ইয়ামাহা রাইডিং ফিয়েস্তা এবং খুলনা ভ্রমনের গল্প

২৩ অক্টোবর রাতের আমার ফোনে একটি রিং বেজে উঠলো, কল রিসিভ করে জানতে পারলাম আমাদের খুলনা যেতে হবে। শুরু হয়ে গেলো মনের মধ্যে ঈদের আনন্দ। নতুন এলাকা নতুন মানুষ তার মধ্যে আবার ইয়ামাহা বাইক ফিয়েস্তা মানেই বাইকারদের মিলনমেলা। ঘড়ির কাটা গুনতে থাকলাম।

২৫ তারিখ সকালে আমাদের যাত্রা শুরু করার কথা, তাই ২৪ তারিখ সব গোছানো সেড়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম, কিন্তু ঘুম কি আর হয়, যাই হোক সকাল হয়ে গেলো ফরিদপুর থেকে রওনা দিলাম পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশ্য, সোহান ভাই ওপারে অপেক্ষা করছে যেহেতু তার প্রথম এই পথে ভ্রমন তাই সেই ও বেশ এক্সসাইটেড ছিলো। আমার ইচ্ছা ছিলো সে ফেরীঘাটে পৌছানোর আগে আমি পৌছাবো কিন্তু সেটা আর হল না, বাইকের যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে। অতঃপর সব ঝামেলা পার করে ফেরী পার হয়ে চলে গেলাম ওপারে।

পাটুরিয়া থেকে মূলত শুরু হল আমাদের ভ্রমনের গল্প। আমাদের সাথে ছিলো Yamaha R15 V3 এবং Yamaha Fzs Fi V2, যেহেতু সোহান ভাইয়ের সাথে এটা আমার প্রথম লং রাইড তাই আমিও খুব এক্সসাইটেড ছিলাম। দুজন উঠে পড়লাম ফেরীতে খুলনার উদ্দেশ্যে।

Paturia Ferri Ghat

ফেরীর ভ্রমন সোহান ভাই খুব উপভোগ করছিলেন ব্যাপারটা বুঝছে পারলাম। ফেরীর ক্যান্টিনে হাল্কা নাস্তা শেষ করে অপেক্ষা করতে থাকলাম ঘাটে নামার। ফেরী ঘাটে এসে দাঁড়ানো কিন্তু নামা আর হল না, কারন ঘাট ছিলো একটা আর ফেরী ছিলো বেশ কিছু, মনে হল ফেরীতে না মতিঝিল বসে আছি দুইজন। টানা ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর অবশেষে ফেরী থেকে নামলাম। নেমে ঘাটের বাইপাস রোড টা ধরে এগিয়ে যেতে থাকলাম গোয়ালন্দ মোড়ের দিকে।বাইকের গতি এখন ৫০-৬০ এর মধ্যে। যারা প্রথম এই দিকে আসবেন তাদেরকে বলে দিচ্ছি ফেরীঘাট থেকে গোয়ালন্দ মোড় পযন্ত বেশ কিছু স্পীড ব্রেকার আছে,,তাই নিয়ন্ত্রিত গতিতে রাইড করবেন। গোয়ালন্দ মোড় পার হয়ে পেয়ে গেলাম আসল মজা যা বাইকাররা বেশ পছন্দ করে,ফাকা একটা সুন্দর রাস্তা আমি আর সোহান ভাই সেফটির কথা মাথায় রেখে ছুটে চললাম রাজবাড়ী রাস্তার মোডের উদ্দেশ্য, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা পৌছে গেলাম সেখানে। রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে ফরিদপুর বাইপাস রোড ধরে  এগিয়ে গেলাম ঢাকা-বরিশাল সড়ক দিয়ে ভাংগার উদ্দেশ্যে।ভাংগার ৫ কি.মি আছে আমরা ছোট্ট একটা বিরতি নিলাম।

