আসসালামুআলাইকুম, আমি সৌরভ। আজ আমি বাজাজ ডিসকোভার ১২৫ ডিক্স বাইক নিয়ে ২০০০০ কিলোমিটার রাইডের ছোটখাটো অভিজ্ঞতার একটা রিভিউ দিবো।
বাজাজ এর ডিসকোভার সিরিজের ১২৫ সিসি ডিক্স ব্রেক বাইকটি মূলত স্বল্প বাজেটে মোটামুটি বেষ্ট একটা বাইক। এই বাইকে স্বল্প থেকে দীর্ঘ রাইড করা যায় অনায়াসেই। সব ধরনের বয়সের মানুষের সাথেই এই বাইকটি মানায়। বিশেষ করে যারা খুব একটা গতি পছন্দ করে না তাদের জন্য বলা যায় এই বাইকটাই বেটার। তাছাড়া এই বাইকে এন্টি স্কীড ব্রেকিং সিষ্টেম আপনাকে ব্রেকিং এর একটা ভালো অভিজ্ঞতা দিবে। এই বাইকটি দিয়ে আমি ৭ মাসে ২০০০০ কিলো রাইড করেছি। এই ২০০০০ কিলো রাইডে আমাকে কখনো হতাশ করেনি। লুকিং, মাইলেজ, স্পেয়ার-পার্টশের সহজলভ্যতা ইত্যাদি কারণে বাইকটি নিয়ে কখনো ঝামেলায় পড়তে হয় না। আর বাইকের বাজেটের দিকে দেখলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় আমার বাজেটের মধ্যে সেরা ছিল বাজাজ ডিসকোভার ১২৫ সিসি ডিক্স ব্রেক বাইকটি।
আমার প্রথম বাইক এটা। তাই এই বাইকে আমার আবেগ, অনুভূতি কখনোই কম ছিল না।আমার বাইকটা কালো ও লাল রঙ্গের সংমিশ্রণের একটা অসাধারণ গ্রাফিক্সের সমন্বয়, যেটা আমাকে আরও বেশি দূর্বল করেছিল বাইকটার দিকে। বাইকের ব্রেকিং, গতি, কন্ট্রোলিং, লুকিং, সিটিং পজিশন সব দিক থেকেই বলা যায় বাজাজ পালসারের ছোট ভাই। ২০০০০ কিলোমিটার রাইডে আমি অনেক রাফভাবে রাইড করেছি। তারপরেও যে পারফরমেন্সটা এখনো পাচ্ছি সেটা এখনো বেষ্ট।
কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানীতে চাকরি করার সুবাদে সবসময় আমার লং রাইড করা হয়। একটানা দীর্ঘ যাতায়াতে কখনো তেমন কোনো সমস্যা বুঝতে পারিনি। আর পিলিয়ন নিয়ে রাইডের কথা বলতে গেলে এই বাইককে ১০ এর মধ্যে মোটামুটি ৮ দেয়া যায়। এবার আসি কন্ট্রোলিং নিয়ে। কাঁচা -পাকা সব ধরনের রাস্তায়ই এই বাইক নিয়ে আমি রাইড করেছি। বাইকের সাসপেনশনগুলো এই সেগমেন্টের অন্যান্য বাইকের থেকে অনেক ভালো। মোটামুটি সব ধরনের রাস্তায় আপনি খুব ভালো একটা কন্ট্রোলিং পাবেন এই বাইকে।
ব্রেকিংঃ সামনের ব্রেকটা ডিক্স আর পিছনেরটা ড্রাম। তাছাড়া এন্টি স্কীড ব্রেকিং সিস্টেম থাকায় এই বাইকের ব্রেকিংটা অনেক উন্নতমানের। আপনি যদি শোরুম থেকে সামনের ডিক্স ব্রেক আর পিছনের ড্রাম ব্রেকটা কম্বিনেশন করে নিতে পারেন তাহলে ব্রেকিংয়ের যে ফিলটা পাবেন সেটা বলে বোঝাতে পারবো না।আমার বাইকের সাথে ইউরোগ্রীপ টায়ার দেয়া হয়েছিল। আমি অবশ্য পিছনের চাকা টিউব লেস করে নিয়েছিলাম। আর বাইকের সাথে দেওয়া লুকিং গ্লাস দুটো বাইকের সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দিয়েছে। মাইলেজের দিক দিয়ে এই বাইকটা বেষ্ট। আমি সিটিতে +-৫৬ আর হাইওয়েতে ৬০+- মাইলেজ পাই। তবে মাইলেজের দিকটা আপনার বাইক চালানোর স্টাইলের উপর নির্ভর করে।
