Yamaha Fascino টেস্ট রিভিউ (সিটি এবং হাইওয়ে রাইডিংয়ের জন্য চমৎকার স্কুটার)

বিশ্বের নামকরা মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী জাপানী প্রতিষ্ঠান ইয়ামাহা স্কুটারের মার্কেটে টিকে থাকতে একের পর এক নিয়ে আসছে নানান নতুন ডিজাইন, ফিচার সমৃদ্ধ এবং যুগোপযোগী ভিন্ন মডেলের স্কুটার।  আর বিগত কয়েক বছরে ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে ইয়ামাহা সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যে স্কুটিটি বিক্রি করেছে তা হচ্ছে এই Yamaha Fascino.

গত সপ্তাহে বাংলাদেশে ইয়ামাহার ডিস্ট্রিবিউটর এসিআই মোটরস লিমিটেড লঞ্চ করেছে Yamaha Fascino এবং Yamaha Ray ZR. আমরা টিম দেশি-বাইকার এই স্কুটার দু’টি চালিয়েছি ২৫০০ কিলোমিটারের বেশি। ইয়ামাহা ফ্যাসিনো নিয়ে আমরা ঘুরেছি দক্ষিনে টেকনাফ আর উত্তরে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। সব মিলে স্কুটারটি কেমন লাগলো? কি কি ফিচার আছে এতে? পারফর্মেন্স কেমন? লং ট্যুরের অভিজ্ঞতা কেমন? ইত্যাদি সব কিছুর উত্তর মিলবে আমাদের এই রিভিউটিতে।

এর প্রতিদ্বন্দ্বী স্কুটারগুলোর তুলনায় এটি দেখতে খানিকটা আলাদা। তবে প্রথম দর্শনে অনেকে এটিকে ভ্যসপার কোন মডেল ভেবে ভূল করতে পারেন। Vespa SXL এবং Yamaha Fascino-এর লুকসে খানিকটা মিল পাওয়া যায়। ৩৬০ ডিগ্রী আঙ্গেলে Fascino-কে দেখলে বোঝা যায় কতটা সুনিপূর্ণ এর ডিজাইন কন্সেপ্ট। কালার-কম্বিনেশন, নিখুঁত ফিনিশিং, ক্রোমিয়ামের প্রলেপ, 3D ফ্যাসিনো আর ব্লুকোর লগো এর সৌন্দর্য্যকে পরিপূর্ণতা দান করেছে। সব মিলে সাধারণের মাঝে অসাধারাণ ডিজাইনের একটি স্কুটার Yamaha Fascino 110. সবুজাভ নীল (সায়ান), লাল, সাদা, কোবাল্ট এবং কালো এই ৫টি কালার বর্তমানে মার্কেটে এভাইলেবল।

Yamaha Fascino review

Yamaha Fascino-তে ব্যবহার করা হয়েছে ১১৩ সিসি’র এয়ার-কুলড ব্লু-কোর ইঞ্জিন, যা সর্বোচ্চ ৭ বিএইচপি শক্তি এবং ৮.১ নিউটন-মিটার টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ভি-বেল্ট অটোমেটিক গিয়ারবক্স। তাই অন্যান্য স্কুটারের ন্যায় এটিতেও গিয়ার শিফটিংয়ের প্রয়োজন নেই। ইঞ্জিন স্টার্টের জন্য সেলফ এবং কিক-স্টার্ট পদ্ধতি রয়েছে। ০ থেকে ২৫০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত রাইডের সময় যে জিনিসটি আমাদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা হচ্ছে এর সাউন্ড এবং স্মুথনেস, যা এক কথায় অসাধারণ। ইঞ্জিন স্টার্টের পর থেকে টপস্পীড পর্যন্ত এর ইঞ্জিন একই রকম স্মুথলি কাজ করে আর কোন ধরনের ভাইব্রেশন অনুভূত হয় না। সিটি এবং হাইওয়ে উভয় অবস্থায় কখনো ইঞ্জিন অভারহিট হয়নি। লং ট্যুরের জন্যও স্কুটিটি আপনাকে দারুণ ফিডব্যাক দেবে। টানা ১২ ঘন্টায় (২-৩ টা শর্ট ব্রেক দিয়ে) আমরা স্কুটারটি চালিয়েছিলাম প্রায় ৫০০ কিঃমিঃ। এই লং রাইডের অভিজ্ঞতা ঠিক যেভাবে ব্যক্ত করা যায় তা হচ্ছে, রাইডার হাঁপিয়ে গেলেও ফ্যাসিনো যেন একটুও হাঁপায়নি।

