Lifan KPR 150 V2 ১৩,০০০ কিঃমিঃ মালিকানা রিভিউ (লিখেছেন- মিফতাহুর তোবায়েদ তুবা)

KPR 150 V2 ১৩ হাজার কিলোমিটার মালিকানা রিভিউঃ-

আসসালামুয়ালাইকুম। আমি মিফতাহুর তোবায়েদ তুবা। নওগাঁর সন্তান হওয়া সত্তেও রিজিকের তাগিদে থাকতে হয় কুড়িগ্রাম। আজ আমার নিজস্ব মতামত তুলে ধরবো ১.৫ বছর আগে কেনা KPR 150 নিয়ে।
প্রথমেই বলে রাখি, বাইক কেনার অনেক আগে থেকেই আমি দেশী বাইকারের একজন নিয়মিত সদস্য। দেশী বাইকার আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সহযোগিতা করেছে। আমি আমার মতামত গুলোকে কয়েকটি প্যারায় ভাগ করে লিখবো। আশা করি সঠিক তথ্য দিয়ে পাঠকগনকে সন্তুষ্ট করতে পারবো।

লুকঃ ব্যাক্তিগত ভাবে KPR এর লুক আমার কাছে অসাধারণ লাগে। বলতে পারেন উঠতি বয়সের চয়েস। কিন্তু আমার বেশ প্রিমিয়াম লাগে। এ্যরো ডায়নামিক স্ট্র‍্যাকচারের কারণে স্পিডিং এর সময় মাথা নিচু করলেই বাতাস কাটাতে পারে। এই বাজেট সেগমেন্টে আমার কাছে বেশ জমপেস লুক মনে হয়েছে।

ব্রেকিং এন্ড কন্ট্রোলিংঃ ডিস্ক ব্রেক বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা অনেক আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু KPR এর চান্দের সমান ডিস্কের ব্রেকিং যাস্ট অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে। ব্রেক করে স্কীড করে পরে গেছি এমন হয় নাই এই 13k কি.মি তে। আমার হাইট ৫.৯ হওয়ার সুবাদে কন্ট্রোলিং এও কোন সমস্যা ফেস করি নাই। কিন্তু, ওয়েট বেশী হওয়ায় সিটি রাইডে অনেক প্যারা খেতে হয়। তবে হাইওয়েতে এই ওয়েটই হয়ে দাড়ায় কনফিডেন্সে।

পারফরম্যান্সঃ আমি আমার বাজেটের মধ্যে সেরা পারফর্মেন্স পেয়েছি বলে মনে করি। ব্রেকিং পিরিওডটা মেইনটেইন করেছি, কিন্তু খুব ভালো ভাবে নয়। বয়সের সুবাদে মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে একটু আকটু টক্কর দিতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ, নিরাশ হই নাই কখনো। আমার কাছে বেস্ট যে ব্যাপারটা লাগে তা হল ভাইব্রেশনফ্রি। ১১৫ পর্যন্ত একদম বিনা ভাইব্রেশনে পারফরম্যান্স পেয়েছি। কিন্তু ১১৫ এর পর থেকে একটু ভাইব্রেট ফিল হয়, যা মেনে নেওয়া যায়। লো বাজেটেও যে ভালো টর্ক সম্পন্ন বাইক দেওয়া যায়, তা KPR দেখে মনে হয়েছে। ইঞ্জিন ওভার হিট সমস্যা একদমই পাই নাই এ পর্যন্ত। অনেক লং ট্যুর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনদিন পাওয়ার ড্রপ পাই নাই। আমি আমার দিক থেকে পারফর্মেন্সে সন্তুষ্ট।

মাইলেজঃ ব্রেকিং পিরিওডে একটু কম মাইলেজ পেতাম। কিন্তু ব্রেকিং পার হওয়ার পর থেকে সিটিতে ৩৮/৪০ এবং হাইওয়েতে ৪৩/৪৪ পাই। অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু আমি বাইকের মাইলেজ ব্যাপারে খুব সোচ্চার।

বিল্ড কোয়ালিটিঃ কিট কোয়ালিটি যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে, তবে বেশী লম্বা মানুষের কিটে পা ঢেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। দুইবার বাইক শক্ত জায়গায় পরে গিয়েছিলো। এর লম্বা হ্যান্ডেলবার কিট সেফ করে নিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ মেজর কোন ক্রাশ এখন পর্যন্ত করি নাই।

কম্ফোর্টঃ বাইক কিনার প্রথম ১ মাস আমি প্রচুর প্যারা খাইছি ব্যাকপেইন নিয়া। তবে আর হয় না এখন। সিটিং পজিশন স্পোর্টি হোওয়ার কারণে অনেকের প্রথম প্রথম ম্যাচআপ করাতে কষ্ট হতে পারে। পিলিওন সিট অন্য বেশ কয়টা স্পোর্টস বাইকের তুলনায় আরামদায়ক মনে হয়েছে। ছোট বোনকে নিয়ে অনেক লং ট্যুর মেরেছি। সে কোন অবজেকশন দেয় নাই পিলিওন কম্ফোর্ট ব্যাপারে।

মেইন্টেনেন্সঃ (ক.) ৫ হাজার কিলোতে এয়ার ফিল্টার। (খ.) ১০ হাজারে প্লাগ। (গ.) ১২ হাজারে স্পোকেট সেট (শখে শখে)। (ঘ.) ভালো মানের ফুয়েল এবং নিয়মিত চেকাপ।

খারপ দিকঃ (ক.) এর টার্নিক রেডিয়াস সিটিতে সেই প্যারা দেয়। চিকন রাস্তায় কয়েকবার করে কাটায়া নিয়া ঘুরাতে হয়।
(খ.) চেন বার বার লুজ হয়ে যায়। ১৫০/২০০ কিমি পর পর টাইট দিতে হয়। কোম্পানি O ring চেইন ব্যাবহার করলে ভালো করতো হয়তো।
(গ.) লুকিং গ্লাসটা একদম অসয্য মনে হয়েছে। ১০০+ স্পিড ক্রস করলেই হাল্কা বাকা হওয়া শুরু করে।
(ঘ.) গিয়ারটা একটু হার্ড, তবে ভালো ইঞ্জিন ওয়েলে একটু স্মুথ হয়।

আমি মনে করি, একটি বাইকের পারর্ফমেন্স তার ইউজারের উপর নির্ভর করে। আপনি যতটা টিপটপে রাখবেন, ততটাই আউটপুট পাবেন।

ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি। সাথে অসংখ্য ভালোবাসা রইলো দেশী বাইকারের প্রতি।🖤

Live free, ride safe.✌

 

লিখেছেন- মিফতাহুর তোবায়েদ তুবা

Related Posts

error: Content is protected !!