Yamaha R15 V3 মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন – অমি)

আমার নাম অমি, বয়স ২৭ বছর, নিজ জেলা কক্সবাজার আমি R15 V3 BS6 ব্যাবহার করি। জীবনের প্রথমবার মালিকানা রিভিও লিখছি, মোটামুটি সবাইকে একটা রিভিউ দেয়ার চেস্টা করবো।

 

বরাবরের মত প্রথমবার বাইক রিভিউ লিখতে বসে গেলাম আমি ও
ছোট বেলা থেকে বাইক এর প্রতি একটা অন্যরকম ভালবাসা কাজ করত। যা বলে বোঝানো সম্ভব না স্কুল লাইফ থেকে এক বন্ধুর মাধ্যমে বাইক চালানো টা শিখে ফেলি তাও অনেক ত্যাগ আর কষ্টের বিনিময়ে, তারপর থেকে আমার বাইকিং লাইফ শুরু।

 

আমার এই দুই চাকার বাহন টা আমাকে যতটুকু ভালবাসা দেয় তা আমাকে চার চাকার কোন বাহনে দিতে পারবে বলে মনে হয় না, এক কথায় আমার লাইফে আমি বাইকের প্রতি অন্যরকম ভক্ত ছিলাম শুরু থেকে, যেদিন নিজের সামর্থের কাছাকাছি আসলাম সেদিন ই পালসার UG4.5 কিনি প্রায় এক বছরের মত ইউস করার পর আমি ৪ টা বাইক চেঞ্জ করি। আমি কোন সময় রিভিউ লিখি নি ভুল ত্রূটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

 

আজ রিভিউ লিখতে বসেছি R15 BS6 Racing Blue নিয়ে আদর করে আমি নাম দিয়েছি নীল পরী, এটা ছিল আমার জীবনের প্রথম স্পোর্টস বাইক, বাংলাদেশে R15 V3 ফ্যান এর অভাব নেই, আমিও তাদের মধ্যে একজন। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল একটা R15 ইউস করবো তবে কালের পরিবর্তনে R15 V1 /V2 তার পর আসলো V3 BS4 ভার্সন, আর ২০২০ সালে সবার শেষে আসে Yamaha R15 V3 BS6 ভার্সন, সময়ের পরিবর্তনে স্বপ্নটা একটু দেরীতেই ধরা দেয়।

 

অবশ্য সেটা ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ আমার দীর্ঘ অনেক বছরের অপেক্ষার পর স্বপ্ন সার্থক হয়ে গেলো,
জীবনে প্রথম স্পোর্টস বাইক, আর হ্যাঁ ২৮ তারিখ টাই আমার কাছে ২০২০ সালের ঈদের দিনের মতই মনে হয়েছিল যা অনুভূতি টা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব ন্।
জীবনে প্রথম বার স্পোর্টস বাইকের হ্যান্ডেল ধরে বিন্দু পরিমাণ ও অস্বস্থি লাগেনি, আমি যত টুকু চাওয়া ছিল তার চাইতে একটু বেশী পেয়েছি বলেই মনে হয়েছে। বাইক টা সম্পর্কে যত রিভিউ দেখেছি তেমন খারাপ ফিডব্যাক পাইনি।

 

১৫৫ সিসি ইঞ্জিন, ৬ গিয়ার বক্স, ফুয়েল ইঞ্জেক্ট সিস্টেম, ডুয়েল হাইড্রোলিক সাথে এন্টি ব্রেকিং সিস্টেম (এ বি এস) । অসাধারণ ডিজিটাল মিটার, ইঞ্জিন কাট অফ সুইচ,তারপর আছে VVA ফিচার। R15 V3 তে VVA এমন একটা ফিচার যা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে , আপনি ৬০/৭০ কিলোমিটার গতি বাইক চালান না কেনো যখন আপনি ৭০০০ আর পি এম ছাড়িয়ে যাবেন তখন আপনার বাইকের VVA এক্টিভেট হয়ে যাবে তার নোটিফিকেশন আপনি বাইকের মিটারেই পেয়ে যাবেন, VVA এক্টিভেটের পর রাইডিং এর সময় একটা অন্য রকম অনুভূতি পাবেন, তাছাড়া আরো অনেক ফিচার তো আছেই।

 

লুকের ক্ষেত্রে বলতে গেলে R15 V3 BS6 অনেক সুন্দর একটা বাইক, বি এস সিক্স ভার্সন তিনটি কালার আছে Racing Blue, Thunder Grey, Dark Knight Black
আমার পছন্দের কালার টা ছিলো নীল তাই আমি রেসিং ব্লু টা পছন্দ করি, R15 V3 পছন্দ করার আরেক টা কারন আছে সেটা হলো বাইকটির হেডলাইট আমার খুবই পছন্দের। যা দূর থেকে অনেক কেই আকর্ষন করবেই , বাইকটির বেশ কিছু জিনিস আপনার ভাল লাগবে, যেমন বাইক টা বসতে বি এস ফোর ভার্সন এর তুলনায় অনেক কমফোর্ট পাবেন। আপনি যদি ৫ ফিট ৭ ইঞ্চির উপরে হোন তাহলে এই বাইক টা আপনার জন্য বেস্ট হবে, আর যদি ৫ ফিট ৭ এর নিচে থাকলে একটু কমফোর্ট নাও হতে পারে।
বাইকটির লুকের ক্ষেত্রে আমি ১০ এর মধ্যে ৯ দেবো,এটা আমাএ সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত মতামত। তবে যতটা বিল্ড কোয়ালিটি খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ না, যারা R15 BS6 Indian নেয়ার কথা ভাবছেন দাম আর কোয়ালিটি সব কিছু বিবেচনা করে নিতে পারেন।

