আসসালামু আলাইকুম। আমি আবু তালহা, থাকি শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জে। আমি গত ১০ মাস যাবত Yamaha FZs V2 বাইকটি ব্যবহার করছি। এই ১০ মাসে বাইকটি ১১ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছি এবং ৪৬ টি জেলা ট্যুর করেছি যার মধ্যে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি হিল ট্যুরও ছিল। ব্যক্তিগতভাবে FZS বাইকটি আমার কাছে কেমন লেগেছে তার সবটা মিলিয়ে FZS বাইকটির ছোট্ট একটা ইউজার রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করবো. আমি যে বিষয় গুলো তুলে ধরছি তা অন্য সবার সাথে মতামতের ভিন্নতা থাকতে পারে। কারোর খারাপ লাগলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ভিন্ন মতামত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
আমি প্রথমে FZs Fi Version 2.0 DD এর ভালো দিক গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করছি ইনশাআল্লাহ।
লুকস: Yamaha মানেই একটা এগ্রেসিপ লুক থাকবে। FZS এর লুক নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাচ্ছি না, আমার কাছে ওর লুক এক কথায় অসাধারণ। FZS এর হেডলাইট থেকে শুরু করে টেল লাইট পর্যন্ত পুরোটাই একটা আকর্ষনীয় লুক বহন করে। আর তা যে কাউকে ভালো লাগতে সক্ষম।
ব্যালেন্সঃ বরাবর FZS বাইকটি ব্যালেন্সের জন্য, এই বাজেটের অন্য সব বাইকের মধ্যে এগিয়ে থাকবে। আমার মনে হয় না এই বাজেট রেঞ্জের মধ্যে FZS কে বিট করার মত অন্য কোন বাইক বাংলাদেশে আছে। হাইওয়েতে এই বাইকের ব্যালেন্সের নিশ্চয়ই প্রেমে পড়বেন। রেটিং দিলে আমি এটাকে 10/10 দিব।
ব্রেকিংঃ যখনই কেউ একজন ভালো ব্রেকিং সিস্টেম একটা বাইকের কথা চিন্তা করে তখনই তার মাথার প্রথম আসে Yamaha FZs। এই সেগমেন্টর মধ্যে বেস্ট ব্রেকিং বাইক এটি। যা নতুন করে বলার মত কিছু নেই। 100/110+ স্পীড এর একটা বাইক এত কম সময়ে, এত কম দূরত্বে কন্ট্রোল হয় তা সত্যি আমাকে অবাক করে। আমি বলবো FZs সেরা ব্রেকিং সিস্টেম বাইক ইন বিডি। যদি ব্রেকিং এর মার্ক করি সেই ক্ষেত্রে এর ব্রেকিং এর মার্ক 10/10 দিব। এটা একান্ত আমার মতামত।
স্মুথনেসঃ টপ গিয়ারে, ৮০-৮৫ স্পিডের একটা বাইক এতটা স্মুথ, যা সত্যিই আমাকে অবাক করে। আমি এই বাইকটিতে বাইকের ওজন সহ অতিরিক্ত 150 +- কেজি মালামাল নিয়ে 90+ স্পীড এ রাইড করেছি, এত ভারি ওয়েট নিয়েও বাইকটিতে যে স্মুথ ছিল তা আমাকে বরাবরই অবাক করেছে, রেটিং দিলে আমি এটাকে 10/10 দিব।
কমফোর্টনেসঃ যেখানে বাইকটিতে ভালো ব্রেকিং, স্মুথনেস, কন্ট্রোলিং যার ফলে আমি রাইড করে খুবই কমফোর্ট ফিল করেছি আর FZS এর হ্যান্ডেল বারটা কিছুটা আপরাইড পজিশনে থাকায় এবং তার সাথে মিলে পারফেক্ট কম্ফোর্টেবল একটা সিটিং পজিশন হওয়ার ফলে লং রাইডে আমি অনেক ইজি ফিল করেছি এবং আমি এক দিনে 700+ কি.মি পর্যন্ত রাইড করেছি। এত দূরত্ব অতিক্রম করার পরেও আমি কোন হাত ব্যথা বা পিঠে ব্যথা অনুভব করিনি।
পিলিয়ন সিটঃ একজন পিলিয়ন এর জন্য FZs V2 বাইকটি হতে পারে বেস্ট চয়েজ। রেটিং দিলে আমি এটাকে 10/10 দিব। উল্লেখ্য যে, আমি এই বাইকটিতে প্রায় ১৫০+- কেজি পর্যন্ত মালামাল নিয়ে অফরোডিং করেছি।