অত:পর শুরু হল ভাংগার পথে, ভাংগা গিয়ে মাথার মধ্যে একটা চক্কর দিয়ে দিল, উন্নয়ন জনিত কারতে রাস্তা এমন ভাংগা কই যাবো বুঝতে পারলাম না,অতপর একজনের কাছে জিজ্ঞেস করে ঢুকে পড়লাম এক রাস্তায়। বিরতিহীন ভাবে ঘন্টা খানেক বাইক চালানোর পর বুঝতে পারলাম আমরা ভুল রাস্তায় প্রবেশ করেছি।কি আর করার কোন মতে বাবা গুগুলের সাহায্য নিয়ে পৌছে গেলাম গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইনের সামনে সেখান থেকে দুপুরের খাবার সেরে অপেক্ষা গোপালগঞ্জের এক ভাইয়ের জন্য। বাইকাররা খুব আন্তরিক হয় তার জেলার উপর দিয়ে গেলে সে আপনার সাথে দেখা করবে না এমনটা খুব কম হয়।আর আমিও বেশ আগ্রহী ছিলাম কারন ভাইয়ের সাথে এর আগে দেখা করবো করবো বলে করা হয়নি। কিছুক্ষন পর ভাই চলে আসলেন।

Gopalganj

ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে তার কাছ থেকে রুট শুনে সোজা বাগেহাটের রাস্তায়।বলে রাখা ভালো এই অঞ্চলের রাস্তা বেশ উন্নত তাই আপনি বেশ ভালো গতিতে আপনার বাইকটি রাইড করতে পারবেন। অনেকে জিজ্ঞেস করেন ভাই গতি কত ছিলো, আমাদের গতি ছিলো এভারেজ ১০০ তবে সেটা জায়গা বুজে। সেফটি বেপারটা সবার আগে।ওহ আমি তো বলতেই ভুলে গেছি আমরা খুলনাতে কোন হোটেল পাই নি খোজ নিয়ে,ভর্তি পরীক্ষা তাই সব হোটেল ছিলো বুক।যাই হোক আমরা তো বাইকার তাই যেখানে রাত সেখানে কাত চিন্তাটা মাথায় নিয়ে বাগেরহাট রুট ধরে ছুটে চললাম খুলনার পথে। রাস্তা উন্নত হওয়াতে রাইড করে সেই মজা পেলাম। অতপর খুলনা প্রবেশের ১০ কি.মি আগে পেয়ে গেলাম হাল্কা একটা অফরোড, বেপার না এত সুন্দর রাস্তার পর হাল্কা অফরোড গায়ে লাগে না। খুলনার ১০ কি.মি আগে একটা ছোট্ট চা বিরতি নিলাম।এই ফাকে সোহান ভাই বেশ কিছু ছবি তুলে ফেললেন।

বিরতি শেষ চলেন শুরু করি।

এখন সন্ধ্যা তাই গতিটা কমিয়ে রাইড শুরু করলাম।কিছুটা আগাতেই চোখে পড়লো খুলনার সুন্দরী সেই রূপসা সেতু।

Rupsha Bridge Khulna

১,৬০০ মিটার দৈঘ্যের সেতুটি পার করতে বেশ ভালোই লাগলো। অসাধারন এক অনুভূত।এরি মাঝে জানতে পারলাম আমাদের জিনিয়াস ফটোগ্রাফার লাম ভাই হোটেল ম্যানেজ করে ফেলেছেন। মনে শান্তি ফিরে আসলো।এবারে গন্তব্য খুলনার সোনাডাংগা বাস স্টানড। থানার পাশেই হোটেল কিন্তু তেমন ভালো কোন পাকিং নেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।যাই হোক হোটেলে উঠে ফ্রেশ হলাম।কিন্তু হোটেলের লোকদের অন্তরিকতায় মনটা ভরে গেলো। এক কাপ অসাধারন স্বাদের কফি মনটাকে চাংগা করে দিলো।রাতে আমরা ৪ জন বেরিয়ে পড়লাম। কাল থেকে ইয়ামাহা রাইডিং ফিস্তা শুরু, তাই আমাদের ৪ জনের প্রথম গন্তব্য খুলনার খালিশপুর প্রভাতী স্কুলের মাঠ,এইবার গুগল তার আসল রূপ দেখালো সাথে আমাদের লাম ভাইয়ের ভুল পথ নির্দেশনা, ৫/৬ বার রাস্তা ভুল করতে কর‍তে চলে আসলাম খালিশপুর রাইডিং ফিস্তার মাঠে।

