ফুল ফেয়ারড স্পোর্টসের বাইকের মত নেকেড স্পোর্টস বাইকগুলোও বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রায় প্রতিটি প্রিমিয়াম স্পোর্টস বাইকের নেকেড ভার্সন আসছে বাংলাদেশে। অনেক প্রতিক্ষার পর বাংলাদেশে ইয়ামাহা লঞ্চ করল Yamaha MT 15 ইন্ডিয়ান ইডিশনটি।
Yamaha MT 15 মূলত Yamaha R15 V3 এর ন্যাকেট ইডিশন। প্রায় সব ফিচার একই রকম। তবে লুকস, রাইডিং পজিশন এবং বেশ কিছু পরিবর্তন রয়েছে। ফুল ফেয়ারড স্পোর্টস বাইক ক্যাটাগরিতে R15 যেমন শীর্ষ স্থানীয় একটি বাইক, ঠিক তেমনি নেকেড ইডিশন বাইকগুলোর মধ্যেও MT 15 বাংলাদেশে লিডিং পজিশন থাকবে।
সোশাল মিডিয়াতে সব সময় আপ কামিং বাইকের মানুষের বেশ আগ্রহ দেখা যায়। ঠিক এই সময়ে সব থেকে বেশি ক্রেজ আমরা দেখেছি এই বাইকটির প্রতি। বিশেষ করে যে জিনিসটি ইয়ামাহার এই প্রিমিয়াম মোটরসাইকেলটির প্রতি মানুষকে এট্রাক্ট করেছে তা হচ্ছে এর এগ্রিসিভ হেডলাইট, যখন এটি জ্বলতে থাকে দেখতে দারুণ দেখায়. যেহেতু AHO সিস্টেমটি রয়েছে তাই হেডলাইট সব জ্বলে থাকবে। এতে থাকছে স্লিপার এন্ড এসিস্ট ক্লাচ, ভিভিএ টেকনোলজি, নেগেটিভ এলসিডি ডিসপ্লে মিটার, ব্রেকিংয়ে এবিএস।
এসিআই মোটরস লিমিটেড বাইকটির মূল্য নির্ধারন করেছে ৪৬০,০০০ টাকা। প্রি-বুকিংয়ে বেশ কিছু অফার রেখেছে তারা। এর ২টি কালার মেটালিক ব্ল্যাক এবং ডার্ক ম্যাট ব্লু মার্কেটে এভেইলেভেল।
MT 15 এ ব্যবহার করা হয়েছে R15 Version 3 এর ইঞ্জিনটি যেটি ১৫৫ সিসি’র এবং যাকে ঠান্ডা করার জন্য রাখা হয়েছে ওয়াটার কুলড সিস্টেম। MT 15 এর এই ব্লু কোর ভিভিএ ইঞ্জিনটি 19.03 bhp মাক্সিমাম পাওয়ার @1000 rpm এবং 14.7 Nm টর্ক @8500 rpm উৎপন্ন করতে পারে। স্পোর্টস বাইক হলেও ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম থাকায় বাইকটি থেকে বেটার মাইলেজ পাওয়া যাবে। আমরা বাইকটি স্বল্প সময় চালিয়েছিলাম এবং এর পাওয়ার ডেলিভারী দারুণ দেখেছি। যেহেতু এটি নেকেড স্পোর্টস বাইক তাই টপ স্পীড R15 V3 এর মত না হলেও অনায়াসে ১৪০+ কিঃমিঃ/ঘন্টা হবে বলে নিশ্চিত।
ফোর ভালভের এই ইঞ্জিনে ট্রান্সমিশন সিস্টেমে থাকছে ৬ স্পীড কন্সট্যান্ট ম্যাশ গিয়ার বক্স। R15 V3 এর মত এটিতেও থাকছে এসিস্ট এন্ড স্লিপার ক্লাচ যার ফলে বাইকটির গিয়ার শিফটিং খুব ফাস্ট, লাইট এবং স্মুথ। স্লিপার ক্লাচ কন্সেপ্টটি মূলত রেসিং ট্র্যাকে রাইডার যাতে এক্সট্রা ফ্যাসিলিটি পায় এবং দ্রুত ল্যাপ শেষ করতে পারে, তার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। এখন এটি সাধারণত হায়ার সিসি’র বাইকগুলোতে দেখা যায়।
এর লুকস নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। দারুণ এগ্রিসিভ। হ্যান্ডেলবার কিছুটা আপ-রাইট এবং সিটিং পজিশন বেশ কম্ফোর্টেবল। টার্নিং রেডিয়াস বেশ ওয়াইড, তাই সিটি এবং হাইওয়ে রাইড দু’টিতেই কম্ফোর্ট ফিল করবেন। সিট হাইট R15 এর থেকে ৫ মিঃমিঃ কম যা ১৮০ মিমিঃ। তবে একেবারে শর্ট রাইডারদের জন্য বাইকটি পারফেক্ট নয়। ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি কিংবা তার অধিক রাইডারদের জন্য উপযোগী। তবে পিলিওন সিটটি তুলনামূলক ছোট। ভারী পিলিওন হলে বসে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
সবার আগে চোখে পড়বে এর বিআই ফাংশনাল হেডলাইটগুলো। হেড এবং টেইল লাইটগুলো এলিডি এবং দেখতে বেশ ইউনিক। ইয়ামাহা তাদের এই বাইকটি ডিজাইন করতে হয়তো সবচেয়ে বেশি সময় দিয়েছে এর ফ্রন্ট ইন্ডকে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য। MT সিরিজের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর হেডলাইটগুলো।
