লেগেছে।

১১) দূর থেকে এক্সহস্ট সাউন্ড খুব ভালো লাগে।

১২) বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস বেশ ভালো।

আমার কাছে বাইকটির যে দিক গুলো খারাপ লেগেছে: 

১) সুইচগুলার কোয়ালিটি ভালো না।

২) হেডলাইটের আলো সিটির জন্য পারফেক্ট,হাইওয়েতে ফগ মাস্ট।

৩) মিটারের কোয়ালিটি পছন্দ হয়নি,খেলনা খেলনা মনে হয়।

৪) বডি কিট গুলা প্রাইস অনুযায়ী ঠিক আছে কিন্তু আরো ভালো হতে পারত।

৫) স্প্রোকেটের কোয়ালিটি ঠিক থাকলেও চেইন এক্কেবারে বাজে।

৬) এবিএস এর পারফর্মেন্সে আমি মোটেও সন্তুষ্ট না। জানিনা পরে কিছুটা ইমপ্রুভ হবে কিনা। এবিএস আমি ইয়ামাহার মতো না হলেও এটার থেকে বেটার আশা করেছিলাম।

৭) ইঞ্জিন সাউন্ড এখন খুব ভালো না লাগেনি।

৮) সাসপেনশন একটু শক্ত মনে হয়েছে।

৯) সামনের ব্রেক লিভার আর ক্লাচ লিভার খুবই নিম্নমানের। আরেকটু ভালো দিলে কি হতো!

এবার বাইকে কি কি চেঞ্জ করলাম ও কেনো করলাম সেটা বলি: 

১) মেইন ইস্যু আমার কাছে ছিল সাসপেনশন। এর মনোশক,প্রচুর হার্ড।আগেই জানতাম তাই ইন্ডিয়া থেকে মেরুদন্ডের চিকিৎসা করে আসার সময় (বাইক কেনার আগেই) সাথে করে HORNET 160 এর মনোশক নিয়ে এসেছিলাম। দাম ৩ হাজার রুপি,বাংলাদেশে দাম ৫ হাজার টাকা। কিছুদিন চালালে সটকটা হয়তো কিছুটা সফট হতো কিন্তু আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব নয় কেননা আমি মেরুদন্ডের পেশেন্ট।। হরনেটের সাসপেনশনে অনেক বেটার ফিল পাচ্ছি।

২) চেইন খুবই বাজে কোয়ালিটির ছিল। তাই জিক্সারের চেইন ১৯০০ টাকা দিয়ে কিনে লাগালাম।কম দামের মধ্যে ভালোই মনে হচ্ছে। চেইনটা আরেকটু ভালো কোয়ালিটি দিতেই পারতো লিফান।

৩) ব্রেক বাইটে সন্তুস্ট ছিলাম না। তাই সিলিন্ডার,ব্রেক লিভার এবং ব্রেক সুইচ লাগালাম নিসিন, Fzs V3 এর ফুল সেট। ব্রেক হোস পাইপ চেঞ্জ করার প্রয়োজন মনে করি নি। পেছনের ব্রেকে হাত দেইনি। কিছুদিন পর হয়তো কিছুটা ভালো হবে,না হলে অন্য ব্যাবস্থা নিবো। ব্রেকের মতো সেনসিটিভ একটা বিষয়ে নিম্নমানের মাস্টার সিলিন্ডার,লিভার না দিলেই পারতো। নিসিনের এই সেটাপের সাথে ডানদিকের স্টক ভিউ মিররের প্যাঁচ মিলবে না,লেদে থ্রেড কেটে ঠিক করা লাগবে এই ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।

৪) ব্রেক ফ্লুইড দিয়েছি Liqui Moly Dot4 সিন্থেটিক। ফ্লুইড দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন বাবল না থাকে। এটা অবশ্যই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। কেউ ব্রেকের বেপারে হেলাফেলা করবেন না প্লিজ।

৫) শীঘ্রই ক্লাচ লিভার সেটও চেঞ্জ করে করতে হবে বলে মনে হচ্ছে।

৬) ইঞ্জিন যথেস্ট স্মুথ,নো ভাইব্রেশন কিন্তু স্টক ইঞ্জিন ওয়েলের সাউন্ডে সন্তুস্ট ছিলাম না। লিকুই মলি সিন্থেটিক 10W40 এক লিটার আর এটারই 15W50 ২০০ মিলি দিলাম। এটাতে গ্রেড ঠিক থাকলো বাট থিকনেস একটু বেড়ে সাউন্ড এখন আগের থেকে বেটার।

৭) ওয়েল ফিল্টার বাজাজ ডিস্কোভারের।ওয়েল ফিল্টার লাগানোর পর অবশ্যই গ্যাসকিট আঠা দিবেন।

৮) যদিও ইঞ্জিন যথেস্ট স্মুথ তারপরও স্টক স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করে NGK Laser Iridium ইন্সটল করেছি বেটার স্মুথনেস আর বেটার এক্সিলারেশনের জন্য। আমি এই জিনিসটার বিগ ফ্যান।

৯) FNM M20 ফগ লাইট কিনেছি কিন্তু লাগানো হয়নি এখনো।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: যারা KPT 4V কিনবেন কেনার আগে এই জিনিস পরিবর্তন করার মেন্টাল+ফিন্যান্সিয়াল প্রি-পারেশন নিয়েই কিনবেন। এমন না যে পরিবর্তন না করলে চলবেই না তবে বেটার পারফরম্যান্স চাইলে পরিবর্তন করার বিকল্প নাই।

 

“চায়না বাইক” ট্যাগের কারনে অনেকের ইচ্ছা থাকার পরেও অজানা ভয়ে লিফান বাইক কিনতে ভয় পান,বিশেষ করে অসাধারণ লুকের “KPT 4V” মডেলটা।আমার এই আর্টিকেলটা পড়লে আশা করি অনেক কিছুই ক্লিয়ার হবেন,বুঝতে পারবেন যে আপনার এই বাইকটা কেনা উচিত নাকি উচিত না। যা হোক,সঠিক মেইনটেইনেন্স আর যত্ন করে চালানোর মেন্টালিটি থাকলে চোখ বন্ধ করেই নেয়া যায় এই বাইকটা। এককথায়,বাইকের ব্যাপারে আপনার প্যাশন থাকলে,একটু এক্সেপশনাল কিছু চাইলে আর রিসেল ভ্যালুর ব্যাপারে মাথা ব্যাথা না থাকলেই বাইকটা আপনার জন্য। প্রাইস রেঞ্জ অনুযায়ী ওভারঅল ঠিকই আছে সবকিছু।

কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো: 

আপনারা যদি এই বাইকটার কিছু কিছু জিনিসের কোয়ালিটির দিকটায় নজর দেন,স্পেয়ার পার্টসের সহজলভ্যতা আর সার্ভিসের ব্যাপারটা নিশ্চিত করেন তাহলে এটাই হতে পারে এই সেগমেন্টের গেইম চেঞ্জার বাইক।

অলি আহাদ খান

Related Posts

Add Comment

রিপ্লে দিন

error: Content is protected !!