Yamaha Riding Fiesta Khulna এসি আই মটরস তাদের অনুস্থানগুলোতে কোন কমতি রাখে না, এখানেও ঠিক তাই,বিশাল এক মাঠ চলছে প্রস্তুত।

আমরা তো বাইকার তাই কোথাও গেলে সেখানের কি বিখ্যাত সেগুলো চেক করতে কখনো ভুলি না।প্রভাতী স্কুল মাঠ থেকে শুরু হল খুলনা সিটি ঘুরে দেখা। ইউটিউব মামার সাহায্য নিলাম নিয়ে জানতে পারলাম নিউমার্কেট এলাকায় ভালো স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায় ছুটে গেলাম সেখানে। আ্হ গিয়ে মনটা ভরে গেলো অসাধারন সব স্ট্রিট ফুড দেখে।আমার কাছে যেটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটা হল এগ রোল/ডিম দিয়ে স্পেশাল রুটি ভাজা। নাস্তা শেষ করে চলে গেলাম ময়লা পোতা মোড়ে।আমাদের তানভীর ভাই(খুলনা দেশি বাইকার) আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রথম দেখা হল তার সাথে আড্ডা সাথে চা আহ্। আড্ডার ফাকে সে আমাকে এক দারুন জিনিস দেখালো এক গাছ ঘুমন্ত পাখি। চোখ জুড়িয়ে গেলো। আপনারাও দেখে নিন।

Huge Bird in Khulna City

গাছটিতে পাতার চাইতে পাখি বেশি।রাত অনেক হলো এবার হোটেলে ফিরার পালা।তখন খেয়াল করে দেখলাম আমি আমার বাইকের হাইড্রোলিক লকের চাবি আনছি কিন্তু তালা আনি নি,রাত অনেক দোকান খোলা ও পেলাম না।তানভীর ভাই নিজ বাইকের তালা খুলে আমাকে দিয়ে দিলেন।ভাই ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করবো না কিন্তু কাজটা একজন বাইকার এর দাড়াই সম্ভব।

রাতে হোটেলে ফিরে গেলাম।

২৫ অক্টোবর সকাল ১০ টা দিনটি চলেই আসলো,ইয়ামাহা রাইডিং ফিয়েস্তা খুলনা।হোটেলে চেক আউট দিয়ে বেরিয়ে গেলাম খালিশপুর প্রভাতি স্কুলের মাঠে।সোজা দেশি বাইকার এর স্টলে।

Deshi Biker Stall at Yamaha Riding Fiesta

দুপুর ২:৩০ মিনিটে শুরু হয়ে গেলো ইয়ামাহা রাইডিং ফিয়েস্তা খুলনাবাসীর জন্য। অনুষ্ঠানে ছিলো ইয়ামাহা টেস্ট রাইড, জিমখানা রাইড, ইয়ামহার পক্ষ থেকে টি শার্ট, সাংস্কৃতিক অনুস্থান সহ আরো অনেক কিছু।আস্তে আস্তে ভীড় বাড়তে লাগলো। সবাই বেশ উপভোগ করছিলো অনুসঠানটি। অনেক ভাই আসলেন দেখা করলেন দেশি বাইকার এর স্টিকার নিলেন বেশ ভালো লাগলো সব মিলিয়ে। সময়টা বেশ ভালোই কাটছিলো সবার সাথে। ইয়ামাহা রাইডিং ফিস্তা খুলনা দেখতে দেশি বাইকার ফেসবুক ফ্যানপেজটি চেক করুন। আর পুরা অনুসঠান টি বিস্তারিত দেখতে দেশি বাইকার এর ইউটিউব চ্যানেলে চোখ রাখুন।

যাই হোক ধীরে ধীরে বাইকারদের আনাগোনা বাড়ছিলো, ঠিক তখনি বিশেষ কোন কারনে প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেয়া হল সবাই বেশ হতাশ হল।কি আর করার। ২ দিনের অনুসঠানের প্রথম দিন শেষ।

শুরু হল আমাদের ৪ জনের জন্য সবচেয়ে চালিঞ্জিং সময়,হোটেল নেই কোন রাতে থাকবো কোথায়।হুট করে ঠিক করলাম মংলা যাবো,কিন্তু এতগুলো ক্যামেরা ব্যাগ নিয়ে কিভাবে সম্ভব?