Fascino-এর হেডলাইটটি বেশ চমৎকার। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ১২ ভোল্টের হ্যালোজেন হেডল্যাম্প যা পর্যাপ্ত আলো প্রদান করে। সিটি এবং হাইওয়ে রাইডিংয়ের জন্য এটি যথেষ্ট বলে মনে করি। স্কুটারটির আকর্ষণের অন্যতম দিক হচ্ছে এর টেইললাইট এবং ব্যকইন্ড ডিজাইন যা এর সৌন্দর্য্যতে বাড়তি মাত্রা দান করেছে। সামনে এবং পিছনে ১০ ইঞ্চি শীট মেটাল বিশিষ্ট হুইলে ব্যবহার করা হয়েছে টিভিএস 90/100-10 টিউবলেস ট্যায়ার।

আন্ডারবোন চেসিস সমৃদ্ধ এই স্কুটারটির সামনে টেলিসকোপিক এবং পেছনে ইউনিট সুইং সাসপেনশন ব্যবহৃত হয়েছে। পিছনের সাসপেনশনের পারফর্মেন্স ভাল তবে ভাঙ্গা, উঁচু-নিচু রাস্তায় সামনের সাসপেনশন খুব একটা কাজ করে না। তাই সিটি এবং হাইওয়ে রাইডিংয়ের  জন্য স্কুটারটি পারফেক্ট বলে মনে হয়েছে। ইয়ামাহা বরাবরই ব্রেকিংয়ের ব্যাপারে অধিক সচেতন। সামনে এবং পিছনে ১৩০ মিঃমিঃ ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে যা দারুণ কার্যকরী আর তাই ডিস্ক ব্রেকের অভাব অনুভূত হয় না। টপ স্পীড পেয়েছি ৯৫ কিঃমিঃ/ঘন্টা আর সে অনুযায়ী এর ব্রেকিংকে একশতে একশই দিতে হবে।

এর সিটটি বেশ প্রসস্ত আর তাই রাইডার এবং পিলিয়ন উভয়ের জন্য বেশ আরামদায়ক। গ্রাবরেইলটি বেশ আকর্ষনীয় আর শক্তিশালি। দীর্ঘক্ষণ রাইডের জন্য এর সিটিং পজিশনটি যথোপযোগী। যে কোন উচ্চতার রাইডারের জন্য এই স্কুটারটি উপযোগী। সিটের নিচে অবস্থানরত এর ফুয়েল ট্যাংকটি ৫.২ লিটার পর্যন্ত ফুয়েল ধারণ করতে করতে পারে। ১০৩ কেজি ওজন বিশিষ্ট এই ফ্যাসিনোর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৩০ মিঃমিঃ এবং সিট হাইট ৭৭৫ মিঃমিঃ। আমরা এর মাইলেজ পেয়েছি ৪৫ কিঃমিঃ/লিটার। এর টার্নিং রেডিয়াস বেশ ওয়াইড যা আপনাকে সিটি রাইডে অনেক সাহায্য করবে।

ফাসিনো-এর ড্যাশবোর্ডটি এনালক তবে প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো যেমন স্পীডোমিটার, ওডোমিটার, ফুয়েলগেজ ইত্যাদি রয়েছে। হ্যান্ডেলবারটি প্রয়োজনীয় রাইডিং অপশন সমৃদ্ধ হলেও হর্ণের সাউন্ড পর্যাপ্ত নয়, যা আরো জোড়ালো হওয়া উচিত ছিল। এর লুকিং গ্লাসটি প্রশস্ত রেয়ার ভিউ দেয় যা আপনাকে সেফ রাইডিংয়ে চমৎকার সাপোর্ট দেবে।

Yamaha Fascino test review

স্কুটারটি যেমন আরামদায়ক ঠিক তেমনি রয়েছে বাড়তি কিছু যেমন এর সিটের ঠিক নিচে থাকছে ২১ লিটার সম পরিমাণ বৃহৎ স্টোরেজ সুবিধা, রাইডারের হাতের কাছে ছোট স্টোরেজ, ফুটবোর্ডে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বহনের জন্য রয়েছে হুক ইত্যাদি।

সব মিলিয়ে সিটি এবং হাইওয়ে রাইডের জন্য স্কুটারটিকে চমৎকার বলতেই হবে। গত ১৯ শে আগষ্ট, ২০১৮তে বাংলাদেশে লঞ্চ হয়েছে এটি যার দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৫০,০০০ টাকা। বর্তমানে শুধুমাত্র ইয়ামাহা থ্রি-এস সেন্টার (তেজগাঁও) এবং ক্রিসেন্ট ইন্টারপ্রাইজে (মিরপুর) স্কুটারটি পাওয়া যাবে। আশা করা যায়, অতি শিঘ্রই দেশে ইয়ামাহার সকল ডিলার পয়েন্টেও স্কুটারটি পাওয়া যাবে।

Related Posts

error: Content is protected !!