Suzuki GSX-R 150, ১১ হাজার কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- মোঃ ফারদিন আহসান)

আসসালামু আলাইকুম,

আমার নাম মোঃ ফারদিন আহসান, আমার বাসা দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলায়। আমি বর্তমানে Suzuki GSX-R 150 বাইকটি ব্যবহার করি, এখন পর্যন্ত বাইকটি ১১০০০+ কিঃমিঃ চালিয়েছি। আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল Yamaha FZ-S V-2.0 কিন্ত আমার ইচ্ছা ছিল Suzuki Gixxer SF নেয়ার, আর আব্বুর সেটা পছন্দ ছিল না, তাই সেটা নেয়া হয় নাই। তখন আমাদের Bajaj Discover 135 ছিল, সেটা বিক্রি করে FZ-S V-2.0 কিনলাম।

পছন্দের বাইক কিনতে পারিনি তাই খুব একটা ভাল লাগা কাজ করছিল না, পরে বাসায় বললাম আমার একটা স্পোর্টস বাইক লাগবে, তখন আব্বু FZ-S V-2.0 বিক্রি করে দিয়ে Bajaj Pulser 150 Twin Disc নিল, আমাকে এরপর ১ বছর অপেক্ষা করতে হয়। এরপর আমি আমার স্বপ্নের বাইক কিনতে সক্ষম হই। আমি Suzuki GSX-R 150 বেছে নেয়ার মূল কারণ বাইকটা আমার সাথে খুবই হ্যান্ডি এবং কমফোর্টেবল। যেহেতু আমার হাইট ৫ ফিট ৫ ইঞ্চি, আমার সাথে Suzuki GSX-R 150 বাইকটা একদম পারফেক্ট। আমি কেনার আগে R-15 এবং CBR দুটোই চালিয়ে দেখেছি, আমার কাছে GSX-R টাই বেস্ট লাগছে। সাথে আছে এর অসাধারণ পারফরম্যান্স, আর এই Daytona Yellow কালার নিয়ে আর কি বলবো? আমার সবচেয়ে পছন্দের কালার। সেই সাথে দামটাও অন্য দুইটার তুলনায় কম। এজন্যই আমি Suzuki GSX-R 150 বেছে নিলাম।

বাইকটি আমি আনঅফিসিয়াল ভাবে নিয়েছি দিনাজপুরের আল-আমিন ট্রেডার্স থেকে অর্ডার করে। বাইকটির ঢাকায় মূল্য ৪ লাখ টাকা, ওরা দিনাজপুরে এনে দিয়েছে তাই আরো দশ হাজার টাকা বেশি নিয়েছে৷ অর্থাৎ আমার দাম পড়ে গেছে ৪ লাখ দশ হাজার টাকা। Suzuki GSX-R 150 বাইকটি আমি এর আগেও চালিয়েছি কিন্ত নিজের বাইক, এটা একটা আলাদা অনুভূতি। এই অনুভূতি আসলে বলে বুঝানোর মতো না। আমি তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি বাইকটি কিনে ফেলেছি। ওইদিনের ভ্লগটা দেখলেই বুঝতে পারবেন নতুন বাইক কেনার কেমন অনুভূতি।

আমার বাইকটি আমি আল-আমিন ট্রেডার্স থেকেই সার্ভিসিং করাইছি প্রথম অবস্থায়। এরপর থেকে আমি সুজুকি অফিসিয়াল পয়েন্ট থেকে সার্ভিস করাই। কারণ আল-আমিন ট্রেডার্স আমার বাসা থেকে বেশ দূরে হয়ে যায়। আমি এপর্যন্ত ৮-৯ বার সার্ভিসিং করিয়েছি, আমার বাইকে আমি ২৫০০ কিঃমিঃ এর পূর্বে সিটিতে ৩৯ মাইলেজ পেয়েছি এবং হাইওয়ে তে ৪৪ পর্যন্ত পেয়েছি, ২৫০০ কিঃমিঃ পার হবার পরে আমি সিটিতে ৩৬-৩৮ পাই, হাইওয়েতে ৪০+ পাই। মজার বিষয় হলো আমি বেশ কয়েকটা ট্যুরে ৪৮ কিঃমিঃ লিটারে পর্যন্ত মাইলেজ পেয়েছি, তাই মাইলেজ আমার মতে ঠিকই আছে। বাইক যেহেতু একটা শখের জিনিস, তাই এর যত্নও করি ভালো। বাইকটি বাসায় ঢুকানোর সময় পরিষ্কার করে ঢুকাই, সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করি। বাইকের খুটিনাটি কাজ নিজেই করি, যেমনঃ চেইন পরিষ্কার করা, চেইন ল্যুব দেয়া। বাইকে কোনো পরিবর্তন চোখে পড়লেই মেকানিক কে দেখাই। ব্রেক-ইন পিরিয়ড ভালো মতো পার করেছি। বাইকের কুল্যান্ট চেক করি, ডিস্ক অয়েল ব্যবহার করি, কখনোই পেট্রোল ব্যবহার না করে অকটেন ব্যবহার করি।