কিছুক্ষনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো।ব্যাগগুলো একটি হোটেলে রেখে ছূটে চললাম মংলার পথে।

Way to Mongla

খালিশপুর থেকে খুলনার দূরত্ব প্রায় ৪০ কি.মি।ঢাকা থেকে খুলনা আসা বাইকারদের জন্য ৪০ কি.মি তেমন বড় ব্যাপার না।সারাদিনের ক্লান্তি আর রাতের অন্ধকার ভ্রমণটিকে এক নতুন রূপ দিয়ে দিলো।সব ক্লান্তি দূর হতে লাগলো যখন আমরা মংলা দিকে আগাতে লাগলাম।আশেপাশে সাগর থাকলে সেই জায়গাগুলোর প্রাকৃতিক বাতাস থেকে অন্য রকম।আহ্ মনটা জুরিয়ে গেলো।পথে একটা ছোট্ট বিরতি নিয়ে সবাই মিলে সন্দেশ খেলাম।স্বাদে অসাধারন। আপনারা যারা আসবেন ট্রাই করে দেখতে পারেন মংলা রোডের পাশেই অনেক দোকান আছে।যাই হোক রাইডিং করতে করতে পৌছে গেলাম মংলা নগরীতে।গভীর রাত হলে কারখানার আলোকবাতিগুলো মংলাকে এক নতুন রূপ দিয়েছে।

Mongla

পশুর নদীর পাড়ে গিয়ে আমাদের ২৬ তারিখের রাইড শেষ হলো।বাইকদুটো হোটেল পশুরে রেখে নদী পাড় হয়ে চলে গেলাম মংলা শহরে।খুব অবাক লাগলো এই যুগেও ৩ টাকা ভাড়া বলে কিছু আছে।হুম নৌকা ভাড়া মাত্র ৩ টাকা।

ঘাট থেকে নেমে ১ টাকা সরকারের ফি দিয়ে ঢুকে পড়লাম মংলা শহরে।একেবারেই ছোট্ট এক শহর এটি।কিন্তু মজার বেপার হল এখানে সবাই সবার নাম ধরে ডাকছে সবাই সবাইকে চিনে,একটা বার ভেবে দেখুন তো যান্ত্রিক এই জীবন ব্যবস্থায় আপনার পাশের বাসার মানুষটিকে আপনি চিনেন কিনা?তবে উপলব্ধি করতে পারলাম যেখানে যান্ত্রিক সভ্যতা কম সেখানে শান্তি আর আন্তরিকতা বেশি।আপনি যদি যান্ত্রিক জীবনের সব কিছু থেকে একটু দূরে যেতে চান আপনার অবশ্যই মংলা যাওয়া উচিত।রাতে খাবার খেতে চলে গেলাম হোটেল সুরেস্বরে।যেহেতু ঠান্ডা তাই সবাই মিলে গরম গরম ভুনা খিচুড়ি খেলাম মুখে দিতেই পেট মহাশয় বহু খুশি,এমন টেস্টি আর ন্যাচারাল রান্না সে অনেকদিন খায় না।খাওয়া শেষ করে চলে গেলাম ভ্যান ভাড়া করে ঘুরতে।

রাত ১১:৩০। চলুন ঘুরে দেখি মংলা শহর। ৪ জন উঠে পরলাম ভ্যানে। শুনলাম মংলার গল্প। পশুর নদীর পাড় দিয়ে ছূটে যাচ্ছি সাগরের দিকে,ঠান্ডা বাতাস আর এক রকম অদ্ভুত অনুভূতি। হাল্কা ভয় ও লাগতে লাগলো এক পাশে ফাকা ভূমি আরেক দিকে সাগর ঘেসা নদী গভীর রাত আমরা ৫ জন (ভ্যান আলা চাচা সহ), পরে তার মুখেই জানতে পারলাম এখানে ওমন কিছু হয় না, সবাই সবার পরিচিত। বেশ অবাক হলাম কথাটা শুনে। গভীর রাত পযন্ত ঘুরে হোটেলে ফিরে আসলাম।