এর বিল্ট কোয়ালিটি বাংলাদেশে ইয়ামাহার বাইকগুলোর মধ্যে সেরা মনে হয়েছে। Yamaha MT 15 এর চেসিসে ব্যবহার করা হয়েছে ডেল্টা-বক্স ফ্রেম এবং বাইকটির ওজন ১৩৮ কেজি। ফুয়েল ট্যাঙ্ক ক্যাপাসিটি ১০ লিটার।
ইয়ামাহার বাইকের ব্রেকিং বরাবরই ভাল এবং তারা এই বাইকটিতে দিয়েছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস। হয়তো ডাবল চ্যানেল এবিএস হলে আরো ভাল হত যা R15 V3 তে রয়েছে।
ইয়ামাহা তাদের এই বাইকটি সাজাতে সাহায্য নিয়েছে তাদের প্রিমিয়াম বাইকগুলোর। ইঞ্জিন, একজোস্ট, হুইল, রিম, টায়ার, মাডগার্ড, সাসপেনশন নেয়া হয়েছে আর১৫ এর। কিলসুইচ, রেয়ার ভিউ মিরর ইত্যাদি নিয়েছে FZ25 থেকে।
টায়ার এবং ডিস্ক সাইজ R15 V3 এর মতই। সামনে 100/80 এবং 140/70 সেকশন MRF টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। R15 এ ডুয়েল চ্যানেল এবিএস থাকলেও এটি পাবেন সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস। ফ্রন্টে থাকছে ২৮২ মিমিঃ ডিস্ক ব্রেক সাথে বেব্রা ক্যালিপার এবং এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম। রেয়ার ডিস্ক সাইজ ২২০ মিমিঃ এবং সাথে দিয়েছে নিশিন ক্যালিপার।
ব্রেকিংয়ে এই ডিস্ক ব্রেক ক্যালিপার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ পর্যন্ত আমরা যে বাইকগুলোতে নিশিন ক্যালিপার দেখেছি, তার সবগুলোর ব্রেকিং খুব চমৎকার। টিম ইয়ামাহা খুব দারুণ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর ব্রেকিংয়ের বাইকটির ব্যালেন্স দারুণ পেয়েছি। সব মিলিয়ে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস না থাকলেও বাইকটির ব্রেকিং নিয়ে আমরা খুশি।
ইন্ট্রুমেন্ট ক্লাস্টারটি ব্ল্যাক ব্যাকগ্রাউন্ডের এবং প্রয়োজনীয় সব ফিচার পাবেন এতে। ইগনিশন সুইচটি ফুয়েল ট্যাঙ্কের সামনে আনা হয়েছে যা FZs V3 এর মত। বাইকটিতে সাইড রিফেক্টর রয়েছে, যার ফলে বাইকটিকে ডান এবং বাম দিক থেকেও সহজে নোটিশ করা যাবে। ফুয়েল ট্যাঙ্কের সামনে এয়ার স্কুপ রয়েছে যা প্রোপার ভেন্টিলেশন পেতে সহায়তা করবে। বাইকটির সাউন্ড একেবারে R15 V3 ইন্ডিয়ান ভার্সনটির মতই।
অনেকে হয়তো বা জানতে চাইবেন, ইন্দোনেশিয়ান ভার্সনটির সাথে এর চেঞ্জ কোথায়? প্রথম যে চেঞ্জটি সেটি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ান ভার্সনটিতে এবিএস ছিল না যা ইন্ডিয়ান ভার্সনটিতে পাবেন। ফ্রন্টে আপ-সাইড ডাউন সাসপেনশনের পরিবর্তে এতে থাকছে টেলিস্কোপিক ফর্ক, ইন্দোনেশিয়ান ভার্সনের সামনে ব্যবহার করা হয়েছিল ১১০ সেকশন টায়ার এবং ইন্ডিয়ানটিতে থাকছে R15 V3 এর ন্যায় ১০০ সেকশন টায়ার। গ্লোবাল ভার্সনটিতে রিমে বিভিন্ন কালার করা হয়েছিল, যেখানে ইন্ডিয়ান ভার্সনটিতে থাকছে ব্ল্যাক কালার। ইন্দোনেশিয়ান ভার্সনটিতে একটু অন্য ধরনের সিঙ্গেল স্টার্ট এবং কিল সুইচ ছিল, যেখানে এটিতে FZ25 এর কিল সুইচ ব্যবহার করা হয়েছে।
এটিতে এক্সট্রা ফিচার হিসেবে থাকছে গ্রাব রেইল, মাডগার্ড এবং শাড়ি গার্ড যা ইন্দোনেশিয়ান ভার্সনটিতে ছিল না। এছাড়া এলয় প্যাটার্ন এবং টায়ার ব্রান্ডেও পরিবর্তন রয়েছে।
যারা নেকেট স্পোর্টস বাইক পছন্দ করেন তাদের জন্য Yamaha MT 15 হতে পারে অন্যতম সেরা পছন্দ।
- শেল এডভান্স কিনে মালয়েশিয়া মটোজিপি টিকেট জেতার সুযোগ - আগস্ট ১৪, ২০২৩
- Bike Lock Combo: চুরি অসম্ভব? বাইকের ব্যাটারী ১০০% নিরাপদ? - জুলাই ২৪, ২০২৩
- ক্যাশব্যাক ও EMI অফারে বাইক কেনার সুযোগ দিছে টিভিএস সেলস পয়েন্ট - জুলাই ১৯, ২০২৩
You must be logged in to post a comment.