 

এবার আসি সরাসরি রাইডিং অভিজ্ঞতায় । বাইক টা কেনার উদ্দেশ্য লং রাইড আর ট্যুরের জন্য, কম বেশী প্রায় অনেক জায়গায় ট্যুর দিয়েছি, আমার বাইকে তেমন বড় কোন মডিফাই করা হয় নি, যেহেতু ট্যুর জন্য কেনা প্রথমত ফগ লাইট, শীত কালে হাইওয়েতে রাইড করার সময় ফগ লাইট অনেক প্রয়োজন। ফগ লাইট, ভাইজর, উইংলেট এর মধ্যে মোডিফিকেশন শেষ।

 

বাইক কেনার পর আমি একটানা ৮০০ কিলো রাইড করি ঢাকা টু কুমিল্লা, কুমিল্লা টু কক্সবাজার, বলতে গেলে এটাও লং ট্যুরের মত ছিলো, ৮০০ কিলো রাইডে আমি ৫০-৫৫ মাইলেজ পেয়েছি, সর্বোপরি আমার ১৬ লিটারের মত অকটেন লেগেছে। নতুন বাইক হিসেবে টপ স্পীড ট্রাই করেছিলাম, আমি টপ স্পিড ছিল হাইওয়েতে ১৩৫। তার পরে আর স্পীড বাড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, কারন টা সবাই ই জানেন বাংলাদেশের যে রাস্তা আর বেপরোয়া বাস চলাচল, তবে আপনি বাইকটির টপ স্পীড ১৫০-১৫৫ পর্যন্ত পাবেন।

 

প্রথম ৩০০০ রাইডিং এর ক্ষেত্রে আমি এই বাইকের মাইলেজ দেখে পুরাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম,  ভাবতাম অন্যরা যখন রিভিউ লিখতো ওরা বাড়িয়ে বলতো, কিন্ত না কথা সত্য, নিজে অভিজ্ঞতা না করলে কখনো বিশ্বাস করতাম না । বাড়িয়ে বলার মত এখানে কিছুই নেই আপনি হাইওয়েতে রাইড করলে ৫০-৫৫ মাইলেজ পাবেন, আর যদি সিটিতে রাইড করেন তাহলে ৪২-৪৫ মাইলেজ পাবেন যা আমি নিজেই পেয়েছি । প্রথম ৩০০০ কিলোমিটার কমপ্লিট করার পর বাইক সার্ভসিং করাই, আমার বাইকের মাইলেজ এখনো নতুন বাইকের মতই আছে, আমার কাছে কমেছে বলে মনে হয়নি,।

 

এবার আসেন একটু স্পোর্টস বাইকে বসা নিয়ে একটু কথা বলি, স্পোর্টস বাইকের বসার পজিশন সব বাইকের মত না সেটা সবাই জানেন, কোমরে ব্যাথার জন্য বা বডি একটু নিচে হয়ে রাইড করা লাগে বলেই স্পোর্টস বাইক অনেকেই পছন্দ করেন না। তবে আমার ক্ষেত্রে আমি প্রথম স্পোর্টস বাইক ব্যবহারকারী হিসেবে নতুন বাইকে ৮০০ কিলো রাইড দিয়ে আমি কোমরের ব্যাথা অনুভব করিনি, শরীরে ক্লান্তি ছিল, কিন্ত কোন ব্যাথা ছিল না, তবে সেটা কিছু টা আপনার হাইটের উপর ও নির্ভর করে থাকে। আমি হাইট ৬ ফুট আমি কোমরে ব্যাথা কিংবা তেমন বড় সমস্যা ফেস করিনি, হাইট ৫ ফুট সাত এর উপরে থাকলে আশা করি আমার মত প্রব্লেম হবে না, আর যদি ৫ ফিট ৭ ইঞ্চির কম হয় লং রাইডের ক্ষেত্রে কোমরে একটু ব্যাথা অনুভব করতেও পারেন।

 