চলুন এবার ঘুমানো যাক, সকালে উঠতে হবে।

সকাল ৯:০০ ফটোগ্রাফার লাম ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাংলো,সকালের নাস্তা সেরে রওনা দিলাম মংলা থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে,নদী পার হওয়ার সময় চারপাশের অপরূপ দশ্য সকালটাকে বিশেষ করে দিলো।

ঘাটে নেমে সোজা চলে আসলাম হোটেল পশুরে,যেখানে রাতে বাইক রেখে গেছিলাম।

এবার এক টানে খুলনা যেতে হবে, বেলা ১২:০০ তে ইয়ামাহা বাইক ফিস্তা (২ দিন) শুরু। খুব অল্প সময়ে খুলনা শহরের হোটেল জেলিকো তে চলে আসলাম, এখানেই গতরাতে রেখে গেছিলাম আমাদের সব জিনিসপত্র। যাই হোক হোটেল জেলিকো তে এসে আমাদের জন্য ভালোই হল, আজ রাতে থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেলো। খুলনাতে যারা আসবেন এখানে থাকতে পারেন, হোটেলটা বেশ সুন্দর।

হোটেলে এসি আই মটরস এর সব ভাইয়েরা ছিলেন, এখানে এসে জানতে পারলাম অনুষ্ঠানের সময় চেঞ্জ হয়েছে বিকাল ৫ টায় শুরু, শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো, আগে জানলে পুরা মংলা ঘুরে আসতাম। যাই হোক রেস্ট নিয়ে দুপুরের খাবার ক্ষেতে চলে গেলাম হোটেলের রেস্টুরেন্ট, খাবার শেষ করে চলে আসলাম খালিশপুর প্রভাতী স্কুলের মাঠে।

খুব কম সময়ের মধ্যেই শুরু হয়ে গেলো ইয়ামাহা বাইক ফিস্তার ২য় দিনের অনুসঠান।আর চোখের পলকেই ভরে গেলো মাঠ, এ যেনো খুলনা বাসীর মিলন মেলা। যশোর থেকে ছুটে আসলেন পরিচিত বাইকার ভায়েরা, সেই সময়ের অনুভুতিটা বলে প্রকাশ করার মতন না। খুব ভালো লাগছে সবাইকে কাছ থেকে পেয়ে।

একটা মানুষ এর কথা বিশেষ ভাবে বলতে চাই,তিনি আমাদের সাইফ সুমন ভাই, গোপালগঞ্জ এর অধিকাংশ বাইকার ভায়েরা তাকে চিনেন।সুমন ভাই টানা দুইদিন আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন সারাক্ষন, ধন্যবাদ সাইফ সুমন ভাই।চলুন এবার কিছু বিশেষ মুহূর্তগুলো এক নজর দেখে আসিঃ

Yamaha Riding Fiesta Khulna

সন্ধার পর শুরু হল সাংস্কৃতিক অনুস্থান,অনুসঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জনপ্রিয় খেলয়ার সাব্বির,এবংএসি আই মটরস এর ব্রান্ড এম্বাসিটর জান্নাত প্রিয়া।বর্নিল সাংস্কৃতিক অনুসঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হল এসি আই মটরস ইয়ামাহার বাইকিং ফিস্তা।

