Honda X-Blade এর মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- সাজ্জাদ মোস্তফা)

আমি সাজ্জাদ মোস্তফা হিমেল, আজ আমি আমার বাইক Honda X Blade 160 ৫০০০+ কিলোমিটার রাইড এর অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনাদের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। আমি ঢাকা তেজগাঁও শিল্প এলাকাতে থাকি, পেশায় একজন ব্যাবসায়ী ।

 

আমার জীবনের প্রথম বাইক Bajaj Platina 100cc মডেল ২০১০। বাইকের প্রতি দুর্বলতা ছিল অনেক কিন্তু চালতে পারতাম না সাহসের অভাবে। ২০১৭ সালে হঠাৎ এক ছোট ভাই একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০টা বাজাজ প্লাটিনা ১০০ অকশনে কিনে আনে । তখন ওর কাছ থেকে আমি একটি বাইক কিনি শখের বশে আমার ছোটবেলার বন্ধু রাসেল আমাকে বাজাজ প্লাটিনা ১০০ দিয়ে চালানো শিখায় ও সাহস দেয় যার কারনে আমি বাইক চালানো শিখা হয়।

 

তারপর প্রায় ২ বছর আমি বাজাজ প্লাটিনা ১০০ ব্যবহার করি আর বাইকের প্রতি আমার ভালবাসা আরও বাড়তে থাকে। যখন জানতে পারি বাংলাদেশে হোন্ডা এক্স ব্লেড বাইক আসতেছে তখন আমি আমার বাইক বিক্রি করে বেশকিছু দিন বাইক ছাড়া ছিলাম নতুন Honda X Blade 160 এর অপেক্ষায়। তখন সময় সুযোগ পেলেই বন্ধুদের বাইক চালাতাম । বাইকিং এর প্রতি অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে, আসলে বাইকিং ভালোবাসার কারন বলে বুঝানো যাবে না । তারপরও বাইক টাই ভালবাসা আমার, নিজ স্বাধীন ভাবে যে কোন জায়গাতে যাওয়া যায় এবং সময় কম লাগে।

 

আসলে হোন্ডা এক্স ব্লেড বাইকটা যখন পাশের দেশ ভারতের বাজারে চলে আসে তখন আমি ইন্টারনেটে ইউটিউবে বাইকটির বিভিন্ন ভিডিও এবং রিভিউ দেখি আর তখনই আমার ভালো লেগেছিল। কিন্তু বাংলাদেশে আসবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম।

 

প্লাটিনা বাইকটা গতবছর শেষের দিকে বিক্রি করে Honda CB Hornet 160R বা Bajaj Pulsar এই ২ টি বাইকের মধ্যে কোনটা নিব ভাবছি । তখন দেখি হোন্ডা এক্স ব্লেড বাংলাদেশে আসবে। তখন আর কিছু না ভেবে ০৮/১২/২০১৯ কিনে ফেলি পছন্দের বাইকটি ।

 

এই বাইকের সবকিছু আমার কাছে ভালো লেগেছে । হোন্ডা এক্স ব্লেড বাইকটি খুব ভালো আর সেটা আগে থেকে পছন্দ করে রেখেছিলাম তাই বাংলাদেশে আশার পর আর কিনতে দেরি করিনি। এর লুক আমার বেশি পছন্দ। এক দেখায়ই ভালো লেগেছে।

 

Honda X Blade 160 বাইকটি আমি ১,৭২,৯০০/- টাকা দিয়ে কিনেছি। হোন্ডার অথোরাইজড ডিলার পয়েন্ট WingsBD বাংলামটর এর শো রুম থেকে। আসলে নতুন কিছু কেনার অনুভুতি বলে বোঝান কঠিন। অসাধারন এক অনুভুতি ছিল সেদিন। আমার কাজিন ও আমার বন্ধুরা বাইক কেনার সময় আমার সাথে ছিল।

 

শোরুমে থেকে প্রথম বাইক স্টার্ট দেই তখন মনে অন্য রকম একটা ফিল পেলাম। এক কথায় অসাধারন অনুভুতি। বাইকটা নিয়ে রাস্তায় বের হলাম মানুষ কৌতুহলী হয়ে দেখছে আর বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। বেশ ভালোই লাগতে ছিল বাইকের বিভিন্ন দিক গুলো নিয়ে সবার সাথে আলাপ আলোচনা করতে।

 

