Yamaha FZ V3 ২২০০০+ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- নাজমুস সাকিব)

আসসালামু আলাইকুম, আমি নাজমুস সাকিব। আমি একজন FZ V3 ব্যবহারকারী। প্রথমে আসি এই বাইকের লুকস নিয়ে । এট যখন ভারতে লঞ্চিং হয় তখন ছবি দেখেই এটা ভালো লেগে যায়। যদিও মাসকিউলার ফুয়েল ট্যাংক এর লুক কিছু মানুষের পছন্দ না, বাট আমার কাছে লুকটা অনেক জোশ।

এই বাইকের পার্ফর্মেন্স নিয়ে আমি পুরাপুরিই সন্তুষ্ট । আমি একদিনে তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ সহ খাগড়াছড়ি, সাজেক, বান্দরবন, কুয়াকাটা, কক্সবাজার সহ বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘুরেছি এটা নিয়ে। হিল ট্রাকে এটার পার্ফর্মেন্স খুবই ভালো। আমি আমার সহধর্মিনী সহ সাজেক ট্যুর করি। ব্রেকিং & কম্ফোর্ট পার্ফর্মেন্স আমার ধারনার থেকেও ভালো ছিলো। পুরা ভ্রমণে কোথাও এটা আমাকে নিরাশ করে নাই। এমনিতেই FZ এর কম্ফোর্ট নিয়ে কখনো কারো প্রশ্ন ছিলো না যখন এটা সিঙ্গেল ডিস্ক ছিলো। তারপর ডাবল ডিস্ক, এ বি এস এর সাথে হ্যান্ডেলবার একটু উঁচু হবার কারনে এটার কম্ফোর্ট অন্য লেভেলের। সারাদিন রাইড করেও কোনো পেইন বা ক্লান্তি আসে না বলেই এটাকে কম্ফোর্ট কিং বলা হয়।

এ্যাক্সিলারেশন নিয়ে অনেকেরই একটা প্রশ্ন থেকে যায়, আমার কাছে জিরো টু একশো পর্যন্ত এ্যাক্সিলারেশন ঠিকই লাগে, বাট ১০০ এর উপরে স্পীড সমসাময়িক অন্য বাইক থেকে একটু বেশীই ধীর গতির। যেকোনো রাস্তাতেই ১০৮/১১০ স্পীড ওঠে বাট অনেক রাস্তায় এর থেকে বেশী গতি উঠতে চায় না। আবার চিটাগং হাইওয়ে সহ আরো কিছু রাস্তায় ১১৫/১২০ স্পীডে অনায়াসে রাইড করা যায়। যদিও আমি স্পীড লাভার না তাই আমার কাছে স্পীডিং টা তেমন কোনো ইস্যু না।

এ বি এস এই বাইকটার ব্রেকিং লেভেলটাকে অন্য লেভেলে নিয়ে গেছে। এটার ব্রেকিং রাইডের সময় অনেকবেশী আত্মবিশ্বাস দেয়। আমি এ পর্যন্ত ২২ হাজার কিমি রাইড করেছি, এর মধ্যে একদিনে তেতুলিয়া টু টেকনাফ সহ প্রায় ১২০০ কিঃমিঃ রাইড করেছি। ইঞ্জিন পার্ফর্মেন্স ছিলো অসাধারণ। এর মধ্যে একটানা ৩৬৭ কিমি রাইড ছিলো। ইঞ্জিনে কোনো ইস্যু পাই নাই। এই পুরা সময়ে সমান ভাবেই পাওয়ার আউটপুট দিয়েছে। এফ আই ইঞ্জিনে সাউন্ড নিয়ে একটু ইস্যু আমার কাছে মনে হয়েছে। সেটা হলো যখন স্টার্ট করা হয় সাউন্ডটা খুব সুন্দর লাগে ও যদি ইকো মুডে রাইড করা হয় তাহলে সাউন্ড ঠিক থাকে, কিন্তু হাই রেভে রাইড করলে কিছুক্ষন পর সাউন্ডটা কেমন যেনো ফাটা ফাটা লাগে বাট পার্ফর্মেন্সে কোনো ইফেক্ট পরে না। আবার রাইড শেষ করে ১০ মিনিট রেখে দিয়ে আবার রাইড শুরু করলে সাউন্ড আগের মতোই স্মুথ লাগে।

যেহেতু সিঙ্গেল চ্যানেলে ABS এতো কম্ফোর্ট & মজা সেহেতু ডাবল চ্যানেল ABS হলে অবশ্যই আরো বেশী মজা লাগবে রাইড করার সময়। মাইলেজ আসলে এক এক সময় এক এক রকম পেয়ে থাকি, খুলনাতে প্রায় দেড় মাসে ২ হাজার কিমি রাইড করেছিলাম সেই সময়ে ৪৭/৪৮ করে মাইলেজ পেয়েছি। করোনা কালীন সময়ে ঢাকার রাস্তায় যানজট কম থাকার সময়ে ৪৩/৪৪ মাইলেজ পেয়েছি। আর এখন ৩৯ থেকে ৪২ পর্যন্ত মাইলেজ পাই। স্মুথ রাইড করলে মাইলেজ অনেক ভালো পাওয়া যায়। আর রাফ রাইড করলে মাইলেজ কমে যায়।

আমি ব্রেক ইন পিরিয়ড ১৫০০ কিমি পর্যন্ত মেইনটেইন করেছিলাম। প্রতি ৫০০ কিমি পরপর ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন সহ স্মুথ এ্যক্সিলারেশনে সর্বোচ্চ ৬০/৬৫ স্পীডে রাইড করতাম। আমি এখন পর্যন্ত ২২ হাজার কিমি রাইড করেছি। আমি প্রথম ৮ হাজার কিমি পর্যন্ত ইয়ামালুব এর মিনারেল 10W40 ইউস করেছি, এরপর ২ টা শেল ইউস করেছি। তারপর আবার ইয়ামালুব এবং এখন ইয়ামালুব এর সিন্থেটিক সুপার স্পোর্টস লুব টা ইউস করছি। বাইকের পার্ফর্মেন্স ও অনেক সময় ম্যান টু ম্যান পার্থক্য হয়। সবাই সাবধানে রাইড করবেন। অতিরিক্ত গতি পরিহার করবেন।

লিখেছেন- নাজমুস সাকিব 

Related Posts

error: Content is protected !!