এই লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে মাহবুব এলাহী আক্তার’এর ফেসবুক পেজ Moonshine Motorist থেকে
বিশ্বের ৯টি এক্সট্রিম মটো-ট্রাভেলিং রোড এর তালিকা তৈরী করতে গেলে প্রথমত যে প্রশ্নটা মাথায় আসে তা হল, কোন রাস্তাগুলি মটো ট্রাভেলিং এর জন্য চ্যালেঞ্জিং?
মটো ট্রাভেলিং এর জন্য সেই রাস্তাগুলিই চ্যালেঞ্জিং,যেই রাস্তাগুলি ভয়ংকর এবং বিপদজনক। পক্ষান্তরে এই ভয়ংকর ও বিপদজনক রাস্তাগুলিই মটো ট্রাভেলিং এর জন্য সেরা রাস্তা। কারণ এই চ্যালেঞ্জিং রাস্তার কথা কল্পনা করলে মনে ভেসে উঠে সংকীর্ণ রাস্তা, পাহাড়ী রাস্তা, অসংখ্য বাকের রাস্তা, জিক-জ্যাক রাস্তা যার দুপাশের প্রাকৃতিক সৈন্দর্য্য লক্ষণীয়। এক কথায় প্রাকৃতিক সৈন্দর্য্যরে সমারহে সমৃদ্ধ বিপদজনক রাস্তাই মটো ট্রাভেলিং এর জন্য আদর্শ রাস্তা।
যখন মটোরসাইকেল এর বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বর দাবি উঠে তখন প্রাসঙ্গিকভাবে কথা আসে, আপনারা কে কত দ্রুত চালাতে পারেন বা কে কত দ্রুত কত পথ অতিক্রম করেছেন বা কোথায় কোথায় গিয়েছেন। আসলে ভ্রমণ হল মনের খোড়াকে এত শ্রেষ্ঠত্বের কিছু নেই! মটো ট্রাভেলিং মানে কিন্তু স্প্রীডিং না। আপনার যদি স্প্রীডিং পছন্দ হয়ে থাকে তবে আপনার নতুন করে বিপদজনক রাস্তা খোঁজার দরকার নেই। কারন সব রাস্তাই আপনাদের জন্য বিপদজনক। মটো ট্রাভেলিং তাদের জন্য যারা তাদের হেলমেটের ভাইজরের মধ্যে দিয়ে বিপদজনক রাস্তার প্রতিটি বাঁক এবং আশেপাশের সব কিছু তীক্ষ্ণ ভবে পর্যাবেক্ষণ করতে পারে এবং প্রয়োজন ছাড়া যাদের চোখ স্প্রীড মিটারে যায় না । কত দ্রুত গেলাম বা কতটুকু গেলাম এটা চিন্তা না করে,কোথায় গেলাম তা পর্যাবেক্ষণ করার দক্ষতাই মটো ট্রাভেলিং।
চলুন এক নজরে দেখে আসি বিশ্বের কিছু ভয়ংকর ও বিপদজনক মটো ট্রাভেলিং রাস্তাগুলি:-
১. মানালি-লেহ মহাসড়ক, ভারত
এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ মটো ট্রাভেলিং রোডগুলির মধ্যে অন্যতম। হিমালয়ের পাদদেশের মধ্য দিয়ে চলমান ৪৯০ কিমি (৩০৪ মাইল ) বিস্তৃত এই রাস্তার গড় উচ্চতা ৩,০০০ মিটার (৯,৮৫০ ফুট) এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫,৪২০ মিটার (১৭,৭৮২ ফুট)। এই রাস্তাটি মানালি থেকে লাদাখে যাবার রাস্তা। পর্বত সাড়ির পাদদেশ দিয়ে শুষ্ক মরুভূমির মাঝ দিয়ে একে বেকে চলে যাওয়া এই রাস্তা মটো-ট্রাভেলরদের জন্য একটি স্বপ্নের রাস্তা। তবে পূর্ব দীর্ঘভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও পাহাড়ী পথে চালানোর অভিজ্ঞতা ব্যতীত এই পথ পাড়ি দেয়া কোন মটো-ট্রাভেলরের জন্য যুক্তিসংগত নয়। তুষারপাতের কারণে এই রাস্তা বছরে মাত্র চার মাস (জুন – মধ্য অক্টোবর) সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
২. গুওলিয়াং টানেল রোড, চীন
