বাইকের জন্য ক্ষতিকারক মোডিফিকেশন থেকে বিরত থাকুন

সৌন্দর্যের সাথে প্রসাধনীর যেমন একটি অদৃশ্য বন্ধন গড়ে উঠেছে, ঠিক তেমনি বাইকের সাথে মোডিফিকেশনেরও একটি সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। আর সেই বন্ধনে আটকে পড়েছে লাখো বাইক প্রেমিক। কিন্তু প্রসাধনীর আস্তরণের নিচে যেমন প্রকৃত সৌন্দর্য চাপা পড়ে যায়, ঠিক তেমনি মোডিফিকেশনের আড়ালে একটি বাইকের আসল পারফরম্যান্স এবং সৌন্দর্য্যও চাপা পড়ে যায়। বাইক প্রেমীর অজান্তেই মোডিফিকেশনের কারণে অনেক সময় বাইকের বড় ধরনের ক্ষতিও হয়ে যায়। তাই আজকের লেখাটি সাজানো হয়েছে বাইকের ক্ষতিকারক মোডিফিকেশন গুলোকে ঘিরে।

আসুন জেনে নেই মোডিফিকেশন কি, কত প্রকারভেদ এবং এর ক্ষতিকারক দিকগুলো।

মোডিফিকেশন: কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কারিগরি বিধি নিষেধ না মেনে কোন মোটরযানের রং, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, আসন বিন্যাস, হুইল বেইজ, রিয়ার ওভার হ্যাংগ, ফ্রন্ট ওভার হ্যাংগ, সাইড ওভার হ্যাংগ, চাকার আকৃতি, প্রকৃতি ও অবস্থা, ব্রেক ও স্টিয়ারিং, গিয়ার, হর্ন, সেইফটি গ্লাস, সংকেত প্রদানের লাইট ও রিফ্লেক্টর, স্পিড গভর্নর, ধোঁয়া নির্গমণ ব্যবস্থা ও কার্বন নিঃসরনের পরিমাণ, শব্দ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বা সমজাতীও অন্য কোনো কিছু পরিবর্তন করাকে মোডিফিকেশন বলে।

এক কথায়, কর্তৃপক্ষের কারিগরি নির্দেশ না মেনে, পারফর্মেন্স ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য মোটরযানে যেসব পরিবর্তন করা হয় সেটিকেই মোডিকেশন বলা হয়।

 

মোডিফিকেশনের প্রকারভেদ: 

মোডিফিকেশন সাধারণত দুই প্রকার। 

১) রং বা স্টিকার মোডিফিকেশন

২) পারফর্মেন্স মোডিফিকেশন।

আসুন এগুলো নিয়ে ও এর ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা।

১) রং বা স্টিকার মোডিফিকেশন।

বাইক রেজিষ্ট্রেশন করার সময়ই বাইকের রং ও ধরণ সম্পর্কে উল্লেখ করতে হয়। প্রয়োজন বা সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে স্টিকার বা রং এর ব্যাবহার করে কোনো বাইকের নিদ্রিষ্ট কালার পরিবর্তন করাকে রং বা স্টিকার মোডিফিকেশন বলে।

ক্ষতিকারক দিক: 

• এ ধরনের মডিফিকেশনের কারণে বাইকের আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যায়।

• এই মোডিফিকেশন কারনে যেকোনো মুহূর্তেই আইনি ঝামেলা সম্মুখীন হতে পারেন।

• কোন বাইকে যদি ফুল স্টিকারিং করা হয় তাহলে পরবর্তী সময়ে এই স্টিকার রিমুভ করার সময় বাইকের রং সহ উঠে আসার সম্ভাবনা থাকে।

• দুষ্কৃতিকারীরা এই ধরনের মোডিফিকেশন ফায়দা নিতে পারে।

আসলে এ ধরনের মোডিফিকেশনগুলো সাধারনত করা হয় বাইকের সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে কিন্তু এ ধরনের মোডিফিকেশন এর কারনে বাইকের আসল সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যায়।

২) পারফর্মেন্স মোডিফিকেশন

বাইকের পারফরম্যান্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইন্টার্নাল যে পরিবর্তনগুলো করা হয় তাকেই পারফর্মেন্স মোডিফিকেশন বলে। একটি বাইক যখন ম্যানুফ্যাকচার করা হয়, তখন এর ধরণ ও ক্ষমতা অনুযায়ী অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা এর সব কিছু ডিজাইন করা হয়। অনেকেই বাইক থেকে নির্দিষ্ট পারফরমেন্সের থেকেও বেশি পারফরম্যান্স আশা করে এবং এর জন্য ইন্টারনাল অনেক কিছু পরিবর্তন করে থাকে। যেমন: আইসিইউ, কয়েল, বেক চ্যাছিস বুস, আফটার মার্কেট এবিএস, ফ্যাট টায়ার, সাইলেন্সার, ইত্যাদি। এই ধরনের মোডিফিকেশন গুলো সাময়িক ভাবে বাইকের পারফরম্যান্স কিছুটা বৃদ্ধি কিন্তু অনেক ক্ষতি করে ফেলে ভিতরে ভিতরে।

 

ক্ষতিকারক দিক: 

• এ ধরনের মোডিফিকেশনের কারণে বাইকের ব্যালেন্স নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বেক চেসিস বুশ, ফ্যাট টারায় এর জন্য দায়ী।

• অনেকেই ব্রেকিং ইমপ্রুভ করার লক্ষ্যে বাইকে আফটার মার্কেট এ বি এস ব্যবহার করে, এছাড়াও নানারকম পরিবর্তন করে থাকে। কিন্তু ধরনের পরিবর্তনে ব্রেকিং এর উপরে ডাইরেক্ট ইফেক্ট পরে। এ থেকে অনেক সময় ব্রেক ফেল পর্যন্ত হতে পারে। ব্রেকের মতন সেনসিটিভ জিনিস নিয়ে এই ধরনের কোন রকম কাজ না করাই উচিত।

• এই ধরনের মোডিফিকেশনের জন্য ইঞ্জিনের উপর অধিক চাপ পড়ে। যাতে করে বাইকের আয়ুষ্কাল কমে যায়। নিম্নমানের সাইলেন্সার ব্যবহার করা এর জন্য দায়ী।

একটি দেড়শ সিসির ইঞ্জিন কে বহির বিশ্বে বেবি ইঞ্জিন বলা হয়। এর নির্দিষ্ট ক্ষমতার বাহিরে একে নিয়ে যাওয়া উচিত না।

 

আমরা অনেক সময় ডেকোরেশন এবং মোডিফিকেশনকে মিলিয়ে ফেলি কিন্তু দুটি ভিন্ন বিষয়। বাইকের সাময়িক সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা ডেকোরেশন করতেই পারি কিন্তু কোন রকমের মোডিফিকেশন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের সপ্তম অধ্যায়ে (শিরোনাম: মোটরসাইকেল নির্মাণ, সরঞ্জাম বিন্যাস ও রক্ষণাবেক্ষণ) এর ৪০ ধারার ৩ এবং ৪ নম্বর উপধারা অনুযায়ী মটর জানে যে কোন রকম মডিফিকেশন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সুতরাং এই মডিফিকেশন থেকে দূরে থাকা উচিত। বিশেষ করে পারফর্মেন্স রিলেটেড মডিফিকেশন গুলো না করাই উচিত।

বাইকের সব রকমের ডেকোরেশন আইটেম ও পার্টস কিনতে ভিজিট করুন: vovopip.com

মন্তব্য করুন