প্রথমত এর এগ্রেসিভ লুকস, রোবটিক ফেস, এলইডি হেডলাইট, Always Headlight On (AHO) টেকনোলজি, ডিজিটাল মিটার, গিয়ার এন্ডিকেটর, লম্বা সিট,এল এডি ব্যাক লাইট এসব জিনিস আমাকে মুগ্ধ করেছে । বাইকটিতে আছে ৫ টি গিয়ার, ১৬০ সিসির একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, ডিক্স ব্রেক, টিউবলেস মোটা চাকা, এলইডি পাওয়ারফুল হেডলাইট , আকর্ষনীয় ডিজিটাল মিটার, নতুন লুকস ঠিক যেমনটা আমার দরকার এবং পছন্দ ছিল। বাইকটিতে একটা অসাধারন অনুভুতি পাই। প্রতিদিন আমার কাছে বাইকটি নতুন এর মত মনে হয়। মনে হয় যে আজকেই বাইকটি কিনে আনলাম ।
আমার এই ৫০০০+ কিলোমিটার রাইড করার মধ্যে ৪ বার ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি WingsBD থেকে। চ্যাসিসে শব্দ করতো সার্ভিস সেন্টারে বলার পর ওটা গ্রিজ দিয়ে ঠিক করে দিয়েছে। এখন আর শব্দ করে না। এছাড়া এখন পর্যন্ত কোন প্রব্লেম অনুভব করিনি। প্রতিবার সার্ভিস এর শেষে একটা করে ফ্রি ওয়াস করে দেই সার্ভিস সেন্টার থেকে। ব্রেকিং পিরিয়ডে ৪০০০/৫০০০ RPM এ ৪৫-৫৫ কিলোমিটার স্পীডে ব্রেকিং মেইনটেইন করে চালাতাম, তখন ৫০+ কিলোমিটার প্রতি লিটারে মাইলেজ পাই ।
ব্রেকিং প্রিয়ড শেষ করার পরে ৬/৭ হাজার আরপিএম এ ৫০/৭০ কিলোমিটার গতিতে ৪৫+ মাইলেজ পাচ্ছি এভারেজ। এই বাইকে মাইলেজ নিয়ে আমার কোন প্রকার অভিযোগ নেই। বেশ ভালো একটা মাইলেজ পাচ্ছি। বাসায় এসে আমি প্রতিদিন রাতে বাইকটি ভালো ভাবে মুছে রাখি। প্রতিদিন সকালে বাইক কিক দিয়ে স্টার্ট দিয়ে ২-৩ মিনিট এমনি চালু করে রাখি। প্রতি ১০ দিন পরপর বাইক ওয়াশ করি (বৃষ্টির দিনের হিসেব অন্য)। প্রতি সপ্তাহে চাকার হাওয়ার প্রেশার চেক করি। মাসে একবার চেইন পরিষ্কার ও লুব ব্যবহার করি।

 

প্রথম ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করেছি ৩৯০ কিলোমিটার হবার পর। এরপর ২য় ইঞ্জিন অয়েল ৮০০কিলোমিটারে পরিবর্তন করি এবং সর্বশেষ ৩য় ইঞ্জিন ওয়েল ১৭৫০কিলোমিটারে পরিবর্তন করেছি। হোন্ডার রিকমেন্ডেট 10W30 মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করছি। ৪০০০ কিলোমিটার চালানো পর্যন্ত 10w30 মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করেছি। এখন 10w30 গ্রেডের ফুল সেন্থেটিক ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করছি।

 

বাইকের স্টক কোন কিছু বদলায়নি এখনো। মডিফাইর মধ্যে শুধু শাড়ি গার্ড, পা দানি ও সাইলেন্সার গার্ড লাগিয়েছি। কিছু স্টিকার মডিফাই করেছি বাইকের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি বেশি স্পিডে বাইক চালাই না তারপরও এখন পর্যন্ত ৯৫কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা স্পিড তুলেছি ।
বাইকটির ভালো দিকঃ
# এগ্রেসিভ লুকস,
# রোবটিক ফেস হেডলাইট,
# ফুল ডিজিটাল মিটার এবং গিয়ার ইন্ডিকেটর,
# লম্বা সিট এবং কম্ফোর্ট সিটিং পজিশন,
# হ্যাজার্ড লাইট অপশন।

 

বাইকটির খারাপ দিকঃ
# সামনের চাকা ৮০/১০০ খুব বেশি চিকন
# সাসপেনসনে কট কট শব্দ করা। যদিও এখন সার্ভিস সেন্টার থেকে ঠিক করে দিয়েছে,
# কালার এর কোয়ালিটি আর একটু ভালো হতে পারতো,
# ইঞ্জিন কিল সুইচ নাই,
# পিছনে ডিস্ক ব্রেক থাকলে আরও ভালো হতো।

 

বাইক নিয়ে সময়ের অভাবে লং ট্যুরে এখনও যাওয়া হয়নি। হাইওয়ের পার্ফরমেন্সটা তখন ফিল করতে পারবো । আপাততঃ সিটি রাইড ই বেশি হচ্ছে।

 

এখন পর্যন্ত বাইকটি আমি ৫০০০+ কিলোমিটার চালিয়েছি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে । এর ব্রেকিং ও কমফোর্ট আমার বেশ ভালো লেগেছে। ১৬০ সিসি সেগমেন্টের বাইকের মধ্যে হোন্ডা এক্স ব্লেড কে মাইলেজ এর বস বলা যায়। বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড কিছু কিছু ছোট খাটো বিষয়ে আর একটু ভালো করতে পারতো।

 

শখ ও বাইক ব্যবহার করে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। তাই বাইক নিয়ে স্বাধীন ভাবে সব জায়গাতে যাওয়া যায় কোন রকম ঝামেলা ছাড়া । সবশেষ আমার মতে পয়সা উশুল বাইক হচ্ছে এই Honda X Blade 160 বাইক। কম্ফোর্ট বেশি মাইলেজ স্টাইল এর মধ্যে বাইক কিনতে চাইলে এক্স ব্লেড ই হবে আপনার জন্য পারফেক্ট একটি বাইক।
ধন্যবাদ, আর সবাই সাবধানে এবং হেলমেট পড়ে বাইক রাইড করবেন।

Related Posts

error: Content is protected !!