১৯৭০ এর দশকে মাত্র ১৩ জন গ্রামবাসী ৪,০০০ হাতুড়ী ও ১২ টন স্টিলের সমন্বয়ে পাথড় কেটে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ৫ বছর ধরে এই রাস্তা তৈরি করে। এটি ১.২ কিমি (০.৭৫ মাইল) দীর্ঘ, ৫ মিটার (১৬ ফুট) লম্বা এবং ৪ মিটার (১৩ ফুট) প্রশস্ত রাস্তা একটি রাস্তা। এই রাস্তাটি গুয়াংলিং এর একটি বিচ্ছিন্ন গ্রামকে বহিঃ বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করে। দৈর্ঘ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও ৩০ টি বাতায়ন সম্বলিত এই রাস্তা নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে। সেটা হল – এই সেই রাস্তা যা কোন ছোট্ট ভুলকেও ক্ষমা করে না। আশা করি এটা শুনে এর ভয়াবহতা অনুভব করতে পারছেন।
৩. ক্যানিং স্টক রুট, অস্ট্রেলিয়া
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থিত ক্যানিং স্টক রুটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবিচ্ছিন্ন রাস্তাগুলির মধ্যে অন্যতম। কিম্বার্লি অঞ্চলের উইলুনা ক্রিক থেকে ১,৮২০ কিমি (১,১৩০ মাইল) দীর্ঘ ক্যানিং স্টক পর্যন্ত বিস্তৃত এটি অফ রোড মটো- ট্রাভেলিং জন্য আদর্শ একটি রুট। যে কোন এক দিক থেকে শুরু করে এই রুট সম্পন্ন করতে নুন্যতম ১৫-১৮ দিন প্রয়োজন। জ্বালানী ও খাবারের জন্য পথ মধ্যে মাত্র ৫ টি স্থান রয়েছে। এ থেকেই অনুমান করতে পারছেন যে দীর্ঘ এই পথ মধ্যে অধিকাংশ সময়ই আপনাকে তাবু খাটিয়ে থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানী তেল ও খাবার পানি বহন করতে হবে। তবে ৮০০ -র উপর বালুর পাহাড় অতিক্রম করা এই অফ-রোড রাইডিং আপনার মনে চিরস্থায়ী এক দাগ কেটে রাখবে। এই পথে পরিভ্রমণের জন্য পারমিশন প্রয়োজন রয়েছে। মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস হল এই রুটে ভ্রমণ করার আদর্শ সময়।
৪. সিচুয়ান-তিব্বত মহাসড়ক
এটি মূলত কংডিং-তিব্বত মহাসড়ক নামে পরিচিত। এটি চেংডু (সিচুয়ান) থেকে শুরু হয়ে লাসা (তিব্বত) পর্যন্ত বিস্তৃত ২,১৪২ কিমি (১,৩৩০ মাইল) বিস্তৃত বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক। এই পথে ১৪ টি পর্বতমালা পাড়ি দিতে হয় যার উচ্চতা গড়ে ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ মিটার (১৩,০০০-১৬,৪০০ ফিট)। এই পথ পাড়ি দিতে ১৫ দিনের মত সময় লাগবে। যাত্রা পথে আপনি অবলোকন করবেন তুষারপাতযুক্ত পর্বত শিখড়, বিশাল শুষ্ক সমভূমি, গভীর খাদ, হিমবাহের হ্রদ, দূরবর্তী গ্রাম ও তিব্বতের মন্দির। তবে এ পথে অক্সিজেনের সল্পতা রয়েছে এবং যেকোন মুহুর্তে উচ্চতা সংক্রান্ত অসুস্থতা আঘাত হানতে পারে তাই মটো-ট্রাভেলিং এর জন্য বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
৫.কারাকোরাম হাইওয়ে,পাকিস্তান ও চীন