মাইলেজঃ FZS V2.0 বাইকটি ফুয়েল ইঞ্জেকশন বাইক হিসেবে এক্সপেক্টেড মাইলেজ পেয়েছি। সিটি রাইডে ECO মুড এ স্মুথ ভাবে চালালে 45-50 এর মধ্যে থাকে। আর হিল রাইডে পেয়েছি 30-35 এর মধ্যে থাকে, মাইলেজ রেটিং দিলে এটাকে 9/10 দিব।
আলহামদুলিল্লাহ উপরিউক্ত বিষয়গুলো আমার কাছে ভালো লেগেছে ভাল মনে হয়েছে।
এখন আমি আমার FZ S V2.0 DD বাইকটির কিছু মন্দ আপনাদের মাঝে শেয়ার করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ:
আসলে প্রতিটা জিনিসের একটা ভালো দিক আর একটা খারাপ দিক থেকে যায় , কোন একটা জিনিসের যখন খারাপ দিক এর তুলনায় ভালো দিকটা বেশি থাকে তখন আমরা সেটাকে ভালোই বলি।।
স্পিডিংঃ আমার কাছে মনে হয়েছে স্মুথ আর মাইলেজ বাড়াতে গিয়ে বাইকটার স্পিডিং পিছিয়ে পড়েছে। এই বাজেট রেঞ্জের মধ্যে তুলনামূলক সবচাইতে কম রেডি পিকআপের বাইক Fzs বলে আমার মনে হয়েছে। যা আপনাকে হাইওয়ে তে বিপাকে ফেলতে পারে , আপনি যদি FZS V2.0 বাইক এর ইউজার হন তবে খুব সতর্কতার সাথে প্রতিটি ওভারটেকিং করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমি এই বাইকটিতে 118 টপ স্পিড পেয়েছি। কিন্তু 118 উঠতে অন্য সব বাইকের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি সময় লেগেছে। স্পিডিং রেটিং আমার মতে 5/10 দিব।
হেডলাইটঃ যদিও বাইকটিতে অনেক বড় আকারের একটা হেডলাইট ব্যবহার করা হয়েছে বাট তাতে আলো আমার কাছে কম লেগেছে। রাতে হাইওয়েতে একটু স্পীডিং করলে এক্সট্রা লাইট ছাড়া হাইওয়েতে চালানো প্রায় অসম্ভব । এর রেটিং 6/10 দিব।
গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সঃ বাইক তুলনামুলক ভাবে অনেক নিচু, শহরের মাঝারি মানের স্পিড ব্রেকারে নিচে ঘষা খেয়ে যায়। এছাড়াও অফরোডিং এর ক্ষেত্রে এটা খুব পেইনফুল লাগে। বাইকটা সামনের দিকে হ্যান্ডেল বার আর বাম্পারের কারনে বেশি জায়গা নেয়। তাই জ্যামের মধ্যে প্রায়ই চালানোতে কিছু টা পেইন লাগে। নরমালি বাইকটা ঘুরাতে কিছুটা বেশি জায়গা লাগে যা সিটি রাইড এর ক্ষেত্রে পেইনফুল।।
পরিশেষে বলতে চাই একটা বাইকে সব কিছু ১০০% থাকে না । Yamaha ব্র্যান্ড এর প্রতিটা বাইক আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। কোনো বাইক এর মাইলেজ একটু বেশি বা কম, কোনো বাইক এর লুকস একটু বেশি সুন্দর, কোনো বাইক এর কমফোর্ট একটু বেশি বা কম, কোনো বাইক এর স্পিড একটু বেশি বা কম। এর মধ্যেই বেছে নিতে হবে আপানার স্বপ্নের বাইকটিকে।
আমি এই বাইকের কাছ থেকে কখনো বেশি স্পিড আশা করিনি, আমি স্পীড থেকে কমফোর্ট, কন্ট্রোল, মাইলেজ, ব্রেকিং স্মুথনেস এর দিকটা বিবেচনা করে FZS V 2.0 নিয়েছি। এখন পছন্দটা আপনার।
এই ছিলো আমার ১১০০০ কিলোমিটার চালানো পর নিজের Yamaha FZS V2.0 সম্পর্কে আমার ব্যাক্তিগত মতামত। যা কারো কাছে ভালো বা কারো কাছে খারাপ লাগতে পারে।
সবাই সাবধানে ট্রাফিক রূলস মেনে বাইক চালাবেন আর অবশ্যই হেলমেট পড়বেন ।
বিঃদ্রঃ কোথাও ঘুরতে গেলে ওই স্থানের সঠিক সৌন্দর্য বজায় রাখুন, অযথা যে খানে সে খানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে।
আসসালামু আলাইকুম।
লিখেছেনঃ Abu Talha (Him)
Latest posts by একজন দেশি-বাইকার (see all)
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.