সবাইকে শুভেচ্ছা, আমি ৩ জুলাই ২০১৭ তারিখে রংপুর শহরের জিয়া মটরস থেকে আমার Yamaha FZs Fi V2 বাইকটা কিনেছিলাম আর চালিয়েছি ১০,০০০+ কিলোমিটার। গত চার মাসে এটা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। বৃষ্টিতে, গভীর রাতে, অনরোডে, অফরোডে এবং রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির পাহাড়ি রাস্তায়। যাই হোক সব অবস্থায় এই বাইকটি চালিয়ে আমি বাইকটির কিছু ভাল-মন্দ দিক বুঝতে পেরেছি এবং সেগুলা আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
লং ট্যুরে মাঝে মাঝে ২০-৩০ মিনিটের বিরতি দিয়ে একটানা ২২ ঘন্টা রাইড করেছি প্রায় ৬২০ কিলোমিটার (রংপুর থেকে রাঙ্গামাটি)। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু বাইকের জন্য শরীরে কোন প্রকার পেইন অনুভূত হয়নি। ঘুম থেকে উঠেই আবার বের হয়েছিলাম হিল রাইডে। এর সিটিং পজিশন এবং পিলিওন সীট বেশ আরামদায়ক। আমার চোখে এটা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ট্যুরিং বাইক।
বাইকটার ডিজাইন এবং লুক’স আমার অনেক পছন্দ যেন আস্ত একটা রোবট। কমফোর্টেবল এবং কন্ট্রোলিং চমৎকার, ফুয়েল ইঞ্জেকশন হওয়াতে এটার ইঞ্জিন পারফর্মেন্স খুব ভালো। প্রথম দিকে অল্প একটু চালাইতেই ইঞ্জিন মশাই খুব গরম হয়ে যেত, এখন খুব গরম হয়না , ইঞ্জিন তো একটু গরম হবেই, ব্যাপার নাহ । রেডি পিক-আপ নিয়া আমার কোন কমল্পেইন নাই, তবে আগের এফ যেড এস এর তুলনায় এটার থ্রটল রেস্পন্স কম বা দ্রুত স্পীড তুলতে পারে না। এর ইঞ্জিনের সাউন্ড আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। সাউন্ড আরো কিছুটা ভালো হওয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি।
এটার সামনে আছে ২৬৭ মিলিমিটার হাইড্রলিক ডিস্ক এবং পেছনের চাকায় ১৩০ মিলিমিটার ড্রাম ব্রেক, পেছনেও ডিস্ক হলে মন্দ হতো না হা… হা… হা…। তবুও আমি ইয়ামাহা কোম্পানিকে ধন্যবাদ দিব এমন শক্তিশালী ব্রেকিং সিস্টেম দেওয়ার জন্য। একটু বেশি স্পিডে চালাইলেও দুইটা ব্রেক এক সাথে চাপলে অনেক কনফিডেন্স এর সাথে স্লো করা যায়।
এইটাতে অটোমেটিক হেডলাইট অন সিস্টেম, মানে সব সময় হেডলাইট জ্বলে। ভাই লাইট জ্বলে, এইযে আপনার লাইট জ্বলে এইগুলা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে আমি অটোমেটিক হেডলাইট অন সিস্টেম অফ করে দিয়েছি। লাইটের আলো আর একটু বেশি হলে ভাল হতো। আমি রাতেও রাইড করি, তবে যে আলো আছে তাতে আমার কোন অসুবিধা হয় না।
এটাতে কিক স্টার্ট সিস্টেমই নাই। হা… হা… হা… আছে ইলেক্ট্রিক স্টার্ট সিস্টেম যেটাতে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস রাখা যায় ।
ফুয়েল ট্যঙ্ক ক্যাপাসিটি ১২ লিটার, ডিজাইনটাও বেশ ভাল, আমি সবসময় বাইকে অকটেন ইউজ করি এবং এভারেজ মাইলেজ পেয়েছি ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটারে এবং আমি এটা নিয়ে খুশি।
এটাতে গিয়ার ইন্ডিকেটর নাই, রিজার্ভ ট্যাঙ্ক নাই এবং ফুয়েল কমে গেলে কোন ওয়ার্নিং মেসেজ দেয় না । সেই ক্ষেত্রে ফুয়েল গেজ এর শেষ দাগটি সো এবং হাইড হলেই বুঝে নিতে হয় ফুয়েল প্রায় শেষ।
ঢাকা-চিটাগং হাইওয়েতে এটার টপ স্পিড ১১৫ পেয়েছি, আমি নরমালি ৪০ থেকে ৫০ স্পিডে রাইড করি, বেশী তাড়াহুড়া থাকলে সাবধানে একটু জোরে চালাই আরকি। আমি টানা এক ঘন্টার মত ১০০+ স্পিডে চালিয়েছি কোন প্রকার প্রব্লেম ছাড়া। যদিও কথায় আছে “যত গতি, তত ক্ষতি” কিন্তু আড়াই লাখ টাকা বাজেটের ১৫০ সি,সি বাইক হিসেবে টপস্পীড আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল।
এই বাইকের সাস্পেনশন এর কথা না বললেই নয়, মোটামুটি দুইটা টেলিস্কপিক ফরক এবং একটা মনক্রস সুইং আর্ম এমন ভাবে থাকে, হাইওয়েতে আমার মনে হয় বাইকটা দৌড়ায় না “ভাসে ” :P।
ইয়ামাহার শোরুমের সকল ফ্রি সার্ভিসিং নেওয়ার চেস্টা করেছি ১,০০০, ৪,০০০ এবং ৮,০০০ কিলোমিটার চালানোর পর পর সার্ভিসিং করিয়েছি। ৪,০০০ কিলোমিটার পর পর ফুয়েল ইঞ্জেক্টর ওয়াস করিয়েছি, প্রথম তিনটা ইঞ্জিন ওয়েল (ইয়ামাহালুব) ৫০০ কিলোমিটার এবং পরের গুলা ১,০০০ কিলোমিটার করে চালিয়েছি, ফুল সিন্থেটিক মটুল টেস্ট করেছি এবং ৩,০০০ কিলোমিটার পর পর ওয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করেছি । যদিও Yamaha FZs/Fazer V2-এর চেইন নিয়ে অনেকের আপত্তি শোনা যায় কিন্তু আমি কোন রকম প্রবলেম ফেস করিনি। ৪,০০০ এবং ৮,০০০ কিলোমিটার চালানোর পর ট্যাপেড এডজাস্ট করে নিয়েছি।
এখানে আমি আমার মতামত তুলে ধরার চেস্টা করেছি, সুতরাং ভুল ত্রুটি হইলে একটু ক্ষমা সুন্দর চাহনিযুক্ত করবেন। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ মোহাম্মদ আল ওয়ালিদ
Latest posts by একজন দেশি-বাইকার (see all)
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.