মোটরবাইকের একটি জনপ্রিয় ব্রেকিং সিস্টেম হল এবিএস। এটি বাইকের ব্রেকিং এর সময় চাকাগুলোকে লক করা থেকে বাধা দেয় এবং চাকা স্কীড করার হাত থেকে রক্ষা করে। বিশ্বের অনেক দেশেই এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহৃত হলেও আমাদের দেশে এর প্রচলন কম।
গাড়ী ও মোটরবাইকের জন্য এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম নতুন কোন ধারনা নয়। ১৯৮৮ সালে বিএমডব্লিউ সর্বপ্রথম BMW K100 নামে এবিএস সম্বলিত বাইক বাজারে নিয়ে আসে। এরপর ১৯৯২ সালে হোন্ডা তাদের প্রথম এবিএস ব্রেকিং বাইক ST1100 Pan European নামে বাজারে ছাড়ে। ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবিএস নিয়ে একটি আইন পাস করে। সেটা হল, 125 cm3 এর উপর ইঞ্জিনের মোটরবাইকে অবশ্যই এবিএস ব্রেকিং ব্যাবহার করতে হবে।
এবিএস ব্রেকিং কীঃ
এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস) হল আধুনিক মোটরবাইকের একটি নিরাপদ ব্রেকিং সিস্টেম। যেটি ব্রেকিং এর সময় বাইকের চাকা লক করা থেকে বাধা দেয়। এটা ক্রমাগত পৃথক চাকা দুটির গতি পরিমাপ করে এবং সিস্টেম দ্বারা চাকার গতির সঙ্গে তাদের তুলনা করে। এই গতি পরিমাপ পৃথক গতি সেন্সর দ্বারা সম্পন্ন করা হয়। ব্রেকিং এর সময় এর পরিমাপকৃত চাকার গতি যদি সিস্টেমের আভাসকৃত গতি থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তাহলে এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম দুটি গতিকে সমন্বিত করে এবং চাকার স্কিডিংকে কমিয়ে দেয়। এটি প্রতিটি চাকা জন্য আলাদাভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ইসিইউ প্রোগামিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ইসিইউ ব্রেকিং অ্যাসেম্বলের ঘূর্ণমান গতি নির্ণয় এবং হঠাৎ লকিং ছাড়াই চাকা ঘূর্ণনকে হ্রাস করে।
এবিএস মুলত ৪টি অংশ নিয়ে গঠিত
১। ইলেকট্রোনিক স্পিড সেন্সরঃ এই সেন্সর চাকার বেগ এবং গাড়ির ত্বরণ পরিমাপ করে। এটি ডিস্ক ক্যালিপারের এর মধ্যে থাকে।
২। টুথ ডিস্কঃ এটি চাকার সেন্সরকে চাকার গতি নির্ণয় করতে সাহায্য করে। এটি ডিস্ক ব্রেকের সাথে সংযুক্ত থাকে।
৩। ইলেকট্রোনিক কন্ট্রোল ইউনিট (ইসিইউ ): ECU একটি মাইক্রোপ্রসেসার সিস্টেম যাতে এবিএস এর প্রোগ্রাম সংরক্ষিত থাকে। এটি সাধারনত বাইকারের সিট এর নিচে থাকে।
৪। ইলেকট্রিকাল কন্ট্রোলার ভালবঃ এই কন্ট্রোলার ভালবটি ব্রেক সিলিন্ডারের চাপ নিয়ন্ত্রন করে এবং এটি ইসিইউ এর পাশেই অবস্থান করে।
সুবিধাঃ
১। স্টপিং ডিস্টেন্সঃ যেহেতু ব্রেকিং ফোর্স নিয়ন্ত্রন ও প্রয়োগ ইলেকট্রিক্যালি হয়ে থাকে সেহেতু স্টপিং দূরত্ব এবিএস বিহীন বাইকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
২। সাডেন ব্রেকিংঃ এটি সাডেন ব্রেকিং এর সময় অত্যন্ত কার্যকর। এটি ব্রেকিং এর সময় বাইককে স্কিডিং এর হাত থেকে রক্ষা করে এবং স্থিতিশীল করে।
৩। স্লিপারি সারফেসে ব্রেকিংঃ বেশিরভাগ রাইডার্সরাই এই অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন এবং এর ফলাফলও জানতে পেরেছেন। এবিএস প্রতিটি চাকা উপর সমান ব্রেকিং ফোর্স প্রদান করে এবং বাইককে সোজা স্ট্রাইক প্রদান করে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে।
৪। ট্রাকশন কন্ট্রোলঃ এটি শক্তিশালী বাইকের গতি নিয়ন্ত্রন ও খারাপ সারফেস এ সেফটি প্রদান করে।
৫। লাস্টিংঃ এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম এর আয়ু এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অসুবিধাঃ এই ব্রেকিং সিস্টেম এর অনেক সুবিধার মাঝেও কিছু নেগেটিভ সাইডও রয়েছে। স্পোর্টস স্ট্যান্ট বাইকের জন্য এটি অতটা সুবিধাজনক নয়। এটি বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় রেগুলার বাইকে ব্যবহৃত হয় না।
বর্তমানে বাংলাদেশে শুধুমাত্র কয়েকটি মডেলের বাইকে এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে Honda CB150R Exmotion, Suzuki Intruder, KTM Duke 15, KTM RC 125, Aprilia RS4 125.
তাই বলা যায় বাইকের সুরক্ষা ও ভাল ব্রেকিং এর জন্য এবিএস এর কোন বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, আমাদের দেশের রাস্তা ঘাটের সার্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বাইক কোম্পানিগুলো খুব শীঘ্রই তাদের বাইকে এটি সংযোজন করবে।
- Hero Hunk DD ১৭০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ ( লিখেছেন- শান্ত) - এপ্রিল ২, ২০২৪
- Hero Hunk ১০,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ফাহিম হোসেন তপু) - মার্চ ১১, ২০২৪
- Hero Hunk ৪২,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- ইফাজ আহমেদ) - মার্চ ১০, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.