যাই হোক অনুসঠান শেষ করে ফিরে এলাম আমাদের হোটেলে।

হোটেলে ঢুকতেই চোখ পড়লো একটা জিনিসে,চলুন একটু দেখে নেয়া যাক,

Deshi Biker at Hotel Jalico

বর্নিল এই ফুয়ারা মনটাকে ফুরফুরে করে দিলো।চলুন এখানে কিছুটা সময় পার করে নি……

যাই হোক এবার রুমে ফিরে আসি,রাত ১০ টায় যেতে হবে আরেক অনুসঠানে।

ঘড়ির কাটায় রাত ৯ঃ৪৫ মিনিট আমি, সোহান ভাই সহ আরো দুইজন দুটি বাইক নিয়ে বের হলাম হোটেল সিটি ইন এর উদ্দেশ্য, যেখানে এসি আই মটরস এক ডিনার পার্টির আয়োজন করেছে সবার জন্য।খুলনা রেইলওয়ে স্টেশন মোড়ে আসা মাত্র দেখা হল “R Lovers” গ্রুপ সহ আরো অনেকের সাথে,অপরিচিত নগরীটাও যেনো ঢাকায় পরিনিত হল,সবাই একসাথে ছুটে চললান হোটেল সিটি ইন এর পথে।রাতের ডিনার শেষ করে ফিরে আসলাম হোটেলে।

হোটেলে এসে দেখা হয়ে গেলো এসি আই মটরস এর সব ভাই ব্রাদারের সাথে,

শুরু হল রাতের আড্ডা,আসুন আড্ডায় অংশ নেই সবাই,

আড্ডা চললো গভীর রাত পযন্ত।এবার হোটেলে ফেরার পালা।হোটেলে ফিরে শুরু হল আমার সোহান ভাই আর লাম ভাইয়ের গল্পের আসর,যেহেতু কাল পরিবহন অবরোধ তাই ঢাকা যাচ্ছি না,আড্ডা চললো ভোড় ৫ টা পর্যন্ত।

Deshi Biker and ACI Motos Ltd

আড্ডা শেষ করে ঘুমের পালা, চলেন ঘুমিয়ে পড়া যাক।

সকাল বেলা হুট করে সোহান ভাই ডেকে তুললেন বললেন ঢাকা যাবো,তখন কথাটা শুনে একটু….. কারন যে কোন লং ভ্রমন করতে একটা মানসিক প্রস্তুতি লাগে সেটা ছিল না।

অবশেষে ঢাকার পথে রওনা দিলাম। পরিবহন ধর্মঘট হওয়ার কারনে পুরা রাস্তা পেলাম ফাকা, তাই সুযোগ টাকে কাজে লাগিয়ে নিনাল।১ ঘন্টা ১০ মিনিটে চলে আসলাম গোপালগঞ্জ। এবার একটু চা পান করে নেয়া যাক।চা পান করে যাত্রা আবার শুরু হল, একটানে চলে আসলাম ভাংগা, এসে ইচ্ছা না থাকার পরও দাড়াতে হল। কেন দাড়ালাম?

বৃষ্টি আমাদের থামিয়ে দিলো। অত:পর আবার টান। টেনে চলে গেলাম সোজা দৌলতদিয়া ঘাটে, তখন প্রায় সন্ধ্যা। তাই তাড়াহুড়া করে খাবারের কাজটা সেরে ফেললাম।তারপর সোহান ভাইকে ফেরিতে তুলে দিয়ে আমি চলে আসলাম নিজ গন্তব্যে।

Go back from Khulna

এভাবেই শেষ হলো আমাদের ইয়ামাহা বাইক ফিয়েস্তা আর খুলনা ট্যুর।

পরিশেষে একটা কথায় বলতে চাই এসি আই মটরস যে কাজগুলো করে যাচ্ছে যে কাজগুলো করে যাক পুরো দেশ জুড়ে। এভাবেই একদিন সকল জেলার বাইকার সকল জেলার সাথে একত্রিত হতে পারবে।

এবার আসি একটু ভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়েঃ

১। ভাইয়া গতি কত ছিলো?

উত্তরঃগতি ছিলো রাস্তা এবং অবস্থার অনুপাতে, আমার সর্বোচ্চ গতি ছিলো ১১৫

২। ঢাকা খুলনা রোডের কি অবস্থা?

উত্তরঃঅসাধারন রাস্তা।

★★★রাস্তা বুঝে বাইক চালান,রাস্তা যেমনি হোক আপনি নিয়ন্ত্রন করতে পারেন ঠিক ততটাই গতি তুলুন★★★

ধন্যবাদ

লিখেছেনঃ আশিক মাহমুদ

Related Posts

error: Content is protected !!