ভালো দিকঃ
১) বাইকের স্টাইলিস কালার, লুকিং যেকোনো বয়সের মানুষের সাথে মানানসই।
২) সামনে হ্যালোজেন লাইটের দুপাশে এলইডি দেয়ায় অনেক দূর থেকে বাইকটাকে দেখা যায়, যেটার সুবিধা আপনি সিটি, হাইওয়ে সব রকম রোডেই পাবেন।
৩) ইঞ্জিন পারফর্মেন্স অনেক ভালো এবং স্মুথ।
৪) সিটিং পজিশন এবং হ্যান্ডেলিং অনেক ভালো হওয়ায় কন্ট্রোলিং ভালো হয়।
৫) মাইলেজ ভালো, স্বল্প বাজেটের মধ্যে আপডেট একটা বাইক।
খারাপ দিকঃ
১) প্রথমেই হ্যালোজেন হেডলাইট, এর আলো সিটিতে চলা গেলেও হাইওয়ের জন্য এটা যথেষ্ট নয়।
২) বাইকের হর্ণটা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি, আপনাকে এক্সট্রা ডাবল হর্ন লাগিয়ে নেয়া লাগতে পারে।
৩) লং রাইডে ব্যাক পেইন হয়, এটা অনেকের ক্ষেত্রে নাও হতে পারে।
৪) গিয়ার লিভারের নাট ভেঙ্গে যায়। যেটা শোরুমে পাওয়া যায় না আর বানিয়ে নেয়াটা খুবই হয়রানিমূলক।
৫) চেইন ঢিলা হয়ে যায়। সকালে টাইট করে নিবেন তো বিকেলেই ঢিলে হয়ে যায়। এটা খুবই হতাশাজনক।
৬) ইঞ্জিনটা তুলনামূক একটু বেশি হিট হয়। অন্যান্য বাইক থাকতে এই বাইকটিই পছন্দের কারণ কি? এটার সহজ উত্তর হবে মধ্যবিত্ত। সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে আমার কাছে এই বাইকটাই বেষ্ট মনে হয়েছিল।
মাইলেজ, পার্টসের সহজলভ্যতা, মেইন্টেনিংস খরচ কম এসব কারণেই এই বাইক নেয়া। পরিশেষে বলতে পারি- দাম, মাইলেজ সব দিক বিবেচনা করে আপনি এই বাইকটি নিতে পারেন। স্বল্প বাজেটে যারা ছোট পালসার নিতে চান তারা এই বাইকটি নিশ্চিতে নিতে পারেন। বাইকটি সব দিক থেকেই ভালো। কখনো হতাশ হবেন না। আর বাইকের ইঞ্জিনের প্রাণ হলো ইঞ্জিন অয়েল। আপনার বাইকে সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল, সঠিক সময়ে অয়েল ফিল্টার চেঞ্জ, এয়ার ফিল্টার চেঞ্জ আপনার বাইকের যৌবন ধরে রাখবে। আর সবসময় ভালো মানের সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহার করবেন। হেলমেট পরার অভ্যাস করবেন। কখনো হেলমেট ছাড়া বাইক নয়। ধন্যবাদ। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়। দোয়া রাখবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
লিখেছেন – সৌরভ