১০০ বছর পুরোনো এই রাস্তাটি বিশ্বখ্যাত সিল্ক রুটে অংশবিশেষ। পাকিস্তান অংশের খুঞ্জেজার ন্যাশনাল পার্ক বিশ্বের অবশিষ্ট প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্রের একটি অন্যতম নিদর্শন,যেখানে এখনও তুষার চিতাবাঘ দেখতে পাওয়া যায়। ১,২০০ কিমি (৭৪৫ মাইল) দীর্ঘ এই রাস্তার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৪,৬৯০ মিটার (১৫,৪০০ ফিট)। এই পথে পাড়ি জমানোর সর্বোত্তম সময় হল মে-জুন অথবা সেপ্টেম¦র- অক্টোবর। অন্যান্য সময় তুষারপাত ও তীব্র বৃষ্টিপাতের জন্য এই রাস্তার কিছু কিছু অংশ বন্ধ থাকে।
৬.উত্তর ইউঙ্গাস রোড/ দ্যা ডেথ রোড বলিভিয়া
এল ক্যামিনো দে লা মুরেট, উত্তর ইউঙ্গাস রোড বিশ্বের দুরন্ত রাইডারদেরও আত্মা কাপিয়ে দিতে সক্ষম। ১৯৩০ সালে চ্যকো যুদ্ধের সময় প্যারাগুয়ে যুদ্ধবন্দিদের দ্বারা এই সড়কটি নির্মান করা হয়। বলিভিয়ার আমাজন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বিস্তুত পথটির দৈর্ঘ্য ৮০ কিমি (৫০ মাইল)। ১৯৯৫ সালে ইন্টার আমেরিকান ডেথলপমেন্ট ব্যাংক এটিকে বিশ্বের সবচাইতে ভয়ংকর রাস্তার খেতাব দেয় কারন এখনও বছরে ২০০-৩০০ মানুষ এই সংকীর্ণ গিড়িপথে মৃর্ত্যু বরণ করে। তাই এই রাস্তাটি দ্য ডেথরোড নামে পরিচিত। এটি মাউন্টেন বাইকের জন্য আদর্শ একটি রাস্তা যা ৬৪ কিমি (৪০ মাইল ) ব্যপ্ত একটি ডাউন ও আপ হিল সমন্বিত একটি রাইডিং ট্র্যাক।
৭.লিস ক্যারাকোলস পাস চিলি
এই রাস্তাটি আর্জেন্টিনার পার্শ্ব থেকে প্রায় ৩,২০০ মিটার (১০,৫০০ ফুট) দীর্ঘ একটি টানেল যা ধীরে ধীরে নিম্নগামী। এটি ১৯৮০ সালে নির্মিত। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তীব্র ঠান্ডা ও ৪০-৫০সেন্টিমিটার তুষার পাতের কারণে প্রায় ১৫,০০০ মানুষ এই টানেলের আর্জেন্টিনার পার্শ্বে আটকা পরেছিল ।
৮. ফেয়ার মিডো রোড, পাকিস্তান
ফেয়ার মিডো রোডটি একজন জার্মান পর্বতারোহীর নামে নামকরন করা হয়, স্থানীয়ভাবে জুট সড়ক নামে পরিচিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৩০০ মিটার (১০,৮০০) ফুট উঁচু নাগা পর্বত অভিমুখী রাস্তা। এই রাস্তার দৈর্ঘ্য মাত্র ৫ কিমি। এই ট্রাকে হেঁটেও যাওয়া যায়।হেঁটে যেতে ৩-৪ ঘন্টা লাগে। এই পথের শেষ হয়েছে রাইখট উপত্যকার ঘাসভূমিতে যার এক প্রান্ত নাগা পর্বতথেকে উৎপন্ন এবং হিমবাহ গলা এই পানিই সিন্ধু নদে পতিত হয়েছে।
৯.টেইল অফ ড্রাগন – উত্তর ক্যারোলিনা/টেনেসি
১৮ কিঃমিঃ (১১ মাইল) দীর্ঘ এই পথের মধ্যে ৩১৮ টি বাক রয়েছে। এই রাস্তার বর্তমান স্প্রীড লিমিটি ৪৮ কিমি/ঘন্টা।
এই ছিল বিশ্বের ৯টি হাইলি এক্সট্রিম মটো ট্রাভেলিং রোড। আশা করি, উপড়ুক্ত লেখাটি থেকে এই রাস্তা গুলি সম্পর্ককে ধারণা পেয়েছেন।
- SMK Stellar এর রিভিউ দিয়েছেন দেওয়ান সোহান - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
- গতকাল লঞ্চ হলো”Petronas Sprinta Ride Safe” ক্যাম্পেইন - সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
- Hero Karizma XMR 210 এর ইউজার রিভিউ লিখেছেন মিনহাজ খান - সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪
You must be logged in to post a comment.