Honda X-Blade 160 মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন – ফেরদৌস জাহিদ)

Honda Xblade 160 এর ৬০০০ কিলোমিটার আমি ফেরদৌস জাহিদ। আমি গাইবান্ধা থাকি। আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমি আজ আপনাদের সাথে আমার Honda Xblade 160 এর ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। বর্তমানে বাইকটি আমি ৬০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি।

ছোট থেকেই বাইকের প্রতি আসক্তিটা একটু বেশিই ছিল। তখন বাবার ছিল Xingfu 125 সিসি। সবে প্রাইমারী লেভেল পার করছি। শখের বশেই তখন থেকেই বাইকটি রোজ পরিষ্কার করতাম। ছোট ছিলাম বলেই বাবা কখনো বাইক চালানোর পারমিশন দিত না। কিন্তু শেখার আগ্রহ ছিল প্রচুর। তাই ছোট চাচার সাথে একটি মৌখিক চুক্তি করলাম। তার ছিল Bajaj Enduro SX 100 সিসি টু স্ট্রোক বাইক। চুক্তিটি ছিল প্রতিদিন তার বাইক পরিষ্কার করে দেব বিনিময়ে আমাকে সামনে বসিয়ে ১০ মিনিট করে চালানো শিখাবে। অবশ্যই বাবাকে লুকিয়ে। এভাবে চলল বেশ কিছুদিন।

সময়টা ক্লাস সিক্সের মাঝামাঝি। প্রথম সাহস করে বাবার বাইকের চাবি লুকিয়ে নিয়ে বাইক নিয়ে রাস্তায় বেরোই। সেদিনটা কখনোই ভোলার নয়। বাবার কাছে ধরা পড়েছিলাম। ফলে উত্তম মধ্যমও খেয়েছিলাম। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়েও প্রথম বাইক চালানোর স্বাদটা বেশ উপভোগ করেছিলাম। এরপর থেকেই শুরু হল বাইক চালানোর জার্নি। ক্লাস নাইনে ওঠার পর বেশ ভালোভাবেই বাইক চালানোটা রপ্ত করেছিলাম। তাই বাবাও আর কিছু বলতেন না। এরপর বাবা দ্বিতীয় বাইকটি কিনলেন Bajaj Discover 125 সিসি কিক স্টার্ট। তখন থেকেই বাইক সম্পর্কে আইডিয়া নেয়া শুরু।

এরপর রাস্তা কাঁপাতে বাজারে এল TVS Apache RTR 150 সিসি ফার্স্ট মডেল। অনেক বোঝানোর পর বাবাকে বাইকটি কেনার জন্য রাজি করাতে সক্ষম হলাম। সে বাইকটি রাইড করলাম দীর্ঘ ছয় বছর প্রায় ৫২০০০ কিলোমিটার। এরপর নিলাম Yamaha Fazer 150 সিসি ৩ বছরের মত প্রায় ৩২,০০০ কিলোমিটার বাইকটি চালিয়েছিলাম। এরপর TVS Metro Plus 110 সিসি যা প্রায় ১৫০০০ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছি। এর এক বছরের মাথায় কিনলাম TVS Apache RTR 160 4V এই বাইকটি ১০০০০ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছি।

২০২১ সালের প্রথমের দিকে Honda Xblade 160 এই বাইকটি কিনে ছিলাম। এখন পর্যন্ত ৬০০০+ কিলোমিটার চালিয়েছি। বাইকটা অনেক স্মুথ তবে কেনার পর থেকে এখন যত দিন যাচ্ছে ততোই স্মুথনেস বেশি বারতাছে। বাইকটা নিয়ে এখন পর্যন্ত অনেক যায়গায় ট্যূর করেছি সে কথায় পরে আসছি। সার্ভিসিং- বাইকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর সার্ভিসিং। আর এই সার্ভিসিংটা কোম্পানির রিকমেন্ডেড সার্ভিস সেন্টার থেকে করা উচিত এবং আমি সেটাই করেছি। যেহেতু আমি বেশিরভাগ সময়ই বাইকটি নিয়ে লং রাইড দেই সেহেতু আমি ম্যানুয়েলের টাইম মত সার্ভিসগুলো করেছি।