নতুন বাইক কিনলে অবশ্যই ব্রেক ইন পিরিয়ড মেন্টেইন করা লাগে আমি ১৫০০ কিলো পর্যন্ত মেন্টেইন করেছি , ব্রেক ইন পিরিয়ড আপনি ৫০০ কিলো ও করতে পারেন তার বেশী ও করতে এটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা, তবে হ্যাঁ ব্রেক পিরিয়ড এর মানে টা হলো আপনার নতুন বাইক টার প্রতি একটু কেয়ার আর অতিরিক্ত ইঞ্জিন প্রেসার যাতে না দেয়া। RPM ৬ হাজার এর উপরে ওঠানো যাবে না, বাইক এর গতি ৬০-৭০ কি. মি গতিতে আপনি রাইড করতে পারবেন, কিন্ত ৬ RPM হাজার এর উপরে না উঠানো টাই শ্রেয়, তবে আপনি যদি হাইওয়ে তে রাইড করেন তাহলে ব্রেক ইন পিরিয়ড এর কথা মাঝে মধ্যে ভুলে যেতে হবে নয়তো যে কোন সময় আপনি ও একটা দূর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। কারন হাইওয়েতে বাইক অনেক কেয়ারফুল ভাবে রাইড করতে হয়। হাইওয়ে তে স্পীড ওঠা নামা করবে এটাই স্বাভাবিক, খেয়াল রাখতে হবে ইঞ্জিনের উপরে অতিরিক্ত প্রেশার দেয়া যাবে না।

 

আমি প্রথম ৬০০ কিলো রাইড করার পর আমার বন্ধু Extreme রাইডার আরিফুল ইসলাম রনি সাজেস্ট করে ইঞ্জিন অয়েল মতুল মিনারেল ১০ / ৪০ মিনারেল সাজেস্ট করে। সাজেস্ট অনুযায়ী ৮৫০ মি.লি R15 V3 তে ব্যবহার করা লাগে। আমি ৮৫০ মি.লি মতুল ইঞ্জিন অয়েল দেই, মতুল ইউস করে আমি ভালই পারফরম্যান্স পেয়েছিলাম, অনেকে খারাপ পারফরম্যান্স ও পেয়েছেন আশা করি। পরবর্তী ১১০০ কিলো রাইড করার পর আবারো মতুল ১০/৪০ মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ইউস করি,

 

পরবর্তী ইঞ্জিন অয়েল দিয়েছিলাম ১৬০০ কিলো রাইড করার পর। লিকুই মলি ১০/৪০ মিনারেল দেই। লিকুই মলি আমি ভাল পেয়েছি লিকু মলি R15 BS6 এর জন্য বেস্ট একটা ইঞ্জিন অয়েল যারা ইউস করেন তারা হয়তো জানবেন আশা করি, ভাল খারাপ পারফরম্যান্স সবাই তো পায়, তবে লিকুই মলি আমাকে তেমন হতাশ করেনি । আমার অনেক ভাল লেগেছে ইঞ্জিনের সাউন্ড অনেক স্মুথ।

 

আমি আমার বাইকে ২০০০ পর্যন্ত মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ইউস করেছি ইউস করেছি। তবে ২০০০ আমি সিন্থেটিক ইউস করি, সিন্থেটিক আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী আপনি ইউস করতে পারেন, অনেক ৩০০০ হাজার মিনারেল ইউস করার পর দেয়, আমার কেউ ৫০০০ ইউস করার পর দেয়, এটা আপনার ইচ্ছা, যদি আপনার বাইক সবসময় রানিং থাকে তাহলে আপনি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করতে পারেন।

 

বাইক এমন একটি জিনিস যা আপনি যেমন ভালবাসবেন আপনাকে তেমনি সার্ভিস দেবে।বাইক যত্নের ক্ষেত্রে কোন অবহেলা আমার কাছে বলে মনে হয়না,কারন বাইকের খুটিনাটি কাজগুলো করতে আমি অন্যরকম আনন্দ পাই।  পরিশেষে আমি একটা কথাই বলবো, যারা স্পোর্টস সেগমেন্ট এর বাইক এর কথা ভাবছেন তারা অত কিছু সাত পাচঁ না ভেবে R15 V3 BS6 নিতে পারেন, আমার ব্যাক্তিগত মতামত সেটা, তবে খারাপ দিক তেমন একটা আছে বলে আমার মনে হয়নি তারপর ও আছে দুই একটা খারাপ দিকঃ

 

যেমন বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি আরেকটু ভাল হতে পারতো, ইন্ডিকেটর লাইট গুলো আরেকটু আপগ্রেড করা প্রয়োজন ছিল তবে R15 Indian আর Indonesian এর মধ্যে ইন্ডিকেটর লাইটের মধ্যে ভিন্নতা আছে। তাছাড়া হেডলাইট এর লুক যদি ও ভাল হলে ও আলোর ক্ষেত্রে অনেক কম, হেডলাইট এর আলো টা আরেক টু ভাল হতে পারতো, ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দামের এই বাইকে আমি মনে সব ঠিক ঠাক ই আছে।
বাইক রিভিউ কোন সময় আমি লিখিনি, তবে হ্যাঁ আজ সর্বপ্রথম আমি দেশী বাইকারের সাথে আমার লাইফের বেস্ট অনূভুতি গুলোই শেয়ার করলাম।
লিখেছেনঃ অমি 

Related Posts

error: Content is protected !!