Yamaha Fazer ৮০০০কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- মাশুক তূর)

আসসালামুআলাইকুম, আমি মাশুক তূর, পেশায় একজন চাকুরীজীবি।

যেহেতু ঢাকাতেই থাকতেই হয় আর অফিসের কাজে এদিক সেদিক যেতে হয় এর জন্য আগে সি এন জি, বাস বা উবার ব্যবহার করতাম। যেটাতে আমার জন্য যেমন এক্সপেনসিভ তেমন সময় নষ্ট কেননা এই জ্যামের শহরে আসলে বাস বা গাড়িতে করে গিয়ে সময় মতো কাজ করাটা চ্যালেঞ্জিং। তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করে একটা বাইক কিনবো ভাবলাম। আমার অবশ্য প্রথম থেকেই পছন্দ ছিলো Yamaha Fazer, তার পরে নিয়েই নিলাম। এখন পর্যন্ত আমি বাইকটি প্রায় ৮০০০কিঃমিঃ চালিয়েছি। এই দীর্ঘ সময় চালানোর মাঝে আমার সকল অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি আজ।

আমি অনলাইনে একটা জিনিস খেয়াল করেছি এই ফেজার বাইকের নেগেটিভ রিভিউ নেই বললেই চলে, তবে এই বাইকের ফ্যান অনেক। অবশ্য এটাকে কম্ফোর্ট কিং ও বলা হয় এখন এটার মানে বুঝতেছি।

প্রথমেই আসি এই বাইকের লুক নিয়ে, এটি একটি স্ট্যান্ডার্ড কমিউটার বাইক হওয়া সত্যেও এর লুক অনেক এগ্রেসিভ এবং এর লুকে আলাদা নতুনত্ব বাড়িয়ে দেয় এর সেমি ফেয়ার্ড লুক। এর ডুয়াল হেড লাইট লুক একে স্পোর্টস লুকের ফিল দেয়। ওভারঅল এর লুক নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।

এর পর আসবো এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স নিয়ে- এটি ১৪৯ সিসির কমিউটার বাইক থেকে যেরকম ইঞ্জিন পারফরমেন্স পাওয়ার কথা আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক ভাল পাচ্ছি। ইঞ্জিন পারফরমেন্স নিয়ে কোন অভিযোগ না থাকলেও একটা জিনিস আমার কাছে একটু খারাপ লেগেছে সেটি হলো এর এক্সিলারেশন। এর ইনিশিয়াল পিকাপটা অনেক কম যেটা হাইওয়ে রাইডে আমার কাছে বড় ইস্যু মনে হয়। আমার মনে হয় এটা আর একটু বেশি হলে ভাল হতো। এছাড়া এর ইঞ্জিন নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। এর ইঞ্জিন সাউন্ড অনেক ভাল পাই এর অন্যতম কারণ হচ্ছে শুরু থেকেই আমার বাইকে Shell Advance 10W40 ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করে আসছিলাম। আর শেল মানেই স্মুথ ইঞ্জিন পারফম্যান্স। বাইকের ইঞ্জিন পারফরম্যান্স অনেকটাই নির্ভর করে ইঞ্জিন অয়েলের উপর। সুতরাং রিকমান্ডেড গ্রেড মেনে ভাল মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করাই উত্তম।

যদিও আমি স্পিডিং পছন্দ করি না, তবে টপ চেক করে আমি ১২৪কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়। তবে এটাকে কোনো ভাল খারাপ বলবো না কেননা আমি বলবো আপনি ঠিক যে স্পিডে বাইকটা নিজের কন্ট্রোল এ আনতে পারেন সেটাই আপনার টপ রাখুন, যত গতি তত ক্ষতি।

এবার বলবো বাইকটির মাইলেজ নিয়ে, আমরা বাইক কেনার আগে যে জিনিসটা খেয়াল করি সেটি হচ্ছে বাইকের মাইলেজ। যেহেতু এটিতে FI ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে সেহেতু এর মাইলেজ নিয়ে চিন্তা নেই। আমি প্রোপার মেইন্টেইন করে হাইওয়ে সিটি মিলিয়ে এভারেজ ৪২-৪৩ মাইলেজ পাচ্ছি। এর মাইলেজ আমি সন্তুষ্ট।

এর পরে যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো বাইকের ব্রেকিং নিয়ে। যে ইস্যু টা সবচেয়ে বড়। গতি তোলা বা টোপ স্পিড দিয়ে বাইকের ভাল খারাপ বলা বোকামী, একটা বাইকের ব্রেকিং এবং ব্যালেন্স যতোটা ভাল হবে সেই বাইকটি ততোটাই ভাল। ইয়ামাহা তাদের ব্রেকিং নিয়ে বরাবরই সুনাম অর্জন করেছে তাই ঠিক সেই মতেই ফেজারে এর ব্রেকিং এবং ব্যালেন্সিং অসাধারণ। আমি বেশ কয়েকবার ইমার্জেন্সি ব্রেক করলেও আমার কাছে তেমন কোনো সমস্যা হয় নি। তাই এর ব্রেকিং নিয়ে আমি ১০/১০ দিবো।

বাইকটির সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক। দীর্ঘসময় লং রাইডের ফলে শরীরে কোনো সমস্যা মনে হয় আমি বেশ কয়েকবার এটি নিয়ে লং ট্যুর দিয়েছি। তবে একটা জিনিস আমি ফিল করেছি এর সিট টা বেশ হার্ড যেটা লং ট্যুরে একটু সমস্যা মনে হয়েছে আমার কাছে।

বাইকটির বিল্ট কোয়ালিটি তেমন কিছুই বলার নেই এক কথায় অসাধারণ। এর বডি পার্টস আমার কাছে বেশ টেকশই মনে হয়েছে।

সবশেষে যদি এর সেলস আফটার সার্ভিস নিয়ে বলি, তাহলে বলবো আমার মনে হয় সেলস আফটার সার্ভিসে এসিআই মটরস অনেক এগিয়ে থাকবে, কেননা তারা বাইকারদের চাহিদা বুঝে। এখন অব্দি যেকোন সমস্যা বা সার্ভিসে আমি এসিআই এর কাছে কোনো খারাপ সার্ভিস পাই নি।

এই ছিলো আমার ৮০০০ কিঃমিঃ রাইডিং অভিজ্ঞতা।

 

লিখেছেনঃ মাশুক তূর 

 

Related Posts

error: Content is protected !!