এখন পর্যন্ত ৩য় সার্ভিস সম্পন্ন করেছি। টপ স্পীড- আমি বাইকটিতে টপ স্পীড পেয়েছি ১২৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। বাইকের পারফর্মেন্স- প্রথম ২০০০ কিঃমিঃ ব্রেক ইন পিরয়ড হিসেবে মেনেছিলাম। তখন আরপিএম ৪০০০ – ৫০০০ এর মধ্যেই রাখতাম। তারপর ২০০০ কিলো পার হওয়ার আস্তে আস্তে আরপিএম বাড়ানো শুরু করি। আর যতই সময় যাচ্ছে আর কিলোমিটার বারছে বাইকের স্মুথনেস ততোই বারছে।

ইঞ্জিন অয়েল- কেনার পর থেকে এখন পর্যন্ত Honda 10w30 মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করে আসছি। মাইলেজ- মোটামুটি অনরোড অফরোডে মিলিয়ে ৪৮-৫০ এমন পাই। তবে ইকোনমি রাইড করলে ৫২+ হয় মাঝে মাঝে। কিন্তু আমার রাইডিং স্টাইল হিসাবে আমি ৪৮ পাই।

বাইকটির ভালো দিক- • স্মুথনেস • কমফোর্ট রাইড পাওয়া যায় • কন্ট্রোল মোটামুটি ভালো • আরামদায়ক সীট • পিলিয়ন কম্ফোর্ট • অল্প যায়গায় ইউটার্ন নেয়া যায়।

বাইকটির খারাপ দিক- • সামনের চাকা অনেক চিকন • অয়েলকুল ইঞ্জিন দিলে আরো ভালো হইতো • পিছনে ড্রামের বদলে ডিক্স ব্রেক দিলে ভালো হইতো।

ভ্রমণ কাহিনী- Honda Xblade 160 এই বাইকটি নিয়ে আমি বেশ কয়েকটি লং ট্যূর করেছি এক দিনে প্রায় ৪৫০+ কিলোমিটার চালিয়েছি। গাইবান্ধা নিজ বাসা থেকে টাঙ্গাইল মহেরা জমিদার বাড়ি ও ২০১ গম্বুজ মসজিদ। সকাল ৮ টায় রওনা দিয়ে বাসয় ফিরেছি রাত ১ টার দিকে। এই সময় হাইওয়ে, গলির রাস্তা, মাটির রাস্তা, ইট বিছানো রাস্তা সব ধরনের রাস্তার অভিজ্ঞতা ছিলো এই ট্যূরে। তবে কোন ধরনের রাস্তাতে আমাকে নিরাশ করেনি। আর যমুনা সেতুতে পিলিয়ন সহ ১২৪ কিলোমিটার পেয়েছি টপ স্পিড। পাওয়ার ড্রপ পাইনি তবে একটানা ১০০+ কিলোমিটার চালালে ইঞ্জিন একটু হিট হয় তবে সেটা সহনশীল।

পরিশেষে আমি এতটুকুই বলব ১,৮০,০০০ টাকার মধ্যে বেস্ট বাইক এখন পর্যন্ত Honda Xblade 160 আমার মনে হয়। তবে বাইকের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হলে একটু সময় দিতে হবে। বাইকের প্রতিটা ম্যুভমেন্ট নিজেকে ফিল করতে হবে। তাহলেই আর বাইকটি চালাতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবেনা। আর সামনের চিকন চাকার জন্য কোন সমাস্যা ফেস করিনি এখনও তবে মনে হালকা ভয় লাগে কর্নারিং এর সময়, ধন্যবাদ।

লিখেছেন – ফেরদৌস জাহিদ

Related Posts

error: Content is protected !!