আমি আমার বাইকে Motul 10w40 (7100) fully synthetic ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। এর দাম ১২০০ টাকা। এটা দিয়ে নিমিষেই ২০০০+ কিঃমিঃ চালানো যায়। বাইকের কিছু মডিফিকেশন করেছি, সামনে হেড কাউল চেঞ্জ করেছি, যেটাকে সবাই ডুকাতি হেড কাউল বলে আরকি। এর জন্য সামনে ফগ লাইট লাগানো লাগছে। সামনে পিছনে দুই চাকাই চেঞ্জ করে MRF Masseter লাগিয়েছি, আগে সামনের টায়ার ছিল ৯০, এখন সেটা ১০০ এবং পিছনে ছিল ১৩০, সেটা ১৪০ লাগিয়েছি। তাছাড়া ছোটখাটো কিছু জিনিস যেমন ভাইজরটা পরিবর্তন করেছি এবং ইন্ডিকেটর লাইট গুলো, পেছনের মাডগার্ড খুলেছি, এগুলা লাগায় বাইকটি আরো সুন্দর দেখায় এজন্যই পরিবর্তন করা। কিন্ত এগুলোর মান কখনোই স্টক গুলোর মতো মানসম্পন্ন নয়। এছাড়া বাইকে আর কোনো মডিফাই করি নাই।একবার ট্যুরে যাওয়ার সময় তেতুলিয়া হাইওয়ে তে ১৪৫ পর্যন্ত তুলেছিলাম। আরো উঠানো যেত কিন্ত অনেক ট্রাক ছিল রাস্তায়, তাই রিস্ক নেই নাই।

বাইকের ৫ টি ভালো দিক( আমার কাছে):

১. বাইকটি অন্য সমমান বাইকের তুলনায় দাম কম, তবুও রয়েছে কি-লেস সিস্টেম, যার ফলে সিকিউরিটি রয়েছে অনেক।

২. বাইকটি অনেকটা ন্যারোশেপ, তাই জ্যামে দারুন এডভান্টেজ দেয়৷

৩. প্রাইস হিসেবে দারুন স্পোর্টি লুক দেয় এবং বাজেট-সেরা ডিজাইন।

৪. হেডল্যাম্প এর আলো অন্যান্য স্পোর্টস বাইকের তুলনায় অনেক জোস।

৫. এটা যে স্পিডমাস্টার এটা তো আর বলতে হয় না, এরপরেও যথেষ্ট ভালো মাইলেজ দেয়।

বাইকের ৫ টি মন্দ দিক( আমার কাছে):

১. এই বাইকের টায়ার আমাদের দেশের রাস্তার সাথে মানানসই নয়, তাই প্রচুর স্লিপ করে।

২. বাইকটির ওজন কম, তাই এর ওভার স্পীড হলে ব্রেকিং করতে সমস্যা হয়।

৩. পিলিওন সিট খুবি বাজে, বসে থাকা যায় না।

৪. বাইকের সাথে একটাই রিমোট দেয়, যেটা হারিয়ে গেলে অনেক কষ্ট করতে হবে।

৫. বাইকটি শুধুমাত্র শর্ট রাইডার দের জন্য, অন্যান্য স্পোর্টস বাইকের তুলনায় এটা অনেক ছোট।

করোনার কারণে তেমন বড় ট্যুর দেয়া হয় নাই। তবুও ফুলবাড়ি থেকে তেতুলিয়া প্রায় ১৭০ কিমি এর ট্যুর দিয়েছি। ট্যুরে আমি কোনো সমস্যায় পড়িনি। যথেষ্ট ভালো ফিডব্যাক পাইছি। পারফরম্যান্স ছিল অনেক ভালো, ১৭০ কিমি টানা চালিয়েছি কোনো সমস্যা হয় নাই। মাইলেজও পেয়েছি ভালো। আমি সলো রাইড করছিলাম তাই হাতে ব্যাথা হয় নাই৷ পিলিওন নিয়ে রাইড করলে অনেক সমস্যা হয়। এছাড়া আর কোনো সমস্যাই নেই। নিঃসন্দেহে আরো বড় ট্যুর দেয়া যাবে।

বাইকটি নিয়ে আমি চুড়ান্ত যে পরামর্শটি দিতে চাই তা হলোঃ নিঃসন্দেহে এই বাইকটি নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার হাইট খেয়াল রাখবেন৷ ফ্যামিলি নিয়ে ট্রাভেল করতে হইলে এই বাইক না নিতেই সাজেস্ট করবো। তাছাড়া এখন বাজারে এবিএস ভার্সন রয়েছে, চেষ্টা করবেন এবিএস ভার্সন কিনতে। ধন্যবাদ।

 

লিখেছেনঃ মোঃ ফারদিন আহসান

Related Posts

error: Content is protected !!