করোনা পরিস্থিতিতে মোটরবাইক তুলনামূলক নিরাপদ কেন? (৭টি কারণ)

বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্ব এই মূহুর্তে করোনা মহামারীতে আক্রান্ত। দিনকে দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্তের হার। দেশের এই সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে গত মার্চের ২৬ তারিখে (২০২০ ইং) বাংলাদেশে সরকার প্রথম সারা দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়। টানা ২ মাসেরও বেশি সময় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকে দেশের বেশিরভাগ মানুষ। যেহেতু এটি একটি অনির্দিষ্টকালের মহামারী, সুতরাং এতটা দীর্ঘ সময়ের জন্য লকডাউন থাকলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হবে এই ভেবেই হয়তো সরকার আবার লকডাউন উঠিয়ে নেয় এবং মানুষকে সামাজিক দূরত্ব মেনে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশনা দেয়। আর একটি উন্নয়নশীল দেশের সব মানুষ চাইলেও সারা বছর ঘরে বসে খাদ্য, বস্ত্রের চাহিদা মেটাতে পারে না।

এই অবস্থায় ব্যাক্তিগত যানবাহনই সবচেয়ে নিরাপদ। যদিও সবার আর্থিক সচ্ছ্বলতা সমান নয় এবং অনেকের জন্য গণপরিবহণই একমাত্র বাহন, তাদের এই মূহুর্তে ১ ধাপ বেশি সর্তকই থাকতে হবে। তবে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী একটি গাড়ি অথবা সাধ্যের মধ্যে একটি মোটরসাইকেল থাকলে সেটি হতে পারে আপনার নিরাপত্তার কারণ।

আমাদের দেশে গাড়ী এবং মোটরসাইকেলের উপর ভ্যাট, ট্যাক্সের পরিমাণও অনেকটা বেশি, যা সাধারন মানুষের জন্য আরেকটি প্রতিবন্ধকতা। সোশাল মিডিয়ায় মোটরসাইকেলিস্টদের কমিউনিটিগুলোতে ইদানিং এই ভ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

গুগল ট্রেন্ডস-এর ডাটা এনালাইসেস করে দেখা গেছে, চলতি মাসে বাজেট মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে। ১০০, ১১০ এবং ১২৫ সিসি এ জাতীয় কমিউটার বা স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেল সার্চ ভলিউমে বেড়েছে কয়েকগুণ। দেশী-বাইকার ডট কমেও স্ট্যান্ডার্ড বাইকের প্রতি মানুষ বেশি আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে।

সেরা ৫টি ১২৫ সিসি মোটরসাইকেল

সুতরাং মানুষ তার সাধ্যের মধ্যে একটি ব্যাক্তিগত যানবাহণ খুঁজছে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে। আর আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব, যে ৭টি কারণ অন্যান্য পরিবহণের তুলনায় ব্যাক্তিগত মোটরসাইকেল নিরাপদ।

১। নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলা

বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, নিজেকে নিরাপদ রাখতে অন্যের থেকে ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্বে রাখতে হবে। বাস, ট্রেন কিংবা যে কোন গণপরিবহণে এই দূরত্ব মেনে চলা একেবারে অসম্ভব। যেখান ব্যাক্তিগত মোটরবাইক থাকলে এই ক্ষেত্রে আপনি অনেকটাই নিরাপদ।

২। ব্যাক্তিগত ব্যবহার

যেহেতু আপনার মোটরবাইক শুধুমাত্র আপনি নিজে ব্যবহার করবেন, সুতরাং এটি অন্য কারো সংস্পর্শে যাবে না। আর এই মূহুর্তে অপরিচিত কাউকে লিফট দেয়া কিংবা রাইড শেয়ার থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩। সহজে ওয়াশ করা যায়

ব্যাক্তিগত যান ব্যবহার করলেও আপনাকে অবশ্যই তা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তবে মোটরবাইক ওয়াশ করা তুলনামূলক অনেক সহজ। পরিষ্কারের সময় ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করবেন এবং নিজের নাক, মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে রাখবেন।

৪। হেলমেটের উপকারিতা

অবশ্যই ফুলফেস হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু করোনা ভাইরাস নাক, মুখ এবং চোখ ইত্যাদি অঙ্গের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে, সুতরাং একটি ফুলফেস হেলমেটের সাথে মাস্ক ব্যবহার করলে আপনি অনেকটা নিরাপদ। হাফফেস এবং জকি হেলমেট এক্ষেত্রে কোন কাজে আসবে না। আর অনাকাঙ্ক্ষিত কোন দূর্ঘটনায় নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্যও একটি সার্টিফাইড ফুলফেস হেলমেট পড়া জরুরী।

Full Face Helmet

একটি ফুলফেস হেলমেট

৫। গ্লাভস এবং জুতার উপকারিতা

গ্লাভস এবং জুতা পড়েই সকলের বাইক রাইড করা উচিত। সচেতন মোটরসাইকেলিস্টরা সব সময় গ্লাভস এবং জুতা পড়ে থাকে। এই সময় হাত এবং পা-কে সুরক্ষিত রাখা খুবই জরুরী। কারণ হাত যে কোন মূহুর্তে নাক, মুখ, চোখ ইত্যাদির সংস্পর্শে আসে। আর এই করোনা ভাইরাস যে কোন পৃষ্ঠদেশে দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকে, তাই জুতা ব্যবহার করলে সেটি সরাসরি আপনার পায়ের সাথে লেগে যায় না।

সুতরাং স্যান্ডেলের তুলনায় জুতা নিরাপদ এবং ফুল গ্লাভস ব্যবহার করা জরুরী। ব্যবহার পর নিজের বাসায় কিংবা ঘরে প্রবেশের সময় অবশ্যই এগুলো নিরাপদ জায়গায় রেখে দেবেন।

৬। রাইডিং জ্যাকেট

সিটি রাইডের সময় পাতলা ভেস্ট পরিধান করা যেতে পারে কিন্তু লং রাইডে রাইডিং জ্যাকেট পরা উচিত। আর ইদানিং লং জার্নিতেও গণপরিবহণের তুলনায় মানুষ ব্যাক্তিগত যানবাহন বেশি ব্যবহার করছে। প্রাইভেট কারের সাথে বেড়েছে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচলের পরিমাণ। এসব জার্নিতে সব দিক থেকে নিজেকে সেফ রাখতে রাইডিং জ্যাকেট ভাল ভূমিকা পালন করতে পারে।

৭। নিরাপদ জায়গায় অবস্থান

মোটরবাইক যেহেতু একটি ছোট আকারের যান, তাই মানুষের কোলাহল বা ভীড় এড়িয়ে আপনি এটিকে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় সহজে অবস্থান করতে পারবেন। আর এই ক্ষেত্রে আপনি অন্যান্যদের তুলনায় অনেক স্বাধীন। আর মোটরসাইকেলে নিয়ে জ্যামে পড়ার সুযোগ তুলনামূলক অন্যান্য যানবাহনের থেকে কম।

তবে শুধু মোটরসাইকেল ব্যবহার করেই নিজেকে নিরাপদ ভাবা যাবে না। অন্যান্য সকল স্বাস্থ্য বিধি সকলকে মেনে চলতে হবে। আর প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়াই এই মূহুর্তে উত্তম।

চেষ্টা করুন ঘরে থাকার, বাইরে বের হলেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন।

Related Posts

error: Content is protected !!